আমরা কেন ধর্ম পালন করি

মানুষ  কেন ধর্ম পালন করে

 পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক প্রদত্ত আইনই হলো ধর্ম । তাই শ্রীমদ্ভাগবতে ৬/৩/১৯ এ বলা হয়েছে-
"ধর্মং তু সাক্ষাদ্ ভগবৎপ্রণীতম্।"
অর্থাৎ  কোন মানুষ কখনো ধর্ম তৈরী করতে পারে না।

পরমেশ্বর ভগবান মনুষ্য জাতীর জন্য যে সংবিধান বা আইন প্রনয়ণ করেছেন তা মেনে চলাই ধর্ম। ধর্ম কথাটি কেবল মনুষ্য জাতীর জন্যই প্রযোজ্য।

কেননা,পশু পাখিদের ধর্ম করার মতো উন্নত বুদ্ধিমত্তা নেই। কিন্তু যে মানুষ পশু পাখিদের চেয়ে উন্নত শরীর ও উন্নত বুদ্ধিমত্তার অধিকারী হয়েও ধর্ম করে না তাকে শাস্ত্রে পশুর সমান বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
"ধর্মেণ হিনাঃ পশুভিঃ সমানাঃ।"

ভগবান শিব ও পার্বতী /সনাতনী আলাপন 


★ আমরা কেন ধর্ম পালন করবো...???
আমরা যখন সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষকে ধর্ম করার জন্য বলি তখন তারা বিভিন্ন অজুহাত দেখায়। যেমন ছাত্র-ছাত্রীরা বলে প্রভু আমার অনেক পড়াশোনা আছে তাই এখন ধর্মকর্ম করতে পারবো না,,,,যারা চাকরী বা ব্যবসা করে তারা বলে প্রভু অনেক ব্যস্ত আছি তাই এখন ধর্ম করা সম্ভব না,,,যারা বেকার তারা বলে প্রভু টাকা পয়সা নাই ধর্ম কেমনে করি..???আবার কেউ বলে প্রভু ধর্ম করার মতো পরিবেশ নাই কেমন করে ধর্ম করবো..??? ইত্যাদি ইত্যাদি অভিযোগ বা অজুহাত তারা দেখিয়ে তারা প্রকৃত ধর্ম পালন থেকে দুরে থাকে।

যারা এমন অজুহাত দেখায় তাদের উদ্দেশ্যে বলছি। দেখুন ধর্ম পালন করার আগে বুঝতে হবে আপনি কেন ধর্ম পালন করবেন...? আর কার লাভের জন্য ধর্ম করবেন..?? আপনি ধর্ম পালন করবেন আপনার ভালোর জন্য। ধর্ম আপনাকে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে রাখবে। ধর্ম আপনাকে পরিবার,,,, সমাজ,,,তথা দেশ বিরোধী কার্যকলাপ থেকে দুরে রাখবে। ধর্ম আপনাকে বলবে নেশা করো না,,,,জুয়া খেলো না,,,,অবৈধ মেলামেশা করো না,,,,আমিষাহার করো না। এগুলো কার ভালোর জন্য বলা হয়েছে..?? নেশা না করলে তো আমাদের শরীরই ভালো থাকবে,,,,নেশা না করলে তো আমরা কখনো মাতাল হয়ে খারাপ কোন কাজ করবো না। তেমনি জুয়া না খেললে তো আমাদেরই লাভ। জুয়া খেলে কত মানুষ রাস্তার ফকির পর্যন্ত হয়ে যায়। তেমনি অবৈধ্য সঙ্গে জড়িয়ে মানুষ জীবনের ধ্বংস ডেকে আনে। তাই বুঝতে হবে ধর্ম পালন করবো আমি আমার ভালোর জন্য। যেমন ঔষধ মানুষ নিজের শরীরের সুস্থতার জন্যই সেবন করে থাকে।
ধর্ম পালন করতে কি প্রয়োজন...???
ধর্ম করা তথা কৃষ্ণভক্তি করা খুব সহজ। ধর্ম পালন করতে তেমন কিছুই লাগে না। ধর্ম করতে শুধু শুদ্ধতা,সততা,বিশ্বাস, শ্রদ্ধা, ঐকান্তিকতা ও সদ্ ইচ্ছার প্রয়োজন। আপনি শিক্ষার্থী হউন,,,,, আপনি ব্যবসায়ী হউন,,,,,আপনী গরীব হউন,,,,আপনি কঠিন পরিস্থিতিতে থাকুন তাতে কোন সমস্যা নেই। সর্ব অবস্থায় আপনি কৃষ্ণভক্তি করে যেথে পারবেন। শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক প্রদত্ত মনুষ্য জাতীর সংবিধান গীতাতেও তাই বলা হয়েছে যে আপনি সর্ব অবস্থায় ধর্ম পালন করতে পারেন।
আপনি কোন ধর্ম পালন করবেন এবং কিভাবে পালন করবেন..???

কলিযুগের ধর্ম সম্পর্কে শাস্ত্রে বলা হয়েছে-

কলিযুগে ধর্ম হয় নাম সঙ্কীর্তন।
চারি যুগে চারি ধর্ম জীবের কারণ।।
অতএব কলিযুগে নাম যজ্ঞ সার।
অন্য কোন ধর্ম করলে নাহি হয় পার।।
শুন মিশ্র কলিযুগে নাহি তপ যজ্ঞ।
যে জন ভজে কৃষ্ণ তার মহাভাগ্য।।
ইহা হইতে সর্বসিদ্ধি হইবে সবার।
সর্বক্ষণ বল ইতে বিধি নাহি আর।।
এই আট লাইনের মধ্যে কলিযুগের ধর্ম কি তার সুন্দর করে বুঝানো হয়েছে। এই কথাগুলো কোন সাধারণ মানুষের কথা নয়,,,,এই কথাগুলো প্রামানিক বৈদিক শাস্ত্রের কথা। আপনি যদি একটু ইচ্ছা করেন যে প্রতিদিন সকালে বা রাতে অথবা দিনের যেকোন সময় ২/৪/৮/১৬ মালা জপ করবেন এবং একাদশী পালন করবেন,,,ঘরে ভগবানের চিত্রপট রেখে ভগবানকে ফুল ফল জল তুলসীপাতা দিয়ে পূজা দিবেন,,,,, সপ্তাহে একদিন মন্দিরে গিয়ে ভগবানকে দর্শন করবেন এবং সাধু সঙ্গ করবেন,,, তাহলে আপনার সেই সদ্ ইচ্ছা বা সামান্য প্রচেষ্টাই যথেষ্ট ধর্ম করার জন্য।
 দেখুন আমরা অনিত্য এই দেহের জন্য কত সময় দেই,,,, কত পরিশ্রম করি,,,,তাও কি এই দেহটাকে সবসময় সুখে রাখতে পারি...??? অথছ আমি(আত্মা) নিত্য। আমার(আত্মার) জন্য কি করি,,,?? কতটা সময় দেই আত্মার কল্যানের জন্য..?? কাচার যত্ন নিতে নিতেই সময় যায় পাখির যত্ন আর নেই না। আমাদের এই মনুষ্য দেহ রুপি নৌকা দেয়া হয়েছে ভব সাগর পার হওয়ার জন্য অতছ আমরা সাগরের কিনারায় আসক্তি রূপ নোঙ্গর লাগিয়ে নৌকা সাজাতে সাজাতেই দিন পার করে দেই। নৌকাও বাই না। সাগরও পার হতে পারি না....!! কতই না নির্বোধ আর মূর্খ আমরা।
সেই তো প্রকৃত বুদ্ধিমান,,,, যে এই মনুষ্য দেহ লাভ করে হরিভজন করার মাধ্যমে এই দুঃখময় জগৎ থেকে উদ্ধার লাভ করতে পারে........হরেকৃষ্ণ
Next Post Previous Post
1 Comments
  • নামহীন
    নামহীন ৭ এপ্রিল, ২০২২ এ ৫:৪৫ PM

    Nice

Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>