বিজয়া একাদশী কি ও এর ব্রত মাহাত্ম্য

বিজয়া একাদশী কি 

স্কন্দপুরাণে এই একাদশী মাহাত্ম্য এইভাবে বর্ণিত রয়েছে। মহারাজ যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে বললেন হে বাসুদেব! অনুগ্রহ করে আমাকে বলুন ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের একদশীর মাহাত্ম্য। শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে যুধিষ্ঠির!তারপরে বিজয়া নামে  এই একাদশী '' পরিচিত লাভ করে। 

স্বয়ং ব্রহ্মাকে এই একাদশী সম্পর্কে একসময় দেবর্ষি নারদ স্বয়ম্ভু  জিজ্ঞাসা করেছিলেন।ব্রহ্মা দেব  এই প্রসঙ্গে যা বলেছিলেন, তা আমি এখন তোমাকে বলছি। এই পবিত্র পাপবিনাশকারী ব্রত মানুষকে জয় দান করে বলে 'বিজয়া' নামে প্রসিদ্ধ। পুরাকালে শ্রীরামচন্দ্র চৌদ্দ বছরের জন্য বলে গিয়েছিলেন। সীতা ও লক্ষ্মণেরসঙ্গে তিনি পঞ্চবটী বনে বাস করতেন। সেই সময় লঙ্কাপতি রাবণ করতে থাকেন। তখন মৃতপ্রায় জটায়ুর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। জটায়ু রাবনের সীতাহরণের সমস্ত বৃত্তান্তদেবী সীতাকে হরণ করে। সীতার অনুসন্ধানে রামচন্দ্র চতুর্দিক ভ্ৰমণ রামচন্দ্রকে জানিয়ে মৃত্যুবরণ করে। এরপর সীতা উদ্ধারের জন্য বানররাজ সুগ্রীবের সাথে তিনি বন্ধুত্ব স্থাপন করেন।

বিজয়া একাদশী ছবি
বিজয়া একাদশী

ভগবান রামচন্দ্রের কৃপায় হনুমান লঙ্কায় গমন করেন। সেখানে অশোক বনে সীতাদেবীকে দর্শন করে শ্রীরাম প্রদত্ত অঙ্গুরীয় (আংটি) তাঁকে অর্পণ করেন। ফিরে এসে শ্রীরামচন্দ্রের কাছে লঙ্কার সমস্ত ঘটনার কথা ব্যক্ত করেন।রামচন্দ্র হনুমানের সুগ্রীবের পরামর্শে ও কথা শুনে সমুদ্রতীরে যান। তিনি লক্ষ্মণকে বললেন(সেই দুস্তর সমুদ্র দেখে)  'হে লক্ষ্মণ! কিভাবে পার হওয়া যায় এই অগাধ সমুদ্র । কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না তার।' এটির উত্তরে লক্ষ্মণ বললেন ‘হে পুরুষোত্তম!আপনি সর্বজ্ঞাতা আদিদেব ,আমি  আপনাকে কি উপদেশ দেব? তবে বদালভ্য নামে এক মুনি এই দ্বীপে বাস করেন। এখান থেকে চার মাইল দূরে তাঁর আশ্রম। হে র ঘব, আপনি সেই প্রাচীন ঋষিশ্রেষ্ঠকে এর উপায় জিজ্ঞাসা করুন। লক্ষ্মণের অমায়িক কথা শুনার পরে ,সেই মহামুনির আশ্রমে উপনীত হলেন তাহারা ।সেই মুনিকে প্রণাম করলেন ভগবান রামচন্দ্র ভক্তরাজ । তারপরে মুনিবর রামচন্দ্রকে পুরাণপুরুষ বলে জানতে পারলেন।

আনন্দভরে জিজ্ঞাসা করলেন হে রামচন্দ্র! আপনি আমার কাছে এসেছেন  কি কারণে, তা দয়া করে বলুন। শ্রীরামচন্দ্র বললেন- হে মুনিবর!সৈন্যসহ আমি এই সমুদ্র তীরে উপস্থিত হয়েছি  আপনার কৃপায় ।আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো রাক্ষসরাজের লঙ্কা বিজয় করা । যাতে এই ভয়ঙ্কর সমুদ্র উত্তীর্ণ হতে পারি তার উপায় জানবার জন্য আমরা আপনার কৃপা প্রার্থনা করি। মুনিবর প্রসন্নচিত্ত পদ্মলোচন ভগবান শ্রীরামচন্দ্রকে বললেন- 'হে রাম!আমি তা বলছি যা আপনার অভীষ্ঠ সিদ্ধির জন্য যে শ্রেষ্ঠ ব্রত করণীয় ।

আপনি নিশ্চয়ই সৈন্যসহ সমুদ্র পার হতে পারবেন যদি ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের ‘বিজয়া’নামক একাদশী ব্রতপালন করেন । এই ব্রতের বিধি শ্রবণ করুন। বিজয় লাভের জন্য দশমীর দিন সোনা, রূপা, তামা অথবা মাটির কলস সংগ্রহ করে তাতে জল ও আমপাতা দিয়ে সুগন্ধি চন্দনে সাজিয়ে তার উপর সোনার নারায়ণমূর্তি স্থাপন করবেন। একাদশীর দিন যথাবিধি প্রাতঃস্নান করে কলসের গলায় মালা চন্দন পড়িয়ে উপযুক্ত স্থানে নারকেল ও গুবাক দিয়ে পূজা করবেন। এরপর গন্ধ, পুষ্প,তুলসী, ধূপ-দ্বীপ নৈবেদ্য ইত্যাদি দিয়ে পরম ভক্তিসহকারে নারায়ণের পূজা করে হরিকথা কীর্তনে সমস্ত দিন যাপন করবেন। রাত্রি জাগরণ করে অখন্ড ঘি-প্রদীপ প্রজ্বলিত রাখবেন। দ্বাদশীর দিন সূর্যোদয়ের পর সেই কলস বিসর্জনের জন্য কোন নদী, সরোবর বা জলাশয়ের কাছে গিয়ে বিধি অনুসারে পূজা নিবেদনের পরে তা বিসর্জন দেবেন। তারপর ঐ মূর্তি বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণকে দান করবেন। এই ব্রত প্রভাবে নিশ্চয়ই আপনার বিজয় লাভ হবে। ব্রহ্মা বললেন- হে নারদ! ঋষির কথামতো ব্রত অনুষ্ঠানের ফলে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। সীতাপ্রাপ্তি, লঙ্কাজয়, রাবণবধের মাধ্যমে শ্রীরামচন্দ্র অতুল কীর্তি লাভ করেছিলেন। তাই যথাবিধি যে মানুষ এই ব্রত পান করবেন তাদের এজগতে জয়লাভ এবং পরজগতে অক্ষয় সুখ সুনিশ্চিত জানবে।হে যুধিষ্ঠির! এই কারণে এই বিজয়একাদশী ব্রত পালন অবশ্য কর্তব্য। এই ব্রতকথার শ্রবণ-কীর্তন মাত্রেই বাজপেয় যজ্ঞোর ফল লাভ হয়।

এই ওয়েবসাইটটিতে আরো জানতে পারবেন 

বিজয়া একাদশী,বিজয়া একাদশী মাহাত্ম্য,বিজয়া একাদশী ২০২২,বিজয়া একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য,ইসকন বিজয় একাদশী,বিজয়া একাদশী,বিজয়া একাদশী ২০২২,বিজয়া একাদশী ব্রত,বিজয়া একাদশী 2022,বিজয়া একাদশীর দিনে,বিজয়া একাদশী মাহাত্ম্য ২০২২,বিজয়া একাদশী মাহাত্ম্য


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>