পুত্রদা একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য

যুধিষ্ঠির বললেন- হে কৃষ্ণ! পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের একাদশীর নাম কি, বিধিই বা কি, কোন দেবতা ঐ দিনে পূজিত হন এবং আপনি কার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে সেই ব্রতফল প্রদান করেছিলেন কৃপা করে আমাকে সবিস্তারে তা বলুন।


শ্রীকৃষ্ণ বললেন- হে মাহারাজ! এই একাদশী ‘পুত্ৰদা’ নামে প্রসিদ্ধ। সর্বপাপবিনাশিনী এই একাদশীর অধিষ্ঠাতৃ দেবতা হলেন সিদ্ধিদাতা নারায়ণ। ত্রিলোকে এর মতো শ্রেষ্ঠ ব্রত নেই। এই ব্রতকারীকে নারায়ণ বিদ্ধান ও যশস্বী করে তোলেন। এখন আমার কাছে ব্রতের মাহাত্ম্য শ্রবণ করুন।


এক রাজা ছিলেন ভদ্রাবতী পুরীতে সুকেতুমান নামে । রাজার রানীর নাম ছিল শেব্যা। রাজদম্পতি  দিনযাপন করছিলেন বেশ সুখেই।

পুত্রদা একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য
পুত্রদা একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য


বংশরক্ষার জন্য বহুদিন ধরে ধর্ম-কর্মের অনুষ্ঠান করেও যখন পুত্রলাভ হল না, তখন রাজা দুশ্চিন্তায় কাতর হয়ে পড়লেন। তাই সকল ঐশ্বর্যবান হয়েও পুত্রহীন রাজার মনে কোন সুখ ছিল না।


তিনি ভাবতেন পুত্রহীনের জন্ম বৃথা ও গৃহশূণ্য। পিতৃ-দেব-মনুষ্যলোকের কাছে যে ঋণ শাস্ত্রে উল্লেখ আছে, তা পুত্র বিনা পরিশোধ হয় না।


পুত্রবানজনের এ জগতে যশলাভ ও উত্তম গতি লাভ হয় এবং তাদের আয়ু, আরোগ্য, সম্পত্তি প্রভৃতি বিদ্যমান থাকে। নানা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত রাজা আত্মহত্যা করবেন বলে স্থির  করলেন। কিন্তু পরে বিচার করে দেখলেন- মহাপাপ সমান হলো আত্মহত্যা , এরফলে দেহের বিনাশমাত্র কেবল  হবে, কিন্তু পুত্রহীনতা তো দূর হবে না আমার। তারপর নিবিড় বনে গমন করলেন একদিন রাজা । বন ভ্রমণ করতে করতে দ্বিপ্রহর অতিক্রান্ত হলে রাজা ক্ষুধা-তৃষ্ণায় অত্যন্ত কাতর হলেন।জলাদির অনুসন্ধান করতে লাগলেন এদিক ওদিক ।


তিনি চক্রবাক, রাজহংস এবং নানারকম মাছে পরিপূর্ণ একটি মনোরম সরোবর দেখতে পেলেন। সরোবর দেখতে পেলেন। সরোবরের কাছে মুনিদের একটি আশ্রম ছিল। তিনি সেখানে উপস্থিত হলেন। সরোবর তীরে মুনিগণ বেদপাঠ করছিলেন। মুনিবৃন্দের শ্রীচরণে তিনি দন্ডবৎ প্রণাম করলেন।


মুনিগণ রাজাকে বললেন-হে মহারাজ! আমরা 'বিশ্বদেব’ নামে প্রসিদ্ধ। এই সরোবরে স্নান করতে এসেছি। আজ থেকে পাঁচদিন পরেই মাঘ মাস আরম্ভ হবে। আজ পুত্রদা একাদশী তিথি। পুত্র দান করে বলেই এই একাদশীর নাম ‘পুত্ৰদা'।


তাঁদের কথা শুনে রাজা বললেন-হে মুনিবৃন্দ!  অপুত্রক আমি । তাই  অধীর হয়ে পড়েছি পুত্র কামনায়। এখন আপনাদের দেখে আমার হৃদয়ে আশার সঞ্চার হয়ে। একটি পুত্র প্রদান করুন এ দুর্ভাগা পুত্রহীনের প্রতি অনুগ্রহ করে ।


মুনিগণ বললেন- হে মহারাজ!  আজ সেই দিন যেদিন পারণ করতে হয় পুত্রদা একাদশী তিথি  । তাই এখনই আপনি এই ব্রত পাল করুন। ভগবান শ্রীকেশবের অনুগ্রহে অবশ্যই আপনার পুত্র লাভ হবে। মুনিদের কথা শোনার পর সেই ব্রত অনুষ্ঠান করলেন যথাবিধানে রাজা কেবল ফলূমূলাদি আহার করে । দ্বাদশী দিনে উপযুক্ত সময়ে শস্যাদি সহযোগে পারণ করলেন। মুনিদের প্রণাম নিবেদন করে নিজগৃহে ফিরে এলেন।প্রতভাবে রাজার যথাসময়ে একটি তেজস্বী পুত্র লাভ হল।


হে মাহারাজ! সকলেরই পালন করা কর্তব্য এ ব্রত । এই ব্রত কথা বর্ণনা করলাম মানব কল্যাণ কামনায় আপনার কাছে আমি ।


নিষ্ঠাসহকারে যারা এই পুত্রদা একাদশী ব্রত পালন করবে, তারা ‘পুত’ নামক নরক থেকে পরিত্রাণ লাভ করবে। আর এই ব্ৰত কথা শ্রবণ কীর্তনে অগ্নিষ্টোম যজ্ঞের ফল পাওয়া যায়। ব্রহ্মান্ডপুরাণে এই মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে।

#tag; পুত্রদা একাদশী মাহাত্ম্য,পুত্রদা একাদশী,পুত্রদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য,পুত্রদা একাদশী ব্রত কথা,পুত্রদা একাদশী ২০২৩,পুত্রদা একাদশী 2022,পুত্রদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য 2023,পুত্রদা একাদশীর মাহাত্ম্য,পুত্রদা একাদশী ব্রতকথা মাহাত্ম্য,পুত্রদা একাদশী ২০২২,পুত্রদা একাদশী ব্রত,পুত্রদা একাদশীর ব্রত মাহাত্ম্য,পৌষ মাসের শুক্লপক্ষের পুত্রদা একাদশী মাহাত্ম্য,পুত্রদা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য কথা

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>