শ্রীশ্রী উৎপন্না একাদশী (বিদ্ধা ত্রিস্পর্শা মহাদ্বাদশী) মহাব্রত

ত্রিস্পৃর্শা মহাদ্বাদশী মাহাত্ম্য

প্রথমে একাদশী তারপর সমস্ত দিন দ্বাদশী এবং রাত্রিশেষে ত্রয়োদশী হলে তা ‘ত্রিস্পর্শা’ নামে অভিহিত হয়ে থাকে। শ্রীহরির বিশেষ প্রিয় এই মহাপুণ্য তিথিতে সযত্নে উপবাস করা কর্তব্য। এ ব্রতের পারণ ত্রয়োদশীতে করতে হয়।পদ্মপুরাণে শ্রীসনৎকুমার-বেদব্যাস সংবাদে এ ব্রতের মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। সনৎ কুমার বললেন- সর্বপাপবিনাশিনীএ ত্রিস্পর্শা মহাব্রত সকলেরই পালন করা উচিত।

 চক্রধারী ভগবান বিষ্ণু ক্ষীরসমুদ্রে শিব, ব্রহ্মা ওআমার কাছে এ ব্রত সম্পর্কে বলেছিলেন। জড় বিষয়ে অত্যন্ত আসক্ত ব্যক্তিও যদি এই ব্রত পালন করে, তবে তারা মুক্তিলাভের যোগ্য হয়। হে মুনিবর! বারাণসীতে ও প্রয়াগে মৃত্যু হলে এবং গোমতীতে স্নান করলে মানুষের মুক্তি লাভ হয়। কিন্তু ত্রিস্পৃশা ব্রতে কেবল উপবাস ফলে গৃহে থেকে এইমুক্তি লাভ হয়।একসময় শ্রীজাহ্নবী ভগবান মাধবের কাছে এসে বললেন- হে হৃষীকেশ! কলিযুগের মহাপাপী মানুষ যখন আমার জলে স্নান করবে,সেই পাপে আমি কলুষিত হয়ে পড়ব। এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? শ্রীমাধব বললেন- হে গঙ্গে, তুমি ব্রত পালন কর যার নাম হলো সর্বকলুষ বিনাশী ত্রিস্পর্শা।

উৎপন্না একাদশী
উৎপন্না একাদশী

 ভগবানের নির্দেশে গঙ্গাদেবী ত্রিস্পর্শা ব্রত পালন করে কলির কলুষ থেকে মুক্ত হন। হে মুনিবর! বিষয় অনুরাগী ব্যক্তি কিংবা বিষয় অনাসক্ত, উভয়ের পক্ষে মুক্তি লাভ করা কঠিন। তাই মুক্তিদানকারী ত্রিস্পর্শা ব্রতের অনুষ্ঠান করা কর্তব্য।#শ্রীশ্রী_উৎপন্না_একাদশীর_মাহাত্ম্য:অর্জুন বললেন---হে দেব! অগ্রহায়নের পুণ্যকারী কৃষ্ণপক্ষেরএকাদশীকে কেন 'উৎপন্না' বলা হয় এবং কি জন্যই বা এই একাদশী পরম পবিত্র ও দেবতাদেরও প্রিয়, তা জানতে ইচ্ছা করি।শ্রী ভগবান বললেন---হে পৃথাপুত্র!এক দানব ছিল পূর্বে যাকে সত্য যুগে 'মুর' নামে  ডাকা হত।সেই দানবের অদ্ভূত আকৃতি ছিলো আর দানব বিশিষ্ট  স্বভাব ছিল অত্যন্ত কোপন। সে দেবতাদেরও ভীতিপ্রদ ছিল। যুদ্ধে দেবতাদের এমনকি স্বর্গরাজ ইন্দ্রকে পর্যন্ত পরাজিত করে স্বর্গ থেকে বিতাড়িত করেছিল। এই ভাবে দেবতারা পৃথিবীতে বিচরণ করতে বাধ্য হয়েছিল।তখন দেবতাগণ মহাদেবের কাছে গিয়ে নিজেদের সমস্ত দুঃখ সবিস্তারে বর্ণনা করলেন। শুনে মহাদেব বললেন---হে দেবরাজ! যেখানে শরণাগতবৎসল জগন্নাথ, গরুধ্বজ বিরাজ করছেন, তোমরা সেখানে যাও। তিনি আশ্রিতদের পরিত্রাণকারী। 

তিনি নিশ্চয়ই তোমাদের মঙ্গল বিধান করবেন।দেবাদিদেবের কথা মতো দেবরাজ ইন্দ্র দেবতাদের নিয়ে ক্ষীর সাগরের তীরে গমন করলেন। জলে শায়িত শ্রী বিষ্ণুকে দর্শন করে দেবতারা হাত জোড় করে তাঁর স্তব করতে লাগলেন। স্তুতির মাধ্যমে নিজ নিজ দৈন ও দুঃখের কথা তারা ভগবানকে জানালেন।ভগবান নারায়ণ বললেন---হে ইন্দ্র!কিরকম সেই মুর দানব , কেমন শক্তিশালী সে ,তা বলো আমাকে।ইন্দ্র জানালেন---হে ভগবান! প্রাচীনকালে ব্রহ্ম বংশে তালজঙঘা নামে এক অতি পরাক্রমী অসুর ছিল। তারই পুত্র সেই মুর অত্যন্ত বলশালী, ভীষন উৎকট ও দেবতাদেরও ভয়উৎপাদনকারী।সে চন্দ্রাবতী নামে এক পুরীতে বাস করে। স্বর্গ থেকে আমাদের বিতাড়িত করে তার স্বজাতি কাউকে রাজা, কাউকে অন্যান্য দিকপালরূপে প্রতিষ্ঠিত করে এখন সে দেবলোক সম্পূর্ণ অধিকার করেছে। তার প্রবল প্রতাপে আজ আমরা পৃথিবীতে বিচরণ করছি।ইন্দ্রের কথা শুনে ভগবান দেবদ্রোহীদের প্রতি অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হলেন। তিনি দেবতাদের সঙ্গে চন্দ্রাবতী পুরীতে গেলেন। সেই দৈত্যরাজ শ্রী নারায়ণকে দর্শন করে পুনঃপুনঃ গর্জন করতে লাগল। দেবতা ও অসুরের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ হয়ে গেল। যুদ্ধে দেবতারা পরাজিত হয়ে এদিক ওদিক পালিয়ে গেল। তখন যুদ্ধক্ষেত্রে শ্রী নারায়ণকে একা দেখে সেই দানব তাঁকে 'দাঁড়াও দাঁড়াও' বলতে লাগল। শ্রী ভগবানও ক্রোধে গর্জন করতে করতে বললেন---রে দুরাচার দানব! আমার বাহুবল দেখ। এই বলে অসুরপক্ষীয় সমস্ত যোদ্ধাদের দিব্য বাণের আঘাতে নিহত করতে লাগলেন। তখন তারা প্রানভয়ে নানা দিকে পালাতে লাগল। 

সেই সময় নারায়ণ দৈত্য সেনাদের মধ্যে সুদর্শনচক্র নিক্ষেপ করলেন। ফলে সমস্ত সেনা ধ্বংসপ্রাপ্ত হল। একমাত্র মুর দানবই জীবিত ছিল। সে অস্ত্র যুদ্ধে নারায়ণকেওপরাজিত করল। তখন নারায়ণ দৈত্যের সাথে বাহু যুদ্ধে লিপ্ত হলেন।এই ভাবে দেবতাদের হিসাবে এক হাজার বছর যুদ্ধ করেও ভগবান তাকে পরাজিত করতে পারলেন না। তখন শ্রী হরি বিশেষ চিন্তান্বিত হয়ে বদরিকা আশ্রমে গমন করলেন। সেখানে সিংহাবতী নামে এক গুহা আছে। এই গুহাটি এক-দ্বার বিশিষ্ট এবং বারোযোজন অর্থাৎ ছিয়াশি মাইল বিস্তৃত। ভগবান বিষ্ণু সেই গুহার মধ্যে শয়ন করলেন। সেই দৈত্যও তার পিছন পিছন ধাবিত হয়ে গুহার মধ্যে প্রবেশ করল। সে বিষ্ণুকে নিদ্রিত বুঝতে পারল। অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে ভাবতে লাগল----আমার সাথে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে বিষ্ণু এখানে গোপনে শুয়ে আছে। আমি তাকেঅবশ্যই বধ করব। দানবের এই রকম চিন্তার সঙ্গে সঙ্গে শ্রী বিষ্ণুর শরীর থেকে একটি কন্যা উৎপন্ন হল।

উৎপন্না একাদশী কি

 এই কন্যাই 'উৎপন্না' একাদশী। তিনি রূপবতী, সৌভাগ্যশালিনী, দিব্য অস্ত্র-শস্ত্র ধারিনী ও বিষ্ণু তেজসম্ভূতা বলে মহাপরাক্রমশালী ছিলেন। দৈত্যরাজ সেই স্ত্রীরূপিনী দেবীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ শুরু করল। কিছুকাল যুদ্ধের পর দেবীর দিব্য তেজে অসুর ভস্মীভূত হয়ে গেল। তারপর বিষ্ণু জেগে উঠেসেই ভস্মীভূত দানবকে দেখে বিস্মিত হলেন। এক দিব্য কন্যাকেতার পাশে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলেন।বিষ্ণু বললেন---হে পরাক্রান্ত উগ্র মূর্তি! এই মুর দানবকে কে বধ করল়? যিনি একে হত্যা করেছেন তিনি নিশ্চয়ই প্রশংসনীয় কর্ম করেছেন।সেই কন্যা বললেন---হে প্রভু! আমি আপনার শরীর থেকে উৎপন্ন হয়েছি। আপনি যখন ঘুমিয়েছিলেন, তখন এই দানব আপনাকে বধ করতে চেয়েছিল। তা দেখে আমি তাকে বধ করেছি। আপনার কৃপাতেই আমি তাকে বধ করেছি।একথা শুনে ভগবান বললেন ---আমার পরাশক্তি তুমি একাদশীতে উৎপন্ন হয়েছ। তাই তোমার নাম হবে একাদশী। আমি এই ত্রিলোকে দেবতা ও ঋষিদের অনেক বর প্রদান করেছি। হে ভদ্রে!এখন আপনিও আপনার মনমতো বর প্রার্থনা করেন। আমি আপনাকে তাহা প্রদান করব।

একাদশী বললেন---হে দেবেশ! ত্রিভুবনের সর্বত্র আপনার কৃপায় সর্ববিঘ্ননাশিনীও সর্বদায়িনী রূপে যেন পরম পূজ্য হতে পারি, এ বিধান করুন। আপনার প্রতি ভক্তি বশতঃ যারা শ্রদ্ধা সহকারে আমার ব্রত উপবাস করবে, তাদের সর্ব সিদ্ধিলাভ হবে--এই বর প্রদান করুন।বিষ্ণু বললেন---হে কল্যাণী! তাই হোক! 'উৎপন্না' নামে পরিচিত তোমার ব্রত পালনকারীর সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ হবে। তুমি তাদের সকল মনোবাসনা পূর্ণ করবে, এতে কোন সন্দেহ নেই। তোমাকে আমারশক্তি বলে মনে করি। তাই তোমার ব্রত পালনকারী সকলে আমারই পূজা করবে। এর ফলে তারা মুক্তি লাভ করবে। তুমি হরিপ্রিয়া নামে জগতে প্রসিদ্ধ হবে। 

তুমি ব্রত পালনকারীর শত্রু বিনাশ, পরমগতি দান এবং সর্বসিদ্ধি প্রদান করতে সমর্থ হবে। ভগবান বিষ্ণু এই ভাবে উৎপন্না একাদশীকে বরদান করে অন্তর্হিত হলেন।সমস্ত ব্রতকারী ভক্তি পরায়ন হয়ে এই উৎপন্না একাদশীর উৎপত্তির কথা শ্রবণ-কীর্তন করলে শ্রী হরির আশীর্বাদ লাভে ধন্য হবেন।বিঃদ্র: এভাবে একাদশীর সকল তত্ত্ব ও প্রতিটি একাদশীর মাহাত্ম্য জানতে লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার করে এই আমাদের পেইজের সাথে থাকুন।(আশা করি সকল ভক্তবৃন্দরাই এই একাদশীর মাহাত্ম্য পাঠ করেছেন।)[কৃপাপূর্বক নিজে একাদশী ব্রত ও মাহাত্ম্য পাঠ করোন এবং আপনি অন্যকে পাঠ করতে উৎসাহিত করুন।]#একাদশীরপারনের মন্ত্র:"একাদশ্যাং নিরাহারো ব্রতেনানেন কেশব।প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব।।"– এই মন্ত্র পাঠ করে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে পারন করুন।★হরেকৃষ্ণ★

এই ওয়েবসাইটটিতে আরো জানতে পারবেন 

উৎপন্না একাদশী মাহাত্ম্য,উৎপন্না একাদশী ২০২২,উৎপন্না একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য,উৎপন্না একাদশী মাহাত্ম্য কথা,উৎপন্না একাদশী ব্রত কথা,উৎপন্না একাদশী পালনের নিয়ম,উৎপন্না একাদশী ব্রত,উৎপন্না,উৎপন্না একাদশী কবে,উৎপন্না একাদশী ইসকন,ত্রিস্পর্শা মহাদ্বাদশী,ত্রিস্পৃশা মহাদ্বাদশী,ত্রিস্পৃশা মহাদ্বাদশী ব্রত কথা,ত্রিস্পৃশা মহাদ্বাদশী মাহাত্ম্য,ত্রিস্পৃশা মহাদ্বাদশী কিভাবে হয়,ত্রিস্পৃশা মহাদ্বাদশী পালন করলে কি ফল লাভ হয়,দ্বাদশীতে পারণের মহিমা,উৎপন্না একাদশী
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>