পয়লা বৈশাখ উদযাপন করা হয় কেন?
এই নববর্ষকে ইংরেজিতে 'South and Southeast Asian solar New Year' হিসেবে অভিহিত করা হয়। আসামে এটার নাম 'ব’হাগ বিহু বা ৰঙালী বিহু'। বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলায় এটার নাম পহেলা বৈশাখ। উড়িষ্যাতে এটার নাম পান সংক্রান্তি। অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন জাতির লোকজন এটাকে সাংকেন, খামতি, সিংফো, খামিয়াং, তাংসা নামে ডেকে থাকে। বোড়ো- ল্যান্ডে এটাকে বলা হয় বৈসাগু। বৈসু বলা হয় ত্রিপুরায়। চাকমারা বলে বিজু। তামিলনাড়ুতে বলা হয় পুথান্ডু। মালয়ালাম ভাষায় এটার নাম বিষু। কর্ণাটকে এটার নাম বিসু পরব। মৈথিলীতে এটার নাম জুর সিতাল, নেপাল পাঞ্জাব ও মধ্য ভারতে বৈশাখী, শ্রীলঙ্কায় অলুথ অভুরুদ্ধ।
![]() |
বছরের এই সময়ে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করা হয় কেন? |
এই উৎসবটি অঞ্চলভেদে ১৩ এপ্রিলে শুরু হয়ে পুরো এশিয়াজুড়ে চলতে থাকে এবং শেষ হয় ১৭ এপ্রিলে। সাতদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠান হচ্ছে কৃষিনির্ভর ও সূর্যনির্ভর মানবজাতির একটি মহত্তম উৎসব।
এরকম বিশাল একটি উৎসব মোগল দরবারের কোনো গণ্ডমুর্খের পক্ষেই চালু করা সম্ভব ছিল না। এটা চালু হয়েছে অন্তত তিন হাজার বছর বা তারও পূর্বে যখন মানুষ বুঝেছিল বর্ষা সমাগত প্রায়, সূর্য উত্তরের বিন্দুতে চলে এসেছে এবং মেষ তারকামণ্ডলে প্রবেশ করেছে। মানুষের জীবনে প্রভাবশালী এমন একটি উৎসবের শক্তি যতদিন সূর্য আছে, মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ আছে ততদিনই থাকবে।
মূলত যে চান্দ্র-সৌর পঞ্জিকাটি অনুসরণ করে আসছেন হাজার হাজার বছর ধরে ভারতীয়রা , সেই পঞ্জিকা অনুযায়ী চন্দ্রমান পয়লা বৈশাখ দিয়েই হয় নববর্ষের শুরু। প্রাচ্য থেকে আগত আর সমস্ত কিছুর মতই পঞ্জিকাও মানুষের শারীরবৃত্তীয় বিজ্ঞান ও মানব সচেতনতার ওপর এর প্রভাবের নিরিখে তৈরি। ভূগোলকের হেলে থাকা অবস্থান পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু করে ২১-দিন যাবৎ উত্তর গোলার্ধকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সূর্যের শক্তি গ্রহণ করতে সাহায্য করে। তাপমাত্রা চড়চড় করে বাড়ার জন্য মানুষদের পক্ষে এটা হয়তো অস্বস্তিকর তবে এই সময়টাতেই পৃথিবীর ব্যাটারি চার্জ হয়। পয়লা বৈশাখ হল সংক্রান্তি পরবর্তী ক্রমবর্ধমান চাঁদের প্রথম দিনটি প্রথম অমাবস্যার পরে , ইঙ্গিত দেয় যা এক নতুন সূচনার ।
কোনো বিশ্বাস ব্যবস্থা বা সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের অংশ হিসেবে উদযাপন করা হয় না কেবল নববর্ষ হিসেবে পয়লা বৈশাখকে - এর নেপথ্যে একটি বিজ্ঞান রয়েছে যা নানাভাবে মানব কল্যাণের মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে।
ক্রান্তীয় অক্ষাংশে অবস্থিত গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলগুলোতে বছরের উষ্ণতম এই সময়টির প্রস্তুতি হিসেবে, এটি একটি পরম্পরা যে লোকজন রেড়ির তেলের মতো ঠাণ্ডা তেলগুলির বিশদ প্রয়োগ দিয়ে বছরের এই অংশটি শুরু করেন। গ্রহের গতিবিধির সাথে মানুষের অভিজ্ঞতার সম্পর্কটাকে এড়িয়ে যায় যেগুলো এই পঞ্জিকাটি আধুনিক ক্যালেন্ডারগুলোর মতন নয় বরং চান্দ্র-সৌর পঞ্জিকাটি (চন্দ্রমান - সৌরমান পঞ্চাঙ্গ) মানুষের ওপর যে প্রভাব পড়ছে ও যে অভিজ্ঞতার সৃষ্টি হচ্ছে পঞ্জিকাটি অক্ষাংশ অনুযায়ী মানানসই করে নেওয়া হয়েছে সেসব বিবেচনা করে তৈরি ফলতঃ ।