পয়লা বৈশাখ উদযাপন করা হয় কেন?

পহেলা বৈশাখ কি?

সবাইকে জানাই পয়লা বৈশাখের আন্তরিক শুভেচ্ছা।
বাংলা নববর্ষ হিসেবে আমরা যে বিষয়টিকে জানি এটা দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় অন্তত দুই হাজার বছর ধরে চলমান এক শক্তিশালী সংস্কৃতি। এপ্রিল মাসের সবচেয়ে গরম দিনগুলোতে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটি পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, চীনের ইউনান প্রদেশের দাই জনগণ, ভারত, মায়ানমার, নেপাল, থাইল্যান্ড এবং শ্রী লঙ্কার মতো দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে নববর্ষ উদযাপিত হয়।

এই নববর্ষকে ইংরেজিতে 'South and Southeast Asian solar New Year' হিসেবে অভিহিত করা হয়। আসামে এটার নাম 'ব’হাগ বিহু বা ৰঙালী বিহু'। বাংলাদেশ ও পশ্চিম বাংলায় এটার নাম পহেলা বৈশাখ। উড়িষ্যাতে এটার নাম পান সংক্রান্তি। অরুণাচল প্রদেশের বিভিন্ন জাতির লোকজন এটাকে সাংকেন, খামতি, সিংফো, খামিয়াং, তাংসা নামে ডেকে থাকে। বোড়ো- ল্যান্ডে এটাকে বলা হয় বৈসাগু। বৈসু বলা হয় ত্রিপুরায়। চাকমারা বলে বিজু। তামিলনাড়ুতে বলা হয় পুথান্ডু। মালয়ালাম ভাষায় এটার নাম বিষু। কর্ণাটকে এটার নাম বিসু পরব। মৈথিলীতে এটার নাম জুর সিতাল, নেপাল পাঞ্জাব ও মধ্য ভারতে বৈশাখী, শ্রীলঙ্কায় অলুথ অভুরুদ্ধ।

বছরের এই সময়ে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করা হয় কেন?
বছরের এই সময়ে পয়লা বৈশাখ উদযাপন করা হয় কেন?

বার্মাতে অনুষ্ঠিত এই নববর্ষটির নাম থিংজ্ঞান, লাওসে পি মাই, থাইল্যান্ডে সংক্রান, কম্বোডিয়ায় মহাসংক্রান্তি বা ছৌল ছংম থেমে। চীনের ইউনানের দাই জনগণ জল নিক্ষেপের অনুষ্ঠান করে থাকে যা নববর্ষ নামেই পরিচিত।

এই উৎসবটি অঞ্চলভেদে ১৩ এপ্রিলে শুরু হয়ে পুরো এশিয়াজুড়ে চলতে থাকে এবং শেষ হয় ১৭ এপ্রিলে। সাতদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠান হচ্ছে কৃষিনির্ভর ও সূর্যনির্ভর মানবজাতির একটি মহত্তম উৎসব।

এরকম বিশাল একটি উৎসব মোগল দরবারের কোনো গণ্ডমুর্খের পক্ষেই চালু করা সম্ভব ছিল না। এটা চালু হয়েছে অন্তত তিন হাজার বছর বা তারও পূর্বে যখন মানুষ বুঝেছিল বর্ষা সমাগত প্রায়, সূর্য উত্তরের বিন্দুতে চলে এসেছে এবং মেষ তারকামণ্ডলে প্রবেশ করেছে। মানুষের জীবনে প্রভাবশালী এমন একটি উৎসবের শক্তি যতদিন সূর্য আছে, মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ আছে ততদিনই থাকবে।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে সদ্গুরুর ব্যাখ্যাঃ

এর নেপথ্যে কি সত্যিই কোনও বৈজ্ঞানিক কারণ রয়েছে?
এই ব্লগ থেকেই জেনে নিন এই বিষয়ে সদগুরু কী বলছেন :
পয়লা জানুয়ারী নয় বরং পয়লা বৈশাখের দিনটিতে গ্রহ এবং মানুষের শারীরবৃত্তীয় বিজ্ঞান ও মনের মধ্যে যা ঘটে তার নিরিখে এই দিনটির নববর্ষ হওয়ার একটি নির্দিষ্ট তাৎপর্য রয়েছে। পয়লা বৈশাখ লুনিসোলার ক্যালেন্ডার অর্থাৎ চান্দ্র-সৌর পঞ্জিকা অনুসরণ করে যার সাথে মানুষের দেহতন্ত্রের গঠনের প্রত্যক্ষ সংযোগ রয়েছে। ভারতীয় ক্যালেন্ডারটি কেবল সাংস্কৃতিকভাবেই নয়, বৈজ্ঞানিকভাবেও ভীষণ তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এটি আপনাকে গ্রহের গতিবিধির সাথে সংযুক্ত করে।

মূলত যে চান্দ্র-সৌর পঞ্জিকাটি অনুসরণ করে আসছেন হাজার হাজার বছর ধরে ভারতীয়রা , সেই পঞ্জিকা অনুযায়ী চন্দ্রমান পয়লা বৈশাখ দিয়েই হয় নববর্ষের শুরু। প্রাচ্য থেকে আগত আর সমস্ত কিছুর মতই পঞ্জিকাও মানুষের শারীরবৃত্তীয় বিজ্ঞান ও মানব সচেতনতার ওপর এর প্রভাবের নিরিখে তৈরি। ভূগোলকের হেলে থাকা অবস্থান পয়লা বৈশাখ থেকে শুরু করে ২১-দিন যাবৎ উত্তর গোলার্ধকে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে সূর্যের শক্তি গ্রহণ করতে সাহায্য করে। তাপমাত্রা চড়চড় করে বাড়ার জন্য মানুষদের পক্ষে এটা হয়তো অস্বস্তিকর তবে এই সময়টাতেই পৃথিবীর ব্যাটারি চার্জ হয়। পয়লা বৈশাখ হল সংক্রান্তি পরবর্তী ক্রমবর্ধমান চাঁদের প্রথম দিনটি প্রথম অমাবস্যার পরে , ইঙ্গিত দেয় যা এক নতুন সূচনার ।

কোনো বিশ্বাস ব্যবস্থা বা সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের অংশ হিসেবে উদযাপন করা হয় না কেবল নববর্ষ হিসেবে পয়লা বৈশাখকে    - এর নেপথ্যে একটি বিজ্ঞান রয়েছে যা নানাভাবে মানব কল্যাণের মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে।

ক্রান্তীয় অক্ষাংশে অবস্থিত গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলগুলোতে বছরের উষ্ণতম এই সময়টির প্রস্তুতি হিসেবে, এটি একটি পরম্পরা যে লোকজন রেড়ির তেলের মতো ঠাণ্ডা তেলগুলির বিশদ প্রয়োগ দিয়ে বছরের এই অংশটি শুরু করেন।  গ্রহের গতিবিধির সাথে মানুষের অভিজ্ঞতার সম্পর্কটাকে এড়িয়ে যায় যেগুলো এই পঞ্জিকাটি আধুনিক ক্যালেন্ডারগুলোর মতন নয়  বরং চান্দ্র-সৌর পঞ্জিকাটি (চন্দ্রমান - সৌরমান পঞ্চাঙ্গ) মানুষের ওপর যে প্রভাব পড়ছে ও যে অভিজ্ঞতার সৃষ্টি হচ্ছে পঞ্জিকাটি অক্ষাংশ অনুযায়ী মানানসই করে নেওয়া হয়েছে সেসব বিবেচনা করে তৈরি ফলতঃ ।

কেবল কোনো বিশ্বাস ব্যবস্থা বা সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের অংশ হিসেবে উদযাপন করা হয় না পয়লা বৈশাখকে নববর্ষ হিসেবে - এর নেপথ্যে একটি বিজ্ঞান রয়েছে যা নানাভাবে মানব কল্যাণের মাত্রাকে বাড়িয়ে তোলে। এই জাতির যে গভীরতা ছিল আজকে তার হেলাফেলা করা হচ্ছে কারণ শুধুমাত্র অন্য কয়েকটা জাতি আমাদের চেয়ে অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে গেছে বলে। তবে এই সংস্কৃতি যে গভীরতা বহন করে তা কয়েক বছরের তৈরি করা যাবে না মধ্যে ; এটা কাজের ফল হাজার হাজার বছরের ।
আপনার নতুন বছরটি শুরু করতে পারেন একটা সাধারণ ব্যাপার দিয়ে  - যখনই আপনি টেলিফোন ধরবেন "হ্যালো'' বা "হাই" বা এরকম কিছু বলবেন না। "নমস্তে" বা "নমস্কার" বা "নমস্কারম" বা "ভানাক্কাম" বলুন। আপনার জীবনে এইরকম শব্দগুলো উচ্চারণ করার একটি তাৎপর্য রয়েছে - যে আপনি ঈশ্বরকে যা বলেন বা তাঁর প্রতি যা করেন, আপনি আপনার চারপাশের সবার সাথেও তাই করেন। এটাই বাঁচার শ্রেষ্ঠ উপায়।

  অন্য কিছু জিনিস পবিত্র না হয় ও  যদি আপনার কাছে কিছু জিনিস পবিত্র তবে আপনি গোটা ব্যাপারটাই ধরতে পারছেন না। এই নতুন বছরটিকে প্রতিটি মানুষের মধ্যে থাকা এই দেবত্বকে চিনতে পারার এক সম্ভাবনা হিসেবে তৈরি করুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url