১০টি মসজিদ যেগুলি গড়া হয়েছিল বিভিন্ন মন্দির ধ্বংস করে

ভারতের এমন ১০টি মসজিদ যেগুলি গড়া হয়েছিল বিভিন্ন মন্দির ধ্বংস করে

হাজার বছরের ইতিহাস আমাদের ভারতের, আর তা নিয়ে আমরা ভারতবাসী হিসাবে গর্ব বোধ করি। আমরা গর্বিত আমাদের রামায়ণ, মহাভারতের মত মহাকাব্য নিয়ে, যাতে বর্ণিত আছে কত অজস্র স্থাপত্যকলা, পরিকাঠামোমূলক বর্ণনায় অজস্র মন্দিরের কথা। যদিও কালের অমোঘ নিয়মে আজ আর অনেক কিছুই নেই, ধ্বংস হয়েছে আমাদের শতাধিক মন্দির। বিদেশী শক্তি আমাদের দেশে এসে শুধু মন্দির ধ্বংসই করেনি, মন্দির ধূলিসাত্‍ করে তার ধ্বংসাবশেষের ওপর নিজেদের ধর্মের ধ্বজা তুলে মসজিদ বানিয়েছে। একসময় যেখান থেকে সংস্কৃত শ্লোকাদির শব্দ কানে আসত, যেখানে দিনরাত ভজন হত, আজ সেখানে মন্দির তো দূরের কথা, হিন্দুদের চিহ্ন অবধি পাওয়া যায়না। কায়েমি ইসলামী সাম্রাজ্যবাদের চিহ্ন নিয়ে পুরাতন ঐতিহ্য বহনের নামে এখনও চলছে মৌলবাদী সাম্রাজ্যবাদী স্বৈরতন্ত্রের স্বাক্ষরতার প্রদর্শন।

মন্দির থেকে মসজিদ
মন্দির থেকে মসজিদ 

মুসলমানরা তাদের রাজত্বকালে আমাদের হিন্দু সভ্যতার পতন ঘটিয়ে সব কিছু কেড়ে নিয়েছিল। কমবেশি ৩০০০-এর মত মন্দির ধ্বংস করে তার উপর মসজিদ, দরগাহ, মাজার স্থাপন করেছিল। যদিও খালি জমির অভাব ছিল না কিন্ত তবুও সাম্রাজ্যবাদী মৌরসিপাট্টা কায়েম করতেই এবং হিন্দুদের ওপরে নিজেদের ক্ষমতার প্রদর্শন করতেই হিন্দু সংস্কৃতি ও শিল্পের বিলুপ্তির মাধ্যমে তারা নিজেদের জয়ধ্বজা ওড়ানোর চেষ্টা করেছিল এবং তাতে যথেষ্ট সফলও হয়েছিল।

এমনই ১০টি মন্দিরের অতীত ও বর্তমান অবস্থা তুলে ধরা হল:

১. রাম জন্মভূমি মন্দির, অযোধ্যা - বাবরি মসজিদ

একটি মতানুযায়ী, যে জমিতে বাবরি মসজিদ বানানো হয়েছিল ১৫২৮ সনে, সেটা আসলে প্রভু শ্রীরামের জন্মস্থান, যা রাম জন্মভূমি নামে পরিচিত। মির বাকি নামে বাবরের এক বিশ্বস্ত অনুচর সেখানে মন্দির ভেঙে সেই যায়গায় বাবরের নামে মসজিদ বানায় (বাবরি মসজিদ)। হিন্দু মুসলিম উভয়েই এই মসজিদ - মন্দিরে নিজেদের ধর্মীয় আরাধনা করত, মসজিদের মধ্যে মুসলিমরা এবং মসজিদের বাইরে হিন্দুরা।

আবার কেউ কেউ বলেন, বাবরের পূর্বে কোনো মুসলমান আক্রমণকারী বাবরি মসজিদ বানিয়েছে কারণ মসজিদের স্থাপত্য আরো পুরোনো আর এই মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশ নেই।

তবে সন্দেহের অবকাশ নেই যে এক সময়ে এখানে এই মন্দির ছিল, কারণ মসজিদের নিচে মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া গেছে।

বর্তমানে ২০২০ খ্রিস্টাব্দে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বাবরি মসজিদের স্থানে রামমন্দির নির্মাণের শুভ কাজ আরম্ভ হয়েছে।

২. কাশী বিশ্বনাথ মন্দির - জ্ঞানবাপী মসজিদ

বেনারসের কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের কথা জানেনা এমন কোন হিন্দু নেই। ৩৫০০ বছরের পুরোনো শহর এই বেনারস, এটি হিন্দুদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় স্থান যেখানে তারা জীবনে অন্তত একবার হলেও আসে; এখানে মানুষ পুণ্য অর্জন করতে আসে আর সাথে নিজের মৃত পূর্বপুরুষের অস্থি গঙ্গায় ভাসিয়ে তার আত্মার শান্তি কামনা করে। ৩৫০০ বছরের ইতিহাস সাথে করে এই মন্দিরময় শহরটি পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা পুরানো শহর বলে বর্ণিত।

এখানে মুখ্য পূজ্য দেবতা হলেন ‘বিশ্বনাথ’ বা ‘বিশ্বেশ্বর’ যার নামের অর্থ হল, সমগ্র বিশ্বের স্রষ্টা। কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের আসল জ্যোতির্লিঙ্গটি পাওয়া যায়নি। মুঘলদের আক্রমণে পুরাতন মন্দিরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ইতিহাস বলে এই মন্দির বহুবার মুসলমানদের দ্বারা আক্রান্ত ও ধ্বংস হয়েছিল। মন্দিরটি প্রথমবার আক্রান্ত হয় ১১৯৪ সালে, ২০ বছর বাদে আবার ঐ স্থানে মন্দির বানানো হয় যা আবার ধ্বংস হয় ১৫ শতকে। আকবরের আমলে ১৬ শতকে এটি আবার পুনর্নির্মিত হয়। কিন্তু আকবরেরর বংশধর ঔরঙ্গজেব আবার ১৬৬৯ সালে এটিকে ধ্বংস করে এবং তার জায়গায় জ্ঞানবাপী মসজিদ প্রতিষ্ঠা করে। কথিত আছে, ঔরঙ্গজেবের আক্রমণের সময় মন্দিরের পূজারী শিবলিঙ্গটি নিয়ে জ্ঞানবাপীর কুয়োয় ঝাঁপ দেন।

মারাঠা রাণী অহল্যাবাই হোলকর ১৭৮০ সালে ঐ মসজিদের কিছু দূরেই বর্তমান মন্দিরটি বানান। ১৮৩৯ সালে মন্দিরের সোনার চূড়া দান করেছিলেন পঞ্জাবের শিখ রাজা মহারাজা রঞ্জিত সিং।

৩. কৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির - শাহী ইদ্গাহ মসজিদ

উত্তরপ্রদেশের মথুরায় অবস্থিত কৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির যা কেশবদেব মন্দির বলেও পরিচিত। কথিত আছে গুজরাটের দ্বারকার দ্বারকাধীশ মন্দিরের ন্যায় মথুরার এই মন্দিরটিও কৃষ্ণের প্রপৌত্র বজ্রনাভ দ্বারা নির্মিত। মথুরা কৃষ্ণের জন্মস্থান আর এই মন্দির নির্মিত হয় আনুমানিক ৫০০০ বছর আগে। এই মন্দিরটি দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ সালে নির্মিত বলেও মনে করা হয়। মন্দিরটি ১০১৭ সালে ধ্বংস হওয়ার পর আবার নতুন করে বানান বীর সিং দেও বা বীর সিং বুন্দেলা। এই কেশবদেও মন্দিরও ঔরঙ্গজেব ধ্বংস করে এবং তার উপরে নির্মাণ করে শাহী ইদগাহ মসজিদ। এই সুন্দর মন্দিরটি বহু দূর থেকেও দেখা যেত। এখন যে মন্দিরটি আমরা দেখতে পাই, সেটা তৃতীয় মন্দির, যেটা বানানো হয় ১৯৫৮ সালে। যদিও এই স্থান নিয়ে রাজনৈতিক তর্জা এখনো অব্যাহত। শাহী ইদগাহ মসজিদ বানানো হয় সব মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দিয়ে যার প্রমাণ পাওয়া যায় ASI - এর একটা ফলক থেকে, যাতে লেখা আছে যে এই শাহী ইদগাহ মসজিদ বানানো হয়েছে মন্দিরের ভাঙা পাথর, মূর্তির অবশিষ্টাংশ দিয়ে।

৪. রুদ্র মহালয় - জামী মসজিদ

গুজরাটের পাটান জেলার সিদ্ধপুরে রুদ্র মহালয় মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ অবস্থিত। সরস্বতী নদীর তীরে সিদ্ধপুর এক অতি প্রাচীন ও পবিত্র গ্রাম। এই গ্রামের নাম হয়েছে সিদ্ধরাজ জয়সিংয়ের নাম থেকে, যিনি ১২ শতকে এই মন্দির স্থাপন করেন।
রুদ্র মহালয় মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু হয় ৯৪৩ সালে মুলরাজ সোলাঙ্কির হাত ধরে। নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয় ১১৪০ শতকে, সিদ্ধরাজ জয়সিংয়ের প্রয়াসে। ১০ শতকে সোলাঙ্কি বংশের প্রতিষ্ঠাতা মুলরাজ সোলাঙ্কি এই মন্দিরের নির্মাণ শুরু করেন, যিনি গুজরাটের সোলাঙ্কি রাজবংশের স্থাপনা করেন। কথিত আছে মুলরাজ নিজের বয়সকালে আপন পাপ খণ্ডন করবার জন্য এই মন্দিরের নির্মাণকাজ শুরু করেন। অজানা কারণে মন্দির নির্মাণ শেষ হয়নি। ১২ শতকে মহারাজ সিদ্ধরাজ জয়সিং মন্দির নির্মাণ সম্পূর্ণ করেন এবং এটি সিদ্ধপুরের মুখ্য মন্দিরে পরিণত হয়।

অন্য একটি মতানুযায়ী গোবিন্দদাস ও মাধবদাস সবুজ শ্যামল পরিবেশের মধ্যে একটি পবিত্র স্থান ও একটি শিবলিঙ্গ খুঁজে পান, যে অঞ্চল রুদ্র মহালয় বলেও পরিচিত। ওখানে মন্দির নির্মাণ করে সিদ্ধরাজ নিজের ও অন্যান্য রাজাদের মূর্তি স্থাপন করেন এবং বলেন যে যদি কখনো ঐ জায়গাটি তার বিশেষত্ব হারায়ও তবুও ঐ মন্দিরটি কখনো ধ্বংস হবে না।

মন্দিরটি প্রথমে আলাউদ্দিন খলজির দ্বারা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। সুলতান আলাউদ্দিন খলজি তাঁর দুই সেনাপ্রধান উলুঘ খান ও নসরত খান জলসেরিকে পাঠিয়ে ঐ মন্দির ধ্বংস করে সেখানে মসজিদ স্থাপন করে। পরে এটি সম্পূর্ণভাবে প্রথম আহমেদ শাহ (১৪১০ - ১৪৪৪ খ্রিস্টাব্দ) দ্বারা ধূলিসাত্‍ হয়, প্রথম আহমেদ শাহ এই মন্দির ভেঙে পশ্চিম প্রান্তে জামী মসজিদ নির্মাণ করে।

৫. ভোজশালা মন্দির - কামাল মৌলানা মসজিদ

মা সরস্বতীর এক অতি প্রাচীন মন্দির হল এই ভোজশালা। এই মন্দিরটির নির্মাণ করেন রাজা ভোজ যার সাম্রাজ্য রাজস্থান থেকে উড়িষ্যা এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। এটি মধ্যপ্রদেশের ধর জেলায় অবস্থিত যেটি রাজা ভোজের রাজধানী ছিল। ভোজশালা ছিল হাজারো ছাত্র ও জ্ঞানী মানুষের সঙ্গমস্থল আর শিক্ষা অর্জনের মুখ্য স্থান।

ইসলামিক আক্রমণ শুরু হওয়ার ৩৬ বছর আগেই মৌলানা কামাল নামে একজন ফকির ১২৬৯ খ্রিস্টাব্দে মালওয়াতে প্রবেশ করে। সে এখানে বহু মানুষকে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে এবং দীর্ঘ ৩৬ বছর এখানকার সমস্ত খবর জোগাড় করে আলাউদ্দিন খলজিকে জানায়। ভোজশালা সর্বপ্রথম ১৩০৫ সালে আলাউদ্দিন খলজির দ্বারা আক্রান্ত হয়। রাজা মহাকালদেব ও তাঁর সেনাবাহিনীর পরাজয়ের পরে আলাউদ্দিন খলজি ১২০০ হিন্দু ছাত্র ও শিক্ষককে হত্যা করে কারণ তারা ধর্মান্তরিত হতে চায়নি।

একজন মুসলিম শাসক দিলাবার খান বিজয় মন্দির (সূর্য/মার্তন্ড মন্দির) ধ্বংস করে এবং সরস্বতী মন্দিরের একটি অংশকে দরগায় পরিণত করতে চেষ্টা করে।

পরবর্তীকালে মেহমুদ শাহ ভোজশালা আক্রমণ করে এবং এটিকে দরগায় পরিণত করার চেষ্টা করে। সে সরস্বতী মন্দিরের বাইরের জমি জবরদখল করে সেখানে কামাল মৌলানার মৃত্যুর ২০৪ বছর পরে কামাল মৌলানা মকবরা স্থাপন করে।

বর্তমানে মুসলিমরা এই বিজয় মন্দিরে নামাজ পাঠ করে এবং বর্তমান সময়ে এটিকে প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে যে এটি আসলে একটি দরগা যার নাম হল লাট মসজিদ। ১৯৯৭ সালের ১২ই মার্চের পূর্বে হিন্দুদের মন্দির দর্শন করার অনুমতি ছিল কিন্তু পূজা করার অনুমতি ছিল না। তত্‍কালীন মুখ্যমন্ত্রী দিগ্বিজয় সিং এই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন এবং বর্তমানে কেবলমাত্র বসন্ত পঞ্চমীর দিন ভোজশালায় হিন্দুদের প্রবেশাধিকার ও পুজো করার অধিকার দেওয়া হয়েছে।

৬. আদিনাথ মন্দির - আদিনা মসজিদ

পশ্চিমবাংলার পান্ডুয়াতে শিব মন্দির ভেঙে শিকান্দার শাহ (১৩৫৮ - ১৩৯০ খ্রিস্টাব্দ) আদিনা মসজিদ নির্মাণ করে, যা এখন ভারতের অন্যতম বড় একটি মসজিদ। আদিনা মসজিদের প্রবেশদ্বার, অন্দরমহল প্রভৃতি স্থানের দেওয়ালে হিন্দু দেবদেবীর বিগ্রহের ধ্বংসাবশেষ লক্ষ্যণীয়, যা কিনা বাংলার স্থাপত্যকলার নিদর্শনবাহী। যথেষ্ট প্রমাণ আছে যে এই মন্দির আদিনাথের। সমস্ত নির্মাণকাজ বুঝিয়ে দেয় আদিনা মসজিদ হিন্দু শিব মন্দির ধংস করে বানানো হয়েছে। মসজিদের এক পাথরে শিবের নটরাজ মূর্তি এখনো আছে, অন্য এক পাথরে গনেশের মূর্তি পাওয়া গেছে। কথিত আছে এই মসজিদের নামটাও হিন্দুদের দেবাদিদেব আদিনাথের নামে।

৭. ভদ্রকালী মন্দির - জামা মসজিদ

ভদ্র নামটি হয় এক দেবীর নামানুসারে, এই মন্দির নির্মাণ করেন রাজস্থানের মালওয়ার রাজপুত রাজারা যারা এই অঞ্চলে ৯ - ১৪ শতকে রাজত্ব করেন। আহমেদাবাদ বিভিন্ন সময়ে ভদ্রা, কর্ণাবতী, রাজনগর ও আসাল নামে পরিচিত ছিল। আহমেদাবাদ নামটি এসেছে প্রথম আহমেদ শাহের নামানুসারে যে ১৪১১ সালে কর্ণাবতী দখল করেছিল। সে গুজরাটের আহমেদাবাদকে রাজধানীতে পরিণত করে। ভদ্রকালীর মন্দির ভেঙে ১৪২৪ সালে প্রথম আহমেদ শাহ এখনকার জামা মসজিদ নির্মাণ করে।

মন্দিরের অক্ষত ১০০ টি পাথরের থামে এখনো বিভিন্ন ফুল, লতাপাতা, পদ্ম ফুল, নানা দেবদেবীর মূর্তি, পরিষ্কার ও ব্যাখ্যা করা কুণ্ডলিনী, পার্বতীর মূর্তি ও ঘণ্টা, পুরাণ, বেদ, রামায়ণ, মহাভারতের লেখা খোদাই করা আছে যা দেখলেই বোঝা যায় এটি ছিল একটি হিন্দুদের মন্দির। যদি এটি মসজিদ হিসাবে নির্মিত হত তাহলে কখনোই বিরাট হলঘরের মধ্যে একাধিক থাম তৈরী করা হত না। মসজিদে নামাজ পরার জন্য কখনোই থাম নির্মাণ করা হয় না বরং হিন্দু মন্দিরে থামগুলি হিন্দু সভ্যতা ও সংস্কৃতির নিদর্শন বহন করে।
আসল ভদ্র দুর্গ এখনো বিকৃত অবস্থায় ভগ্নস্তূপের আকারে পড়ে আছে। জামা মসজিদ এই ভদ্র দুর্গের বাইরে অবস্থিত যার দক্ষিণের রাস্তাটি তিন দরওয়াজা থেকে মানেকচক অবধি গেছে।

৮. বিজয় মন্দির - বিজামন্ডল মসজিদ

বিদিশা হল মধ্যপ্রদেশের একটি শহর যা রাজধানী ভোপালের ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বিদিশা বিজামন্ডল মসজিদ আর তার ইতিহাসের জন্য বিখ্যাত। ভারতে ইসলামী সাম্রাজ্যবাদ দ্বারা বহু হিন্দু মন্দির ধ্বংস হয়ে গেছে বা মসজিদে রূপান্তরিত হয়ে গেছে। বিজামন্ডল মসজিদও সেরকমই একটি উদাহরণ যেখানে হিন্দু মন্দির লু্ন্ঠন করে, সেটাকে জ্বালিয়ে, ধ্বংস করে, ভেঙে গুঁড়িয়ে সেখানকার মন্দিরের জিনিসপত্র ব্যবহার করেই মসজিদ গড়ে তোলা হয়।

সময়স্রোতে বর্তমানে বিজামন্ডল তার সকল প্রাচীন ঐতিহ্য হারিয়ে এক যন্ত্রণা ও দুঃখজনক ঘটনার সাক্ষ্য বহন করছে। পরমার রাজাদের দ্বারা তৈরী হিন্দু মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ দ্বারা তৈরী এই মসজিদটি একসময় দেবী চর্চিকার মন্দির ছিল। একটি অক্ষত থামে খোদিত তথ্য থেকে জানা যায় যে এটি মালওয়ার রাজা নরবর্মনের দ্বারা যুদ্ধে বিজয়প্রাপ্তির পরে নির্মিত হয়। ‘বিজা’ বা ‘বিজয়া’ শব্দটি দেবী বিজয়া রাণীর নাম থেকে এসেছিল, বিজামন্ডল বা বিজয়া মন্দির হিন্দু দেবীর উদ্দেশ্যে নির্মাণ করা হয়েছিল।

ঔরঙ্গজেব এই মন্দিরটি লুট করে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। সে সমস্ত দেবীমূর্তি মন্দিরের উত্তর দিকের মাটিতে পুঁতে দেয় এবং মন্দিরটিকে মসজিদে পরিণত করে। বর্তমানে মসজিদটিতে ইদের সময় বিশাল জনসমাগম হয়।

৯. সোমনাথ মন্দির - মন্দির পুনরুদ্ধার

সোমনাথ মন্দির গুজরাটের পশ্চিমাংশে সৌরাষ্ট্রের ভেরাভালের নিকট প্রভাস পাটনে অবস্থিত। এটিকে শিবের বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে প্রথমটি বলে মনে করা হয়। এই মন্দিরটি চন্দ্র দেবতা সোমেশ্বরের মন্দির বলে মনে করা হয়। এটি গুজরাটের অন্যতম বিখ্যাত ও পবিত্র তীর্থক্ষেত্র বলে গণ্য হয়।

বহুবার এই মন্দিরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত ও পুনর্নির্মিত হয়, যে কারণে এটি ‘চিরন্তন পীঠ’ নামে পরিচিত। ইসলামের আগেও অনেক আরবীয় দস্যুদের দ্বারা এই মন্দিরটি লুন্ঠিত হয়। ৭২৫ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধু প্রদেশের আরব শাসক জুনায়েদ সেনাবাহিনী পাঠিয়ে এই মন্দির ধ্বংস করে। মন্দিরের সমস্ত মূল্যবান ধনসম্পত্তি লুন্ঠিত হয় মাহমুদ গজনীর আক্রমণে। ১০২৪ খ্রিস্টাব্দে গজনীর মাহমুদ প্রথমবার এই মন্দিরটি লুঠ ও ধ্বংস করে। তারপর ১২৯৯ খ্রিস্টাব্দে মন্দির ধ্বংস করে আলাউদ্দিন খলজির সেনাপতি উলুঘ খাঁ এবং তারপর ঔরঙ্গজেব। এটা বলা হয় যে এই মন্দিরটি কমবেশি ১৭ বার লুন্ঠন ও ধ্বংস করা হয়। মূল মন্দিরটি গজনী ও অন্যান্য মুসলিম শাসক, মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেব ও পর্তুগিজদের দ্বারাও আক্রান্ত হয়।

বহুবার ধ্বংস ও পুনর্নির্মাণ হওয়ার পরে বর্তমান মন্দিরটি ১৯৫১ সালের মে মাসে চালুক্য বংশের সময়ের স্থাপত্য ও শিল্পকলা অনুযায়ী নির্মিত হয়। সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের তত্ত্বাবধানে এই মন্দিরের পুনর্নির্মাণ শুরু হয় এবং তত্‍কালীন মন্দির ট্রাস্টের প্রধান কে. এম. মুন্সির তত্ত্বাবধানে এটি শেষ হয়।

১০. ধ্রুব স্তম্ভ/বিষ্ণুস্তম্ভ - কুতুব মিনার,
বিভিন্ন হিন্দু ও জৈন মন্দির - কাওয়াত-আল-ইসলাম মসজিদ

দিল্লীর কুতুব মিনার আসলে ধ্রুব স্তম্ভ বা বিষ্ণুস্তম্ভ যেটি রাজা বিক্রমাদিত্যের সময়কালেরও আগের এবং এতে বিভিন্ন আরবিক স্ক্রিপ্ট খোদাই করা হয়েছে যা কুতুবউদ্দিন আইবকের সময়কালের (১১৯১ - ১২১০ খ্রিস্টাব্দ)। যদি আমরা কুতুব মিনারের উপর থেকে দেখি, তাহলে এটি ২৪ টি পাপড়ি সমেত একটি পদ্মকে দেখা যায়। পদ্ম কখনোই ইসলামিক চিহ্ন নয় বরং এটি বৈদিক চিহ্ন এবং ভগবান ব্রহ্মা ভগবান বিষ্ণুর নাভি থেকে নির্গত কমল থেকে সৃষ্ট হন বলে কথিত আছে।
কুতুব মিনার সংলগ্ন একটি শহর হল মেহরৌলি যা আসলে একটি সংস্কৃত শব্দ ‘মিহিরাওয়ালি’। এটি প্রমাণ করে যে এখানে বিক্রমাদিত্যর রাজসভার অন্যতম জ্ঞানী বরাহমিহির তাঁর বিভিন্ন অনুচর,  গণিতজ্ঞ ও ছাত্রদের সাথে বসবাস করতেন। তাঁরা এই মিনারটিকে তাঁদের জ্যোতির্বিদ্যার বিভিন্ন গবেষণা ও আকাশ নিরীক্ষায় ব্যবহার করতেন। কুতুবউদ্দিনের সময়কালের নথি থেকে জানা যায় যে সে এই স্থানে ধ্বংসলীলা চালায় কিন্তু কোথাও এরকম কিছু তথ্য পাওয়া যায়নি যেখান থেকে জানা যায় হয় সে কোনো মিনার স্থাপন করেছিল।

দিল্লীর প্রথম নির্মিত মসজিদ হল কাবাত-আল-ইসলাম বা কাওয়াত-আল-ইসলাম মসজিদ যা পৃথ্বীরাজ চৌহান নির্মিত মন্দির ধ্বংস করার পরে কুতুবউদ্দিন আইবক স্থাপন করে। দিল্লি জয় করার পর শাহাবুদ্দিন মহম্মদ ঘােরি গজনী ফিরে যাবার সময় কুতুবউদ্দিনকে নির্দেশ দিয়ে যায় এই লাল পাথর নির্মিত মসজিদ নির্মাণ করার জন্য যা ধ্বংস করা মন্দিরগুলির ধ্বংসাবশেষ দ্বারা গঠিত।

ছবি পরিচিতি:
১. রাম জন্মভূমিতে বাবরি মসজিদ
২. কাশী বিশ্বনাথ মন্দির - জ্ঞানবাপী মসজিদ
৩. কৃষ্ণ জন্মভূমি মন্দির - শাহী ইদগাহ মসজিদ
৪. রুদ্র মহালয় - জামী মসজিদ
৫. ভোজশালা মন্দির - কামাল মৌলানা মসজিদ
৬. আদিনাথ মন্দির - আদিনা মসজিদ
৭. ভদ্রকালী মন্দির - জামা মসজিদ
৮. বিজয় মন্দির - বিজামন্ডল মসজিদ
৯. সোমনাথ মন্দির
১০. কাওয়াত-আল-ইসলাম মসজিদ
১১. ধ্রুব স্তম্ভ/বিষ্ণুস্তম্ভ - কুতুব মিনার


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>