মৃত্যু সম্পর্কে সনাতন ধর্ম / হিন্দু ধর্ম

মৃত্যু সম্পর্কে হিন্দু ধর্ম, মৃত্যু সম্পর্কে সনাতন ধর্মঃ
এই ধরাধামের সকল প্রানীর কাছেই মৃত্যু এক ভয়ঙ্কর বিষয় এর হাত থেকে মুক্তির কোন উপায়,নেই। মৃত্যু বলতে আমরা বুঝি জীবনের সমাপ্তি।বিজ্ঞানের ভাষায় মৃত্যু হলো যার প্রাণ আছে এমন কোন জৈব পদার্থের (বা জীবের) জীবনের সমাপ্তি।এভাবেও বলা যায়, মৃত্যু হচ্ছে একটি অবস্থা যখন সকল শারিরীক কর্মকাণ্ড যেমন খাদ্য,শ্বসন,পরিচলন, গ্রহণ,প্রভৃতি স্থবির বা থেমে যায়।

মৃত্যু সম্পর্কে সনাতন ধর্ম / হিন্দু ধর্ম

অপরদিকে আত্মা বলতে কোন জীবের অংশ যা কোন শরীর নয়।দেহ যখন জীবিত থাকে এর ভেতরে তখন একটি আত্মা থাকে। এখন আমরা আলোচনা করবো মৃত্যু সম্পর্কে সনাতন/হিন্দু ধর্মীয় মতাদর্শ।

শ্রীমদ্ভাগবদ্গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বর্ননা  করেছেন, মৃত্যুকে আমাদের নিত্যসঙ্গি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।ভগবতগীতা অনুসারে, আমাদের প্রত্যকের জীবনে আমরা প্রতিনিয়তই মৃত্যুর কোলে ঢলে পরছি। কারণ, মৃত্যু বলতে শুধুমাত্র শরীর পরিবর্তনকে বোঝায় এবং এই শরীর পরিবর্তন আমাদের জীবনে আমুল পরিবর্তন বয়ে নিয়ে আসে।উদাহরণ হিসেবে ধরুন, ছয় মাস বয়সে আপনি যাকে দেখেছেন তাকে যদি দশ বছর বয়সে দেখেন, তাহলে খুব সম্ভব তাকে  চিনতে পারবেন না। ছয় মাস বয়সে আপনি যে শরীর দেখেছিলেন, তা সম্পুর্ণরুপে পরিবর্তিত হয়েছে, এমনকি দেহকোষ গুলোও পরিবর্তিত হয়ে নতুন রুপে গঠিত হয়েছে। এভাবে শিশুকাল থেকে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত প্রতিটি শরীরই নিরন্তর ভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে।আর এটাই প্রকৃতির নিয়ম।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, ভগবতগীতায় বলেছেন শরীরের এই পরিবর্তনকে তোমরা মৃত্যু বলে জানবে। ঠিক যেমন কেউ শৈশব থেকে যৌবন, যৌবন থেকে বার্ধক্য অনুরুপ ভাবে মৃত্যুর সময়ে এক দেহ ত্যাগ করে অন্য দেহ গ্রহণ করে।
সনাতন/হিন্দু ধর্মে "মৃত্যু" সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপুর্ণ শ্লোকঃ
★"জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ ।
তস্মাদপরিহার্যেহর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি ॥" (গীতা ২/২৭)
অনুবাদঃ জন্ম যখন হয়েছে মৃত্যু তখন অবশ্যম্ভাবী এবং মৃত্যু  যখন হবে জন্মও তখন  অবশ্যম্ভাবী। অতএব অপরিহার্য কর্তব্য সম্পাদন করার সময় শোক করা মোটেই  উচিত নহে।
মৃত্যু সম্পর্কে সনাতন ধর্ম / হিন্দু ধর্ম

★"কৃষ্ণ তদীয়পদপঙ্কজ-পঞ্জরান্তম্
অদ্যৈব বিশতু মে মানসরাজহংস ।
প্রাণপ্রয়াণসময়ে কফবাতপিত্তৈঃ
কণ্ঠাবরোধনবিধৌ স্মরণং কুতস্তে ।।" (মুকুন্দমালা-স্তোত্র)
অনুবাদঃ হে শ্রীকৃষ্ণ! আমি প্রার্থনা করি আমার মনের রাজহংস যেন এখনই তোমার পাদপদ্মে ডুব দেয় এবং তাদের পিঞ্জরে আবদ্ধ হয়ে পড়ে। অন্যথায়, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের সময়, যখন আমার কণ্ঠ কফ, বাত ও পিত্তে অবরুদ্ধ হবে, তখন তোমাকে স্মরণ করা, কি যে করে সম্ভব হবে!

★অন্তকালে চ মামেব স্মরন্মুক্ত্বা কলেবরম্,
যঃ প্রয়াতি স মদ্ভাবং যাতি নাস্ত্যত্র সংশয়ঃ।। "গ ৮/৫
অনুবাদঃঅন্তিম সময় যিনি আমাকে স্মরণ করে দেহত্যাগ করবেন, তিনি তখনই আমার ভাবে প্রাপ্ত হন। এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

★"যং যং বাপি স্মরন্ ভাবং ত্যজত্যন্তে কলেবরম্ ।
তং তমেবৈতি কৌন্তেয় সদা তদ্ভাবভাবিতঃ ॥" (গীতা ৮/৬)
অনুবাদঃ অন্তিম/মৃত্যুকালে যিনি যে ভাব স্মরণ করে দেহত্যাগ করে, তিনি সেই ভাবে ভাবিত তত্ত্বকেই লাভ করে থাকেন।

★"বেদাহমেতং পুরুষং মহান্তং
আদিত্যবর্ণং তমসঃ পুরস্তাৎ।
মৃত্যু সম্পর্কে সনাতন ধর্ম / হিন্দু ধর্ম
Dead/thehindu9.blogspot.com
তমেব বিদিত্বাতিমৃত্যুমেতি
নান্যঃ পন্থা বিদ্যতেহয়নায় ।।" (শ্বেতাঃ ৩/৮)
অনুবাদঃসেই পরম পুরুষকে জেনেছি আমি, যিনি অন্ধকারের উর্ধ্বে, যিনি সূর্যের মতোই ভাস্বর। তাঁকে যিনি জানেন, কেবল তিনিই জন্ম-মৃত্যুর বন্ধনকে অতিক্রম করতে পারেন মাএ। এ ছাড়া মুক্তি লাভের অন্য কোন পন্থা/উপায় নেই।

আর সবারশেষে জেনে নেই মৃত্যু সম্পর্কে আদিগুরু কি বলেছেন -
"ভজ গোবিন্দম্ ভজ গোবিন্দম্ ভজ গোবিন্দম্ মূঢ়মতে ।
সম্প্রাপ্তে সন্নিহিতে কালে নহি নহি রক্ষতি ডুকৃঙ্করণে ।।"
(শঙ্করাচার্য)
অনুবাদঃ হে মহা মূঢ়মতি! প্রত্যয় ও উপসর্গ বিষয়ে তোমার ব্যাকরণগত বাকচাতুরি এবং তোমার দার্শনিক জল্পনা-কল্পনা মৃত্যুকাল সন্নিহিত হলে তোমাকে তোমরা আদৌ রক্ষা করতে পারবে না। সুতরাং শুধু গোবিন্দকে ভজনা কর।ভজনা কর এবং ভজনা কর।

মহাভারতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের পরিবারের অনেক সদস্য নিহত হবেন ভেবে তিনি এতটাি বিমর্ষ হয়ে পড়েন যে, যুদ্ধ করার ইচ্ছা শক্তি হারিয়ে ফেলেন।বিমর্ষ হয়ে তিনি বলেন, ''আমি যদি ত্রিভুবনও লাভ করি, তবু তাদেরকে  হত্যা করে আমি কখনই  সুখী হব না।"অর্জুনের ন্যায় আমরা প্রত্যেকে মৃত্যু নিয়ে চিন্তিত। পরিবারের সদস্যদেরও শত্রুদের আসন্ন মৃত্যু নিয়ে চিন্তিত অর্জুনকে মুক্ত করার জন্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে মৃত্যু সম্পর্কে বিস্তারিত বলেছেন মহাভারতে। মৃত্যু কি বা মৃত্যু বলতে আসলে কী বোঝায়!এই পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষ মনে করে মৃত্যু মানে সবকিছু শেষ হওয়া।তাই জড় দৃষ্টিকোণ থেকে এ জীবন এবং এ দেহ শেষ হওয়াকেই মৃত্যু বলে। কিন্তু নিত্য আত্মার মৃত্যু হয় না।তাই আত্মা অমর,অবিনশ্বর।
               সংগ্রহণকারী-সীমা সরকার।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>