বাংলাদেশের শীর্ষ ১১টি হিন্দু মন্দিরের নামের তালিকা ও বর্ননা

বাংলাদেশের হিন্দু তীর্থস্থান ও হিন্দু মন্দির সমূহ

 জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম  হিন্দু বা সনাতনী ধর্মের দেশ বাংলাদেশ। ভারত ও নেপালের পরে বাংলাদেশে বেশী সংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস । দেশবিভক্তি ও জাতিগত কলহের কারণে দিন  দিন

বাংলাদেশি হিন্দু জনসংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে গেলেও এখনো বাংলাদেশে অনেক প্রাচীন ও হিন্দু মন্দির রয়ে গেছে । তবে মুসলিম আধিপত্যর কারণে এবং বিধর্মী মানুষের জমি সংক্রান্ত লোভের দেশ বাংলাদেশ হিন্দু মন্দির গুলোর অধিকাংশ জমি বেদখল হয়ে গেছে । বিভিন্ন প্রতিকূলতা থাকলেও এখনও বাংলাদেশের মন্দির, আশ্রম বা আখড়ার সংখ্যা এক লাখের উপরে
বাংলাদেশের শীর্ষ ১১টি হিন্দু মন্দির সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল –

বাংলাদেশের শীর্ষ ১১টি হিন্দু মন্দিরের নামের তালিকা ও বর্ননা
বাংলাদেশের মন্দির/thehindu9.blogspot.com

★সৎসঙ্গ আশ্রম-পাবনাঃ-দশম তালিকায় থাকা  পাবনা শহরের নিকটে হেমায়েতপুর গ্রামের সৎসঙ্গ আন্দোলনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের সৎসঙ্গ আশ্রম । ঠাকুর অনুকূলচন্দ্র  জন্মগ্রহণ করেন ইংরেজি ১৮৮৮ সালের ১৪ ই সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ ভারতের বাংলাদেশের পাবনা জেলার রায়পুর নামক গ্রামে। তার শারীরিক অসুস্থতার জন্যে দেশভাগের পুর্বে  ভারতের দেওঘরে চলে আসেন। পরে তিনি আর কখনও  বাংলাদেশের পাবনায় ফেরেনি ।ইংরেজী ১৯৪৭ সালের পরে তৎকালীন  পাকিস্তান সরকার মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সৎসঙ্গ আশ্রমের জমি অধিগ্রহণ করে ও মানসিক হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে । 

পরবর্তিতে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের ভক্তরা নতুন উদ্যোমে পুনরায় আবার সৎ সংঘ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ শুরু করেন । বর্তমানে এখানে ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের একটি মন্দির রয়েছে । সৎসঙ্গ আশ্রম টিতে কোনো উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়নি । মন্দিরের পাশে শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের পূজার ঘর অবস্থিত । এখানে শ্রী শ্রী অনুকূল চন্দ্রের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী কে কেন্দ্র করে বিরাট অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় । প্রতিবছর ভাদ্র মাসের তাল নবমী তিথিতে ঠাকুরের জন্মতিথি উপলক্ষে স্নান যাত্রার আয়োজন করা হয় । ওই সময় এখানে কয়েক লক্ষ পুণ্যার্থীর সমাগম হয় । প্রচুর ভারতীয় প্রতিবছর এই মন্দির দর্শন করেন ।

★ চৈতন্য মন্দির-গোলাপগঞ্জঃ- নবম  তালিকায় থাকা বাংলাদেশের ঢাকা শহরের গোলাপগঞ্জ জেলার দক্ষিণ ইউনিয়নে অবস্থিত এই বিখ্যাত চৈতন্য মন্দির, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ঐতিহাসিক তীর্থস্থান । ভারতীয় উপমহাদেশের বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক চৈতন্য দেবের পৃ্ত্রী নিবাস চৈতন্য মন্দির । তার   মাতা পিতার পৈতৃক ভিটা  ছিল এখানে । পিতা  ছিলেন শ্রী জগন্নাথ মিশ্র এবং মাতা ছিলেন  শচী দেবী।তারাও  বসবাস করতেন এখানে ।চৈতন্যের বাবা মায়ের  বিবাহের কিছুদিন পর তার মাতা গর্ভবতী হলে তার মায়ের মা (দিদিমা) স্বপ্নে দেখেন যে, স্বয়ং ভগবান  হবে এই সন্তান । দিদিমার ইচ্ছানুসারে শ্রীচৈতন্যদেব একবার ঢাকায় এসেছিলেন তাঁর পিতার জন্ম ভিটা দেখতে । প্রতি বছর চৈত্র মাসে এখানে উৎসবের আয়োজন করা হয় । সারা মাস ব্যাপী চলমান এই উৎসবে মেলা, সং কীর্তন, পূজা প্রভৃতির ব্যবস্থা করা হয় ।

★রমনা কালী মন্দির-ঢাকাঃ- বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির অষ্টম  তালিকায় থাকা  রমনা কালী মন্দির ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত হিন্দু মন্দির সমূহের মধ্যে অন্যতম ছিল । এটি রমনা কালী বাড়ি নামেও পরিচিত ।এই প্রাচীন মন্দিরটি প্রায় হাজার বছরের পুরাতন বলে মনে করা হয় । তবে পুনরায় ব্রিটিশ  আমলে  রমনা মন্দিরটি আবার নতুন করে পুনঃ নির্মাণ করা হয়েছিল । রমনা কালী মন্দিরটি  ঢাকা শহরের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বহির্ভাগে  অবস্থিত ।তবে দুঃখজনক ভাবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানি হানাদারা রমনা কালী মন্দির ব্যাপক ভাংচুর  করে।

★কাল ভৈরব মন্দির-ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ- বাংলাদেশের হিন্দু মন্দিরসপ্তম  তালিকায় থাকা বাংলাদেশের বিখ্যাত কালভৈরব মন্দির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক এবং গুরুত্বপূর্ণ মন্দির । তিতাস নদীর কূল ঘেঁষে অবস্থিত কালভৈরব একটি ঐতিহাসিক ও ঐতিহ্যবাহী মন্দির হিসেবে বিখ্যাত । মন্দিরের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে কাল ভৈরব বিগ্রহ – যার উচ্চতা ২৮ ফুট । এই বিশাল উচ্চতা বিশিষ্ট বিগ্রহটি ১৯০৫ সালে তৈরি করা হয় । স্বাভাবিকভাবে প্রথম দর্শনে যে কেউ ভয় পেয়ে যেতে পারেন এই বিরাট আকারের মূর্তি দেখে । এই বিগ্রহের ডান পাশে রয়েছে একটি কালী মূর্তি এবং বাম পাশে পার্বতী দেবীর মূর্তি । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় কাল ভৈরবের বিগ্রহটি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নজরে এলে, তারা ডিনামাইটের আঘাতে শিব ও পার্বতীর অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত করে ।

★ শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম-বারদীঃ- বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির ষষ্ঠ  তালিকায় থাকা  ঢাকার  অদূরে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার বারদিতে বাবা লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রম অবস্থিত । বাবা লোকনাথের জীবনী থেকে আমরা দেখতে পাই, বারদিতে অবস্থানকালীন বাবা লোকনাথের অলৌকিক সত্তার পরিচয় চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে । বারদিতে গড়ে ওঠে বাবা লোকনাথের মন্দিরে লোকনাথের জন্ম তিথি উপলক্ষে প্রতিবছর মেলা বসে । উৎসবে অংশগ্রহণ করতে  ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকাসহ বিভিন্ন দেশের লক্ষাধিক মানুষ লোকনাথ ব্রহ্মচারীর বারদী আশ্রমে এসে সমবেত হয়ে পুজাঅর্চনা করেন।

★পুঠিয়া মন্দির চত্বরঃ–পঞ্চম তালিকায় থাকা বাংলাদেশের রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য পুরনো হিন্দু মন্দির নিয়ে পুঠিয়া মন্দির চত্বর অবস্থিত । রাজশাহী শহরের ২৩ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এখানে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ঐতিহাসিক ও পুরাতন মন্দির বিদ্যমান রয়েছে ।তৎকালীন  রাজশাহীর বিখ্যাত জনহিতৈষী রাজপরিবারের হিন্দু রাজারা এই মন্দির গুলো প্রতিষ্ঠিা করে ছিলেন । মন্দিরগুলোর অনেকগুলো টেরাকোটা সম্বলিত ও এগুলোর স্থাপত্য চোল- বাংলা স্থাপত্য রীতির মিলন ঘটেছে। এই রিতীকে বলে  ইন্দুস আর্সেনিক স্থাপত্য রীতি।এই রীতি অনুসারে নির্মিত পুঠিয়া মন্দির গুলো  একটি জলাধারের চারপাশজুড়ে রয়েছে । এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে পঞ্চরত্ন শিব, মন্দির, চৌচালা গোবিন্দ মন্দির, গোবিন্দ মন্দির, মন্দির বাজার, জগদ্ধাত্রী মন্দির । পুঠিয়া জমিদাররা অষ্টাদশ ও ঊনবিংশ শতাব্দীতে এই মন্দির নির্মাণ করেছিলেন । বিশালাকারের জায়গা জুড়ে এত মন্দির বাংলাদেশের আর কোথাও দেখা যায় না । একমাত্র ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে এ ধরনের মন্দিরের সমাহার রয়েছে ।

★আদিনাথ মন্দির, মহেশখালীঃ- বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির চতুর্থ  তালিকায় থাকা বাংলাদেশের কক্সবাজারে অবস্থিত আদিনাথ মন্দির বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত হিন্দু মন্দির । এটি বাংলাদেশের উপকূলীয় শহর কক্সবাজার থেকে ১২ কিলোমিটার দূরের দ্বীপ মহেশখালীতে রয়েছে। সনাতন ধর্মানুরাগীদের  দেবতা  মহাদেবের নাম অনুসারে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এই মন্দির শিব মন্দির নামে বহুল পরিচিত । সনাতন ধর্মের মানুষ এই মন্দিরের বিগ্রহ দেবতা মহাদিদেব মহাদেবকে খুব জাগ্রত দেবতা হিসাবে ভক্তি করেন ।

★ চন্দ্রনাথ ধাম-সীতাকুন্ড: বিষ্ণুদেবের সুদর্শন চক্র দ্বারা খন্ডনকৃত সতীর ডান হাত পড়ে চট্টগ্রামের জেলার সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ ধামে। গবেষকদের মতে, সতীর স্মৃতি বিজড়িত চট্টগ্রামের চন্দ্রনাথ ধামের নাম শুরুতে ছিল সতীকুন্ড কিন্তু পরে তা সীতাকুন্ড হিসাবে পরিচিতি লাভ করে।তবে বিষয়টি কিছুটা বির্তকিত। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী(শিব চতুর্দশী) তিথিতে মানুষের মেলা বসে চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত সীতাকুন্ড পাহাড়ে। ৩৫০ কিলোমিটারের একটি বড় অংশের পাহাড় এলাকা ঘিরেই  এ তীর্থক্ষেত্র এবং এর মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো সত্যিকার অর্থে খুবই মনোমুগ্ধকর।পাশাপাশি  দুই পাহাড়ের মাথায় আছে দুটি মন্দিরের অবস্থান। একটির নাম বিরুপাক্ষ মন্দির অন্যটির নাম চন্দ্রনাথ মন্দির। চন্দ্রনাথ মন্দিরটি সমতল ভূমি থেকে ১৩০০ ফুট উচ্চে পাহাড়ের শীর্ষদেশে অবস্থিত।

এ মন্দির তথা পাহাড় একে অন্যে মিলেমিশে একাকার হয়ে চন্দ্রনাথ ধাম হিসাবে পরিচিতি লাভ করে । প্রতি বছর শ্রীশ্রী শিবরাত্রি ব্রত উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের প্রধান তীর্থস্থান হিসাবে খ্যাত চন্দ্রনাথ ধামে বসে মানুষের মিলন মেলা।তীর্থস্থান পবিত্র স্থান। তীর্থের জল, মাটি বাতাস সবই পবিত্র ।তাইতো তীর্থ স্থানে গেলে মন পবিত্র হয়। মনে ধর্ম ভাব জাগে। ধর্মভাব জাগরনে মনের কলুষতা দূর হয়। পাপ কাজ থেকে মনকে সরিয়ে আনা সম্ভব হয়। তীর্থস্থান মানুষের মিলন মেলার স্থান। সেখানে গেলে কোন হিংসা-বিদ্বেষ, উচু নীচু ভেদ বৈষম্য কিংবা জাগতিক লোকসানের চিন্তাবোধ থাকেনা। তীর্থস্থান ভ্রমনের ফলে মনের ময়লা দূর হয়,পূর্ন্য আসে,মন জুড়ায়,অশান্তি দুর হয়।তাইতো কবি বলেছেন-
‘‘তীর্থের মহিমা না করা যায় বর্নন,
করিলে ভ্রমন হয় মনের পবিত্রতায় পূন্য সঞ্চালন”।

সীতা মন্দির নামে পাহাড়ের পাদদেশে আছে একটি মন্দির। এ মন্দিরটির অবস্থান আকর্ষনীয়। ধর্মীয় গাম্ভীর্যের ভাব আর প্রকৃতির নির্ঝরনী শব্দ দুয়ে মিলে মনোরম দূশ্য মুগ্ধ করে আগন্তুক ভক্তদের। উক্ত মন্দির অভ্যন্তরে আছে চতুর্ভূজা সীতাদেবীর মূর্তি। ত্রিপুরার ইতিহাসের তথ্যানুযায়ী সম্ভুনাথ মন্দিরের প্রথম কাজ হয়েছিল ১৫০১ খ্রিষ্ঠাব্দে। ১৯২০-২৪ সালে এ মন্দিরটি সংস্কার করেন ত্রিপুরার মহারানী রত্নমঞ্জরী। এ ছাড়াও মধ্যবর্তী পাহাড়ে আছে আরও বেশ কয়েকটি মন্দির। স্বয়ম্ভুনাথ, রামকুন্ড, লক্ষনকুন্ড মন্দিরের নাম বিশেষভাবে উল্যেখযোগ্য।উল্লেখিত মন্দির গুলোর মধ্যে এই তিথিতে ভক্ত সমাগম ও পুজার্চনা হয় সম্ভুনাথ মন্দিরে। কেননা সুউচ্চ পাহাড়ে যাদের পক্ষে উঠা সম্ভব হয়না তারাই এ মন্দিরে পুজার্চনা করেন।  ধনমানিক্য বাহাদুর , পরৈকোড়ার জমিদার বৃন্দাবন দেওয়ানের মাতা দুর্গারানী ও প্রতাপ চৌধুরী এবং মুক্তাগাছার জমিদার বিদ্যাময়ী দেবীর অর্থায়নে নির্মিত এই সম্ভুনাথ মন্দিরটি( ১৬০০সাল)।বর্ধমান জেলার শিয়ালশোলের রাজা শ্রীযুক্ত বাবু প্রমথনাথ মালিয়া শম্ভুনাথ ১৯ শতকে  মন্দিরে যাওয়ার ৬৮টি সিড়ি নির্মান করেন।পাদদেশ থেকে শীর্ষস্থান পর্যন্ত থাক থাক করে বানানো হয়েছে এর সিঁড়ি। সিঁড়িগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জন বানিয়ে দিয়েছেন। বেশিরভাগ  সিঁড়ির খোদিত আছে এর উদ্যোক্তার নামে। এই সিড়িগুলো পাপ খন্ডন অথবা নিকট আত্নীয়দের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে ।  জানা যায়,সিঁড়ি নির্মানের প্রথম উদ্যোগ গ্রহন করেছিলেন ২৪ পরগনা নিবাসী শ্রীগঙ্গারাম বিশ্বাস। তার বৃদ্ধ মাতা চন্দ্রনাথ দর্শনে এসে পাহাড়ী দূর্গমপথে পৌছুতে পারেননি চন্দ্রনাথ মন্দিরে।এ কারনে বৃদ্ধমাতা ছেলেকে নির্দেশ দেন- সীতাকুন্ড পাহাড়ে সিঁড়ি নির্মান করে দেওয়ার। মাতৃ আজ্ঞা পালন করতে ১২৭০ বঙ্গাব্দে শ্রীগঙ্গারাম বিশ্বাস সীতাকুন্ডের পাহাড়ী পথে ৭৮২টি সিঁড়ি নির্মান করেন। নানা কারনে সিঁড়ি গুলো ক্ষতিগ্রস্থ হলে ১৩২৯ বঙ্গাব্দে সিঁড়িগুলো সংস্কার করে দেন চব্বিশ পরগনার জমিদার শ্রীসূর্যকান্ত রায় চৌধুরী। এরপর শ্রীগোপাল চন্দ্র সাহা ও মধুসূধন সাহা নামের দুই সহোদর বিরুপাক্ষ মন্দির থেকে চন্দ্রনাথ মন্দির পর্যন্ত প্রায় ১.২৫ কিলোমিটারের পথে সিঁড়ি নির্মান করে দেন। এছাড়াও অন্নদা রঞ্জন বন্দোপাধ্যায় ও বসন্ত কুমারী দেবীর নামে রয়েছে কিছু সিঁড়ি। এ সিঁড়িগুলো নির্মানের ফলে তীর্থযাত্রীরা পৌছাতে পারেন শীর্ষস্থানে। মূল পাহাড়ী চুঁড়ায় অবস্থিত মন্দিরটি চন্দ্রনাথ মন্দির এবং সর্বোচ্চ গিরিশৃঙ্গে অবস্থিত বিরুপাক্ষ মন্দির।পরৈকোড়ার জমিদার নারায়ন লালা এ মন্দিরগুলোর নির্মাতা। তিনি চন্দ্রনাথ মন্দির ও বিরুপাক্ষ মন্দিরের জল সরবরাহের খরচ নির্বাহে ৮০০দ্রোন লাখেরাজ ভূমি দান করেছিলেন। ১৩২৫ সালে মন্দির গুলো ক্ষতিগ্রস্থ হলে রংপুরের ডিমলার রানী শ্রীমতী বৃন্দারানী চৌধুরানী বহু অর্থ ব্যায় করে মন্দিরগুলোর সংস্কার করে দেন।এ ছাড়াও তিনি ১৩০৪ বঙ্গাব্দে চন্দ্রনাথ ও বিরুপাক্ষ মন্দিরের সিঁড়ি ও লৌহ সেতু নির্মান করে দেন এবং তাঁর স্বামী রাজা শ্রীজানকি বল্লভ সেনের নামে স্মৃতি ফলক দেন। মন্দির নির্মান,সংস্কার ও উন্নয়নে আরও অনেক ব্যাক্তির অবদান রয়েছে। এর মধ্যে ত্রিপুরার রাজা শ্রীগোবিন্দ মানিক্য,সরোয়াতলী গ্রামের জমিদার শ্রীরাম সুন্দর সেন এবং ময়মনসিংহের জমিদার রাজেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী অন্যতম।বর্তমানে মন্দিরগুলো হারিয়েছে পূর্বশ্রী।তাই, সংস্কার করা জরুরী।

★কান্তজির মন্দির বা কান্তনগর মন্দির, দিনাজপুরঃ।দ্বিতীয়  স্থানে  কান্তজির মন্দির বা কান্তনগর মন্দির বাংলাদেশের দিনাজপুর এ অবস্থিত একটি সু প্রাচীন মন্দির । তিন তলা বিশিষ্ট এই মন্দিরে খুব সুন্দর ধর্মীয় স্থাপনার নিদর্শন দেখা যায় ।

★ঢাকেশ্বরী মন্দির, ঢাকাঃ- প্রথম  তালিকায় থাকা  বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে অবস্থিত ঢাকেশ্বরী মন্দির বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির । ঢাকা শহরের রক্ষাকর্ত্রী দেবী হিসাবে এই মন্দিরের নামকরণ করা হয়েছিল ঢাকেশ্বরী মন্দির । উজ্জ্বল হলুদ এবং লাল বর্ণের ঢাকেশ্বরী মন্দির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের দক্ষিণ পশ্চিম পার্শে অবস্থিত  ।ঢাকেশ্বরী  মন্দিরের উত্তর পশ্চিম কোণে আছে চারটি শিব মন্দির । এই মন্দিরে দেবী দুর্গার একটি ধাতু নির্মিত প্রতিমা রয়েছে ।

★ভবানীপুর মন্দির-শেরপুরঃ ভবানীপুর বাংলাদেশের বগুড়া জেলার শেরপুরে করতোয়া তটে অবস্থিত সতী মাতা তারার একান্ন শক্তিপীঠের অন্যতম এবং ভক্তদের জন্য এটি একটি পবিত্র তীর্থস্থান। সত্য যুগে দক্ষ যজ্ঞের পর যখন সতী মাতা দেহ ত্যাগ করলেন তখন দেবাদিদেব  মহাদেব সতীর মৃতদেহ কাঁধে নিয়ে  প্রলয় নৃত্য শুরু করলে বিষ্ণু দেব সুদর্শন চক্র দ্বারা সতীর মৃতদেহ ছিন্নবিছিন্ন করেন। এতে সতী মায়ের দেহখন্ডগুলো পৃথিবীর  একান্নটি স্থানে গিয়ে পড়ে।আর এ সকল স্থানসমূহ এরপর থেকে শক্তিপীঠ নামে  পরিনয় ঘটে। বিভিন্ন সূত্র মতে, করতোয়া নদীর তটে এই ভবানীপুরে সতী মাতা তারার বাম পায়ের অলঙ্কার বা বাম পাঁজর পড়েছিল। ভবানীপুর বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত শক্তিপীঠসমূহের মধ্যে অন্যতম। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশ- বিদেশের ভক্তরা সারা বছর এখানে তীর্থে আসেন। শক্তি দেবী ও ভৈরব এই শক্তিপীঠের শক্তি দেবী অর্পণা এবং ভৈরব বামন নামে পরিচিত।কথিত আছে যে এখানে একদা একজন শাঁখাওয়ালা (শাঁখা নির্মাতা) ভবানীপুর মন্দিরের ধারের গভীর জঙ্গলের পাশের একটি পুকুরের ধার অতিক্রম করছিলেন।এমন সময় সিঁথিতে সিঁদুর দেয়া একটি ছোট মেয়ে তার কাছে গিয়ে বলেছিল যে সে নাটোর রাজবাড়ির রাজকন্যা।সে শাঁখাওয়ালার কাছ থেকে এক জোড়া শাঁখা কিনল এবং বলল যে শাঁখাওয়ালা যেন নাটোরের মহারাণীকে বলেন যে প্রাসাদের একটি নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা ঝুড়ি থেকে তার শাঁখার দাম দিয়ে দেন। শাঁখাওয়ালা মেয়েটির বিনীত কথায় মুগ্ধ হয়ে তাকে শাঁখা দিয়ে দিলেন। শাঁখাওয়ালার মুখ থেকে ছোট মেয়েটির কথা শুনে মহারাণী লোকজন ও সেই শাঁখাওয়ালাকে নিয়ে মেয়েটির বলা জায়গায় গেলেন। শাঁখাওয়ালার প্রার্থনা শুনে মা ভবানী সেই শাঁখা-পুকুর থেকে তার দুই হাতের শাঁখা তুলে দেখালেন। মহারানী ও সেখানে উপস্থিত লোকজন এতে বিস্মিত হলেন এবং মা ভবানীর (মা তারার) মহিমা এই উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ল। এই কিংবদন্তির শাঁখা-পুকুরে তীর্থযাত্রীরা স্নান করেন।

৪ একর জমির ওপর প্রাচীর বেষ্টিত এই মন্দির চত্বর। এখানে রয়েছে মূলমন্দির, বেলবরণ তলা, শিব মন্দির ৪টি, পাতাল ভৈরব শিব মন্দির, গোপাল মন্দির, বাসুদেব মন্দির এবং নাট মন্দির বা ৮চালা। সেবা অঙ্গন, পবিত্র শাঁখা পুকুর, স্নানঘাট দুটি, বেষ্টনী প্রাচীরের বাইরে চারটি শিব মন্দির ও একটি পঞ্চমুন্ড আসন উত্তর অংশে বিদ্যমান। প্রভাতী-বাল্যভোগ, দুপুরে পূজা - অন্নভোগ, সন্ধ্যায়- আরতি ও ভোগ।প্রতি দিন মন্দিরে আসা ভক্তরা মিষ্টান্ন ও অন্ন ভোগ দেন ও পরে প্রসাদ গ্রহণ করেন। উৎসব ওপার্বণ গুলো হচ্ছে-মাঘী পূর্ণিমা হয় মাঘ-ফাল্গুনে, রাম নবমী হয় চৈত্র- বৈশাখে।এছাড়া শারদীয় দুর্গো উৎসব, দীপান্বিতা শ্যামাপূজা ও নবান্ন উৎসব ।১৯৯১-২০১০ সাল পর্যন্ত ভবানীপুর মন্দির সংস্কার, উন্নয়ন ও পরিচালনা কমিটির দ্বারা মা ভবানীর সম্পত্তিসমূহ তত্ত্বাবধানসহ মন্দিরের সমস্ত কর্মকান্ড পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু পরিতাপের বিষয় যে, দেবোত্তর বা অর্পিত সম্পত্তি আইনের অপপ্রয়োগের কারণে মা ভবানীর অনেক সম্পত্তি অবৈধভাবে বেহাত হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া কমিটির প্রাক্তন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সাংবাদিক দীপঙ্কর চক্রবর্তী ২০০৪ সালে আততায়ীদের হাতে নিহত হওয়ার পর ৭ বছর গত হলেও তার হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ ও দন্ডিত করা হয়নি।তদুপরি ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্য ভক্তদের জন্য নির্মাণাধীন অতিথিশালা অবৈধভাবে ভেঙ্গে ফেলেন।
        জয় বাংলাদেশি সনাতনীদের  জয়। MS

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>