বড়মা নৈহাটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কালি মুর্তি

★★★ভক্তদের মনস্কামনা পূর্ণ করেন নৈহাটি বড়মা নৈহাটিতে রয়েছে এমন এক মায়ের মন্দির যেখানে দক্ষিণা কালী পূজিত হয় বড়মা রূপে।কৃষ্ণ বর্ণ, মুক্ত কেশী, ভয়ংকরী চোখ দিয়ে আগুনের ছটা দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ছে, অলঙ্কারে মোড়া সমস্ত দেহ – চোখ জুড়িয়ে যাওয়ার মত রূপ নৈহাটির বড়মার(মা কালি)অনেক প্রাচীন কালী মন্দিরের কথা আপনাদের ইতিমধ্যে বলেছি , লিখেছি সেই সব মন্দির সৃষ্টির ইতিহাস ও তাদের সাথে জড়িয়ে থাকা অনেক অলৌকিক ঘটনা|আজ আপনাদের বলবো বাংলার একটি প্রাচীন ও জনপ্রিয় কালী পূজার কথা|যেহেতু আমার বড়ো হয়ে নৈহাটী অঞ্চলেই তাই শৈশব থেকেই নৈহাটির বড়োমার পুজো দেখে আসছি এই বড়ো মাকে নিয়ে বিশেষ কৌতূহল ও তার প্রতি একটা আলাদা রকমের বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধা রয়েছে আমার অন্তরে|আজকের পর্বে নৈহাটির বড়মা|
★★★ বড়মার মন্দির নৈহাটির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস প্রায় ৯৮ বছর পূর্বে ভবেশ চৌধুরী এবং কিছু লোক নবদ্বীপ গিয়েছিলেন রাস উৎসব দেখতে ।নবদ্বীপে গিয়ে তিনি রাধাগোবিন্দর বিশাল মূর্তি দেখে ভবেশ চৌধুরী ও তার লোকজনের মনের ইচ্ছে জাগে তারাও একটি বড় আকারের কালী মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো করবেন।নৈহাটি ফিরে এসে তারা প্রায় ২১ ফুট এর বড় কালী মূর্তি বানিয়ে পুজো শুরু করেন।তাদের ধারাবাহিকতায় মায়ের মূর্তি বিরাট উচ্চতার জন্যেই “বড়মা” হিসেবে বর্তমানে পরিচিতি লাভ পেয়েছে। ★★★নৈহাটির জগৎ বিখ্যাত বড়মার পুজোর বিস্তারিত তথ্য।পৃথিবীর বিখ্যাত কালি পুজো কোনটি মূলত পুজোর কিছুদিন আগে কোজাগরী লক্ষ্মী পুজোর দিন বড়মার কাঠামো পুজো করা হয়।আর এই কাঠামো পুজো মধ্য দিয়ে বড়মার পুজোর যাত্রা শুরু হয়। এরপর কাঠামোর উপর মা দেবীর মূর্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। দেবীকে সাজানো হয় প্রায় ২০০ থেকে 300 ভরী রূপো ও ১০০ থেকে 150 ভরী সোনার অলংকারে ।মায়ের মুখ মন্ডল ও দেহে মুকুট, চাঁদ মালা, মল রুপোর তৈরী ও জিহবা, ত্রিনেত্র, নাক,ভুরু, ও চন্দন আঁকা সোনার তৈরী।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে বড়মার টানে আসেন অনেক ভক্ত এবং তাদের দানের পয়সায় পুজোর আয়োজন করা হয় কোনো চাঁদা ছাড়াই।
 
boroma pic


যেহেতু দক্ষিণা কালী রূপে পূজিত হয় সেহেতু মায়ের পূজাতে বলি দেওয়ার হয় না।রিতি অনুসারে ভবেশ চৌধুরী বাড়ি থেকে অনেক ভোগ ও প্রসাদ আস।বড়মার পুজো তে অনেক ভক্তরা মাকে মানত করেন ও দন্ডি কাটেন। যাদের মন ইচ্ছা পূরন হয় সেই ভক্তরা মায়ের জন্য অলঙ্কার দেন।মায়ের কাছে পুজোর জন্যে যা ফল, কাপড় আসে তা অনাথ আশ্রম, বৃদ্ধাশ্রমে সহ নানাবিধ সামাজিক কর্মকান্ডে বিলি করা হয় এবং যদি বেনারসি শাড়ী পায় সেটি গরীব মেয়েদের বিবাহের জন্যে দেওয়া হয়।বড়মার কাছে দেওয়া ফল ও ফুল বিতরণ করা হয় হাসপাতালের মানুষদের মধ্যে।এছাড়াও ৫০০০-৬০০০ কিলোর ভোগ রান্না করা হয় বড়মার মন্দিরের রন্ধন ঘরে । বড়মার পুজোর সমস্ত রান্না করা হয় গাওয়া ঘিতেই এতে কোন প্রকার তেল ব্যবহার হয় না।শ্রাবক বছরের বিভিন্ন সময় তাছাড়া ১১ টা অমাবশ্যার রাতে মাকে পুজো করা হয় যেখানে প্রায় ৮০০ কেজির ভোগ রান্না করা হয় প্রতিটি অনুষ্ঠানে । 
★★★নৈহাটির বড়মার বিসর্জন।মায়ের বিসর্জন কিভাবে হয়? নৈহাটির বড়মার বিগ্রহ /প্রতিমা বিসর্জনও হয় অভিনব উপায়ে। বড়মার বিসর্জনের পূর্বে নৈহাটির শহরের অন্য কোন কালী প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়না।আশ্চর্যের বিষয় হলো মায়ের ও শিবের চক্ষু ছাড়া অন্য সমস্ত গয়না খুলে নিয়ে খোলা অলংকারের জায়গায় ফুলের গয়না দিয়ে সাজানো হয় মাকে এবং ট্রলি করেই মাকে গঙ্গায় বিসর্জন দেওয়া হয়।নৈহাটি বড়মা সবার মনের ইচ্ছে পূরণ করেন আর নীতি সর্বগ্রহণযোগ্য এই এই কারণেই প্রতি বছর আসেন হাজারো ভক্ত। 
★★★নৈহাটির বড়মার মন্দির কি ভাবে পৌঁছাবেন? হাওড়া থেকে বড়মা মন্দির পৌঁছানোর জন্য হাওড়া থেকে বাস ধরে চলে যেতে হবে BR Singha hospital তারপর একটু হাঁটলেই শিয়ালদাহ স্টেশন। তারপর শিয়ালদাহ – শান্তিপুর লোকাল ট্রেনে করে পৌঁছে যাবেন নৈহাটি জংশন। তারপর ১০ মিনিট হেঁটে পৌঁছে যাবেন বড়মার মন্দির।প্রাইভেট গাড়িতে করে গেলে ব্যারাকপুর ট্রাংক রোড এবং কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে গেলেই পৌঁছে যাবেন নৈহাটি। ভুবনমোহন মুখার্জী লেন হয়ে পশ্চিম দিকে গেলেই পাবেন নৈহাটি বড়মার মন্দির।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>