নিজের জীবন নষ্ট হচ্ছে কিভাবে বুঝবেন

আপনি নিজের জীবন নষ্ট করছেন,কিভাবে বুঝবেন? মনে করুন, আজ সপ্তাহের শেষ দিন। এই সপ্তাহের পুরোটা কাজ বা পড়াশুনা নিয়ে দারুন ধকল গেছে আপনার।শরীর এমন ক্লান্ত যে সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে মনে হচ্ছে এক্ষুনি শুয়ে পড়তে হবে আর সে কারনে কালকের পুরো দিনটা ঘুমানোর প্ল্যান আপনার মনে।আপনার মোবাইলে আকস্মিক ভাবে বন্ধুর ফোন এল, তারা সবাই মিলে সিনেমা দেখার ও একসাথে খাওয়ার প্ল্যান করেছে।যদিও আপনার ভয়ানক ক্লান্ত লাগছে – কিন্তু আপনি তাকে দু’টি কারণে ’না’ বললেন না। এক, বন্ধুরা আপনার ওপর মাইন্ড করতে পারে; দুই, না গেলে হয়তো দারুন মজা মিস করবেন এবং পরে যখন বন্ধুদের বন যে কোন কারও ফেসবুক পোস্ট দেখবেন, এবং এই রাতের গল্প শুনবেন – তখন কিন্তু আপনার খারাপ লাগবে। নিজের ইমেজ এবং মজা বা নিজের কোয়ালিটি ঠিক রাখার ভয়ে আপনি ভয়ানক ক্লান্ত হওয়ার পরও আপনি গেলেন বা যেতে হলো।ফলে শারিরিক ও মানসিক ফলাফল অবনতির পথে ,প্রয়োজনের তুলনায় রেস্ট নিতে না পারায় আপনি পরের সপ্তাহের জন্য রিচার্জ ও এডজাস্ট হতে পারলেন না, এবং কাজ বা পড়াশুনায় আপনার পারফর্মেন্স খারাপ হল।আপনি যে কোন পেশা বা যা কিছু করেন না কেন শরীর ও মনকে সময় দিতে না পারলে নেতিবাচক প্রভাব আসবেই। আবার মানুষ যখন দেখে, বন্ধুর ঘুরতে যাওয়ার ছবিতে শত শত লাইক ও কমেন্ট পড়েছে – তখন তারও ইচ্ছা হয় তেমনটা পেতে। সে হয়তো ঘোরাঘুরি তেমন একটা পছন্দ করে না – কিন্তু লাইক পাওয়ার লোভে ঘুরতে গিয়ে একগাদা ছবি তুলে নিয়ে আসে।
নষ্ট জীবন 
আবার দেখবেন, কিছু মানুষ ফোন হাতে নিয়ে সোফায় বসে পুরো ছুটির দিনটা কাটিয়ে দিচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া ঘেঁটে। নিজেকে কিভাবে এতে ’প্রেজেন্টেবল’ করা যায়, কিভাবে জনপ্রিয়তা পাওয়া যায় – এসব নিয়েই বহু মানুষের দিন কাটে। এর ফলে মানুষের মাঝে সম্পর্ক গুলো নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি, প্রতিনিয়ত অন্যের মত হওয়ার জন্য মানুষ চেষ্টা করে যাচ্ছে। নিজেকে ক্রমাগত ছোট ভাবছে, এবং অন্যকে হিংসা করার মাত্রা বাড়ছে। পৃথিবীর আধুনিকতার ফলস্বরূপ নানা ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া মানুষের যত সময় নষ্ট করছে সে অনুযায়ী পৃথিবীর ইতিহাসে মনে হয় কোনওকিছুই মানুষের এত সময় নষ্ট করতে পারেনি। জীবন নষ্ট এর ফাঁদ থেকে বাঁচার উপায় কি কি?নিম্নে তা ধারাবাহিক ভাবে দেওয়া হলো ঃ 
#১. মানুষের পক্ষে সবকিছু করা এবং পাওয়া সম্ভব নয়, এবং উচিৎও নয় – এই সত্য মেনে নিন।আপনি যখন এই সত্যিটা উপলব্ধি করবেন যে, একজন মানুষ তার জীবনে পৃথিবীর বেশিরভাগ খাবার, অভিজ্ঞতা, পোশাক, জ্ঞান – কিছুরই স্বাদ পায়না – এবং সেটা হাজার বছর বাঁচলেও সম্ভব নয় – তখন দেখবেন ব্যাপারটা অনেক সহজ লাগছে।

 #২. আপনার চাওয়াপাওয়া ও প্রয়োজনের ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা রাখবেন এবং বাকি সবকিছুকে ‘না’ বলুন জীবন থেকে আমরা কি চাই, আজকের দিনে কি চাই, কি কি কাজ করতে হবে, কোন কোন জিনিসটা আসলেই কেনা প্রয়োজন, কোন জিনিসটা জানা প্রয়োজন – সেই ব্যাপারে স্পষ্ট একটি রোডম্যাপ থাকতে হবে – এবং এর বাইরে যা-ই সামনে আসুক, যত লোভনীয় অফারই আসুক – সেগুলোকে না বলতে হবে।আপনার যদি কাল সকালে জরুরী মিটিং থাকে, তবে বন্ধুরা যতই ফ্রিতে সিনেমা দেখার বা ঘুরতে যাওয়ার অফার দিক – তাদের না করে দিন। কারণ, সকালের মিটিং এর জন্য রাতে ভালোমত রেস্ট নেয়া বা ফাইলে চোখ বুলানো আপনার জন্য বেশি জরুরী।

 #৩. আবেগের বদলে যুক্তিনির্ভর সিদ্ধান্ত নেয়ার অভ্যাস করুন যুক্তিভিত্তিক চিন্তার মানে, যে কোনও কাজ করার আগে তার ফলাফল বাস্তবতার দৃষ্টিতে বোঝার চেষ্টা করা। এখন যদি আরেকটি এপিসোড দেখেন, তবে কাল মিটিং// পরীক্ষা // ক্লাসের প্রস্তুতির কতটা ক্ষতি হবে? নিজেকে প্রশ্ন করুন: নিজেকে প্রশ্ন করুন ও শান্তনা দিন।যেমনঃফেসবুকে ‘নিলাম্বরী ঐন্দ্রিলা’ বা ‘ক্রেজি বয় সম্রাট’ এর বান্দরবানে ঘুরতে যাওয়ার ৪২টি ছবি দেখলে আমার কি লাভ হবে? আমাকে কি সকালে উঠতে হবে না? সকালে কি আমার কাজ নেই? পরিশিষ্ট: আপনার নিজের জীবনকে নষ্ট করার উপাদান যেমন আপনার নিজের মধ্যেই আছে, তেমনি সেই উপাদান ধ্বংস করার ওষুধও আপনার মাঝেই আছে। প্রয়োজন শুধু এগুলোকে আলাদা করে চিনে নেয়া।

#tag;নষ্ট জীবন থেকে রক্ষার উপায়,ভাল জীবনে ফেরার উপায়,নষ্ট জীবন থেকে ফিরে আসার সঠিক উপায়,সুন্দর জীবনের সুত্র,নষ্ট জীবন এড়িয়ে চলুন
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url