গীতা কি শুধুমাত্র একটি দার্শনিক গ্রন্থ
গীতা আসলে কি ধরনের গ্রন্থ?
গীতা হলো বেদ, উপনিষদ প্রাচ্যের মূল
দার্শনিক জ্ঞানগর্ভ গ্রন্থ। দর্শন হলো গ্রিক ভাষায় ফিলোসোফিয়া, আক্ষরিকভাবে
জ্ঞানের প্রতি ভালবাসা আক্ষরিক অর্থ অস্তিত্ব, জ্ঞান, মূল্যবোধ, কারণ, মন এবং ভাষা
সম্পর্কে সাধারণ এবং মৌলিক প্রশ্নগুলির অধ্যয়ন।
দার্শনিকেরা এবং পশ্চিমী বিজ্ঞানী
যেমনরবার্ট ওপেনহাইমার,কার্ল জাং, অ্যালডাস হাক্সলিজে,রালফ ওয়াল্ডো এমারসন, হেনরিক
হিমার ও হারমান হেস প্রমুখরা গীতার উচ্চতর প্রশংসা করেছেন তৎসঙ্গে প্রসংশার
ব্যাখ্যাও দিয়েছেন।
অষ্টাদশ শতাব্দীতের প্রথমার্ধে পাশ্চাত্য গবেষকদের মধ্যে
ভগবদ্গীতা-র অনুবাদ ও চর্চা শুরু হয়। এই সময় থেকেই ভগবদ্গীতা-র জনপ্রিয়তা বাড়তে
শুরু করে। ভারতীয় ইতিহাসবিদ ও সাহিত্যিক খুশবন্ত সিংয়ের মতে, রুডইয়ার্ড
কিপলিংয়ের বিখ্যাত কবিতা "ইফ—" হল ইংরেজিতে ভগবদ্গীতা-র বাণীর সারমর্ম।
আমেরিকান পদার্থবিদ ও ম্যানহ্যাটন প্রজেক্টের পরিচালক জে. রবার্ট ওপেনহাইমার উনিশশত
ত্রেত্রিশ শতকে সংস্কৃত শিখে ভগবদ্গীতা মূল সংস্কৃতে পাঠ করেন। পরবর্তীসময়ে তিনি এই
গ্রন্থটিকে জীবনদর্শনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে প্রভাবশালী গ্রন্থগুলির একটি বলে উল্লেখ ও
দাবি করেন। তিনি বলেছিলেন যে উনিশশত পয়তাল্লিশ সালে বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক
পরীক্ষাটি দেখার পর ভগবদ্গীতার একাদশ অধ্যায়ের ৩২ সংখ্যক শ্লোকটি থেকে "এখন আমি
বিশ্ববিধ্বংসী মৃত্যু হয়েছি" কথাটি তার মনে পড়েছিল। ফিলিপ গ্লাস তার সত্যাগ্রহ
(১৯৭৯) অপেরায় দক্ষিণ আফ্রিকায় গান্ধীর আন্দোলনের প্রথম পর্যায়টি তিনি
ভগবদ্গীতার মাধ্যমে দেখান।
গীতা দর্শন |
অপেরার মূল লিবারেটো অংশটি মূল সংস্কৃতে ভগবদ্গীতা গানের
মাধ্যমে উপস্থাপিত হয়েছে। ডগলাস জে. কোমোর অর্জুন'স ডায়ালেমা অপেরায় ভারতীয় ও
পাশ্চাত্য সাংগীতিক ঐতিহ্যের মাধ্যমে অর্জুনের দ্বিধার বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়।
দ্য লেজেন্ড অফ ব্যাগার ভেন্স উপন্যাস (১৯৯৫) ও গলফ চলচ্চিত্রটি (২০০০) ভগবদ্গীতা
অবলম্বনে নির্মিত।
সর্বপরি সকল দার্শনিক এক মতামত দেন যে গীতা এক জীবন দর্শন ।তাতে
ভাগবতের অলৌকিকতা সরিয়ে রেখে যদি প্রকৃত অর্থে অনুধাবন করেন তাহলে বুঝবেন গীতা আসলে
lifestyle / management coaching এর বই / গ্রন্থ যাকে ধ্রুবতারা করে জীবনের যুদ্ধে
অবতীর্ন হতে পারি আমরা -সে যুদ্ধ সাধারণ মানুষের চিত্তচাঞ্চল্য হোক অথবা পড়ুয়ার
পরীক্ষা দিতে যাওয়ার ভয়।
একজন mentor কিভাবে সাফল্য আনতে পারেন জীবনে গীতা না পড়লে
বোঝা যাবে না। গীতাকে ধর্মের আঙ্গিকে না দেখে বৃহত্তর অঙ্গনে দেখলে তবেই বোঝা যাবে
এ হল সভ্যতার শ্রেষ্ঠ জীবনমুখী গান।ধরুন গীতা কি কোনো ধর্ম গ্রন্থ নয়? উত্তর হয়তো
না তবে এটাও চিরন্তন সত্যি যে গীতা হলো জীবন দর্শন। শ্রীকৃষ্ণ নাম করে কোনো ধর্ম
পালনের কথা বলেন নি। তিনি কোনো ধর্ম প্রবর্তনও করেন নি।
তবে গীতায় জগত এবং জীবন
সম্পর্কে কিছু দার্শনিক জ্ঞান রয়েছে। ঠিক বেঠিক নিয়ে বিতর্ক চলতে পারে।কোন গ্রন্থ
মেনে জীবন চলে না।তবে গীতা বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের জন্য এক মহাজ্ঞানের ভান্ডার যা
প্রতোক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সবকিছু মানে সকলকিছুর সঙ্গে জরিত।ভুলত্রুটি হলে ক্ষমাসুন্দর
দৃষ্টিতে দেখবেন।জয় গীতা।।