ভক্তের মধ্যে ভগবান—তাৎপর্য কি?

ভক্তের মধ্যে ভগবান—এই কথার তাৎপর্য জানতে হলে আগে জানতে হবে ভক্ত কি ও ভগবান কি তবে চলুন জেনে নেই -

ভগবানঃভগবান - ভগ; মানে ঐশ্বর্য্য  এবং বান; মানে অধিকারী , যার আছে । ঠিক যেভাবে যার সুন্দর রূপ আছে আমরা তাকে বলি রূপবান, যার ধন আছে ধনবান , ঠিক সেভাবেই যিনি ভগ অর্থাৎ ঐশ্বর্যের অধিকারী তাকে বলে ভগবান ।ঐশ্বর্য্যস্য সমগ্রস্য বীর্যস্য যশসঃ শ্রিয়ঃ।জ্ঞানবৈরাগ্যয়োশ্চৈব ষন্নত্ ভগ ইতিঙ্গনা॥  অর্থাৎ পূর্ণ ঐশ্বর্য, পূর্ণ বীর্য, পূর্ণ যশ, পূর্ণ শ্রী, পূর্ণ জ্ঞান ও পূর্ণ বৈরাগ্য - এই ছয় প্রকার গুন যার মধ্যে পূর্ণরূপে বিদ্যমান তিনিই একমাত্র ভগবান।  একমাত্র শ্রীকৃষ্ণের/বিষ্ণুর মধ্যেই এই সকল গুণ পূর্ণরূপে বিদ্যমান, তিনিই একমাত্র ভগবান।

ভক্তঃযিনি ঈশ্বরোপাসনা করেন ভক্তির দ্বারা সাধারণত তাকেই ভক্ত বলা হয়। শ্রীমদ্ভগবতগীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ হইতে নিঃসৃত বাণী অনুযায়ী ভক্ত চার প্রকার। যথা:- আর্ত ভক্ত, অর্থাথী ভক্ত, জিজ্ঞাসু ভক্ত এবং জ্ঞানী ভক্ত। ★ আর্ত ভক্ত : যে বা যিনি বিপদে পরে ঈশ্বরকে স্মরণ করেন তাকে আর্ত ভক্ত বলে। যেমন দ্রৌপদী! ★ অর্থাথী ভক্ত : যিনি কোন ইচ্ছা বা প্রার্থনা পূরণের জন্য ভগবানকে স্মরণ করেন তাকে অর্থাথী ভক্ত বলে। যেমন অম্বা! ★ জিজ্ঞাসু ভক্ত : যিনি জ্ঞানের দ্বারা ভগবানকে জানতে বা বুঝতে পারেন তাকে জিজ্ঞাসু ভক্ত বলে। যেমন অর্জ্জুন! ★ জ্ঞানী ভক্ত : যিনি কোন কিছুর আশা না করে শুধু ভগবানকে ভক্তি বা তাঁরই ভজনা করেন তাকে জ্ঞানী ভক্ত বলে। যেমন প্রহ্লাদ! তাই ভগবানের কাছে জ্ঞানী ভক্তই শ্রেষ্ঠ। হ্যাঁ দুঃখ কষ্টের সময় ভগবানকে ডাকলে সাড়া দেন ঠিকই। তবে তা স্বার্থের ভালবাসা হয়ে গেল। প্রকৃত ভক্ত সেই, যে বিপদে-আপদে, সুখে-দুঃখে প্রতিটি মুহূর্তে ভগবানের নাম স্মরণ করেন। 

ভক্তের মধ্যে ভগবান
ভক্তের মধ্যে ভগবান 

ভক্তের মধ্যে ভগবান  কথার ব্যাখ্যা

পরমাত্মারুপে ভগবান প্রত্যেক জীবের অন্তরে নিত্য বিরাজমান। সর্বস্য চাহং হৃদি সন্নিবিষ্টো (গীতা ১৫/১৫) কিন্তু ভগবদবিমুখ ব্যক্তি কখনই তাঁকে জানতে পারে না। মূঢ় ব্যক্তিরা ভগবানকে অবজ্ঞা করে। অবজানন্তি মাং মূঢ়াঃ (গীতা ৯/ ১১)। ভগবান প্রতি অণু- পরমাণুতেও রয়েছেন, অণ্ডান্তরস্থ পরমাণুচয়ান্তরস্থং’ (ব্রহ্মসংহিতা) কিন্তু তাঁকে জানতে হলে শ্রদ্ধাভক্তি দরকার। যার মধ্যে ভগবদ্ভক্তি রয়েছে সে-ই ভক্ত।ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, ভক্ত্যা মামভিজানাতি (গীতা ১৮/৫৫) ভক্তির দ্বারাই ভগবানকে জানা সম্ভব। শ্রীমদ্ভাগবতে ভগবানের উক্তি—
সাধবো হৃদয়ং মহ্যং সাধূনাং হৃদয়ং ত্বহম্।
মদ-নৎ! তে ন জানন্তি! নাহং তেভ্যো! মনাগপি॥ শুদ্ধ ভক্ত সর্বদা আমার হৃদয়ে থাকেন এবং আমিও সর্বদা শুদ্ধ ভক্তের হৃদয়ে থাকি। ভক্তরা আমাকে ছাড়া অন্য কাউকে জানে না, আমিও তাদের ছাড়া আর কিছুই জানি না।” (ভাঃ ৯/৪/৬৮) ভগবান সর্বদা ভক্তবৎসল। ভক্ত সর্বদা ভগবানের নামকীর্তন, মহিমা প্রচার, স্তবস্তুতি করেন। ভগবানের নাম, মহিমা, রূপ, গুণ, লীলা ইত্যাদি কীর্তন করলে ভগবান অত্যন্ত প্রীত হয়ে ভক্তস্থানে অবস্থান করেন। শ্রীনারদ মুনিকে ভগবান বলেছেন—
না-হং! তিষ্টামি বৈকুণ্ঠে! যোগিনাং! হৃদয়েষু বা।
মদ্ভ-ক্তাঃ যত্র! গায়ন্তি তত্র! তিষ্ঠামি নারদ॥ওহে নারদ, যোগীদের হৃদয়ে আমি থাকি না কিংবা বৈকুণ্ঠে । যেখানে আমার ভক্তরা গান করে, সেইখানেই আমি অবস্থান করি। (পদ্মপুরাণ) অনেক সময় লোকে ভগবানের ভক্ত হতে চায়, কিন্তু তাঁর ভক্তের ভক্ত হতে চায় না। কিন্তু ভক্তরূপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু নিজের পরিচয় জ্ঞাপন করেছেন যে, তিনি হচ্ছেন গোপীভর্তুঃ পদকমলোর্দাসদাস সারমর্ম— ভগবানের ভক্তের দাসানুদাসানুদাস। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন —
ম-ম! ভক্তা হি! যে পার্থ! ন মে ভক্তাস্তু মে মতাঃ।
মদ্ভক্তস্য! তু মে ভক্তা-স্তে মে ভক্ততমা! মতাঃ॥
হে পার্থ! যারা কেবল আমার ভক্ত অর্থাৎ, কেবল আমার পুজা করে, কিন্তু আমার ভক্তের পুজা করে না, তারা প্রকৃতপক্ষে আমার ভক্ত নয়; কিন্তু যাঁরা আমার ভক্তের ভক্ত, তাঁরাই আমার সর্বশ্রেষ্ঠ ভক্ত।<আদি পুরাণ> সুতরাং, ভক্তের মাধ্যমে ভক্তবৎসল ভগবানকে জানা সম্ভব।

এই ওয়েবসাইটটিতে আরো জানতে পারবেন 

ভক্ত ভগবানের মিলন,ভক্তের ভগবান,তিন প্রকার ভক্তের মধ্যে ভগবানের সবথেকে প্রিয় ভক্ত কে,ভগবান কেন ভক্তের জন্য কাদে,মন্দিরের ভগবান ও বাড়ির ভগবানের মধ্যে পার্থক্য কি,ভক্তের ভগবান শ্রীকৃষ্ণ,ভক্ত ও ভগবানের মধ্যে সুন্দর ব্যাখ্যা,ভক্তের লাঠির ভয়ে ভগবান কি করলেন,মধ্যম ভক্তের গুনাবলি,ভগবানের ভক্তদের ভগবান কি না খাইয়ে রাখেন,ভগবান কি ভক্তের সেবা গ্ৰহন করেন।,ভক্তের বোঝা ভগবান সর্বদা বহন করে


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url