দামোদর মাস বা কার্তিক মাসের হলো ত্যাগের মাস

👉দামোদর মাস বা কার্তিক মাস সনাতন ধর্মালম্বীদের ইজন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাস ভগবান বিষ্ণুর মাস বলে খ্যাত। এই মাস ত্যাগের মাস হিসেবে ও পরিচিত।এই মাসে ভগবান বিষ্ণুর সেবা একগুণ করলে সহস্রগুণ ফল লাভ করা যায় । এই মাসে প্রত্যেক মন্দিরে বা তুলসী গাছের নীচে বিষ্ণুর প্রীতি লাভের জন্য দীপ দান করা হয়।

 
এই পূণ্য মাস সম্পর্কে পদ্মপুরাণ,ভাগবতপুরাণ,স্কন্ধপুরাণ ও শ্রীহরিভক্তিবিলাস শাস্ত্রে অসংখ্য তথ্য বলা আছে। পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে,এই পূণ্য মাসে ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে কেউ যদি একটি প্রদীপ দান করে তবে, তার সমস্ত পাপনাশ হবে এবং তার পুনর্জন্ম আর হবে না।তিনি সংসারে অজেয় ও অক্ষয়কীর্তি স্থাপন করবেন। নিরন্তন প্রদীপ জ্বালানো উচিত। প্রদীপটি মাটির হলে উওম হয়। প্রদীপটি জ্বালাতে সলিতা ও ঘি, তিলের তেল বা কর্পূর ব্যবহার করা হয়।কৃত্রিম ঘি ব্যবহার করবেন না।প্রদীপের আলোতে যেমন, চারদিক আলোকিত হয়ে সমস্ত অন্ধকার দূর করে;তেমনি ভক্তি ও জ্ঞান দ্বারা সকলের পাপ দূরীভূত হয়।

কার্তিক মাসের ছবি
দামোদর মাসের ছবি

অর্থাত্,প্রদীপের আলোর শিখা যত উজ্জ্বল হতে থাকবে,ততই তারপাপ ক্ষয় হতে থাকবে। স্কন্ধ পুরাণে বলা হয়েছে,এই মাসে যেপ্রদীপ দান না করে তারা ব্রহ্মঘাতী,গোঘাতী,স্বর্ণ অপহারী ও সদা মিথ্যাবাদী। দামোদর মাসে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তার মাতৃস্নেহের বন্ধনে আবদ্ধ হন। পৌরাণিক কাহিনী মতে, কলিপ্রিয়াতার স্বামীকে বধ করেছিল এবং তার ভুল বুঝতে পেরে সে নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্তেরজন্য এই দীপ দান করেন। 

এই পবিত্র মাসে দীপ দানের জন্য তিনি দেহান্তে বিষ্ণুলোক প্রাপ্তহন। আবার,এক স্ত্রী ইঁদুর প্রদীপের তেল খেতে এসে নিজের অজান্তেই প্রদীপের সলিতাকে উস্কে দেয় বা জ্বলতে সাহায্য করে;আর যার ফলশ্রুতিতে দেহান্তের পর সে ও বৈকুন্ঠলোক প্রাপ্ত হোন।পূজা দেয়ার সময় ভগবান বিষ্ণুর চিত্রপট বা বিগ্রহের চরণে চার বার,নাভি কমলে দুই বার,মুখমন্ডলে তিনবার ও সর্বাঙ্গে সাত বার (ডানদিক থেকে আরম্ভ করে) প্রদীপ প্রদক্ষিণ করাতে হয়। দামোদর মাসে সম্পূর্ণ ভক্তি,বিশ্বাস ও প্রেম দ্বারা ভগবান বিষ্ণুর পূজা করলে দেহান্তে বৈকুন্ঠ লাভ বা মুক্তি লাভ হয়।

তাই, আপনারা অন্তত পক্ষে একটি প্রদীপ ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে অর্পণ করুন।(দামোদর মাস) মাশকলাই,বেগুন, বরবটি,শিম বর্জন। দমোদর মাসেরব্রতপালন করুন ভগবান দামোদরের বিশেষ কৃপা লাভ করে আপনার জীবনকে ধন্য করুন।স্কন্দপুরাণে ব্রহ্মা-নারদ সংবাদে বলা হয়েছে :-পরম পূজনীয় মুনিবর! কার্তিক ব্রত না করে যে মানব , সে হয় ব্রহ্মঘাতী,সে হয় গোঘাতী,সে হয় স্বর্ণচোর,ও সে হয় সর্বদা মিথ্যাবাদী। ওহে বিপেন্দ্র, বহু পূজা করে এবং শতবার শ্রাদ্ধ করেও কার্তিকে ব্রত না করার ফলে স্বর্গ প্রাপ্ত হয় না।কার্তিকে ব্রত না করলে যে উৎকৃষ্ট দান,সুমহান তপস্যা ও জপ সকলই বিফল হয়।হে নারদ! কার্তিক মাসে উত্তম বৈষ্ণব ব্রত না করলে সপ্ত জন্মার্জিত পুণ্য বৃথা হয়।দামোদর_ব্রতের_মাহাত্ম্য স্কন্দ ও পদ্মপুরাণে দামোদর ব্রতের মাহাত্ম্য প্রসঙ্গে বলা হয়েছে :-সর্বতীর্থে যে স্নান,সর্বদানেরযে ফল,কার্তিক মাসের কোটি অংশের একাংশেরও সমান হয় না।কার্তিকের সমান মাস নাই, সত্যযুগের সমান যুগ না,বেদের সমানশাস্ত্র নাই,গঙ্গার সমান তীর্থ নাই।যে মানব কার্তিকে শ্রীবিষ্ণু মন্দির প্রদক্ষিণ করে সে পদেপদে অশ্বমেধ যজ্ঞের ফলভাগী হয়।

যে মানব কার্তিকে শ্রীহরির সম্মুখে নৃত্য,গীত,বাদ্য,ভক্তিসহ করে,সে অক্ষয়পদ বিষ্ণুধাম প্রাপ্ত হয়।হে মুনিবর! কার্তিকে যিনি হরিকথা শ্রবণ করেন,তিনি শতকোটি জন্মের আপদসমূহ থেকে নিস্তার পান।কার্তিকে নিমেষার্দ্ধকাল দীপদান ফলে সহস্রকোটিকল্প অর্জিত বহু পাপ বিলুপ্ত হয়।মেরু ও মন্দর পর্বত সদৃশ অশেষ পাপ করলেও কার্তিকে দীপদান প্রভাবে সর্বপাপ দগ্ধ হয় –এতে সন্দেহ নাই।এছাড়া আরো অনেক মাহাত্ম্য পুরাণে বর্নিত আছে:-বন্ধুদের অনুরোধ করব,আপনারা দামোদর ব্রত পালন করুন এবং মানব জীবন ধন্য করুন। এই মাসে বেশি করে হরিনাম জপ করুন এবংপ্রতিদিন সন্ধ্যায় ভগবান দামোদরকে দীপদান করুন।

দামোদর মাসে নিরামিষ খাদ্য কেন গ্রহণ করা উচিত ?


এ মাসে সকলেরই নিরামিষ ভোজন করা উচিত।প্রতিদিন ভাগবতের প্রথম স্কন্ধের দামবন্ধন লীলী পাঠ করা উচিত। দিনের বেলা ভোগরাগ, প্রসাদ গ্রহণ করা উচিত।
স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে—-
“অব্রতেন ক্ষিপেদ যন্ত মাসং দামোদর –প্রিয়ম ।
তির্যগমোনীমবাপ্ লোতি সর্ব ধর্ম বহিস্কৃতঃ ।।
স ব্রহ্মহ স গোঘ্নশ্চ স্বর্ণস্তেয়ী সদানুতী ।
নকরোতি মুণিশ্রেষ্ঠ যো নঃ কার্ত্তিকে ব্রতম ।।"
হে মুণিশ্রেষ্ঠ নারদ! ভগবান শ্রী দামোদরের প্রিয় কার্তিক মাস যে ব্যক্তি বীণা নিয়মে অতিবাহিত করে সে সর্বধর্ম বহিস্কৃত ও তীর্যক যোনী প্রাপ্ত হয়ে থাকে।যে ব্যক্তি কার্ত্তিক ব্রত পালন করে না, সে ব্রহ্মঘাতী, গো ঘাতী, স্বর্ণ অপহারী ও সদা মিথ্যাবাদী হয়ে থাকে। দামোদর আরতি নিবেদনের নিয়ম : ঘৃত বা তিলের তৈল যুক্ত কর্পূর মিশ্রিত প্রদীপ দ্বারা ভক্তি সহকারে ভগবানের চরণে চার বার, নাভি দেশে দুই বার, মুখ ম-লে তিনবার এবং সর্বাঙ্গে সাতবার ডানদিক থেকে প্রদীপ ঘুরিয়ে আরতি করুন। মাটির প্রদীপ একবারই ব্যবহারযোগ্য। এ প্রসঙ্গে আর একটি কাহিনী আছে- কোন এক মুষিকা (স্ত্রী ইঁদুর) কার্তিক বা দামোদর মাসে একাদশীর দিনে ঘটনাক্রমে অন্যের জ্বালানো প্রদীপের তেল খেতে গিয়ে তার মুখের সাহায্যে প্রদীপের শৈলত্যে জাগিয়ে দেয়। ফলে প্রায় নিভে যাওয়া প্রদীপের আলো আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠে এবং এই সুকৃতির ফলে তার বৈকুণ্ঠ গতি লাভ হয়। শাস্ত্রে আরো বলা হয়েছে, যদি কেউ প্রদীপ দেখাতে নাও পারে শুধুমাত্র প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত বিষ্ণু মন্দির দর্শন করেন তবে কেউ নরকগামী হন না সেই বংশের ।দামোদর বা কার্তিক মাসের গুরুত্ব আরোপ করতে গিয়ে শ্রীল প্রভুপাদ বলেন, এই পবিত্র মাসে যারা ভগবান শ্রীদামোদরের উদ্দেশ্যে ভক্তিসহকারেভগবানের আনন্দ বিধানের জন্য প্রদীপ নিবেদন করে তাহাদের অজ্ঞান অন্ধকার দূরীভূত হয়ে হৃদয়ে জ্ঞানপ্রদীপ প্রজ্জ্বলিত হয় এবং সমস্ত কলুষতা থেকে মুক্ত হয়। অবশেষে মানব জীবনের চরম উদ্দেশ্য কৃষ্ণভক্তি লাভ করে গোলোকে গতি লাভ হয়।
👏ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন👏👏হরে কৃষ্ণ🌸🍁🍀হরে কৃষ্ণ

দামোদর মাসের মাহাত্ম্য,কার্তিক মাসের মাহাত্ম্য,কার্তিক মাস,দামোদর মাস,দামোদর মাসের নিয়ম,দামোদর মাসের মহিমা,কার্তিক মাসের নিয়ম,দামোদর ব্রত,কার্তিক মাসের ব্রত কথা,কার্তিক মাস পালনের নিয়ম,দামোদর মাস পালনের নিয়ম,দামোদর মাস 2022,দামোদর মাসে দীপ দানের মাহাত্ম্য,দামোদর মাস 2022,দামোদর মাস ২০২২,দামোদর মাস ২০২২,নিয়ম সেবা মাস,দামোদর মাস বা কার্তিক মাসের মাহাত্ম্য,দামোদর ব্রত পালনের নিয়ম,কার্তিক (দামোদর) মাসের মাহাত্ম্য,পুরুষোত্তম মাসের মাহাত্ম্য


Next Post Previous Post
1 Comments
  • নামহীন
    নামহীন ১৫ এপ্রিল, ২০২২ এ ৮:৩৫ PM

    দারুণ লাগলো ��

Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>