পূর্ব জন্মের কর্মফল সম্পর্কে আলোচনা

কথায় আছে যেমন কর্ম তেমন ফল । বেদান্তসূত্রে বলা হয়েছে, জগৎকে সৃষ্টির জন্য ব্রহ্মকেও জীবের কর্মফলের অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে। আমাদের সাধারণ জীবনযাপনে দেখা যায় অনেকেই নানা পদ্ধতিতে শ্রমের দ্বারাও জীবনে সুখের সন্ধান পেতে পারে না আবার অন্যদিকে কেউ কেউ বিনা পরিশ্রমেই অনেক শ্রমের ফল ভোগ করে। উপনিষদে বলা হয়েছে ভাল কাজ করলে পুণ্য আর পাপ কাজ করলে মন্দ ফল ভোগ করতে হয়। পূর্ব জন্মের কর্মফলেই ইহলোক ও পরলোক প্রাপ্তির প্রধান কারণ হিসাবে মনে করা হয়। দেহত্যাগের পর যারা খুব পুন্যবান তারা চন্দ্রালোকে যান সুখ ভোগ করতে, আর পাপী আত্মাদের গন্তব্য হয় যমলোকে।

পূর্বজন্মের কর্মফলের ছবি
পূর্বজন্মের কর্মফলের ছবি

কোন পাপের ফল পরের জন্মে কীভাবে পাবেন হিন্দু পুরাণ বলছে, মানুষ যতই চেষ্টা করুক না কেন, কর্মফল কখনওই বর্তমান জন্মে ভোগ করা যায় না। ভাল-খারাপ দুই ধরনের কাজেরই ফলাফল মেলে পরের জন্মে। 

শুধু তাই নয়, বর্তমান জন্মও প্রভাবিত হয় পূর্বজন্মের কৃতকর্ম দিয়ে। অর্থাত্‍ পরবর্তী জন্মে জন্ম নেওয়ার আগেই, পূর্বজন্মের কর্মফল অনুযায়ী ঠিক হয়ে যায়, পরের জন্মে কোন অবতারে জন্মগ্রহণ করবে একজন মানুষ। তার মানেটা দাঁড়ায় এই যে, এই জন্মে যদি খারাপের পাশাপাশি ভাল কিছুও ঘটে, তবে তা আগের জন্মের কিছু পুণ্যের ফল। বহু প্রাচীন গ্রন্থ মতে, একটি মানব জন্ম পেতে গেলে তার আগে ৮৪০০০ বার মানুষকে জন্মাতে হয়। এককোষী প্রাণী থেকে শুরু করে প্রায় পৃথিবীর যাবতীয় জীবজন্তুর রূপে জীবন কাটিয়ে তবেই পাওয়া যায় মানবজীবন।  আর একটি মানবজীবনের পরে তার পরের জন্মে সেই আত্মা কী রূপে জন্ম নেবে তা মূলত নির্ভর করে তার মানবজনমের পাপ-পুণ্য এবং কর্মফলের উপর। সেই আত্মা একটি পোকা হয়েও জন্মাতে পারে আবার মানবরূপেও পুনর্জন্ম লাভ করতে পারে। গরুড় পুরাণ অনুযায়ী, যখন কোনও আত্মা মানবজন্ম লাভ করতে যায়, তখন মায়ের গর্ভে ৯ মাস সে ঈশ্বরের আশীর্বাদধন্য হয়ে থাকে কিন্তু জন্মানোর পরেই সে ঈশ্বরকে বিস্মৃত হয় এবং নানা ধরনের পাপকর্মে লিপ্ত হয়। চুরি, প্রতারণা, খুন, অকারণে অন্যকে আঘাত করা- এমন হাজারো পাপকাজ মানুষ করে চলে এবং তার উপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হয়ে যায় পরের জন্মে ঠিক কী রূপে জন্মগ্রহণ করবে সে।

পূর্ব জন্মের কর্মফলের শ্রীমৎ ভগবত গীতার প্রমাণঃ

পূর্ব জন্মে র কর্মফল আমাদের ভোগ করতে ই হয়।। । আমরা এই মনুষ্য পেয়ে ছি,,, এই জন্ম খুব ই দুর্লভ।। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পিতামহ ভীষ্ম,প্রচন্ড বেদনায় ছটফট করছিলেন অর্জুনের বানে ভূমিতে ধরাশায়ী হয়ে  । একে একে সবাই উনাকে দেখতে আসছিলেন।
একদিন ভগবান শ্রীকৃষ্ণও উনাকে দেখতে এলেন। শ্ৰীকৃষ্ণকে দেখে ভীষ্ম বললেন, " হে জনার্দন, আমি পূর্ব জন্মেএমন কি পাপ করেছিলাম ,, যে এই জন্মে এত বড় শাস্তি এত কষ্ট আমাকে ভোগ করতে হচ্ছে ?ভগবান উত্তরে জানালেন,  আপনি তো স্মরন করতে পারেন নিজেই পূর্ব জন্মের কথা , তাহলে আপনি আপনি পূর্ব জন্মে কি পাপ করেছিলেন নিজেই দেখুন না ?পিতামহ মহাভীষ্ম জানালেন,১০০ জনমের কর্ম আমি দেখে ফেলেছি সেই ফলে তো কোনো ত্রুটি দেখিনা ,আমি মোটামুটি নিশ্চিত  এই ১০০ জনমের মধ্যে আমি এমন কোনো কর্ম করিনি যেটাতে আমি এত বড় শাস্তি পেতে পারি ।
মহান সৃষ্টিকর্তা ভগবান জানালেন,আপনি এই ১০০ জনমের ঠিক একটি জনম আগে দেখুন কৃপা করে  (অর্থাৎ ১০১ নং জনম),তাহলে এর উওর আপনি পেয়ে যাবেন।তখন চোখ বন্ধ করে ধ্যান পূর্বক পিতামহ ভীষ্ম  দেখতে লাগলেন- ঐ জনমে তিনি এক জন খুবই ধার্ম পরায়ন রাজা ছিলেন।তিনি বিশাল সৈন্যদল নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন একদিন । পথের মাঝে একটি সাপ এসে তাদের যাত্রায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।

একজন সৈনিক এসে জানালেন, একটি সাপ রাস্তার মাঝে বসে আছে মহারাজ, সাপটাকে কি করবো? তুমি সাপটিকে একটি লাকড়িতে বেঁধে পাশের জঙ্গলে ফেলে দাও একথাটি  রাজা বললেন।সৈনিক তাই করলো, কিন্তু সাপটি জঙ্গলে একটি বিশাল কাঁটার ঝোপের মধ্যে আটকে গিয়ে প্রচন্ড যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে অবশেষে পাঁচদিন পর মারা গেল ।

পিতামহ ভীষ্ম তখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কে বললেন, দেখলাম আমার পাপ কর্ম, কিন্তু আমিতো সাপটিকে বাঁচানোর জন্য জঙ্গলে ফেলেদিয়েছিলাম, নাহলে তো সাপটি আমার রথের চাকার নীচে চাপা পরেই মারা যেতো।মহান সৃষ্টিকর্তা ভগবান জানালেন,কিন্তু আপনিতো একবারও জন্যও ফিরে দেখলেন না ঐ সাপটির কি পরিনতি হলো শেষ পযন্ত অথবা আপনি একবারের জন্যে ঐ সাপটিকে বাঁচানোর চেষ্টাও করেন নি তাই এর ফল স্বরুপ আজ আপনার এই পরিনাম। অথচ আপনার পুন্য কর্ম এত বেশী ছিল যে গত ১০০ জনমেও আপনি কোন পাপের ফল ভোগ করেন নি। " মানুষ জেনেই হোক বা না জেনেই হোক তার ফল ভোগ অবশ্যই করতে হবে যে যেমর কর্ম করছে তার উপর নির্ভর করে ফল নির্ধারণ হয় ।
কেউ এই জনমে বা কেউ পরের জনমে ভোগ করছে। কুকুর, ছাগল, বাঘ ইত্যাদি জন্তু জানোয়ারেরা পূর্ব জন্মে এই ধরনের নীচ কর্ম জেনে শুনে করেছে বলেই তারা এই রুপে অনেক যাতনার শিকার হচ্ছে। তাই বন্ধুরা সাবধানেই প্রত্যেকটি কর্ম করা উচিত। জয়শ্রী কৃষ্ণ হরিবল।

👽💀👿হিন্দু ধর্ম ও উপাসনার ধর্ম মতে পাপের ফল অনেকগুলো বিদ্যমান থাকলেও নিম্নে  এমন বেশ কিছু পাপের পরজন্মের ফল উল্লিখিত রয়েছে। নীচে তেমন চারটি উদাহরণ রইল-  ১. কোনও পুরুষ যদি কোনও মহিলার সঙ্গে জোর করে সঙ্গম করে তবে তার পরের প্রথম জন্মে সে হবে নেকড়ে, দ্বিতীয় জন্মে শেয়াল, তৃতীয় জন্মে শকুন, চতুর্থ জন্মে সাপ এবং পঞ্চম জন্মে সারস।  ২. যে পরিবারের বা পরিবারের বাইরের বয়োঃজ্যেষ্ঠ মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে এবং সর্বসমক্ষে অপমান করে তাকে পরের জন্মে কাক হয়ে জন্মাতে হবে এবং কাকরূপে অন্ততঃপক্ষে ১০ বছর তাকে থাকতে হবে।  ৩. সোনা চুরি করা পুরাণ মতে এক ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এমন কাজ যে করবে তাকে পরের জন্মে পোকা হয়ে জন্মাতে হবে। পাশাপাশি, যদি কেউ রুপো চুরি করে তাকে পরের জন্মে পায়রা হয়ে জন্মাতে হবে।  ৪. কারও পোশাক চুরি করা বা কারও অঙ্গ থেকে পোশাক টেনে নেওয়ার মতো গর্হিত কাজ করলে সেই ব্যক্তিকে পরের জন্মে টিয়াপাখি হয়ে সারাজীবন খাঁচাবন্দি অবস্থায় কাটাতে হবে।  ৫. খুনের জন্য অত্যন্ত কড়া শাস্তির বিধান দেওয়া রয়েছে। এই কাজ করলে পরের জন্মে গাধা হয়ে জন্মাতে হবে। দিনরাত মালিকের অত্যাচার এবং অতিরিক্ত মোট বওয়াই হবে তার কৃতকর্মের ফল। 

 

মানুষ কি এক জন্মেই সব কর্মফল ভোগ করে,পূর্ব জন্মের কথা,পূর্ব জন্মের পাপ কি পরের জন্মে ভোগ করতে হয়?,পূর্ব জন্মের কর্মের ফল,পূর্ব জন্মের কর্মের ফল এই তিন ধরনের সন্তান,এই তিন ধরনের সন্তান হল পূর্ব জন্মের কর্মের ফল,পূর্বজন্মের কর্মফল,পূর্ব জন্মে,খারাপ কর্মের ফল,পূর্ব জন্মে পাপ থাকলে কতদিন পর্ম কর্মফল ভোগ করতে হয়,আগের জন্মের কর্মফল কেন আমরা এই জন্মে ভোগ করি,পূর্ব জন্মের সাথে সম্পর্ক,আগের জন্মের কর্মফল কেন আমরা ভোগ করি,সনাতন ধর্মে পূর্ব জন্মের কর্মফল,


Next Post Previous Post
2 Comments
  • নামহীন
    নামহীন ৩০ মার্চ, ২০২২ এ ৯:৫৩ AM

    nice writing..

  • নামহীন
    নামহীন ২৬ এপ্রিল, ২০২২ এ ২:৪৬ PM

    দারুণ লাগলো 🙏🙏

Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>