গীতা বাদে আর কোন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বলা আছে যে শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর?

এই প্রশ্নের উত্তরটা জানতে আমাদের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের বিভিন্ন সড়ক সম্পর্কে জানতে হবে। সেজন্য আপনাকে কিছুটা সময় দিয়ে এই পোস্টটা পড়তে হবে। আশা করি এই পোস্টটি করলে হিন্দু ধর্মের লোকদের আর মাথা নিচু করে থাকতে হবে না। সুতরাং আর্য সমাজী ও বিধর্মীদের কাছে আপনার মাথা উঁচু হবে এটুকু নিশ্চিত থাকুন।প্রত্যেকটি সনাতনী এই বিষয়ে বিতর্ক উঠলে যথেষ্ট প্রমাণসহ বলতে পারবেন যে--- শ্রীকৃষ্ণই ঈশ্বর।। ♠♠  ♠ আজকাল অনেক মূঢ় লোকেরাই শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর মানতে চান না, এমনকি অনেক মূঢ় হিন্দুরাও শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর মানতে চান না, গীতায় যে শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে ঈশ্বর বলেছেন সেটাও তারা মানতে চান না।।  *** তারা বলেন যে--- গীতা নাকি শ্রীকৃষ্ণের বাণী নয়,

কোনো শাস্ত্রে নাকি শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর বলা হয়নি.... ইত্যাদি আরও অনেক বানোয়াট ও বুদ্ধিহীনের মতো কথা বলে তারা। এইসব কথা বলে তারা প্রমাণ করতে চায় যে--- "শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর নন"।♣নিচে গীতা ও পুরাণ বাদে আর কোন শাস্ত্রে শ্রীকৃষ্ণকে "ঈশ্বর" বলা হয়েছে সেই সম্পর্কে আলোচনা করা হলো---  ঈশ্বর হলেন "সর্বশক্তিমান"। তিনি যেমন একদিকে নিরাকার তেমনি তিনি অন্যদিকে সাকারও। "তবে ঈশ্বর প্রকৃতপক্ষে সাকার"--- যার অনেক প্রমাণ বৈদিক শাস্ত্রে রয়েছে। হিন্দুদের বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণকে "ঈশ্বর" বলা হয়েছে।।  ♥ পবিত্র বেদে যিনি "বিষ্ণু/নারায়ণ" নামে পরিচিত তিনিই হলেন "শ্রীকৃষ্ণ"। শ্রীবিষ্ণু ও শ্রীকৃষ্ণ ভিন্ন কেউ নন। শ্রীবিষ্ণু স্বয়ং নিজে শ্রীকৃষ্ণের রূপ ধারণ করে এই পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন।। ♥  ★★ যেসব ধর্মগ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর বলা হয়েছে সেগুলো হলো--- ঋগ্বেদ, মহাভারত (পঞ্চম বেদ), ব্রহ্মসংহিতা।  এই গ্রন্থগুলো ছাড়াও "শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত" নামক গ্রন্থে শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর বলা হয়েছে। তবুও শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থটিতে কিছু ভুল-ভ্রান্তি রয়েছে। 

গীতা বাদে আর কোন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বলা আছে যে শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর?
গীতা বাদে আর কোন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বলা আছে যে শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর?

তবে সেই গ্রন্থটিতে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নিজের বলা বাণী ব্যতীত অন্য কোনোকিছুকেই একেবারে সঠিক বলা খুবই কঠিন।।  ♣ ঋগ্বেদে বলা হয়েছে----  ১| ইদং বিষ্ণুর্বিচক্রমে ত্রেধা নিদধে পদম্। সমূলহনস্য পাংসুরে।। (ঋগ্বেদ- ১/২২/১৭)  *** পদার্থঃ i) ইদং-- এই ii) বিষ্ণু-- পরমেশ্বর ভগবান শ্রীবিষ্ণু iii) র্বি-- বিবিধভাবে iv) চক্রমে-- গঠন করিয়াছেন v) ত্রেধা-- তিন প্রকারের vi) নিদধে-- ধারণ করিয়াছেন vii) পদম্-- পা viii) স-- তিনি ix) অস্য-- ইহার x) পাংসুরে-- ধূলিকণাপূর্ণ।  অনুবাদঃ "শ্রীবিষ্ণু" এই তিন প্রকারের জগৎকে বিবিধভাবে গঠন করিয়াছেন। তিনি তার ধূলিকণাপূর্ণ পা দ্বারা ইহাকে ধারণ করিয়াছেন।  ২| ওঁ তদবিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ। দিবীব চক্ষুরাততম্।। (ঋগ্বেদ- ১/২২/২০)  *** পদার্থঃ i) তদ-- সেই ii) বিষ্ণোঃ-- পরমেশ্বর ভগবান শ্রীবিষ্ণু iii) পরমং-- পরম iv) পদং-- পদ। এখানে "পদ" শব্দের অর্থ "পা" নয়। এখানে "পদ" শব্দের অর্থ "স্থান"। v) সদা-- সবসময় vi) পশ্যন্তি-- দর্শন করেন vii) সূরয়ঃ-- ধার্মিক-জ্ঞানী লোক viii) দিবীব-- দিব্য ix) চক্ষু-- চোখ x) আততম্-- সূর্যের প্রকাশ।  অনুবাদঃ ধার্মিক-জ্ঞানী লোকেরা তাদের "দিব্য চক্ষু" দ্বারা সূর্যের প্রকাশের মতো প্রকাশমান "শ্রীবিষ্ণু" এর যে "পরম পদ" আছে তাহাকে সবসময় দর্শন করেন।  ♣ মহাভারতে বলা হয়েছে----  ১| যত্তৎ পরং ভবিষ্যঞ্চ ভবিতব্যঞ্চ যৎ পরম। ভুতাত্মা চ প্রভুশ্চৈব ব্রহ্ম যচ্চ পরং পদম্।। তেনাস্মি কৃতসংবাদঃ প্রসন্নেন সুরর্ষভাঃ। জগতোহনুগ্রহার্থায় যাচিতো মে জগৎপতিঃ।। (মহাভারত- ৬/৬৫/৬-৭) (অনুবাদকঃ হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ)  অনুবাদঃ দেবশ্রেষ্ঠগণ! সেই যিনি পরম বস্তু এবং যে পরম বস্তু অতীতকালে ছিলেন, বর্তমানে আছেন ও ভবিষ্যতেও থাকিবেন, আর যে পরম বস্তু ত্রিভুবনের প্রভু ও "ব্রহ্ম" নামে অভিহিত। তিনি প্রসন্ন হইয়া আমার সহিত আলাপ করিলেন।

আমিও জগতের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য সেই জগৎপতির নিকট প্রার্থনা করিলাম।  ২| মানুষং লোকমাতিষ্ঠ বাসুদেব ইতি শ্রুতঃ। অসুরাণাং বধার্থায় সম্ভবম্ব মহীতলে।। (মহাভারত- ৬/৬৫/৮) (অনুবাদকঃ হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ)  অনুবাদঃ আপনি মনুষ্যলোকে গমন করুন এবং সেখানে গমন করিয়া অসুরবধের জন্য জন্মগ্রহণ করুন, আর "বাসুদেব (শ্রীকৃষ্ণ)" নামে প্রসিদ্ধ হউন।  [[ তাৎপর্যঃ ]] এই শ্লোকটি মহাভারতে "ব্রহ্মা" শ্রীবিষ্ণুর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন।। পৃথিবী অসুর ও অধর্মীদের দ্বারা পীড়িত হবার কারণে "ব্রহ্মা" জগৎপতি শ্রীবিষ্ণুর নিকট প্রার্থনা করছেন--- তিনি যেন পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে অসুর ও অধর্মীদের বধ করে পৃথিবীর কষ্ট লাঘব করেন। আর "ব্রহ্মা" জগৎপতি শ্রীবিষ্ণুকে আরও বলছেন, তিনি যেন পৃথিবীতে "বাসুদেব অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ" নামে প্রসিদ্ধ হউন। সুতরাং, এই শ্লোক থেকে বোঝা যায় যে--- জগৎপতি শ্রীবিষ্ণুই হলেন "শ্রীকৃষ্ণ"। সুতরাং, যিনি বিষ্ণু তিনিই হলেন "শ্রীকৃষ্ণ"। শ্রীবিষ্ণু নিজে শ্রীকৃষ্ণের রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণই হলেন "পরমেশ্বর ভগবান"।।  ৩| তস্যাহমগ্রজঃ পুত্রঃ সর্ব্বস্য জগতঃ প্রভুঃ। বাসুদেবোহর্চ্চনীয়ো বঃ সর্বলোকমহেশ্বরঃ।। (মহাভারত- ৬/৬৫/১৩) (অনুবাদকঃ হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ)  অনুবাদঃ আমিও (ব্রহ্মা) সেই "সমগ্র জগতের প্রভু নারায়ণের" জ্যেষ্ঠপুত্র। অতএব সর্বলোকের মহেশ্বর "বাসুদেবই (শ্রীকৃষ্ণই)" একমাত্র পূজনীয়।  [[ তাৎপর্যঃ ]] এখানে, "ব্রহ্মা" বলেছেন--- তিনি নিজে হচ্ছেন সমগ্র জগতের প্রভু নারায়ণের "জ্যেষ্ঠপুত্র"। তিনি নিজেকে নারায়ণের "জ্যেষ্ঠপুত্র" এই কারণেই বলেছেন--- দেবতা (সুর) ও অসুরগণের মধ্যে "ব্রহ্মা" হলেন সর্বপ্রথম জীব।। সমগ্র জগতের একমাত্র অধীশ্বর শ্রীবিষ্ণু সর্বপ্রথম ব্রহ্মার সৃষ্টি করেন। শ্রীবিষ্ণুর নাভিপদ্ম থেকে ব্রহ্মার জন্ম হয়। পরবর্তীতে "ব্রহ্মা" শ্রীবিষ্ণুর আদেশে এই জগৎ-সংসার ও বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করেন।।  এছাড়াও এখানে "ব্রহ্মা" শ্রীকৃষ্ণকে "সমস্ত লোকসমূহের মহা ঈশ্বর" বলেছেন। আর "ভগবান শ্রীকৃষ্ণ" গীতাতেও (৫/২৯ ও ৯/১১) নিজেকে "সর্বলোকের ও সর্বভূতের মহেশ্বর" বলেছেন।  সুতরাং, শ্রীকৃষ্ণই এই জগতের একমাত্র ঈশ্বর "জগদীশ্বর"। শ্রীকৃষ্ণই হলেন "পরমেশ্বর ভগবান"।। 

৪| তথা মনুষ্যোহয়মিতি কদাচিৎ সুরসত্তমাঃ। নাবজ্ঞেয়ো মহাবীর্য্যঃ শঙ্খচক্রগদাধরঃ।। এতৎ পরমকং গুহ্যমেতৎ পরমকং পদম্। এতৎ পরমকং ব্রহ্ম এতৎ পরমকং যশঃ।। (মহাভারত- ৬/৬৫/১৪-১৫) (অনুবাদকঃ হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ)  অনুবাদঃ সুতরাং দেবশ্রেষ্টগণ! "ইনি মানুষ"--- এইরূপ মনে করিয়া, কখনও তোমরা মহাশক্তিশালী ও শঙ্খ-চক্র-গদাধারী সেই নারায়ণকে অবজ্ঞা করিও না। ইনি পরমগোপনীয়, ইনিই পরম পদ, ইনিই পরম ব্রহ্ম এবং ইনিই পরম যশ।  ৫| তস্মাৎ সেন্দ্রৈঃ সুবৈঃ সর্বৈর্লোকৈশ্চামিতবিক্রমঃ। নাবজ্ঞেয়ো বাসুদেবো মানুষোহয়মিতি প্রভুঃ।। যশ্চ মানুষমাত্রোহয়মিতি ব্রূয়াৎ স মন্দধীঃ। হৃষীকেশমবিজ্ঞানাত্তমাহুঃ পুরুষাধমম্।। (মহাভারত- ৬/৬৫/১৮-১৯) (অনুবাদকঃ হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ)  অনুবাদঃ অতএব "অমিতবিক্রমশালী ও জগদীশ্বর এই বাসুদেবকে (শ্রীকৃষ্ণকে)" মানুষ মনে করিয়া ইন্দ্র প্রভৃতি দেবতারা কিংবা অন্যান্য লোকেরা যেন ইহাকে অবজ্ঞা না করেন। যে লোক অজ্ঞানবশতঃ এই "হৃষীকেশকে (শ্রীকৃষ্ণকে)" মানুষমাত্র বলিবে সে মন্দবুদ্ধি, সকলে তাকে "পুরুষাধম" বলিবে।  ৬| সারথ্যমর্জুনস্যাজৌ কূর্ব্বনু গীতামৃতং দদৌ। লোকত্রয়োপকারায় তস্মৈ ব্রহ্মাত্মনে নমঃ।। (মহাভারত- ১২/৪৬/১০৬) (অনুবাদকঃ হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ)  অনুবাদঃ যিনি যুদ্ধে অর্জুনের সারথ্য করিতে প্রবৃত্ত (সারথি) হইয়া, ত্রিভুবনের উপকার করিবার জন্য অর্জুনকে "গীতামৃত" দান করিয়াছেন, সেই পরমব্রহ্মকে (শ্রীকৃষ্ণকে) নমষ্কার করি।  [[ তাৎপর্যঃ ]] এই শ্লোকটি শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর প্রমাণ করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই শ্লোকে প্রথমেই স্পষ্ট বলা হয়েছে--- যিনি যুদ্ধে অর্জুনের সারথ্য করিতে প্রবৃত্ত (সারথি) হইয়া, ত্রিভুবনের উপকার করিবার জন্য অর্জুনকে "গীতামৃত" দান করিয়াছেন, সেই পরমব্রহ্মকে নমষ্কার করি।। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি যুদ্ধে অর্জুনের সারথি হয়েছিলেন, তিনিই অর্জুনকে "গীতা নামক অমৃত" দান করেছিলেন এবং যে ব্যক্তি যুদ্ধে অর্জুনের সারথি হয়েছিলেন তিনিই হলেন "পরম ব্রহ্ম পরমেশ্বর"।  অনেক শাস্ত্র জ্ঞানহীন হিন্দুরা বলে থাকেন যে--- শ্রীকৃষ্ণ যোগযুক্ত হয়ে গীতা বলেছেন, শ্রীকৃষ্ণ একজন সাধারণ মানুষ, শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর নয়। 

কিন্তু উপরের শ্লোকটিতে স্পষ্ট বলা হয়েছে--- যে ব্যক্তি যুদ্ধে অর্জুনের সারথি হয়েছিলেন, তিনিই অর্জুনকে গীতার জ্ঞান দান করেছিলেন এবং যে ব্যক্তি যুদ্ধে অর্জুনের সারথি হয়েছিলেন তিনিই হলেন "পরম ব্রহ্ম পরমেশ্বর"।★ এখন যদি শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর না হতো, শ্রীকৃষ্ণ যদি যোগযুক্ত হয়ে গীতা বলত তাহলে উক্ত শ্লোকটি মহাভারতে থাকত না। ★★ যদি এক মূহুর্তের জন্য ধরেও নিই যে--- শ্রীকৃষ্ণ একজন সাধারণ মানুষ, তাহলে উপরের শ্লোকটি মিথ্যা হয়ে যাবে। কারণ শ্লোকে বলা হয়েছে--- যে ব্যক্তি যুদ্ধে অর্জুনের সারথি হয়েছিলেন, তিনিই অর্জুনকে গীতার জ্ঞান দান করেছিলেন। *** এখন "নিরাকার ঈশ্বর" নিশ্চই যুদ্ধে অর্জুনের সারথি হন নি। যুদ্ধে অর্জুনের সারথি হয়েছিলেন "শ্রীকৃষ্ণ"। সুতরাং, এই শ্লোক দ্বারা প্রমাণিত যে--- শ্রীকৃষ্ণই অর্জুনকে গীতার জ্ঞান দান করেছেন। শ্রীকৃষ্ণ যোগযুক্ত হন নি।।  ★★ এছাড়াও উক্ত শ্লোকে এটিও বলা হয়েছে যে--- যে ব্যক্তি যুদ্ধে অর্জুনের সারথি হয়েছিলেন তিনিই হলেন "পরম ব্রহ্ম পরমেশ্বর"। *** এখন "নিরাকার ঈশ্বর" নিশ্চই যুদ্ধে অর্জুনের সারথি হন নি। যুদ্ধে অর্জুনের সারথি হয়েছিলেন "শ্রীকৃষ্ণ"। সুতরাং, এই শ্লোক দ্বারা এটিও প্রমাণিত যে--- শ্রীকৃষ্ণই হলেন "পরম ব্রহ্ম"। শ্রীকৃষ্ণই হলেন "ঈশ্বর"। শ্রীকৃষ্ণ কোনো সাধারণ মানুষ নন।। ★★  ৭| ত্বং হি কর্ত্তা হৃষীকেশ! সংহর্ত্তা চাপরাজিতঃ। নহি পশ্যামি তে ভাবং দিব্যং হি ত্রিষু বর্ত্মসু।। (মহাভারত- ১২/৪৬/১১৮) (অনুবাদকঃ হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ)  অনুবাদঃ হে হৃষীকেশ (শ্রীকৃষ্ণ)! আপনি জগতের কর্ত্তা ও সংহর্ত্তা এবং অপরাজিত। হায়! জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তি এই তিনটি পথের কোন পথেই আমি আপনার দিব্যভাব দেখিতে পাই না।  ৮| তচ্চ পশ্যামি তত্ত্বেন যত্তপ রূপং সনাতনম্। দিবং তে শিরসা ব্যাপ্তং পদ্ভ্যাং দেবী বসুন্ধরা। বিক্রমেণ ত্রয়ো লোকাঃ পুরুষোহসি সনাতনঃ।।

(মহাভারত- ১২/৪৬/১১৯) (অনুবাদকঃ হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ)  অনুবাদঃ তবে নারায়ণ (শ্রীকৃষ্ণ)! গুরুর উপদেশে আপনার সেই সনাতন রূপটি আমি জানিতে পারি। আপনার মস্তকে স্বর্গলোক, চরণযুগলে পৃথিবী এবং বিক্রমে ত্রিভুবন ব্যাপ্ত হইয়া রহিয়াছে। অতএব আপনিই সেই "সনাতন বিরাট পুরুষ"।  ৯| একোহপি কৃষ্ণস্য কৃতপ্রণামো দশাশ্বমেধাবভূথেন তুল্যঃ। দশাশ্বমেধী পুনরেতি জন্ম কৃষ্ণপ্রণামী ন পুনর্ভবায়।। (মহাভারত- ১২/৪৬/১২৩) (অনুবাদকঃ হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ)  অনুবাদঃ কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে একটি মাত্র প্রণাম করিলেও তাহা দশটি অশ্বমেধযজ্ঞের সমান হইয়া থাকে। দশটি অশ্বমেধযজ্ঞকারীর পুনরায় জন্মগ্রহণ করিতে হয়, কিন্তু কৃষ্ণকে প্রণামকারীর পুনরায় জন্ম (পুনর্জন্ম) হয় না।  ১০| নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণহিতায় চ। জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।। (মহাভারত- ১২/৪৬/১২৬)  অনুবাদঃ ব্রাহ্মণদের আরাধ্যদেব অর্থাৎ নারায়ণ, গো ও ব্রাহ্মণদের হিতকারী এবং জগতের কল্যাণকারী সেই কৃষ্ণকে, গোবিন্দকে বার বার নমষ্কার করি।  ১১| বিশ্বকর্ম্মন্! নমস্তেহস্তু বিশ্বাত্মন্! বিশ্বসত্তম!। তথা ত্বামভিজানামি যথা চাহং ভবান্ মতঃ।। ত্বত্তেজঃসম্ভবো নিত্যং হুতাশো মধুসূদন। রতিঃ ক্রীড়াময়ী তুভ্যং মায়া তে রোদসী বিভো!।। (মহাভারত- ১৪/৬৭/৮-৯) (অনুবাদকঃ হরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ)  অনুবাদঃ হে বিশ্বকর্ম্মন! হে বিশ্বাত্মন! হে বিশ্বশ্রেষ্ঠ! তোমাকে নমষ্কার। আমি মনে মনে তোমাকে যেরূপ ধারণা করি, কার্যদ্বারাও তোমাকে সেইরূপই জানিতেছি। প্রভু মধুসূদন (শ্রীকৃষ্ণ)! অগ্নি সর্বদাই তোমার তেজ হইতে উৎপন্ন হন এবং রতি তোমারই ক্রীড়াস্বরূপা, আর স্বর্গ ও মর্ত্ত্য তোমারই মায়া।  [[ তাৎপর্যঃ ]] এই শ্লোকটি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ--- অনেকেই অশ্বমেধিকপর্বের একটি শ্লোক দেখিয়ে বলে যে--- এই যে দেখ শ্রীকৃষ্ণ যোগযুক্ত হয়ে গীতা বলেছে। শ্রীকৃষ্ণ ঈশ্বর নয়।।  কিন্তু সেই মূর্খেরা উক্ত অশ্বমেধিকপর্বের শ্লোকটি চোখেই দেখেনি।

তারা যদি উক্ত শ্লোকটি দেখত তাহলে তারা বলতে পারত না যে--- শ্রীকৃষ্ণ যোগযুক্ত হয়ে গীতা বলেছে। ★★ অশ্বমেধিকপর্বের ১৭ তম অধ্যায়ের ১৩ নং শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে যখন বলেই দিয়েছেন যে--- তিনি যোগযুক্ত হয়ে গীতা বলেছেন। তাহলে অশ্বমেধিকপর্বের ৬৭ তম অধ্যায়ের ৮-৯ নং শ্লোকে গিয়ে অর্জুন কেন শ্রীকৃষ্ণকে "হে বিশ্বকর্ম্মন, হে বিশ্বাত্মন, হে বিশ্বশ্রেষ্ঠ!" এগুলো বলে সম্বোধন করল??? আপনারা স্বয়ং বিচার করুন।।  ★ শুধু এটুকুই নয়। অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে আরও বলেছেন--- "অগ্নি সর্বদাই তোমার তেজ হইতে উৎপন্ন হন এবং রতি তোমারই ক্রীড়াস্বরূপা, আর স্বর্গ ও মর্ত্ত্য তোমারই মায়া"। ★ প্রকৃতপক্ষে অশ্বমেধিকপর্বের ১৭ তম অধ্যায়ের ১৩ নং সেই শ্লোকটিতে "শ্রীকৃষ্ণ যোগযুক্ত হয়ে গীতা বলেছে"--- এই বিষয়টি বোঝানো হয়নি।। {{ যদি সেই শ্লোকে "যোগযুক্ত" বলতে--- পরমাত্মার সহিত যোগের মাধ্যমে সম্পর্ক স্থাপনকে বোঝানো হতো তাহলে অশ্বমেধিকপর্বের ৬৭ তম অধ্যায়ের ৮-৯ নং শ্লোকে অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে এগুলো বলে সম্বোধন করত না।।  "যোগ" শব্দের অনেক অর্থ আছে। এখানে "যোগ" শব্দটি কোন অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে তা স্পষ্ট বলা আছে। আসলে সেই শ্লোকে "যোগযুক্ত" বলতে বোঝানো হয়েছে--- "একাগ্রতার সহিত"। যোগযুক্তেন ঐক্যাগ্রসমন্বিতেন (ভারতকৌমুদী টীকা)।। ★ "ভগবান শ্রীকৃষ্ণ" যুদ্ধের প্রাক্কালে অর্জুন অর্জুনকে গীতা বলেছিলেন--- একাগ্রতার সহিত, তা এখন আবার পুনরোক্তি করবেন কীসের নিমিত্তে? তাছাড়া অর্জুন গীতা ভুলে গেছেন তার দুর্বল মেধাবশত, তাকে পুনরায় গীতা বললে সে যে আবার তা ভুলে যাবে না তারই বা গ্যারান্টি কী?? তাই "ভগবান শ্রীকৃষ্ণ" বললেন, আমি সেই বিষয়ে তোমাকে প্রাচীন বৃত্তান্ত বলিতেছি। অর্থাৎ সেই গীতাজ্ঞানই তিনি ইতিহাস গল্পের মাধ্যমে বলিবেন। কেননা গল্পের মাধ্যমে যদি খুব কঠিন বিষয়ও আলোচনা করা হয়,

তবে সেটা খুব সহজেই মনে রাখা যায়।। ★ }}  {{ এছাড়াও "মহাভারত" থেকে এরকম আরও অনেক প্রমাণ দেখানো সম্ভব যেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে---- শ্রীকৃষ্ণই বাসুদেব, শ্রীকৃষ্ণই জগৎপতি, শ্রীকৃষ্ণই বিশ্বেশ্বর, শ্রীকৃষ্ণই বিশ্বাত্মন, শ্রীকৃষ্ণই বিশ্বরূপ আবার শ্রীকৃষ্ণই পরম ব্রহ্ম পরমেশ্বর।। }}  ♣ ব্রহ্মসংহিতায় বলা হয়েছে----  ১| ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ। অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্ব্বকারণকারণম্।। (ব্রহ্মসংহিতা- ৫/১)  অনুবাদঃ শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন পরম ঈশ্বর, তার রূপ সচ্চিদানন্দময়। তিনি হচ্ছেন অনাদির আদি, তিনি গোবিন্দ নামেও পরিচিত, তিনি হচ্ছেন সমস্ত কারণের পরম কারণ।  ২| অদ্বৈতম-অচ্যুতম-অনাদিম-অনন্তরূপম আদ্যং পুরাণপুরুষং নবযৌবনঞ্চ। বেদেষু দুর্লভম-অদুর্লভম-আত্মভক্তৌ গোবিন্দম আদি পুরুষং তমহং ভজামি।। (ব্রহ্মসংহিতা- ৫/৪২)  অনুবাদঃ যিনি অদ্বৈত, অচ্যুত, অনাদি, অনন্তরূপসম্পন্ন আদি পুরাণপুরুষ হয়েও নব যৌবনসম্পন্ন। বেদ আদি শাস্ত্র পাঠ করেও যাকে লাভ করা দুর্লভ, কিন্তু শুদ্ধ আত্মভক্তি দ্বারা যাকে লাভ করা যায় সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।  ৩| রামাদিমূর্ত্তিষু কলানিয়মেন তিষ্ঠন্ নানাবতারমকরোদ্ভূবনেষু কিন্তু। কৃষ্ণ স্বয়ং সমভবৎ পরমঃ পুমাণ্ যো গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।। (ব্রহ্মসংহিতা- ৫/৪৮)  অনুবাদঃ রাম আদি মূর্তিতে--- অংশভাবে অবস্থান করিয়া পৃথিবীতে যিনি নিজ অংশে নানা অবতার প্রকট করেছেন, কিন্তু যিনি স্বয়ং পরমপুরুষ শ্রীকৃষ্ণরূপে আবির্ভূত হয়েছেন সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।  ♣ শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে বলা হয়েছে----  ১| স্বয়ং ভগবান কৃষ্ণ, কৃষ্ণ সর্বাশ্রয়।  পরম ঈশ্বর কৃষ্ণ সর্বশাস্ত্রে কয়।।  (চৈঃ চঃ আদি- ২/১০৬)  অনুবাদঃ শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান, তিনিই সবকিছুর পরম আশ্রয়। সমস্ত শাস্ত্রে তাকেই পরম ঈশ্বর বলে স্বীকার করা হয়েছে।  ২| কৃষ্ণ এক সর্বাশ্রয়, কৃষ্ণ সর্বধাম।  কৃষ্ণের শরীরে সর্ব-বিশ্বের বিশ্রাম।।  (চৈঃ চঃ আদি- ২/৯৪)  অনুবাদঃ একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন সবকিছুর পরম আশ্রয়, তিনিই পরম ধাম। সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তার শরীরেই বিশ্রাম করে অর্থাৎ তার শরীরেই সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড শায়িত আছে।পরিশেষে বেদ থেকে শুরু করে গীতা পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই প্রমাণিত হয় যে শ্রীকৃষ্ণই পরমেশ্বর।

 সকলের মঙ্গল কামনা করছি হরে কৃষ্ণ।       


Next Post Previous Post
1 Comments
  • নামহীন
    নামহীন ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ এ ১২:১৩ PM

    শ্রীকৃষ্ণ হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান, তিনিই সবকিছুর পরম আশ্রয়। সমস্ত শাস্ত্রে তাকেই পরম ঈশ্বর বলে স্বীকার করা হয়েছে। ২| কৃষ্ণ এক সর্বাশ্রয়, কৃষ্ণ সর্বধাম। কৃষ্ণের শরীরে সর্ব-বিশ্বের বিশ্রাম।। (চৈঃ চঃ আদি- ২/৯৪) অনুবাদঃ একমাত্র শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন সবকিছুর পরম আশ্রয়, তিনিই পরম ধাম। সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তার শরীরেই বিশ্রাম করে অর্থাৎ তার শরীরেই সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড শায়িত আছে।পরিশেষে বেদ থেকে শুরু করে গীতা পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রেই প্রমাণিত হয় যে শ্রীকৃষ্ণই পরমেশ্বর।

Add Comment
comment url