মালা জপ করার সঠিক নিয়ম

হিন্দু ধর্মে পুজো ও মন্ত্র জপকে উপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। যে কোনও ধর্মীয় আয়োজন, উৎসব, ব্রত বা পূজার্চনার সময় মন্ত্র জপ অত্যন্ত প্রভাবশালী মনে করা হয়। আবার পৃথক পৃথক পুজোয় ভিন্ন ভিন্ন জপের মালা ব্যবহার করা হয়। মালা জপের গুরুত্ব অনেক।মন্ত্র জপে মালার ব্যবহার করলে একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়। জপের মালা সবসময় ১০৮ অথবা ২৭টি দানার হওয়া উচিত। জপের সময় মালা পুরোপুরি ঢাকা থাকতে হবে। জপ শেষ হলে, মালা প্রণাম করে মন্দিরে রাখা উচিত।
আসুন জেনে নেই সঠিকভাবে মালা জপ করার নিয়মঃমুক্তহাতের তালুতে দু-এক দিয়ে ‘ওঁ বিষ্ণু’ মন্ত্রে পান করবেন। মোট তিন বার এইভাবে জল পান করতে হবে। তারপর করজোড়ে বলবেন—
মালা জপের মন্ত্র সমূহ 
"ওম তদ্বিষ্ণো পরমং-পদং সদা-পশ্যন্তি সূরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম ্।
ওঁ অপবিত্রঃ পবিত্রো বা সর্বাবস্থাং গতোঽপি বা।
যঃ স্মরেৎ পুণ্ডরীকাক্ষং স বাহ্যাভ্যন্তরঃ শুচিঃ।।
‘ওঁ বিষ্ণু’‘ওঁ বিষ্ণু’‘ওঁ বিষ্ণু’
মালা জপ করার সঠিক নিয়ম
মালা জপের নিয়ম
মস্তকে তুলসী রেখে বলবেন :
নমঃ তুলসী দর্শনে পুণ্য
স্পর্শনে পাপ নাশন
স্মরণে তির্থানি
ভক্তিমে মুক্তি লক্ষণ নমঃ
গুরু প্রনামঃ
ঔঁ অখণ্ডমণ্ডালাকারং ব্যাপ্তং যেন চরাচরম্।
তৎপদং দশি‘তং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।
১.অঞ্জানতিমিরান্ধস্য ঞ্জানাঞ্জন শলাকায়া।
চক্ষু রুল্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।।
২. 'গুরু ব্রক্ষা গুরুবিষ্ণু গুরুদেবো মহেশ্বরঃ। 
গুরুঃ সাক্ষাৎ পরংব্রক্ষ তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃ।'
শ্রী কৃষ্ণ প্রনামঃ
হে কৃষ্ণ করুণা সিন্ধু দীনবন্ধু জগৎপতে।
গোপেশ গোপীকা কান্ত রাধা কান্ত নমহঃস্তুতে ।।
শ্রী রাধারানী প্রণামঃ
তপ্ত কাঞ্চন গৌরাঙ্গীং রাধে বৃন্দাবনেশ্বরী।
বৃষভানু সূতে দেবী প্রণমামি হরি-প্রিয়ে।।
মালা জপ আরম্ভের মন্ত্রঃ-
অবিঘ্ন করু মালে, ত্বং হরি নাম-জপেষু চ।
শ্রীরাধা কৃষ্ণয়োর্দাস্যং দেহি মালে, তু প্রার্থয়ে।।
 বাংলা অর্থ হলো -তোমাতে হরি নাম জপ করিতেছি হে মালে  আমার সর্ব্ব বিঘ্ন দূরকর এবং শ্রীরাধা কৃষ্ণের দাস্য দান কর,করিতেছি এই প্রার্থনা ।
….
মন্ত্র জপ ১০৮ বার
Hare Krishna hare Krishna Krishna Krishna Hare hare হরেরাম হরেরাম রামরাম হরেহরে ।।
মালা জপান্তে নিন্মরুপ জপ সমর্পণ করিতে হয়ঃ-
গুহাতিগুহ গোপ্তা ত্বং গৃহাণাস্মং কৃতং জপং ।
সিদ্বি ভবতু-মে দেব ত্বৎ প্রসাদাৎ জনার্দ্দন।।
অর্থঃ হে পরম দেব, পরম অভিষ পরমপ্রিয় শ্রীকৃষ্ণ তুমি গুহ্য ও অতি গুহ্য বস্তুকে রক্ষা কর। অতএব আমার এই নাম জপ তুমি গ্রহন কর। হে দেব তোমার প্রসাদে আমার সর্বসিন্ধ লাভ।
….
গীতায় স্মরণীয় নামগুলি জপ করিবেনঃ
ঔঁ গঙ্গা, গীতা, সাবিত্রী,সীতা, সত্ত্বা, পতিব্রতা,
ব্রহ্মবলি, ব্রহ্মবিদ্যা,ত্রিসন্ধ্যা, মুক্তি-গেহেনী,
অর্ধমাত্রা, চিদানন্দা,ভবঘ্নী, ভ্রান্তী নাশিনী,
বেদত্রয়ী, পরানন্দা,তত্ত্বার্থ, জ্ঞানমঞ্জরী।।
….
সবার শেষে ভুলত্রুটি ক্ষমা মার্জনা এর জন্য মন্ত্র :
পাপহং পাপকর্মাহং পাপাত্মাহ পাপসম্ভবো
ত্রাহিমাং পুন্ডরিকাক্ষং সর্ব পাপ হর হরি।।
বিভিন্ন মালার পরিচিতিও জপের নিয়ম এ উপকারীতাঃ
১)চন্দন মালা— চন্দনের মালা দু’ধরণের হয়, সাদা ও লাল। শক্তি সাধনায় লাল চন্দন মালা ব্যবহৃত হয়। অন্যদিকে কৃষ্ণ মন্ত্র জপের জন্য সাদা চন্দনের মালা ব্যবহার করা হয়। এই মালার মাধ্যমে মন্ত্র জপ করলে শীঘ্র মনস্কামনা পূর্ণ হয়।
২)স্ফটিক মালা— ধন প্রাপ্তি ও মনের একাগ্রতার জন্য এই মালা ব্যবহার করা হয়। এই মালার প্রভাবে, তার আশপাশে কোনও অশুভ শক্তি আসতে পারে না। লক্ষ্মীর মন্ত্রের জপ এই মালা দিয়ে করলে শুভ ফল পাওয়া যায়। আবার উচ্চরক্তচাপের রোগীরা এই মালা গলায় ধারণ করলে ভালো ফল পেতে পারেন।
৩(রুদ্রাক্ষ মালা— মন্ত্র জপের সময় সবচেয়ে বেশি এই মালার ব্যবহার করা হয়। রুদ্রাক্ষ শিবের অত্যন্ত প্রিয়। তাই মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্রের জপে এই মালা ব্যবহার করা উচিত। মনে করা হয়, এই মালা জপের ফলে মহাদেব শীঘ্র প্রসন্ন হন। অন্য দেবতার জপের জন্যও এই মালা ব্যবহার করা হয়।
৪)বৈজয়ন্তী মালা— এই মালা কৃষ্ণের অত্যধিক প্রিয়। কৃষ্ণের আশীর্বাদের জন্য বৈষ্ণবরা এই মালা ধারণ করেন। বৈজয়ন্তী মালার সাহায্যে মন্ত্র জপ করলে বিষ্ণু শীঘ্র প্রসন্ন হন ও ভক্তদের মনস্কামনা পূর্ণ করেন। এই মালা জপের ফলে ব্যক্তির আত্মবিশ্বাসে বৃদ্ধি হয় ও সমস্ত কাজে সাফল্য পাওয়া যায়।
৫)হলুদের মালা— যে কোনও পুজোয় এই মালার প্রয়োগ শুভ মনে করা হয়। গণেশ ও বৃহস্পতিকে শীঘ্র খুশি করার জন্য এই মালা দিয়ে জপ করা উচিত। সন্তান ও জ্ঞান লাভের জন্য হলুদের মালা দিয়ে বিশেষ জপ করা হয়। এই মালা দিয়ে বগলামুখীর জপ করলে শীঘ্রই তাঁর আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
৬)তুলসী মালা—হিন্দু ধর্মে তুলসী গাছ ও তুলসী মালাকে অত্যন্ত পবিত্র মনে করা হয়। মন্ত্র জপের সময় তুলসী মালার প্রয়োগও সবচেয়ে বেশি করা হয়। ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী, তুলসী মালা ধারণ করলে ও বিষ্ণুর মন্ত্রের জপ করলে যশ, কীর্তি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি হয়। এই মালা দিয়ে জপ করলে একাধিক যজ্ঞের পুণ্যলাভ করা যায়। তবে তুলসীর মালা দিয়ে দেবী ও শিবের জপ করা হয় না। 
৭পদ্মবীজের মালা- এই মালা লক্ষ্মীর প্রিয়। তাই ধন-বৈভবের জন্য ও লক্ষ্মীর মন্ত্রের সিদ্ধির জন্য পদ্মবীজের মালা ব্যবহার করা হয়। এই মালা জপ করলে লক্ষ্মী শীঘ্র প্রসন্ন হন ও সাধককে সুখ-সমৃদ্ধির আশীর্বাদ দেন। এই মালা বিধি অনুযাযী ধারণ করা উচিত ও এ দিয়েই লক্ষ্মীর জপ করা উচিত।

মালা জপের উপকারিতাঃমন্ত্র জপ করার সময় ব্যবহারকারি মালার এক আলাদা মহত্ব পূর্ণ স্থান আছে মানা হয় যে প্রত্যেক দেবী দেবতার জন্য আলাদা মালার জাপ করা হয়। পরম্পরা অনুসারে ব্যক্তি নিজের আরাধ্য দেবতার অনুসারে মালার জাপ করে থাকে। সেই দেব মালা জপের কারণে সেই সকল দেবদেবী তাদের বাসনা পূর্ণ করেন।মন্ত্রের এতটাই ক্ষমতা যে মন্ত্র সাধনার মাধ্যমে একাগ্রতা অর্জন করে মোক্ষের সোপানে গিয়ে ওঠাও সম্ভব হয় । মন্ত্র বা তন্ত্র যাই হোক তা সর্বএ ব্যাপ্ত।মানুষের জীবন দর্শন থেকে শুরু করে , ললিত-কলা , লেখকের কলম , চিত্রকরের তুলি , রেখাম্কন করা বা কোন‌ও ব্যক্তির  চিন্তা বা  ভাবনার পদ্ধতির ক্ষমতা মধ্যেও মন্ত্রসক্তি তার কার্যক্ষেত্রে করে তুলেছে । সোজা কথায় মন্ত্রের মধ্যে সেই ক্ষমতা আছে যা দিয়ে অসম্ভবকে সম্ভব করা যায় । শুধু প্ৰযোজন তাকে সিদ্ধ করা। প্ৰযোজন সাধকের প্ৰযোজনীয় সিদ্ধি লাভ  করা ।
পরিশেষে বলা যায়,মন্ত্র জপ করার সময় ব্যবহারকারি মালার এক আলাদা মহত্ব পূর্ণ স্থান আছে মানা হয় যে প্রত্যেক দেবী দেবতার জন্য আলাদা মালার জাপ করা হয়। পরম্পরা অনুসারে ব্যক্তি নিজের আরাধ্য দেবতার অনুসারে মালার জাপ করে থাকে।তারপরও কৃষ্ণ নাম ও মালা জপে ইহজগতে ও পরজগতে হাজার হাজার রকমের ফল লাভ করা যায়। হরে কৃষ্ণ। 
#ট্যাগঃমালা জপ করার সঠিক নিয়ম,মালা জপ করার নিয়ম,জপ করার নিয়ম,মালা জপ,মালা জপের নিয়ম,জপ মালা জপের নিয়ম,মালা জপ করার মন্ত্র,হরিনাম জপ করার নিয়ম,মালা জপের সঠিক নিয়ম,মালা জপ কিভাবে করতে হয়,মালা জপ করার নিয়ম,জপ করার পদ্ধতি,মালা জপ করার নিয়মাবলী,মহামন্ত্র জপ করার নিয়ম,গুরু মন্ত্র জপ করার নিয়ম,জপ করার সঠিক নিয়ম,জপ করার নিয়ম,মালা জপের মন্ত্র,মালা জপের পদ্ধতি,মালা জপ করার সঠিক নিয়ম মালা জপের মন্ত্র,গায়ত্রী মন্ত্র জপ করার নিয়ম,কিভাবে মালা জপ করবেন,
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url