ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কেন কর্ম করেছেন?

ভগবান  কৃষ্ণ কেন কর্ম করেছেন? 

শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলছেন , যদি তিনি এই সমস্ত বিধি - নিষেধের আচরণ না করেন , তবে তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে সকলেই যথেচ্ছাচারী হয়ে উঠবে । সনাতন ধর্ম নষ্ট হয়ে যাবে।


ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন,
“ন মে পার্থাস্তি কর্তব্যং ত্ৰিষু লােকেষু কিঞ্চন । নানবাপ্তমবাপ্তব্যং বর্ত এব চ কর্মণি”॥ ৩/২২ ॥
#অনুবাদ : হে পার্থ ! এই ত্রিজগতে আমার কিছুই কর্তব্য নেই । আমার অপ্রাপ্ত কিছু নেই এবং প্রাপ্তব্যও কিছু নেই । তবুও আমি কর্মে ব্যাপৃত আছি ।
যদি হ্যহং ন বর্তেয়ং জাতু কর্মণ্যতন্দ্রিতঃ,
মম বল্গানুবর্তন্তে মনুষ্যাঃ পার্থ সর্বশঃ”॥ ৩/২৩ ॥
বাংলা অর্থ  : হে পার্থ ! আমি যদি অনলস হয়ে কর্তব্যকর্মে প্রবৃত্ত না হই , তবে আমার অনুবর্তী হয়ে সমস্ত মানুষই কর্ম ত্যাগ করবে ।
পারমার্থিক  উন্নতি লাভের জন্য সুশৃঙ্খল সমাজ - ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হয় এবং এভাবে সমাজকে গড়ে তােলবার জন্য প্রতিটি সভ্য মানুষকে নিয়ম ও শৃঙ্খলা অনুসরণ করে সুসংযত জীবন যাপন করতে হয় । এই সমস্ত নিয়মকানুনের বিধি নিষেধ কেবল বদ্ধ জীবেদের জন্য , ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্য নয় । যেহেতু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ধর্মনীতি প্রবর্তনের জন্য পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন , তাই তিনি শাস্ত্র - নির্দেশিত সমস্ত বিধির অনুষ্ঠান করেছিলেন।। হরেকৃষ্ণ ।।
যজ্ঞ বলতে ভগবান শ্ৰীবিষ্ণুকে বোঝায়।বেদেও সেই কথা বলা হয়েছে। "যজ্ঞো বৈ বিষ্ণুঃ"! প্রতিটি জীবকে দেহ ধারণের জন্য কাজ করতে হয়।মানুষের কর্তব্য হচ্ছে তাদের কর্মকে ভগবান শ্ৰীবিষ্ণুর সেবার জন্য নিয়োগ করা।এই ভাবে কর্ম করলে প্রতিটি মানুষ জড় বন্ধন হতে মুক্ত হতে পারে।পক্ষান্তরে অন্যান্য সমস্ত কর্ম , "তা শুভই হোক আর অশুভই হোক" জীবকে জড় জগতের বন্ধনে আবদ্ধ করে।
ভগবান বিষ্ণু জগতের পালনকর্তা , তিনি আলো -বাতাস , জল ,ফল- মূল ,দুধ ,শস্যাদি আহার্য প্রভৃতি প্রতিটি জীবকে সরবরাহ করার ভার দিয়েছেন বিভিন্ন দেব-দেবীর উপর।এগুলি মানুষ চাইলেও কৃত্রিমভাবে কারখানায় তৈরি করতে পারে না।যজ্ঞের মাধ্যমে দেব-দেবীরা সন্তুষ্ট হন আর এই সমস্ত দ্রব্যাদি পর্যাপ্ত পরিমাণে তারা সরবরাহ করেন ফলে মানব সমাজ সুখী ও সমৃদ্ধ হয়।
তাই পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলছেন- হে অর্জুন! ভগবানকে শ্রীবিষ্ণুকে নিবেদন করে অন্নাদি গ্ৰহণ করার মাধ্যমে ভগবদ্ভক্তগণ সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন ,আর যারা শুধুমাত্ৰ নিজেদের ইন্দ্ৰিয়তৃপ্তির জন্য অন্ন রন্ধন করে তারা কেবল পাপ ভক্ষণ করে।
শ্রীকৃষ্ণের দান




অন্ন থেকে জীবের জড় দেহ উৎপন্ন হয় ,, বৃষ্টির ফলে অন্ন উৎপন্ন হয়,যজ্ঞ অনুষ্ঠানের ফলে বৃষ্টি উৎপন্ন হয় আর শাস্ত্রবিহিত কৰ্ম থেকে যজ্ঞ সম্পাদিত হয়।বেদ থেকে যজ্ঞ কৰ্ম উদ্ভুত হয়েছে আর পরমেশ্বর ভগবান থেকে বেদ প্ৰকাশিত হয়েছে।তাই সর্বব্যাপী ব্ৰহ্ম সর্বদা যজ্ঞে প্ৰতিষ্ঠিত আছেন। হে অর্জুন! ভগবান মানুষের পরম মঙ্গলের জন্য যজ্ঞের পন্থা প্ৰবৰ্তন করেছেন।কিন্তু যে ব্যক্তি সেই পন্থা অনুসরণ করে না,সেই ইন্দ্ৰিয়ভোগী পাপীর জীবনই বৃথা।কিন্তু যিনি সম্পূৰ্ণ ভগবৎভাবনাময় হয়ে আত্মতৃপ্ত হয়েছেন ,তার কোন কৰ্তব্য-অকৰ্তব্যের বাধ্যবাধকতা নেই।এই রকম আত্মানন্দী ব্যক্তির ইহজগতে ধৰ্মানুষ্ঠানের কোনো প্রয়োজন নেই তাঁকে অন্য কোন প্রাণীর উপর নিৰ্ভর করতে হয় না।অতএব অর্জুন! তুমি কর্মের ফলের প্রতি আসক্ত না হয়ে কৰ্তব্য -কৰ্ম সম্পাদন কর।এইভাবেই উত্তমা ভক্তি লাভ করা যায়।পূর্বকালে জনক আদি প্ৰভৃতি রাজৰ্ষিগণ এইভাবে ভগবৎ ভাবনাময় কৰ্ম সাধন করেছিলেন এবং ভক্তিরুপ পরম সিদ্ধি লাভ করেছিলেন।

অতএব জনসাধারণকে শিক্ষা দানের জন্য তোমার কৰ্ম করা উচিত।কারণ শ্ৰেষ্ঠ ব্যক্তিগণ যেভাবে আচরণ করেন ,সাধারণ মানুষ সর্বদাই তা অনুসরণ করে।হে পাৰ্থ! এই ত্ৰিজগতে যদিও আমার পাওয়ার কিছু নেই , হারাবারও কিছু নেই ,তবু আমি কৰ্মে নির্বিত থাকি।কারণ আমি যদি কৰ্ম না করি ,তা হলে সমস্ত লোক আমার অনুকরণ করে কৰ্ম ত্যাগ করবে।আমি কৰ্ম না করলে বৰ্ণসঙ্কর আদি সামাজিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে, ফলে সমস্ত প্ৰজা বিনষ্ট হবে এবং সমস্ত জগৎ উৎসনে যাবে। "গীতা ৩-১৩-২৪!"
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>