নাগা সন্ন্যাসী দেখতে চাই
নাগা সন্ন্যাসী বলতে আমরা বুঝি --সংসার জীবন থেকে অনেক দূরে, ঈশ্বর সাধনায় মগ্ন এবং শীত-গ্রীষ্ম সব ঋতুতেই শরীর থাকে উদোম- এমন হুলিয়া বলে দেয় যে এরা নাগা সন্ন্যাসী বা নাগা সাধু। উপমহাদেশে সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন তীর্থকেন্দ্রের আশপাশে বিশেষ করে কুম্ভ মেলায় প্রায়ই তাদের দেখা মেলে। চুলে জটাধারী, গায়ে ছাইভষ্ম মাখা এই সন্ন্যাসীরা লোকালয়ে কমই আসে। কেউ কেউ এদের যোদ্ধা সন্ন্যাসী বলেন।
নাগা_সন্ন্যাসীর_ইন্টারভিউ-- ভুমাগিরি নাগা-সন্ন্যাসী। কুম্ভমেলায় দেখা। উজ্জয়িনীতে। বসেছিলেন এক শিবিরের সামনে। মাটিতে। হাতজোড় করে প্রণাম জনিয়ে বললাম "ওঁ নমো নারায়ণায়"। তিনি সাড়া দিলে বসে পড়লাম তার সামনে, মাটিতে আসন করে।
প্রশ্ন করি: মহারাজের আশ্রম কোথায়?
●বললেন -- উত্তরকাশীর কাছে, হিমালয়ে।
#আশ্রমে ক'জন থাকেন? মন্দির আছে?
★বললেন-- শুধুমাত্র মাত্র 19জন সাধু থাকেন। মন্দির নেই। হলঘরের মধ্যে বড় শিবলিঙ্গঅবিস্থিত। সেখানেই সাধুরা ধ্যান নিয়মিত করেন।
#জিজ্ঞেস করলাম: আপনাদের দিন কীভাবে কাটে?
● ভোরে উঠে বাইরে স্নান করতে যাই। ফিরে এসে ধ্যান। 2-3ঘন্টা ধ্যান করে বই পড়ি। মধ্যাহ্নভোজনের পর একঘন্টা বিশ্রাম করে আবার ধ্যান। বিকেলে পাহাড়ি পথে কিছুক্ষণ হেঁটে সন্ধ্যায় আরতি, ধ্যান।
সকালে ভিক্ষায় যাননা?
●আমরা তো ভিক্ষা করিনা। ঈশ্বরের ইচ্ছায় যা পাই, খাই। কয়েকজন লোক ও সমিতি খাবার পাঠান। এতেই চলে যায়। একবেলা খাই।
নাগা সন্ন্যাসী দেখতে চাই |
আপনরা কি খাটিয়ায় ঘুমোন? কম্বল গায়ে দেন?
★আমরা মাটিতেই ঘুমাই। কম্বল নয়,ক্যাথাও নয় শীত করলে গায়ে বিভূতি (ছাই) মেখেই ঘুমিয়ে পরি।
এ_তো কঠোরতা কেন? শরীরকে কষ্ট দেওয়া! কষ্ট নয় শুধুই সাধনা। দেহের উপর মনের বিজয় আনতে, জড়ের উপরে চেতনার আধিপত্য আনতে মুলত সাধুরা সবসময় ধ্যান করেন কিন্তু সমাজসেবা করেননা কেন? মানুষের এতো দুঃখ কষ্ট!
আমার প্রশ্ন ছিলো তুমি কি কোনো বিজ্ঞানীকে বলবে ল্যাবরেটরী ছেড়ে এসে সমাজসেবা করতে? এই যে অসংখ্য সাধু-সন্ন্যাসী জপধ্যান করছেন, তাদের দিব্য চিৎ তরঙ্গ সূক্ষ্মভাবে সমাজের কল্যাণ করছে।
মহারাজ, নাগা সাধুরা উলঙ্গ থাকেন কেন?
●সন্ন্যাসী সব ছেড়েও কিছু প্রতীক ধারণ করেন। বৈষ্ণব সাধুরা মাথায় শিখা রাখেন, দশনামীরা মুণ্ডিত মস্তক। কেউ কপালে তিলক দেন, কেউ কপালে বিভূতি, কেউবা কানে কুণ্ডল। কেউ সাদা কাপড়, কেউ লাল, কেউ আবার গেরুয়া। নাগা সাধুরা সেসবও ব্যবহার করেননা। তাই উলঙ্গ।
নাগা_সাধুরা হাতে অস্ত্র রাখেন কেন?
●বিদ্যারণ্য মুনি নাগা সাধু সম্প্রদায় তৈরি করেছিলেন মুসলমান অত্যাচারীদের হাত থেকে হিন্দুদের রক্ষা করতে। আমরা হলাম সৈনিক। তাই আমাদের হাতে তরোয়াল, ত্রিশূল, অস্ত্র।
কুম্ভমেলায় নাগাসাধুরা প্রথমে স্নান কেন করেন?
●সেনাবাহিনী আগে গিয়ে দেখবে রাস্তায় বিপদ আছে কিনা। তারা গ্রীন সিগন্যাল দেবে স্নানের।
#শুনেছি, সন্ন্যাসী হওয়ার আগে আপনি সফ্টওয়ার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন, বিদেশী কোম্পানিতে। ভাল চাকরি, প্রচুর টাকা। সব ছেড়ে দিলেন কেন?
●বেতন 10হাজার হোক কি 1লাখ 10হাজার, জীবন তো সেই একই রকম। রোজ সকালে ব্রেকফাস্টের পর অফিস, সারাদিন কাজ করে বাড়ি ফেরা, চা খেতেখেতে টিভি দেখা, পরে ডিনার ও শেষে ঘুমোনো। হাঁফিয়ে উঠেছিলাম-- এই কি জীবন? অর্থহীন অস্তিত্ব! একবার গঙ্গাসাগরে দেখা হলো এক নতুন নাগা সাধুর সাথে। পরে সাধুদের আশ্রমেও গেলাম আশ্রম ছিলো হিমালয়ে। এরপর এক বছর পরে চাকরি ছেড়ে যোগ দিলাম সেখানে।
#কি_পেলেন সাধু হয়ে? এত সাধনা করে?
●নিজের মধ্যে এক স্থির সত্তাকে। জগত ও জীবনের তাত্পর্য খুঁজে পেলাম। #আপনার সাধন পথটি কি? ●নাগারা জ্ঞান মার্গের সাধক। শঙ্করাচার্য পন্থী। শিব-উপাসক। আমরা দশনামী সন্ন্যাসী। নির্বাণী ও নিরঞ্জনী আখাড়াতেই বেশি নাগা পাবেন।
সন্ন্যাসী উলঙ্গ থাকলেই কি তিনি নাগা?
●জৈন ধর্মের দিগম্বর সাধুরাও কাপড় পরেননা। নাগা সাধুর জটাকে বলে #নাগজটা। জটা থেকে চুলের গুচ্ছ নেমে আসে দড়ির মতো পাকিয়ে। রামকৃষ্ণ-গুরু তোতাপুরীর এই নাগজটা ছিল। চুল এমন পাকানো না থাকলে বলা হয় শম্ভুজটা। বিজয় গোস্বামীর ছবিতে যেমন দেখা যায়। আর জটা ছোট হলে তা বাবরান জটা।
প্রশ্ন করলাম : কুম্ভমেলার পর আপনি কি আশ্রমে ফিরে যাবেন কিংবা অন্য কোথাও?
●আশ্রমে। প্রতি বছর একবার তীর্থযাত্রা করি। তিন মাসের মতো বাইরে থাকি। এ-বছর কুম্ভমেলা, গত বছর পরশুরাম কুন্ডে (আস্যাম-অরুণাচলের বর্ডারে)। আশ্রমের অন্য সাধুরাও এভাবে যান।
#কিন্তু কোনো ট্রেনে বা বাসে নাগাসাধুকে দেখিনি কখনো!
●আমরা হেঁটেই যাই সব জায়গায়।
#একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি। আপনি তো উচ্চশিক্ষিত, ইঞ্জিনিয়ার। নিরক্ষর উলঙ্গ সাধুদের সাথে থাকতে অসুবিধা হয়না?
●আপনি হয়তো জানেননা যে প্রচুর উচ্চশিক্ষিত সাধু আছেন সমাজে। আমাদের আশ্রমেই আছেন প্রাক্তন IAS অফিসার, ফিল্মস্টার, পাইলট। আরেকটা কথা। একজন মানুষ উচ্চশিক্ষিত বা নিরক্ষর, তারচেয়েও বড় কথা সে ভালমানুষ কিনা। ( #ধর্মের_খোঁজে_এক_সন্ন্যাসী থেকে সংক্ষেপে এক অংশ উপরের লেখাটি।) সংগৃহিত