হিন্দুধর্ম অনুযায়ী গাভী ও বৃষ হত্যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
গাভী ও বৃষ হত্যা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ
বেদ ও অন্যান্য বৈদিক শাস্ত্রে মানব জাতিকে গাভী ও বৃষ লালন পালন করতে উৎসাহ এবং তাদের হত্যা না করা হয় যেন কোন কারনেও , বিশেষভাবে উপদেশ প্রদান করা হয়েছে সে বিষয়ে।
এমনকি কোনো পূজা-পার্বণে পশু বলি, সনাতন ধর্ম সমর্থণ করেনা। শাস্ত্রে বলা আছে মনের পশুত্বকে বলি দেবার কথা অবুঝ কোনো প্রাণীকেনয়।বেদ বা শাস্ত্র স্বয়ং ভগবানের বাণী। তাই বেদ বা শাস্ত্র হচ্ছে সম্পূর্ন নির্ভূল। বেদে গাভী ও বৃষকে পবিত্র পশু বলা হয়েছে।বৈজ্ঞানিকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন,গরুর গোবরে কীটনাশক গুণ রয়েছে। এমনকি আধুনিক বিশ্ব জৈব সার হিসেবে গোবর।
সনাতনধর্মে গোহত্যা নিষেধ |
বেদের বাণী-১.গাভী ও বৃষদের রক্ষা করতে হবে।এদের হত্যা নিষিদ্ধ। –
চৈতন্যদেব গো সম্পর্কে বলেছেন - ‘গোদুগ্ধ খাও তাই গাভী তব মাতা। বৃষ অন্ন উপজায় তাহে তেহ পিতা\’ সংস্কৃত ভাষায় যেহেতু বেদসহ যাবতীয় ধর্মগ্রন্থ প্রণীত হয়েছে, তাই সংস্কৃত ভাষা হিন্দুদের নিকট অতিশয় পবিত্র। একই কারণে একে গীর্বাণী বা দেবভাষাও বলা হয়। আর গীতা সর্বশাস্ত্রের সার বলে এটি হিন্দুদের সর্বাধিক পাঠ্য ও অনুসৃত গ্রন্থ। মানব শিশুর জন্মের ছয় দিনে যেমন একটি অনুষ্ঠান করা হয়, তেমনি গাভীর বাচ্চা প্রসবের তের অথবা একুশ দিনে ত্রিনাথের মেলা নামে একটি অনুষ্ঠান করা হয়। এর আগ পর্যন্ত গাভীর দুধ গরম করা হয় না। পৌষ মাসের শেষরাতে গরুর উদ্দেশে একটি অনুষ্ঠান করা হয়। গরুর পা ধুইয়ে কপালে সিঁদুরের ফোটা দিয়ে গায়ে চালের গুঁড়োর ছাপ দেওয়া হয়। নতুন ধানের চাল গুঁড়ো করে পিঠা বানিয়ে গরুকে খাওয়ানো হয় এবং নিজেদেরও খেতে হয়। পরে, তিনদিন গরুকে স্নান করানো হয় না। ফালগুন মাসের শেষদিন গরুর মঙ্গল কামনায় গোরোখ বা ঘণ্টাকর্ণ নামে এক পূজার আয়োজন করা হয়।
পায়েসাদি মিষ্ট দ্রব্য দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। নতুন গরু কিনে বাড়িতে আনলে তার পা ধুইয়ে সিঁদুরের ফোটা দেওয়া হয়। গরুর প্রতি এরূপ সম্মান প্রদর্শন করা হয় বলেই হিন্দুরা কখনো গরুর গায়ে পা দেয় না। ধনী-দরিদ্র সকলেই যত্নপূর্বক গোজাতির সেবা-শুশ্রূষা করে। অতি প্রাচীনকালে ভারতবর্ষের অনেক রাজাই গরু পুষতেন। মহাভারতে আছে, বিরাট রাজার ষাট হাজার গাভী ছিল। আইন-ই-আকবরী পাঠে জানা যায়, মুঘল সম্রাট আকবরেরও বহুশত গাভী ও বলদ ছিল। তিনি মুসলমান হয়েও ভারতবর্ষে গোহত্যা নিষিদ্ধ করেছিলেন। গোদান-কে হিন্দু সমাজে বিশেষ পুণ্যকাজ বলে মনে করা হয়। অতীতে রাজা-মহারাজারা যে দান-ধ্যান করতেন, তার একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল গরু। মুনি-ঋষিদের আশ্রমে প্রচুর সংখ্যক গরু থাকত। পিতা-মাতার আদ্যশ্রাদ্ধে ব্রাহ্মণকে গোদান করা একটি পবিত্র কাজ। বিবাহে কনের বাড়ি থেকে গাভী বা বকনা বাছুর দান করাও একটি বিশেষ প্রথা। দুগ্ধবতী গাভীকে যে মাতৃবৎ জ্ঞান করা হয় এর প্রমাণ শিশু শ্রীকৃষ্ণের পাশে একটি গাভীর উপস্থিতি। হিন্দুদের প্রধান তীর্থস্থান কাশী শহরে অজস্র গরু যথেচ্ছ ঘুরে বেড়ায়। কেউ তাদের তাড়ায় না। হিন্দুদের সকল শাখা ও সম্প্রদায় গোজাতির মহত্ত্ব ও পবিত্রতা স্বীকার করে। বেদ, উপনিষদ, রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, স্মৃতি সকল শাস্ত্রে গোজাতির প্রতি অসাধারণ সম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে।
বৃহৎপরাশরস্মৃতিতে গোজাতির মহত্ত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে - গরুকে স্পর্শ করলে পাপ দূর হয়, গরুর সেবা করলে বিত্তলাভ হয়, গোদান করলে স্বর্গলাভ হয়; গরুর মস্তকে ব্রহ্মা, স্কন্ধে শিব, পৃষ্ঠে নারায়ণ এবং চরণে বেদসমূহ অবস্থান করেন। গাভীর লোমে অন্যান্য দেবতারা অবস্থান করেন। গরু সর্বদেবময় এবং গরুর প্রতি ভক্তি করলে হরি তুষ্ট হন। তাই গরুর সেবা করলে সকল দেবতা তুষ্ট হন। দেবলের মতে গরু অষ্টমঙ্গলের অন্যতম (অষ্টমঙ্গল: ব্রাহ্মণ, গরু, অগ্নি, স্বর্ণ, ঘৃত, সূর্য, জল, রাজা)। গরুকে দর্শন, নমস্কার, অর্চনা ও প্রদক্ষিণ করলে আয়ু বৃদ্ধি হয়। ব্রহ্মপুরাণে বলা হয়েছে, গাভীকে প্রদক্ষিণ করলে সপ্তদ্বীপা পৃথিবী ভ্রমণের ফল হয়। বিষ্ণুপুরাণ মতে গরুর মল, মূত্র, ক্ষীর, ঘৃত, দধি ও রোচনা পরম পবিত্র ও বহুগুণযুক্ত। [ধনেশনারায়ণ চক্রবর্তী]