পঞ্চামৃত কি ও পঞ্চামৃতের ব্যবহার
পঞ্চামৃত কি ও পুজোতে কেন পঞ্চামৃত দেওয়া হয়?
পঞ্চামৃত হচ্ছে পাঁচ অমৃত যা দুধ , দই , ঘৃত , মধু আর চিনি একসঙ্গে মিশিয়ে তৈরী করা হয় । এই পঞ্চামৃত দিয়েই ভগবানের স্নান অভিষেক করা হয়ে থাকে । এই পাঁচ প্রকার মিশ্রনে তৈরী পঞ্চামৃত অনেক রোগ নিরাময়ের জন্য লাভদায়ক হয় আর মনকেও শান্তি প্রদান করে থাকে ।পঞ্চামৃতের আধ্যাত্মিক অর্থ হলো - এই পঞ্চামৃত আত্মোন্নতির পাঁচ প্রতীক -
1. দুধ = দুধ হচ্ছে পঞ্চামৃতের প্রথম ভাগ । এই দুধ হচ্ছে শুভ্রতার প্রতীক । অর্থাৎ আমাদের জীবন দুধের মতো নিষ্কলঙ্ক হওয়া চাই ।
2. দই = দই - এর গুন হলো এটা অন্যকে নিজের মতো বানায় । দই ঢালার অর্থ হলো প্রথমে আমরা নিষ্কলঙ্ক হয়ে সৎগুন ধারন করেঅন্যকেও নিজের মতো তৈরী করা ।
3. ঘৃত = ঘী স্নিগ্ধতা আর স্নেহের প্রতীক । সবার সঙ্গে আমাদের স্নেহযুক্ত সম্বন্ধ হউক এই ভাবনাই ।
4. মধু = মধু মিষ্টি হওয়ার সাথে সাথে শক্তিশালীও হয় । নির্বল ব্যক্তি জীবনে কিছুই করতে পারে না । দেহ আর মন থেকেশক্তিশালী ব্যক্তিই জীবনে সফলতা পেতে পারেন ।
5. চিনি = চিনির গুন হলো মিষ্টতা । চিনি ঢালার অর্থ হলো জীবনে মিষ্টতা আনো । মিষ্টি কথা সবারই ভাল লাগে , আর তাতে মধুর ব্যবহার তৈরী হয়।
চরণামৃত/পঞ্চামৃত-গ্রহণের মন্ত্রঃ
অকালমৃত্যু-হরণং সর্বব্যাধি-বিনাশনং।
বিষ্ণুপাদোদকং পীত্বা শিরসা ধারয়াম্যহং।।
চরণামৃত/পঞ্চামৃত-গ্রহণের নিয়মকানুনঃ
ভগবানকে অর্পণ করার পরে এটি ডান হাতের নীচে বাম হাত রেখে নিতে হয়। মনে করা হয়,এটি পান করার সময় মন অত্যন্ত বিশুদ্ধ হয়ে যায় এবং আমাদের আশেপাশের পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে এক ইতিবাচক অনুভূতি। এটি পুজো তথা প্রায় সমস্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ঠাকুরের অভিষেকের কাজে ব্যবহার করা হয়।
চরণামৃত/পঞ্চামৃত-গ্রহণের গুরুত্বঃ
দেবতাদের অর্পণ করা হয় এই ৫ উপাদান দিয়ে তৈরি চরণামৃত/পঞ্চামৃত।এটির যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে প্রসাদ আকারেও। শাস্ত্র মতে এই পানীয় পান করার সময় ব্যক্তির মধ্যে ইতিবাচক অনুভূতি তৈরি হয়। পুজোয় চরণামৃত উৎসর্গ করা হয়। অভিষেকের সময় ব্যবহৃত হয়। আবার বিবাহকাৰ্যেও ব্যবহার করা হয়। ধর্মীয় তাৎপর্য থাকলেও এর আয়ুর্বেদ শাস্ত্রেও যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। আয়ুর্বেদ মতে, এটি স্বাস্থ্যের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। মনে করা হয় যে ব্যক্তি বিশ্বস্তভাবে পঞ্চমৃত পান করেন সে জীবনে সমস্ত ধরণের সুখ এবং সমৃদ্ধি লাভ করে। পঞ্চমৃত সব সময় কাঁচের বা রৌপ্যের পাত্রে রাখলে এটি বহু রোগকে পরাস্ত করতে পারে। এতে থাকা তুলসী পাতা তার গুণমানকে আরও বাড়ায়। পঞ্চমৃত গ্রহণ করলে স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি পায়। যেদিন এটি তৈরি করা হবে তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এটি শেষ করা উচিত, পরের দিনের জন্য সংরক্ষণ করা বা বাসি করে অথবা খুব দেরি করে গ্রহণ করা উচিত নয়।
পঞ্চামৃত |
পঞ্চামৃতে পান করলে কি কি লাভ করা যায়?
প্রথমত দুধ ব্যবহার করা হয় পঞ্চামৃতে যা মুলত শুভ শক্তির প্রতীক। মনে করা হয় পুজোর পর এটি গ্রহণ করলে ব্যক্তির রাগ শান্ত হয় এবং মস্তিষ্কের শক্তি বদ্ধি পায়। এমনকি শরীরে উপস্থিত বিষকেও দূর করে পঞ্চামৃত।
* কাজে বাধা এলে পুজোর পঞ্চামৃত বাড়ির বিভিন্ন কোণে ছিটিয়ে দিন। এর ফলে নেতিবাচক শক্তির প্রভাব দূর হবে।
* পঞ্চামৃতে দইও ব্যবহৃত হয়। অন্যকে নিজের মতো বানিয়ে নেওয়ার গুণ থাকে দইেয়র মধ্যে । তাই ব্যক্তির মধ্যে সদ্গুণের বিকাশ হয়পঞ্চামৃত পান করলে।সম্পর্ক মজবুত হয় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ।
* পঞ্চামৃতে ব্যবহৃত ঘি পরস্পরের মধ্যে স্নেহ বৃদ্ধি করে। এটি গ্রহণ করলে পরিবারের প্রতি ব্যক্তির দায়িত্ব বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি ঈশ্বরের আশীর্বাদও লাভ করা যায়।
* পরিবারে প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকলে বৃহস্পতিবার পুজোর পর সকলকে পঞ্চামৃত পান করান। এর ফলে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সামঞ্জস্য বৃদ্ধি পাবে।
* পঞ্চামৃতে চিনি ব্যবহৃত হয়। এটি মাধুর্য বৃদ্ধি করে। তাই পঞ্চামৃত পান করলে দাম্পত্য জীবন উন্নত হয়। এর ফলে সম্পর্ক মধুর হয়।
* ভাগ্যের সঙ্গ যদি না পান তবে শিবকে পঞ্চামৃত অর্পণ করুন সোমবারের দিন।অর্পণের পর এটি পান করুন। এর ফলে ভাগ্যের সঙ্গ লাভ করবেন।
* অর্থ গচ্ছিত রাখতে না-পারলে শুক্রবার লক্ষ্মীকে পঞ্চামৃত নিবেদন করুন। তার পর সেটিকে ৫ বা ১০০ টাকার ওপর অল্প ছিটিয়ে দিন। একটি কাপড়ে বেঁধে এটিকে টাকা রাখার জায়গায় রেখে দিন। এর ফলে ধন বৃদ্ধি হবে।
* পরিবারের কোনও সদস্য অসুস্থ থাকলে রবিবার তাঁদের পঞ্চামৃত পান করান। এর ফলে ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠতে পারবে।
উপরোক্ত গুনগুলিই আমাদের জীবনে সফলতা এনে দেয় ।পঞ্চামৃত পান করলে শরীর পুষ্টি আর রোগমুক্ত হয় । পঞ্চামৃতঠিক ততটুকু মাত্রায়ই সেবন করা উচিৎ যতটুকু মাত্রায় সেবন করা উচিৎ , তার অতিরিক্ত নয় ..... জয় রাধে ।জয় নিতাই গৌর হরিবোল ...।
এই ওয়েবসাইটটিতে আরো জানতে পারবেন