জীবন মৃত্যুর যুদ্ধে জয়ী হবেন কিভাবে

 কৃষ্ণভাবনাময় জীবন হল সবচেয়ে শান্তিময় কিন্তু দুঃখের বিষয় হল , সাধারণ মানুষ এই বিষয়ে কিছুই জানে না । যার ফলে তারা তাদের জীবনকে নষ্ট করছে । এই আধুনিক সভ্যতা একটি আত্মহননকারী সভ্যতা , যেখানে মানুষ নিজে নিজেদেরকে হত্যা করছে । কারণ তারা জানে না যে যথাৰ্থ জীবন - ধারা কি হওয়া উচিত ?উদাহরণস্বরূপ,পশুরা জানে না যে যথাৰ্থ জীবন কি ? তাই পশুরা প্ৰকৃতির নিয়ম অনুযায়ীই সাধারণভাবে জীবন যাপন করে চলে , ক্ৰমাগত বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বারবার জন্ম মৃত্যু হয়। 

জীবন কিভাবে সুন্দর করা যায়

বর্তমান যুগে মানুষও তেমনি পশুদের মতন সাধারণ জীবন-যাপন করে চলছে। মানুষ বুঝে না, যখন আপনি মনুষ্য - দেহ পান তখন ভিন্ন ধারায় জীবনযাপনের দায়িত্ব আপনার চলে আসে । আর তার ফলেই আপনি কৃপাময় কৃষ্ণভাবনাময় হয়ে ওঠার সুযোগ পান । যার মাধ্যমে সমস্ত রকম সমস্যা থেকে সমাধানের পথ খুঁজে মুক্তি পেতে পারেন । কিন্তু তা না করে যদি পশুর মতন জীবন যাপন করতে থাকেন , তবে পুনরায় জন্ম - মৃত্যুর আবর্তন চক্ৰে প্ৰবেশ করে আপনাকে ৮৪লক্ষ জীব যোনির মধ্য দিয়ে চলতে হয়। ফলে আরও একবার মনুষ্য-জন্ম ফিরে পেতে আপনার বহু লক্ষ কোটি বছর অপেক্ষা করতে হবে। যেমন , এই মুহুর্তে আপনারা যে সুর্যকিরণটি দেখতে পাচ্ছেন , সেটি আবার দেখতে হলে আপনাকে চব্বিশ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। কারণ প্ৰকৃতির সবকিছুই একটি নিদিষ্ট চক্ৰে আবর্তিত হয়ে চলেছে। কিন্তু আপনি যদি নিজেকে উন্নত করায় এই সুযোগ নষ্ট করেন , তবে আবার আপনাকে জন্ম - মৃত্যুর আবৰ্ত্তন চক্ৰে প্ৰবেশ করতে হবে। 

জীবন যুদ্ধ নিয়ে কিছু কথা

প্ৰকৃতির বিধান খুব কঠোর। সাধু, গুরু ও বৈষ্ণব সঙ্গ করুন। ভগবানের শুদ্ধভক্তগন ভগবানের মন্দির স্থাপন করেছেন , যাতে করে মানুষ কৃষ্ণভাবনামৃতের সুযোগ - সুবিধাগুলো গ্রহন করে নিজেদের বিকাশ সাধন করতে পারেন। আমরা জানি না , আমাদের মৃত্যুর আর কত দেরী । শরীরের মধ্যে আমাদের অবস্থানের সময় ফুরিয়ে এলে মৃত্যুকে কেউ আটকাতে পারবে না । এইজন্য এখনই আমাদের কৃষ্ণভাবনামৃত আস্বাদনের অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত । 

জীবন যুদ্ধ
জীবন যুদ্ধ ছবি

জীবন পরিবর্তন করার গল্প

জড় প্ৰকৃতির বিধি - নিয়ম এমনই কঠোর যে, মৃত্যুদূত এলে আপনি বলতে পারবেন না “আমাকে থাকতে দাও'' । প্ৰকৃতপক্ষে মানুষ এবরকম অনুরোধই করে। আমার এক পুরানো বন্ধুর বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন । তিনি খুব ধনী ছিলেন । তিনি ডাক্তারকে খুব অনুনয় - বিনয় করে বলতেন , আমাকে আর চারটি বছর বাচিয়ে রাখুন তাহলে আমি কতগুলি অসমাপ্ত কাজ শেষ করে ফেলতে পারতাম। প্ৰত্যেকেই ভাবে আমাকে এটা করতে হবে , ওটা করতে হবে, আমি মারা গেলে আমার স্ত্রী-পুত্রদের কি হবে, আমার ব্যবসা-সম্পত্তির কি হবে। একবার ভাবে না আমার কি হবে ? আমার মৃত্যুর পর আমার কি গতি হবে ? কিন্তু তারা এটা বোঝে না যে , ডাক্তার বা বৈজ্ঞানিক - কেউই মৃত্যুকে আটকাতে পারবে না। তাই আপনাকে মৃত্যুর সময় প্রস্তুত থাকতে হবে, এটাই নিয়ম। 

শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে মন্মনা ভব মদ্ভক্ত এর সঠিক অর্থ হলো,আপনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের , রুপ,কথা, গুন ও লীলা আস্বাদন করুন,তার ভক্ত হন এবং তার কথা ভাবুন।

 অন্তকালে চ মামেব স্মরন্মুক্ত কলেবরম ,যঃ প্রয়াতি স মদ্ভাবং যাতি নাস্ত্যত্র সংসয় । ( গীতা ৮/৫ ) অর্থাৎ : - গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন মৃত্যুর সময়ে যিনি আমাকে স্মরন করেন , তিনি তৎক্ষনাৎ আমার ভাব’ই প্রাপ্ত হন ও আমার কাছে ফিরে আসে। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই ..। কিন্তু আমরা কিভাবে অন্তিম সময়ে কৃষ্ণনাম নেব ? সারা জীবন শুধু আমার বাড়ি আমার সংসার করে গেলাম , একবারও নিলাম না সেই অন্তিমের বন্ধু মধুর কৃষ্ণ নাম । একবারও নিলাম না সাধু , গুরু , বৈষ্ণবের স্মরন, করলাম না তাদের পদসেবা। করলাম না শ্রীকৃষ্ণ , গুরুদেবের নিত্য সেবা । তাই, কৃষ্ণভাবনাময় বর্ম পরিধান করুন অর্থাৎ কৃষ্ণনাম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন মৃত্যুর আগ-মুহুর্ত পর্যন্ত প্রস্তুত থাকুন। তবেই আপনি পাপমুক্ত হয়ে মৃত্যুযুদ্ধ হতে জয়ী হতে পারবেন। 

এটাই প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ, নতুবা আপনাকে মৃত্যুর কাছে হার মানতেই হবে। তাই সবাই হরিনাম জপ ও কীর্তন করুন, আপনার পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসাথে, হরিনাম পরায়ন ভক্তের সাথে নগর কীর্তন করুন, হরিনামের সাথে সাথে নৃত্য করুন, এটা চিন্ময় আনন্দ। শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন, ''হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে''।। এই হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন এবং সুখী হউন।। হরেকৃষ্ণ।।জয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url