ধর্মের সংজ্ঞা কি?
এই যে আমরা এত ধর্ম নিয়ে তর্কাতর্কি করি এর সংজ্ঞা কি আমরা আসলেই বুঝি নাকি না বুঝেই নেশাখোরের মত মাতলামি করি ।ধর্ম নিয়েই যখন এত বাড়াবাড়ি তবে ধর্মে মানে আগে ভালমত বুঝা উচিত ।ধৃ +মন =ধর্ম ।ধৃ মানে হলো ধারণ বা গ্রহণ করা ।আর মন হলো অন্তর,আত্না,পরমাত্না ।তবে ধর্মের অর্থ হলো মন যাহাকে গ্রহণ শান্তি লাভ করে তাহাই ধর্ম ।সব ধর্মই শান্তির কথা বলে ।কোন ধর্মই চুরি,ডাকাতি,নরহত্যা,ব্যভিচার করতে বলে না ।তবে ধর্ম নিয়ে এত বিবাদ কেন ? পানিকে কেউ জল বলে ,কেউ বলে ওয়াটার ,কেউ বলে aqua,আসলে একটি দ্রব্য বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন নামে পরিচিত ।এক ঈশ্বরকে মানুষ বিভিন্ন নামে ডাকে ।যারা নাবুঝে ধর্মের নামে মানুষ কুপিয়ে মারে তাদের ধর্মে কি মানুষ হত্যার কোন বিধান আছে কি? বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত জানাতে পারে তাই বলে কি তাকে হত্যা করতে হবে! তার মতামত আপনার খারাপ লাগলে বা ভুল হলে আপনার যুক্তি দ্বারা তাকে বুঝানো উচিত ।তা না করে একেবারে হত্যা ! তবে কি আমি ধরে নেব আপনার ধর্ম সম্বন্ধে জ্ঞান নেই বললেই চলে? নিচের সংজ্ঞাটি থেকে ধর্ম সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যাবে----
ধর্ম কি?
ধর্মতত্ত্ব জানতে হলে আগে ধর্ম কি
তা বিশেষ ভাবে বুঝতে হবে। ধর্ম
কাকে বলে?-
ধ্রিয়তে ধর্ম ইত্যাহুঃ স এব পরম
প্রভূঃ।
ধারণ করে বলে এর নাম ধর্ম। পূণ্য কি,
পাপ কি, জ্ঞান কি, অজ্ঞান কি,
সুন্দর কি, কুৎসিৎ কি- এক কথায় ভাল
কি, মন্দ কি, যা ধারণ করে তাই ধর্ম।
ত্রিলোক যার মধ্যে ধৃত বা
নিহিত, তাকেই ধর্ম বলে। অথবা
মানুষ যাকে ধারণ করে আছে, তাই
ধর্ম। কেবল মানুষ বলি কেন- সর্ববৃহৎ
থেকে পরমাণু পর্যন্ত, ত্রিভুবনে যা
কিছুর সম্ভাবনা আছে, তাদের
সবকিছুই ধর্মের দ্বারা ধৃত, রক্ষিত,
পরিচালিত। ধর্মই জগৎযন্ত্রের
যন্ত্রী- ধর্মই সুখের স্বরূপ। ধর্মের জন্যই
জাগতিক পদার্থের আকুল
আকাঙ্ক্ষার ছুটাছুটি।
দেবতা, মানুষ, কীট, পতঙ্গ, উদ্ভিদ্ ও
জড়বস্তু প্রভৃতি ত্রিলোকের সকল
পদার্থেরই ধর্ম ও সাধনার আবশ্যকতা
আছে। তবে মানুষের ধর্ম আছে,
ধর্মজ্ঞান আছে,- আর পশু-পাখি, কীট-
পতঙ্গ বা উদ্ভিদের ধর্ম আছে, কিন্তু
ধর্মজ্ঞান নাই। ধর্মজ্ঞান আছে
বলেই মানুষ অন্যান্য প্রাণী হতে
শ্রেষ্ঠ।
আপনার আর কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।
একটা অনুরোধ নিজে জেনে অন্যদের কেও জানান
আমরা কেনো মূর্তি পুজা করি ? হিন্দুরা কি পৌত্তলিক ? মূর্তির প্রান নাই, তবু কেন তাঁর উপাসনা করা হয় ?
আমরা কি সঠিকভাবে এর উত্তরদিতে পারি, আর এজন্য আমরা অন্যের কাছে হিন্দুধর্ম কে হাসির পাত্র বানাই।
অনেকেই সনাতন ধর্মের মূর্তি পূজা নিয়ে প্রশ্ন করে।এ প্রশ্ন যে শুধু অন্য ধর্মের লোকেরা করে তাই নয় বরং অনেক সনাতন ধর্মালম্বীরাও করে।
আজ তাই আপনাদের কে মূর্তি পূজা কি এবং কেন তা কেনোই বা করা হয় তাই সনাতন দর্শনের আলোকে মাধ্যমে তুলে ধরব।
মূর্তি পূজার স্বরূপ জানতে হলে প্রথমে আমাদেরকে জানতে হবে ঈশ্বর ও দেবতা বলতে সনাতন দর্শনে কি বলা হয়েছে
ঈশ্বর ও দেবতা
প্রথমেই বলে রাখা দরকার সনাতন দর্শনে বহু ঈশ্বরবাদের স্থান নাই বরং আমরা একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী।হিন্দু শাস্ত্র মতে, ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়।সনাতন দর্শন বলে, ঈশ্বর স্বয়ম্ভূ অর্থাৎ ঈশ্বর নিজে থেকে উৎপন্ন, তার কোন স্রষ্টা নাই, তিনি নিজেই নিজের স্রষ্টা।আমাদের প্রাচীন ঋষিগন বলে গিয়েছেন, ঈশ্বরের কোন নির্দিষ্ট রূপ নেই(নিরাকার ব্রহ্ম)তাই তিনি অরূপ, তবে তিনি যে কোন রূপ ধারন করতে পারেন কারণ তিনিই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে সর্ব ক্ষমতার অধিকারী।
ঋকবেদে বলা আছে ঈশ্বর “একমেবাদ্বিতীয়ম” – ঈশ্বর এক ও অদ্বিতীয়।ঈশ্বর বা ব্রহ্ম(নিরাকার ব্রহ্ম)।ঈশ্বর সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে তিনি “অবাংমনসগোচর” অর্থাৎ ঈশ্বরকে কথা(বাক), মন বা চোখ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না, তিনি বাহ্য জগতের অতীত। ঈশ্বর সম্পর্কে আরো বলা আছে-
১. ছান্দেগ্য উপনিষদের ৬ নম্বর অধ্যায়ের ২ নম্বর পরিচ্ছেদের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে-
“একাম এবাদ্বিতীইয়ম”
অর্থ- “স্রষ্টা মাত্র একজনই দ্বিতীয় কেউ নেই”
২. শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৬ নম্বর অধ্যায়ের ৯ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে-
“না চস্য কসুজ জানিত না কধিপহ”
অর্থ- “সর্ব শক্তিমান ঈশ্বরের কোন বাবা মা নেই, তাঁর কোন প্রভু নেই,
তাঁর চেয়ে বড় কেউ নেই”
৩. “একং সদ বিপ্রা বহুধা বদন্তি” (ঋকবেদ-১/৬৪/৪৬) অর্থাৎ “সেই এক ঈশ্বরকে পণ্ডিতগণ বহু নামে ডেকে থাকেন”
৪. যজুবেদের ৩২ নম্বর অধ্যায়ের ৩ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে-
“ন তস্য প্রতিমা আস্তি”
অর্থ- “সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কোন মূর্তি নেই”
৫. যজুবেদের ৪০ নম্বর অধ্যায়ের ৮ নম্বর অনুচ্ছেদে আছে-
“সর্বশক্তিমান ঈশ্বর নিরাকার ও পবিত্র”
৬. “একং সন্তং বহুধন কল্পায়ন্তি” (ঋকবেদ-১/১১৪/৫) অর্থাৎ “সেই এক ঈশ্বরকে বহুরূপে কল্পনা করা হয়েছে”
৭. “দেবানাং পূর্বে যুগে হসতঃ সদাজায়ত” (ঋকবেদ-১০/৭২/৭) অর্থাৎ “দেবতারও পূর্বে সেই অব্যাক্ত(ঈশ্বর) হতে ব্যক্ত জগতে উৎপন্ন লাভ করেছে”
৮. যজুবেদের ৪০.১ “এই সমস্ত বিশ্ব শুধু মাত্র একজন ঈশ্বর দ্বারা সৃষ্টি ও পরিচালিত হচ্ছে।যিনি কখনই অন্যায় করে না অথবা অন্যায় ভাবে সম্পদ অর্জনের ইচ্ছা রাখে না”
৯. ঋগবেদ ১০.৪৮.৫ “ঈশ্বর সমস্ত পৃথিবীকে আলোকিত করেন। তিনি অপরাজেয় এবং মৃত্যুহীনও তিনি এই জগতের সৃষ্টিকারী”
১০. যজুর্বেদ সংহিতা -৩২.১১ “ঈশ্বর যিনি বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সকল কিছুর মধ্যে তিনি অধিষ্ঠিত”
১১. ঋগবেদ সংহিতা -১০.৪৮.১ “ঈশ্বর যিনি সর্ব্বত্রই ব্যাপ্ত আছেন”
১২. “ঈশ্বর সকল ভূতপ্রাণীর হৃদয়ে বাস করেন” – শ্রীমদভগবদগীতা-১৮/৬১
আরো বলা আছে, তবে লেখা বড় হয়ে যাবে বলে, সবটা আর বল্লাম না।