কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শেষে অর্জুনের পাপমোচন নিয়ে শ্রীকৃষ্ণ

কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ছিল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ।মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের শেষে অর্জুন  তাঁর  সখা শ্রীকৃষ্ণকে বলছেন,প্রভূ আমায় পাপ মোচনের জন্য গঙ্গা স্নানে নিয়ে যাবে আমি এতো এতো আপন জনকে হত্যা করলাম, আত্মীয়স্বজনদের,  এতো পাপ করলাম। গঙ্গা স্নানে হয়তো  সকল পাপ মুক্ত হয়ে যাবে। কৃষ্ণ বললেন, আমি তোমার রথের সারথী। তুমি আমায় যেখানে নিয়ে যেতে বলবে সেখানেই নিয়ে যাবো। গঙ্গা তীরে এসে কৃষ্ণ বললেন, "সখা তুমি রথের উপর বসো, আমি এখনি আসছি।" এই বলে রথ থেকে নেমে কৃষ্ণ একটু আড়াল হলেন। 

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক অর্জুনকে শেষ শিক্ষা

অর্জুনের একটি মহৎগুণ ছিলো তিনি পশুপাখিদের কথা বুঝতে পারতেন। এমন সময় অর্জুন দেখলেন দুইজন লোক একটি মৃতদেহকে কাঁধে করে নিয়ে 'বলহরি হরিবোল' 'বলহরি হরিবোল' বলতে বলতে শ্মশানে নিয়ে এলো। তারা মড়াটিকে মাটিতে রেখে একটি চিতা সাজালো। এমন সময় একজন অপরজনকে বলছে আগুন তো আনি নি। কিন্তু তারা একা ভয়ে মড়ার কাছে কেউ থাকতে চাইছে না। তাই তারা দুজনেই আগুন আনতে বাড়ি চলে গেলো। অর্জুন একটু দূর থেকে রথের উপর বসে বসে সব লক্ষ্য করছেন। এমন সময় একটি জীর্ণ শীর্ণ রোগা শৃগাল মড়ার কাছে এসে মড়ার কান দুটোকে শুকছে আর মাথা নাড়াচ্ছে। মড়ার মুখ শুকছে আর মাথা নাড়াচ্ছে, মড়ার হাত দুটোকে, পা দুটোকে শুকছে আর মাথা নাড়াচ্ছে। শেষে মড়াটিকে ফেলে রেখে শৃগালটি চলে যাচ্ছে।

অর্জুনের পাপমোচন ছবি
অর্জুনের পাপমোচন 

এটা দেখে অন্য একটি মোটা সোটা শৃগাল বললো, "কিরে মড়াটাকে না খেয়ে চলে যাচ্ছিস যে?"  আধমরা জরাজীর্ণ  শৃগালটি নাক তুলে বললো,খেতে হলে  তুমি খাও কারণ আমি অখাদ্য কুখাদ্য খাই না।স্বাস্থ্যসম্মত হিস্টপিস্ট শেয়ালটি বললো, তুমি এতো খাবার বিচার করো বলেই আজ তোমার এই জীর্ণ শীর্ণ অবস্থা। চল মড়াটির পা দুটোকে খাই।রোগা শৃগালটি বললো, ঐ চরণ দুটি কোনো দিন হরিমন্দিরে প্রবেশ করেনি। আমি খেতে পারবো না। মোটা শৃগালটি বললো, তাহলে ঐ মড়াটির হাত দুটিকে খাই।খাওয়া-দাওয়া কম করা  জীর্ণ শৃগালটি বলল, ঐ হাত দিয়ে কোনো দিন সাধুগুরু বৈষ্ণবের সেবা দেয়নি। মোটা শৃগালটি বললো, চল্ তাহলে কান দুটিকে খাই।" জীর্ণ শৃগালটি বলল, ঐ কান দুটি কোনো দিন হরিনাম শ্রবণ করেনি।মোটা স্বাস্থবান শৃগালটি বলল,চলো তাহলে জীহ্বাটিকে খাই।জীর্ণ শৃগালটি বললো, ঐ জীহ্বা দিয়ে কোনো দিন হরিনাম উচ্চারণ করেনি।মোটা শৃগালটি তখন বলল, মড়াটির কিছুই যখন খাবি না, চল্ তাহলে ঐ রথের উপর যে মানুষটি বসে আছে তাকে গিয়ে খাই।"  জীর্ণ শৃগালটি বলল, " ও তো আরো মূর্খ রে, যাঁর চরণ হতে গঙ্গার উৎপত্তি তাঁকে কিনা বলে গঙ্গা স্নানে নিয়ে যেতে। ও তো আরো মূর্খ। ওকে কি খাওয়া যায়? এতোক্ষণ অর্জুন দুই শৃগালের কথা শুনে চৈতন্য হলো। তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। একটু পরে কৃষ্ণ এলে তাঁর চরণ দুটিকে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো, "প্রভূ আমায় ক্ষমা করো।"

 ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে শেষ শিক্ষা দেওয়ার জন্য এই লীলা করেছিলেন 

আর এই লীলাই শ্রীকৃষ্ণকে সাহায্য করেছিলো বাবা মহেশ্বর, নন্দী, ভৃঙ্গী আর যোগমায়া। শ্মশানে যিনি মড়াটি সেজে ছিলেন, তিনি মহেশ্বর,তারা নন্দী আর ভৃঙ্গী মড়াটিকে যারা নিয়ে এসেছিলো,আর  যোগমায়া ছিলো  দুই শৃগাল।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>