শ্রীকৃষ্ণের হাতে বাঁশি ও মাথায় ময়ূরের পালক থাকার কারণ

ভগবান  কৃষ্ণের হাতে বাঁশি কেন ও কীভাবে এলো এই বাঁশি? 
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ  খেলা করতে করতে একদিন গঙ্গার তীরে গিয়েছিলেন।।  দেখলেন একজন বৃদ্ধ বাঁশি বাজাচ্ছেন এবং বাশিঁ বিক্রি করতেছেন।। ওই বাঁশির সুর শুনে শ্রীকৃষ্ণ বৃদ্ধ লোকটির কাছে যান এবং বলেন, হে মুনিবর আপনার বাঁশির সুর খুব সুন্দর।।  আপনি কি আমাকে শিখাবেন বাঁশি বাজানো ।। তখন বৃদ্ধ লোকটি বললেন তুমি খুব ছোট।। তুমি পারবে না বাঁশি বাজাতে।।।  তখন শ্রীকৃষ্ণ বললো আমি পারবো দয়া করে আমাকে শিখিয়ে দিন।।  এই অপূর্ব লীলা বিলাস দেখে সমস্ত দেব দেবী হাসছিলেন।  এই ভেবে যিনি সমস্ত কিছুর একমাত্র মালিক। তিনি বাঁশি  বাজানো শিখতে চাইছেন। বৃদ্ধ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এর এই লীলা দেখে খুব দয়া হলো তারপর সে (বৃদ্ধ) বললো আচ্ছা ঠিক আছে আমি তোমাকে শিখাবো। তখন শ্রীকৃষ্ণ খুবই আনন্দিত হলো।।  বৃদ্ধ লোকটি শ্রীকৃষ্ণ এর হাতে একটি বাঁশি দিল এবং বললো আমি যেভাবে বাজাবো তুমিও ঠিক সেইভাবে বাঁশি বাজাবে।। 

শ্রীকৃষ্ণ বললো ঠিক আছে।। বৃদ্ধ যখনই বাঁশিতে ফু দিল।। তখনই শ্রীকৃষ্ণ বাঁশিতে ফু দিল।। শ্রীকৃষ্ণ যখন বাঁশি সুর তুললো সেই সুর শুনে সমস্ত দেবদেবী, সমস্ত জীব জগৎ বিমোহিত হয়ে গেল।। দেব দেবী পুস্প বৃষ্টি করতে লাগল।।।  তখন বৃদ্ধ লোকটি ভাবলো এ কোন সাধারন বালক নয়।। শ্রীকৃষ্ণ বাঁশি বাজাচ্ছিল সেই সময় বৃদ্ধ লোকটি তার চরনে শুয়ে পড়লো।। এভাবেই শ্রীকৃষ্ণ  কাছে বাঁশি এবং বাঁশি বাজানো শুরু করে।    🍀 হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে 🙏
কৃষ্ণের বাঁশি ও ময়ূরের পালকের রহস্য
কৃষ্ণের বাঁশি ও ময়ূরের পালকের রহস্য 

শ্রীকৃষ্ণের মাথায় ময়ূরের পালক থাকে কেন?
 ***ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রুপ সবার কাছেই মনমোহক। ঘন কাল কৃষ্ণবর্ণ মেঘের মত দেখতে শ্রীকৃষ্ণ সুপুরুষ ব্যক্তি। ওনার লাল ঠোঁটে সবসময় যেন একটা দুষ্টু বাঁকা হাসি লেগেই আছে। ওনার চোখে রয়েছে ঔজ্জ্বল্য যাতে সবসময় যেনো এক দীপ্তির আভা। ওনার মুখের চারপাশে আছে গভীর কালো কোঁকড়ানো কেশের বাহার। ওনার বসন পীতবর্ণ ও শক্তিশালী কৌস্তভ রত্ন তাঁর বুকের মাঝে শোভা পায়। ওনার এই রুপের বর্ণনার সবচেয়ে সেরা অংশ হলো ওনার মাথায় শোভা পাওয়া ময়ূরের পালকটি। শ্রীকৃষ্ণের মুকুটে শোভা পাওয়া ময়ূরের পেখমের 
তাৎপর্য... বেশিরভাগ ভক্তের কাছে ময়ূরের এই পালক প্রায় ততোটাই প্রতীকি বা দর্শনীয়,যেমন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং। শ্রদ্ধার সাথে ভক্তেরা তাই শ্রীকৃষ্ণকে "মর্মকুটধারী" বলেও সম্বোধন করে থাকে। এর মানে হলো যার মাথার মুকুট ময়ূরের পেখম সুসজ্জিত। কিন্তু বহুলোকের কাছে মুকুটের এই পেখমের তাৎপর্য্য জানা আছে. আবার হয়তো কারো জানা নেই। অনেক কাহিনী ও কথকথা জড়িত আছে,এই ময়ূরের পেখমের ব্যাপারে। আজ তাই আমরা এমনি কিছু পুরাণের প্রচলিত ধারণা বা কাহিনী  চেষ্টা করবো, যা এই ময়ূরের পেখমের অন্তর্নিহিত কাহিনীটা জানায়।   ***শ্রীকৃষ্ণের মাথায় মুকুটে ময়ূরের পেখমের গল্প , একদিন বড়ই মনোরম পরিবেশে শ্রীকৃষ্ণ ও বাকি রাখালরা দুপুরে জঙ্গলে ঘুমোচ্ছিলেন। কৃষ্ণ সবার আগে ঘুম থেকে ওঠে এই অপূর্ব পরিবেশে নিজের মনে বাশি বাজাতে শুরু করেন। অপূর্ব, মনোরম সেই সুর। ওনার এই মিষ্টি সুরে সব প্রাণী উচ্ছসিত হয়ে নাচতে শুরু করে দেয়। এই সমস্ত প্রাণীর মধ্যে একদল ময়ূরও ছিলো। তাদের মধ্যে কিছু আবার সুরে মুগ্ধ হয়ে, বিভোর হয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। বাশিবাদন যখন বন্ধ হয়, তখন ময়ূররাজ শ্রীকৃষ্ণের দিকে এগিয়ে আসেন। ওর সব পালক ঝরে পড়ে। ভগবান কৃষ্ণকে এই সব পেখমগুলো গুরুদক্ষিণা হিসেবে দান করা হয়। ভগবান কৃষ্ণ এই উপহার খুব আনন্দের সাথে স্বীকার করেন ও মাথায় সেগুলো ধারণ করেন। উনি এই সময়ই জানান,যে উনি এই পালক চিরকাল পরবেন এবং অন্য কোন প্রাণীর পালক এই স্থান নিতে পারবে না কোনদিন। সাতটি রঙ বলা হয়। 

প্রাথমিক সাতটি রঙের সব ক'টাই ময়ূরের পেখমে থাকে। তাই মানা হয়, শ্রীকৃষ্ণ এটি পরিধান করে জীবনের সব রঙ ধারণ করার প্রতীক হন্। ভগবান কৃষ্ণ সারা বিশ্বকে ধারণ করে আছেন, তাঁর অপার লীলা ও মহিমায় আমরা আচ্ছন্ন। ওনার নানা রুপ,নানান দর্শন ও ব্যক্তিত্ব আমাদের মোহিত করে রাখে।   

***স্কন্দের শুভাকাঙ্ক্ষী ভগবান বিষ্ণুকে, দেবী পার্বতীর ভাই হিসেবে মানা হয়। শাস্ত্রে আছে যে বিষ্ণু বিয়ের সম্পর্কে দেবী পার্বতীকে মহাদেবকে দান করে দেন। তাই একদিক থেকে দেখতে গেলে শ্রীকৃষ্ণ কার্তিকের মামা হন্। শ্রীমান কার্তিকের বাহন হলো ময়ূর। তাই মানা হয় যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ময়ূরের পেখম নিজের মাথায় সাজান যাতে কার্তিক, যিনি আবার যুদ্ধের দেবতা,ওনার সমস্ত প্রয়াস যেনো সার্থক হয়। শ্রীরাম ও ময়ূর ত্রেতা যুগে....ভগবান শ্রীরাম এই পৃথিবীতে পদার্পণ করেন। প্রচলিত আছে যে, একবার শ্রীরাম ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। একদল ময়ূর নাকি তাদের পেখম দিয়ে ওনার চলার পথটি পরিষ্কার করে দেয়। ভগবান শ্রীরাম নাকি তাদের এই নিস্বার্থতা ও নিষ্ঠার নিদর্শনে খুবই প্রসন্ন হন। উনি নাকি তখন কথা দিয়ে যান যে, দ্বাপর যুগে উনি আবার আবির্ভূত হবেন ও তখন ময়ূরদের প্রতি সম্মান জানাতে এই পালক উনি মাথায় ধারণ করবেন। তাই উনি যখন শ্রীকৃষ্ণ রুপে ধরায় আবির্ভূত হন, ওনার নিজের দেওয়া কথার সম্মান রাখতে নিজের মাথায় ময়ূরের পালক পরেন।  

***একদিন শ্রীরাধা এবং শ্রীকৃষ্ণ লীলা করতে ছিলেন। আর অন্য দিকে বিরাজা ছিলেন শ্রীকৃষ্ণ-এর একজন প্রিয় ভক্ত। যখন তারা লীলা বিলাস করছিলেন, তখন বিরাজা গৃহে বসে শ্রীকৃষ্ণকে পতী হিসাবে পাওয়ার জন্য ঔকান্তিকভাবে স্মরন করছিলেন। আমরা তো জানি ভগবান ভক্তের সব মনোবাঞ্চা পূর্ন করেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ রাধা রানীকে রেখে চুপি চুপি বিরাজা এর গৃহের দিকে রওয়ানা হলেন। ভক্ত সুধামাকে রাখলেন দ্বাররহ্মী হিসাবে। শ্রীকৃষ্ণ দ্বাররহ্মী সুধামাকে বলে গেলেন, যেই আসুক না কেনো এই দ্বার যেন খোলা না হয়। কিছুক্ষন পর দেখে শ্রীকৃষ্ণ তার পাশে নেই। সে খোজাখুঁজির শুরু করলেন এবং বললেন,আমি তাকে এত ভালোবাসি তারপরও আমাকে একলা রেখে সে কার কাছে চলে গেলন। তখন সে বুঝতে পারলেন যে, সে বিরাজার কাছে গেছেন। রাধারানী খুব রেগে গেলেন এবং বললেন, আজ তাঁকে উচিত শিহ্মা দেবো, দেখবো বিরাজা বেশি ভালোবাসে না আমি। তখন রাধারাণী বিরাজার গৃহের দিকে রওয়ানা হলেন। তখন দেখলেন পরম ভক্ত সুধামা দ্বাররহ্মী হয়ে দাড়িয়ে আছেন। তাকে বললেন দ্বার খোলার জন্য, কিন্তু সুধামা বললেন,ভগবানের আদেশ কিভাবে আমি অমান্য করবো.? তখন তাঁদের ভিতর এক প্রকার ঝগড়া হলো।। রাধারাণী রেগে গিয়ে সুধামাকে অভিশাপ দিলেন এবং বললেন পরজন্মে তুমি অসুর হবে। এরফলে সুদাম শঙ্কাসুর অসুর হলেন। এরপর সুধামা বললন, তুমি আমাকে শুধু শুধু অভিশাপ দিয়েছো। আমিও তোমাকে অভিশাপ দিলাম,শত বৎসর তুমি কৃষ্ণ বীরহে কাঁদবে। কিন্তু তারপরও রাধারাণী দ্বার খুলে ভিতরে প্রবেশ করলেন। শ্রীকৃষ্ণ তা বুঝতে পেরে বিরাজাকে বললেন, তুমি আমাকে বাচাও, তোমাকে আমাকে একসাথে দেখতে পারলে, আমাকে শিহ্মা দিবে রাধারাণী। শ্রীকৃষ্ণ বললেন বিরাজাকে তুমি নদী হয়ে যাও, আমি সাপ হয়ে সেখানে সাতার কাটবো, আর এখান থেকে চলে যাবো। কিন্তু রাধারাণী বুঝতে পারলেন যে, বিরাজা নদী হয়ে গেছেন, আর শ্রীকৃষ্ণ সাপ। তখন রাধারাণী ময়ূর রুপ ধারন করে সমুদ্রে ঝাপ দিলেন। আমরা জানি ময়ূর সাপকে মেরে ফেলে। রাধারাণী সাপকে ধরে ফেললেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ বললেন, আমি কৃষ্ণ আমাকে ছেড়ে দাও। তখন রাধারাণী তাকে ছেড়ে দেন। তখন শ্রীকৃষ্ণ বললেন, হে রাধে, তোমার ভালোবাসার কাছে আমি হেরে গেলাম। তোমার ভালোবাসার চিহ্ন হিসাবে তোমার ময়ূর রুপি পেখম আমি সব সময় আমার মস্তকে ধারন করবো। এর জন্যই তার মস্তকে ময়ূর পেখম থাকে।    হরেকৃষ্ণ।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>