হিন্দু ধর্মে মায়ের স্থান

হিন্দু ধর্মে মায়ের স্থান অনেক উঁচু ।চণ্ডীতে স্তব মন্ত্রে বলা হয়েছে
“যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা” ।

আর সন্তান এর কাছে মায়ের স্থান কোথায় হবে সে বিষয়ে হিন্দু শাস্ত্রে সুস্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে । সে বিষয়ে জানতে আমরা মনু সংহিতা্র একটি শ্লোক দেখব-

উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য্য আচার্য্যণাং শতং পিতা ।
সহস্রন্ত্ত পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে ।। মনুসংহিতা, ২/১৪৫

অনুবাদঃ
দশজন উপাধ্যায় থেকে একজন আচার্যের গৌরব বেশি । একশত আচার্যের থেকে পিতার গৌরব বেশি এবং সহস্র পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হা ।

পিতা মাতার ঋণ সন্তান শত সহস্র জন্মেও শোধ করতে পারে না ।

হিন্দু ধর্মে মায়ের স্থান কোথায়?
হিন্দু ধর্মে মায়ের স্থান কোথায়?


যংমাতাপিতরৌ ক্লেশং সহতে সম্ভবে নৃণাম্ ।
ন তস্য নিষ্কৃতিঃ শক্যা কর্তুং বর্ষশতৈরপি ।। মনুসংহিতা, ২/২২৭

অনুবাদঃ
সন্তান জননে পিতামাতা যে ক্লেশ সহ্য করেন পুত্র শত শত বৎসরে, শত শত জন্মেও সেই ঋণ পরিশোধ করতে সমর্থ নয় । এ ছাড়া শাস্ত্রে আরও বলা হয়েছে মাতৃভক্তি দ্বারা এই ভূলোক জয় করা সম্ভব ।

ইমং লোকং মাতৃভক্ত্যা … মনুসংহিতা, ২/২৩৩

অনুবাদ :
মানুষ মাতৃভক্তি দ্বারা এই ভূলোক জয় করতে পারে ।

খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথাটি রামায়ণে ভগবান রামচন্দ্র বলেছিলেন-
জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরিয়সী।

এই সকল শাস্ত্র বাক্য দ্বারা আমরা সহজেই বুঝতে পারলাম সনাতন ধর্মে মায়ের স্থান কোথায় । তাই আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য নিজের জন্মদাত্রী মাকে যথাযথ সন্মান প্রর্শন করা ।

এদেশেরই সখ্যালঘু অপর একটি ধর্ম, হিন্দু ধর্ম। যেখানে সেদিন পর্যন্ত নারীকে বিবাহের পর স্বামী হাজার অত্যাচার করলেও বিবাহ বিচ্ছেদের কোন উপায় ছিলনা। আজীবন স্বামীর চরনের দাসী হিসেবে বিবেচনা করা হত। তাছাড়া উত্তরাধিকার লাভের কোন অধিকার নারীর ছিলনা, স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর স্বতীত্ব প্রমানের জন্য স্বামীর চিতায় আত্মদান ছিল বাধ্যতামুলক। বর্তমান দু’ একদিনের বিবাহ কোন নারী যদি বিধবা হয় তাহলে তার আর সারা জীবনে পুর্ণ বিবাহের অধিকার নেই।  বিবাহের সময় বাবা, ভাই থেকে সে সম্পদ নিয়ে শুশুর বাড়ীতে উঠবে, তারপর আর বাবা-ভাইদেরকে সম্পদের কথা বলতেও পারবেনা। 

হিন্দু ধর্মে নারীদের কোন অধিকার নেই। পুরুষের জন্য একই সময়ে দশজন স্ত্রী রাখার অনুমতি আছে। তালাকের সাথে সম্পর্ক নেই, যে কারনে নারীর ক্ষতিই বেশী, কারণ নারীর ভাল না লাগলে বা স্বামীর অত্যাচারে সে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেনা। যত কষ্ট হোক, শত অত্যাচার করা হোক, স্বামীর কাছেই থাকতে হবে।  সমস্ত ক্ষমতা স্বামীর, নারী দিন রাত্রীর কোন সময় স্বাধীন থাকতে পারবেনা। 

সনাতন ধর্মে মা:  হিন্দু ধর্মে মা এর অবস্থান অবিস্মরণীয়। তাঁদের ধর্মে দেবতার চেয়ে দেবীর আধিক্য। শ্রী শ্রী চন্ডির শুরুতেই ‘যা দেবী (দেব নয়) সর্বভূতেষু’। তাই সম্ভবত তাঁদের পূজাকরীদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীরাই একটু এগিয়ে। আমার গ্রামের বাড়ির সীমানায় হিন্দুদের বাড়ি। যখন সকাল-সাঁঝে গৃহলক্ষ্মী কোন নারী দিচ্ছেন পুজো, তখন আরেক পুরুষ গৃহঅলক্ষ্মী কুঁজো, ঘুমের উমে কাৎ।  ‘মা’ নামে আমার একটি কবিতার বই আছে। বইটি প্রকাশিত হয়েছিল দুই হাজার সালে। এর একটি কবিতার নাম ‘মন্দাকিনী’। কবিতাটি উৎসর্গ করেছি আমার ‘ছোট্টবন্ধু’ অপূর্ব ভট্রচার্যকে; তার মাতার অকাল মৃত্যুতে।    সনাতন ধর্মে সুন্দর একটি শ্লোকে উল্লেখ আছে: “স্ববংশবৃদ্ধিকামঃ পুত্রমেকমাসাদ্য..”। আবার সন্তান লাভের পর নারী তাঁর রমণীমূর্তি পরিত্যাগ করে মহীয়সী মাতৃরূপে সংসারের অধ্যক্ষতা করবেন। তাই মনু সন্তান প্রসবিনী মাকে গৃহলক্ষ্মী সম্মানে অভিহিত করেছেন। তিনি মাতৃ-গৌরবের কথা বিশ্ববাসীকে জানিয়েছেন এভাবে- “উপাধ্যায়ান্ দশাচার্য্য আচায্যাণাং শতং পিতা। সহস্রন্তু পিতৃন্মাতা গৌরবেণাতিরিচ্যতে” [ (মনু,২/১৪৫) অর্থাৎ দশজন উপাধ্যায় (ব্রাহ্মণ) অপেক্ষা একজন ‘আচার্যের  গৌরব অধিক, একশত আচার্যের  গৌরব অপেক্ষা পিতার গৌরব অধিকতর; সর্বোপরি, সহস্য পিতা অপেক্ষা মাতা সম্মানার্হ। বাহ্ বাহ্, কী অমরবাণী! কী অসাধারণ কথা! আর কী চাও আমাদের ছেলেমেয়েরা?

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>