অধিক পুষ্টিগুণ ঘাসের নামসমূহ ও চাষাবাদ পদ্ধতি

জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ক্যাম্পাস নার্সারী স্থাপন ও দেশব্যাপী আগ্রহী খামারীদের মাঝে অধিক পুষ্টি সমৃদ্ধ উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের ঘাসের কাটিং / বীজ সরবরাহ করার লক্ষ্যে প্রকল্প চলাকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামার, সাভার, ঢাকায় খামারের ৫০ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের উচ্চ উৎপাদনশীল জাতের স্থায়ী ও অস্থায়ী ঘাস এর (নেপিয়ার পাকচং ১, নেপিয়ার, পারা, জার্মান, ওটস, ভুট্টা ও লিগুমিনাস ঘাস) নার্সারী স্থাপন ও উন্নয়ন করা হবে।

অধিক পুষ্টিগুণ ঘাসের নামসমূহ ও চাষাবাদ পদ্ধতি
অধিক পুষ্টিগুণ ঘাসের নামসমূহ ও চাষাবাদ পদ্ধতি

বিভিন্ন জাতের ঘাসের পুষ্টিগুণ (Benefits of this grass) 


শুস্ক পদার্থ - ২৫০ গ্রা/কেজি

প্রোটিন - ৮-১২ %

ফাইবার - ২৬-২৮ %

টোটাল ডাইজেস্টবেল - 55-58%

বিপাকীয় শক্তি – ২ মিগ্রা/কেজি

জার্মান ঘাসের প্রতি কেজি কাচা ঘাসের  পুষ্টিমান

পুষ্টি উপাদান----------------------------পরিমান

ক্রুড প্রোটিন------------------------------৫-৬%
ক্রুড ফাইবার------------------------------৩৮-৪১%
শুষ্ক পদার্থ------------------------------১৯.৯৭%
বছর প্রতি উৎপাদন ---------------------৪০-৪৫ মেঃ টন/একর

জারা ঘাসের  পুষ্টিমান

পুষ্টি উপাদান----------------------------পরিমান
প্রোটিন------------------------------১৮-২০%
ক্রুড ফাইবার------------------------------৩৮-৪১

হাইব্রিড জারা- ১ এর বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
🐮এর বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
👉এই ঘাসে ১৮%-২০% প্রোটিন আছে।
👉 খুব দ্রুত বাড়ে।
👉 ঘাস নরম রসালো ও সুস্বাদু।
👉 ষাড় গরু বা গাভীকে দৈনিক ১৫-২০ কেজি খাওয়ানো যায়।
👉 দুধের উৎপাদন বেড়ে যায় এবং দুধের মান ভালো হয়।
👉 গাভীর প্রজনন ক্ষমতা ভালো থাকে।
👉 ঘাসের উচ্চতা ১৪-১৬ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।
👉 প্রতি বিঘায় ঘাস ২০-২৫ টন ফলন হয়।
👉 এটা যতো কাটবেন, শাখা প্রশাখা ততোই বাড়বে। প্রথমবার কাটিং রোপনের ৪৫ দিন পর খাওয়ার উপযোগী হয়। এরপর থেকে ২০ দিনের মধ্যে আবার কেটে খাওয়ানো যায়।

পাকচং ঘাসের বৈশিষ্ট্য

👉সাধারণ নেপিয়ার ঘাসের তুলনায় দ্বীগুণ ফলন পাওয়া যায়।
👉৪৫-৬০ দিন বয়সে ঘাস কাটা যায়।
👉প্রোটিনের পরিমান প্রায় ২৮% থাকে।
👉পুষ্টিগুন-৭-১২%প্রোটিন।
👉১৬%ফ্যাট
👉১%ফাইবার
👉২৭%মেটাবলিক
👉এনার্জি২ মেগাজুল/কেজি
এরপর প্রতি ১০ থেকে ১৫ মেট্রিক টন উৎপাদন হয়।

জার্মান ঘাসের পুষ্টিগুণ

পুষ্টিগুণঃ
শুষ্ক পদার্থ বা ড্রাই মেটার২৫০ গ্রাম/কেজি
জৈব পদার্থ২৪০ গ্রাম/কেজি
প্রোটিন১৮ গ্রাম/কেজি(৭-৮%)
বিপাকীয় শক্তি২.৫ মেগাজুল/কেজি
ফাইবার৩৬%

জার্মান ঘাস রোপনের সময় মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এই ঘাস চাষের সবচেয়ে উপযুক্ত সময় তবে এই ঘাস সারা বছরই চাষ করা যায়। রোপণের নিয়ম একসারি থেকে অন্য সারির দূরত্ব 18 ইঞ্চি ও ঘাস থেকে ঘাসের দূরত্ব 12 ইঞ্চি হলে ভালো হয় ।ফলন ১২ থেকে ১৩ মেট্রিকটন একরপ্রতি।

নেপিয়ার ঘাস চাষ:

নেপিয়ার ঘাস এর উপযোগী জলবায়ু ও মৃত্তিকা -এ ঘাস সব ধরনের মাটিতেই জন্মে। তবে বেলে দো-আশ মাটিতে এর ফলন সবচেয়ে বেশি। এ ঘাসের জন্য উঁচু জমি ভালো। বন্যা প্রস্তাবিত জমি এ ঘাস চাষের জন্য অনুপযুক্ত। বাংলাদেশের আবহাওয়া নেপিয়ার ঘাস চাষের জন্য খুবই উপযুক্ত।


জমি নির্বাচন:

জল নিষ্কাশনের জন্য ভাল ব্যবস্থা আছে অর্থাৎ যেখানে বৃষ্টি বা বর্ষার জল জমে থাকে না এরূপ জমি নেপিয়ার চাষের জন্য উত্তম। প্রায় সব ধরনের মাটিতেই এ ঘাস রোপন করা যায়, তবে বেলে-দোআঁশ মাটি সবচেয়ে বেশি উপযোগী।

চাষের সময়ঃ

নেপিয়ার ঘাসের বীজ সারা বৎসরই রোপন করা যায়। প্রচন্ড শীত এবং বর্ষার পানির সময় বাদে সব সময় বীজ বপন করা যায় তবে কাটিং এর ক্ষেত্রে সাধারণতঃ বর্ষার প্রারম্ভে এই ঘাসের কাটিং বা চারা রোপন করা হয়। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ্য মাসে প্রথম বৃষ্টির পর জমিতে চারা বা কাটিং লাগালে প্রথম বছরেই ৩/৪ বার পর্যন্ত ঘাস কাটা যেতে পারে। চারা বা কাটিং লাগানোর পর যদি রৌদ্র হয় বা মাটিতে রস কম থাকে তাহলে চারার গোড়ায় পানি সেচ দিতে হবে।

সার প্রয়োগ:

নেপিয়ার ঘাসের ফলন বেশি পেতে হলে জমিতে প্রয়োজন অনুসারে সার দিতে হয়। চারা বা কাটিং লাগানোর পর যদি রৌদ্র হয় বা মাটিতে রস কম থাকে তাহলে চারার গোঁড়ায় পানি সেচ দিতে হবে। চাষের সময় হেক্টর প্রতি প্রায় ৩-৪ হাজার কেজি পচা গোবর, ফার্মজাত আবর্জনা ও পচানো ঘাস জমিতে ভালোভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে। বেশি ফলন পেতে হলে এর সঙ্গে হেক্টর প্রতি ২২৫ কেজি ইউরিয়া, ১৫০ কেজি টিএসপি এবং ৭৫ কেজি মিউরেট অব পটাশ প্রয়োগ করতে হবে।


সংগ্রহ: 

কাটিং বা চারা রোপণের ৬০-৭০ দিন পর প্রথমবার ঘাস সংগ্রহ করা যায় এবং এরপর প্রতি ৬-৮ সপ্তাহ পরপর জমি হতে ঘাস সংগ্রহ করা যায়।ই মাটির ৫-৬ ইঞ্চি উপর থেকে ঘাস কাটতে হয়। প্রথম কাটিং-এ ফলন একটু কম হলেও দ্বিতীয় কাটিং থেকে পরবর্তী ২/৩ বছর পর্যন্ত ফলন বাড়তে থাকে। এরপর আস্তে আস্তে কমতে থাকে।

অধিক উৎপাদনশীল উন্নত জাতের ঘাস চাষ ও গবাদিপশুর পুষ্টির উন্নয়নে জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রকল্পে ব্যাপক প্রচারের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। যেমন- টিভি ফিলার, ডকুমেন্টরি, বিজ্ঞাপন ইত্যাদি প্রস্তুতপূর্বক পত্রিকা/মেগাজিন/টেলিভিশন ইত্যাদি প্রচার মাধ্যমে প্রচার করা করা হবে এবং খামারীদের মাঝে বুকলেট বিতরণ করা হবে যাতে করে দেশব্যাপী খামারীদের মাঝে প্রাণিপুষ্টি বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি পায়।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল 

রাজারহাট,কুড়িগ্রাম। 

মাধব সরকার 

কমিউনিটি এক্সটেনশন এজেন্ট(CEA)




Next Post Previous Post
1 Comments
  • নামহীন
    নামহীন ১৯ মে, ২০২২ এ ৯:৩৮ PM

    দারুন উপকার হলো

Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>