বর্ণপ্রথা কি? হিন্দুধর্মে বর্ণপ্রথা ও মানুষের বিশ্বাস

হিন্দুধর্মে বর্ণপ্রথা সম্পর্কে অবগত হতে আসুন আমরা ধৈর্য  সহকারে নিচের প্রবন্ধটির বিস্তারিত পড়ি।

হিন্দুধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ হলো বেদ। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য চার বর্ণের কথা বেদ থেকেই জানা যায়। সমাজে সকল মানুষের জ্ঞান, বুদ্ধি ও কর্মদক্ষতা সমান নয়। কর্মের যোগ্যতা অনুসারে প্রাচীনকাল থেকেই এ-ধর্মে বর্ণবিভাগ রয়েছে। সমাজে যারা আন-বুদ্ধিতে উন্নত তাঁরা ব্রাহ্মণ নামে পরিচিত হন। তারা জ্ঞান অর্জন, জ্ঞান বিতরণ এবং ধর্মকর্মে নিযুক্ত থাকতেন । আবার রাজকার্যে কুশলী, দেশরক্ষার কাজে দক্ষ – এই শ্রেণির লোকদের বলা হয় ক্ষত্রিয়। ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা এবং শস্যাদি উৎপাদন কর্মে উৎসাহী ব্যক্তিরা হলেন বৈশ্য। আর শ্রমজীবী ব্যক্তিদের শূদ্র শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত করা হয় ।

বর্ণ প্রথা কি
বর্ণপ্রথা 
বর্ণভেদ পেশাগত, জন্মগত নয়ঃ

বৈদিক যুগে বর্ণপ্রথা ছিল কর্ম বা পেশাগত। ঋগবেদের একটি মন্ত্রে একজন ঋষি বলছেন, 'আমি বেদমন্ত্রদ্রষ্টা ঋষি । আমার কন্যা যব ভেজে ছাতু বানিয়ে বিক্রি করে। আর আমার ছেলে চিকিৎসক। এ থেকে বোঝা যায়, তখন বর্ণভেদ জন্মগত বা বংশানুক্রমিক ছিল না। তাছাড়া ক্ষত্রিয় রাজা বিশ্বামিত্র তপস্যার বলে ব্রাহ্মণত্ব অর্জন করেছিলেন। বৈশ্য থেকে ব্রাহ্মণ হওয়ারও দৃষ্টান্ত ধর্মগ্রন্থে রয়েছে। শ্রীমদ্‌ভগবদ্‌গীতায়ও ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, গুণ ও কর্মের ভিত্তিতে তিনি চার বর্ণের সৃষ্টি করেছেন। (গীতা-৪/১৩)। কিন্তু কালক্রমে এই বর্ণপ্রথা জন্মগত হয়ে দাঁড়ায়। তাই ব্রাহ্মণের সন্তান হয় ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়ের সন্তান হয় ক্ষত্রিয়, বৈশ্যের সন্তান হয় বৈশ্য এবং শূদ্রের সন্তান হয় শূদ্র। এজন্য একই পরিবারের চার সন্তান চার রকম গুণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেও জন্মগত কারণে চারজনকেই একই কর্ম করতে হয়। এর ফলে তারা কোনো কর্মেই দক্ষতা অর্জন করতে পারে না। 

তাই আধুনিক কালে হিন্দুধর্মের বিজ্ঞ ব্যক্তিগণ বলেছেন এই বর্ণবিন্যাস হবে পূর্বের ন্যায় কর্মের ভিত্তিতে, অর্থাৎ বর্ণতেন পেশাগত, জন্মগত নয় । বংশানুক্রমিক বর্ণভেদ প্রথা হিন্দুধর্মাবলম্বীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের প্রতিকূল। তাই সমাজের পরিবর্তনশীলতায় এ প্রথার অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রেই সমাজের সচেতন পরিবারগুলো এ প্রথার গোঁড়ামির প্রতিকূলে অবস্থান নিয়ে পারিবারিক কাজ সম্পাদন করছে। পেশাগত বর্ণভেদের মূল লক্ষ্য ছিল পেশার উৎকর্ষ সাধন ও নৈতিক গুণাবলির বিকাশের মাধ্যমে সামাজিক মঙ্গল সাধন করা। বংশানুক্রমিক বর্ণতেন সমাজের সচেতন মানুষের নিকট কুসংস্কার ব্যতীত অন্য কিছু নয় । তাই এ দৃষ্টিভঙ্গির আরও পরিবর্তন বাঞ্ছনীয় ।


tag;বর্ণপ্রথা কি,হিন্দুদের বর্ণপ্রথা,বর্ণপ্রথা,কিভাবে বর্ণপ্রথা হলো,৪টি বর্ণপ্রথা কী,মনুসংহিতা অনুসারে বর্ণপ্রথা,বর্ণপ্রথা একটি সামাজিক অভিশাপ,হিন্দু ধর্মে চার বর্ণ,বর্ণপ্রথার করুন ইতিহাস,হিন্দুদের বর্ণপ্রথা - শতভাগ শাস্ত্রসম্মত ব্যাখ্যা,#বর্ণপ্রথা_কি_হিন্দু_শাস্ত্রে_অনুমোদিত


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>