হিন্দুদের সর্বোচ্চ দেবতা শিব এবংশিবের প্রতি শ্রীকৃষ্ণ ও রামের আরাধনা

শিব হলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্বোচ্চ দেবতা

 সনাতন ধর্মের শাস্ত্রসমূহে তিনি পরমসত্ত্বা রূপে ঘোষিত।শিব কয় কারনের কারন? শিব সৃষ্টি-স্থিতি-লয়রূপ তিন কারনের কারন, পরমেশ্বর- এটা তার প্রণাম মন্ত্রেই বার বার উঠে এসেছে। তিনি জন্মরহিত, শাশ্বত, সর্বকারণের কারণ; তিনি স্ব-স্বরূপে বর্তমান, সমস্ত জ্যোতির জ্যোতি; তিনি তুরীয়, অন্ধকারের অতীত, আদি ও অন্তবিহীন।  শিব🔜সৃষ্টি, স্থিতি ও প্রলয়কর্তা- পরমেশ্বর। দেবনাগরী शिव সংস্কৃত লিপ্যন্তর🔜Śiva অন্তর্ভুক্তি🔜পরমেশ্বর (শৈবধর্ম), ত্রিমূর্তি, দেব আবাস🔜কৈলাস পর্বত মন্ত্র🔜ওঁ নমঃ শিবায় 🔯প্রণামমন্ত্র: ওঁ নমঃ শিবায় শান্তায় কারণত্রয় হেতবে। নিবেদয়ামি চাত্মানং ত্বং গতি পরমেশ্বর। 🔯গায়ত্রী মন্ত্র : ওঁ তৎপুরুষায় বিদ্মহে মহাদেবায় ধীমহি।তন্নো রুদ্রঃ প্রচোদয়াৎ।। অস্ত্র🔜ত্রিশূল, পাশুপতাস্ত্র, পরশু, পিনাক প্রতীকসমূহ🔜শিবলিঙ্গ সন্তান🔜গণেশ, কার্তিক, মনসা, অইয়াপ্পা (দক্ষিণ) বাহন🔜নন্দী উৎসব🔜মহাশিবরাত্রি বা শিবচতুর্দশী সঙ্গী🔜সতী, পার্বতী          অজং শাশ্বতং কারনং কারনানাং        শিবং কেবলং ভাসকং ভাসকানাম্।    
         তুরীয়ং তমঃপারমাদ্যন্তহীনং           প্রপদ্যে পরং পাবনং দ্বৈতহীনম্।     -(শ্রীমদ্ শঙ্করাচার্য, বেদসার শিবস্তোত্রম্)। এছাড়াও বেদান্ত অনুসারে তিনিই র মহা ঈশ্বর । শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে বলা হয়েছে - "যদাহতমস্তন্ন দিবা ন রাত্রির্নসন্ন চাসচ্ছিব এব কেবলঃ।"  অর্থাৎ যখন আলো ছিল না, অন্ধকারও ছিল না; দিন ছিল না, রাত্রিও ছিল না; সৎ ছিল না, অসৎ ও ছিল না- তখন কেবলমাত্র ভগবান শিবই ছিলেন।
দেবাদিদেব মহাদেব

 উল্লেখ্য বেদান্ত বৈদিক সনাতন ধর্মের ভিত্তি তথা বেদের শিরোভাগ; সম্পূর্ণ বেদান্তে শিব ব্যতীত কারো সম্পর্কে এভাবে বলা হয়নি। শুধুমাত্র শিবের ক্ষেত্রেই বলা হয়েছে "শিব এব কেবলঃ"। সুতরাং সৃষ্টির পূর্বে একমাত্র শিবই বর্তমান ছিলেন। তিনিই লীলাচ্ছলে ব্রহ্মারূপে সৃষ্টি করেন, বিষ্ণুরূপ ধারণ করে পালন করেন আবার রুদ্ররূপ ধারন করে সংহার করেন। ব্রহ্মা-বিষ্ণু-হর তারই সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের তিনটি রূপভেদ মাত্র। তাই এই তিন রূপের মধ্যে সত্বার কোন পার্থক্য নেই। তবু সনাতন রূপ পরম শিবরূপই মূলস্বরূপ। তাই ভগবান শিব সৃষ্টির প্রাক্ষালে শ্রীবিষ্ণুকে বলেন-  "অহং ভবানয়ঞ্চৈব রুদ্রোহয়ং যো ভবিষ্যতি।  একং রূপং ন ভেদোহস্তি ভেদে চ বন্ধনং ভবেৎ।।  তথাপীহ মদীয়ং শিবরূপং সনাতনম্।  মূলভূতং সদা প্রোক্তং সত্যং জ্ঞানমনন্তকম্।।

"(-জ্ঞানসংহিতা)।  অর্থাৎ আমি, তুমি, এই ব্রহ্মা এবং রুদ্র নামে যিনি উৎপন্ন হবেন, এই সকলই এক। এদের মধ্যে কোনো ভেদ নাই, ভেদ থাকলে বন্ধন হত। তথাপি আমার শিবরূপ সনাতন এবং সকলের মূল স্বরূপ বলে কথিত হয়, যা সত্য জ্ঞান ও অনন্ত স্বরূপ।  এজন্য ভগবান বিষ্ণু এবং তার বিভিন্ন অবতারগণ সর্বদা শিব উপাসনাই করতেন। তাই শ্রীকৃষ্ণেরও আরাধ্য ছিলেন পরমেশ্বর শিব। ভগবান শিবের বরেই বিষ্ণু বা কৃষ্ণের ভগবত্বা। তাই হিন্দুধর্মের মূল স্তম্ভ ত্রিশক্তির (ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও শিব) মধ্যে শিবই প্রধান । তিনি সমসাময়িক হিন্দুধর্মের তিনটি সর্বাধিক প্রাচীন সম্প্রদায়ের অন্যতম শৈব সম্প্রদায়ের প্রধান দেবতা।[১][২] এছাড়া শিব স্মার্ত সম্প্রদায়ে পূজিত ঈশ্বরের পাঁচটি প্রধান রূপের (গণেশ, শিব, সূর্য, বিষ্ণু ও দুর্গা) একটি রূপ।[১] তার বিশেষ রুদ্ররূপ ধ্বংস, সংহার ও প্রলয়ের দেবতা।[৩]  সর্বোচ্চ স্তরে শিবকে সর্বোৎকর্ষ, অপরিবর্তনশীল পরম ব্রহ্ম মনে করা হয়।[৪][৫][৬][৭][৮] শিবের অনেকগুলি সদাশয় ও ভয়ঙ্কর মূর্তিও আছে।[৯] সদাশয় রূপে তিনি একজন সর্বজ্ঞ যোগী। তিনি কৈলাস পর্বতে সন্ন্যাসীর জীবন যাপন করেন।[৩] আবার গৃহস্থ রূপে তিনি পার্বতীর স্বামী। তার দুই পুত্র বর্তমান। এঁরা হলেন গণেশ ও কার্তিক। ভয়ঙ্কর রূপে তাকে প্রায়শই দৈত্যবিনাশী বলে বর্ণনা করা হয়। শিবকে যোগ, ধ্যান ও শিল্পকলার দেবতাও মনে করা হয়। এছাড়াও তিনি চিকিৎসা বিদ্যা ও কৃষিবিদ্যারও আবিষ্কারক। [১০][১১][১২]  শিবমূর্তির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল তার তৃতীয় নয়ন, গলায় বাসুকী নাগ, জটায় অর্ধচন্দ্র, জটার উপর থেকে প্রবাহিত গঙ্গা, অস্ত্র ত্রিশূল ও বাদ্য ডমরু। শিবকে সাধারণত ‘শিবলিঙ্গ’ নামক বিমূর্ত প্রতীকে পূজা করা হয়।[১৩][১৪][১৫] সমগ্র হিন্দু সমাজে শিবপূজা প্রচলিত আছে। ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা রাষ্ট্রে বাংলাদেশের ও পাকিস্তানের কিছু অংশে শিবপূজার ব্যাপক প্রচলন লক্ষিত হয়। সনাতন ধর্মীয় শাস্ত্রসমূহে শিব পূজা কে সর্বশ্রেষ্ঠও সর্বাধিক ফলপ্রদ বলে বর্ণনা করা হয়ে। [১৬][১৭][১৮]
  🔱শিব লিঙ্গম কি?

 “লীনং বা গচ্ছতি, লয়ং বা গচ্ছতি ইতি লিঙ্গম্” যা লয়প্রাপ্ত হয় তাই লিঙ্গ। আবার কারো মতে সর্ববস্তু যে আধারে লয়প্রাপ্ত হয় তাই লিঙ্গম। কিন্তু বৈয়াকরণিকগণের মতে “লিঙ্গতে চিহ্নতে মনেনেতি লিঙ্গম্”। লিঙ্গ শব্দের অর্থ ‘প্রতীক’ বা ‘চিহ্ন’। যার দ্বারা বস্তু চিহ্নিত হয়, সত্য পরিচয় ঘটে তাই-ই লিঙ্গ। অর্থাৎ যার দ্বারা সত্যবিজ্ঞান লাভ হয়, যার সাহায্যে বস্তুর পরিচয় পাওয়া যায় তাকেই বস্তু পরিচয়ের চিহ্ন বা লিঙ্গ বলে। আর এজন্যই দেহ প্রকৃতিতে লীনভাবে অবস্থান করে বলেই চিদ্ জ্যোতিকে বলা হয় লিঙ্গ। ভূমা ব্রহ্মের গুহ্য নাম “শিব” এবং ভূমা ব্রহ্মের পরিচায়ক বলে আত্মজ্যোতির উদ্ভাসনের নাম শিবলিঙ্গ।

 শ্রী রামচন্দ্র কতৃক শিবের আরাধনাঃ 

প্রলয়ের কারণ বলে লোকে মহাদেবকে লিঙ্গ বলে। এই লিঙ্গ ব্রহ্মের পরম শরীর। আর এ জন্যই ত্রেতাযুগে রাবণ বধে যাত্রার সময় সেতুবন্ধে শ্রীরামচন্দ্র রামেশ্বরে শিবের পূজা করেন। আবার পরশুরামও পশুপতি শিবের তপস্যা করেই পশুপাত অস্ত্র লাভ করেন।  🔱

শ্রীকৃষ্ণ কর্তৃক শিবপূজাঃ

 দ্বাপরযুগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁর স্ত্রী জাম্ববতীসহ উপমন্যু মুনির আশ্রমে গমন করেন এবং তথায় দেবতা, ঋষি ও পিতৃগণের তর্পণান্তে অমিত মহাদেবের লিঙ্গমূর্তিতে পূজা করেন। আবার শ্রীকৃষ্ণ মার্কণ্ডেয় মুনির আশ্রমে গিয়ে ভুতিভূষণ শিবের পূজা করেছিলেন।  🔱শ্রীকৃষ্ণের শিবের আরাধনার কারণ কি? “মহাদেব আত্মারই মূল। ইহা জানাবার জন্যই আমি তাঁহার পূজা করছি। বেদতত্ত্বজ্ঞ পন্ডিতগণ আমাকেই শিবলিঙ্গ বলে থাকেন। অতএব আমি স্বয়ং আপনাতে আপনি মহাদেবের পূজা করছি। আমি শিবময়, ফলে আমাদের মধ্যে রূপ ভিন্ন হলেও কোন প্রভেদ নেই।                     -🔱- সবাইকে ধন্যবাদ -🔱-  MS 
Next Post Previous Post
1 Comments
  • সনাতনী আলাপন
    সনাতনী আলাপন ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ এ ১:২০ PM

    হর হর মহাদেব

Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>