শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ভবিষ্যদ্বানী ও বর্তমান প্রেক্ষাপট

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর ভবিষ্যদ্বানী ও বর্তমান প্রেক্ষাপটঃশ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আজ থেকে ৫০০ বছর পূর্বে ভবিষ্যৎ বানী করে বলেছিলেন--
পৃথিবীতে আছে যত নগরাদি গ্রাম।
সর্বত্র প্রচার হইবে মোর নাম।।
অর্থাৎ শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ভবিষ্যদ্বানী করে বলেছিলেন এই পৃথিবীর প্রতিটি নগর ও গ্রামে তার (মহাপ্রভুর) বানী প্রচার হবে।  জাতী-বর্ণ -ধর্ম নির্বিশেষে পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় ও
বুদ্ধিমান ব্যক্তিরা আজ দলে দলে কৃষ্ণ নামের স্রোতধারায় যোগদান করছে। হরিনামে কোন জাতীভেদ নেই, হরিনামে
 কোন ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই  হরিনাম
হলো সকল জাতী -বর্ণ-ধর্মের উর্ধ্বে। অর্থাৎ হরিনামে/কৃষ্ণ নাম হলো সম্পূর্ণ  শ্রী কৃষ্ণের ইচ্ছার উপর প্রতিষ্ঠিত একটি অমৃতফল । যার ভিত্তি হলো শ্রীমদ্ভগবতগীতা।

 এই ১৬ নাম ৩২ অক্ষর বিশিষ্ট হরিনাম সকল কলুষনাশক, ভক্তিপ্রদায়ক, মুক্তিপ্রদায়ক। এই হরিনামের মহিমা এতই অসীম যে তা লিখে শেষ করা যায় না। এই হরিনাম জপ করতে কোন বিধি-নিষেধ, সময়, পাত্র, স্থান, কাল কোন কিছুই বিবেচনা করতে হয় না। হরিনাম জপ করার জন্য কোন যোগ্যতা, ধর্ম, বর্ণের প্রয়োজন নেই। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য, শুদ্র, সাদা, কালো, চন্ডাল, আমেরিকান, আফ্রিকান নির্বিশেষে সকলেই এই হরিনাম গ্রহণ করতে পারে।

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ॥
pic:choutanno/thehindu9.blogspot.com

এতদিন বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রগুলি কৃষ্ণভাবনামৃত গ্রহণ করলেও, সোভিয়াত রাশিয়ায় তা প্রকাশ্যে গ্রহণ ও প্রচার করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর
 রোপিত সেই বীজ আজ অঙ্কুরিত হয়ে শাখা প্রশাখা ও ফলে-ফুলে বিস্তার লাভ করেছে। এখন সোভিয়াত রাশিয়ায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় রাস্তাঘাটে সর্বত্র প্রকাশ্যে দলে দলে হাজার হাজার লোক হরিনাম সংকীর্তন করছে।আজ আমরা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাচ্ছি গোঁড়া কমিউনিস্ট দেশ এই রাশিয়ায় কৃষ্ণ ভক্তি দেখে।

কিন্তু রাশিয়াতে কৃষ্ণভাবনামৃত প্রচার সহজ ছিল না, তখনকার সময় প্রচার করতে গিয়ে ভক্তদের কত যে নির্যাতন, কষ্ট, মানসিক যন্ত্রণা দিয়েছিল রাশিয়ান সরকার। অনেক ভক্তদের চোখ, পা, হাতে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের দাগ আজও রয়ে গেছে, তারপর ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে আজ রাশিয়াতে হরিনাম সংকীর্তন ও কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলন উন্মুক্ত। হাজার হাজার রাশিয়ান নাগরিক আজ কৃষ্ণভাবনামৃত আন্দোলনে যোগ দিচ্ছে, রাশিয়ার রাস্তাঘাটে, অলিতে গলিতে সবাই দুহাত তুলে হরিনামে মেতে উঠেছে।
এখন প্রশ্ন হতে পারে সাম্যবাদীর দেশ এই সোভিয়াত রাশিয়া, তবে কেন তাঁরা আজ হরিনাম নাম করছে? শুধু কি অন্ধ বিশ্বাসে তাঁরা আজ হরিনাম কীর্তন করছে?
না।
হরিনাম কীর্তন করলে এক দিব্য আনন্দের আস্বাদন লাভ করা যায়, তাতে আত্মা প্রসন্ন হয়–
তাই রাশিয়ানরা আজ উচ্চস্বরে হরিনাম কীর্তন করছে। এটি বাস্তব প্রমাণ কোন অন্ধবিশ্বাস নয়। যিনি হরিনাম করবেন, তিনিই তা উপলব্ধি করতে পারবেন। এ দিব্য আনন্দ লাভ করার জন্য কোনও কিছুর প্রয়োজন হয় না, শুধু প্রয়োজন বিশ্বাসের সঙ্গে হরিনাম কীর্তন করা –

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥
picture: চৈতন্য/thehindu9.blogspot.com

আত্মা প্রসন্ন না হলে, তথাকথিত ইন্দ্রিয়লব্ধ সুখের দ্বারা এ জগতের কোনও মানুষ প্রকৃত শান্তি লাভ করতে পারে না।
সে সম্বন্ধে ভাগবতে বলেছে–
স বৈ পুংসাং পরো ধর্মো যতো ভক্তিরধোক্ষজে।
অহৈতুক্যপ্রতিহতা যয়াত্মা সুপ্রসীদতি॥
(ভাগবত ১/২/৬)
অনুবাদঃ “সমস্ত মানুষের পরম ধর্ম হচ্ছে সেই ধর্ম, যার দ্বারা ইন্দিয়জাত জ্ঞানের অতীত শ্রীকৃষ্ণে অহৈতুকী ও অপ্রতিহতা ভক্তি লাভ করা যায়। সেই ভক্তিবলে অনর্থ নিবৃত্ত হয়ে আত্মা যথার্থ প্রসন্নতা লাভ করে।”
অনাদি কাল ধরে এ জড় জগতে সত্ত্ব, রজ ও তম– মায়ার এ তিনটি গুণের সঙ্গ ফলে আমাদের হৃদয় কলুষিত। এ কলুষিত হৃদয়কে মার্জন করা প্রয়োজন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু শিক্ষাষ্টকের প্রথম শ্লোকে উল্লেখ করেছেন, চেতোদর্পণমার্জনম্– ‘চিত্তরূপ দর্পণকে মার্জন কর’, আর সকলের শেষে বলেছেন, বিজয়তে শ্রীকৃষ্ণসংকীর্তণম্– ‘শ্রীকৃষ্ণ-সংকীর্তন বিশেষরূপে জয়যুক্ত হোক’।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কীর্তন করে কলুষিত হৃদয়কে মার্জনের কথা বলেছেন। কলির কলুষতা থেকে মুক্ত হবার জন্য বৃহন্নারদীয় পুরাণে প্রতিপন্ন হয়েছে–
হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম্।
কলৌ নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব নাস্ত্যেব গতিরন্যথা॥

“হরিনাম, হরিনাম, কেবলমাত্র হরিনাম। কলিযুগে অন্য কোনও গতি নেই, অন্য কোনও গতি নেই, অন্য কোনও গতি নেই ।”

তিনবার ‘হরিনাম’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ চিত্তরূপ দর্পণকে মার্জন করে চিন্ময় স্বরূপে অধিষ্ঠিত হতে গেলে এই কলিযুগে হরিনাম কীর্তন করা ছাড়া দ্বিতীয় কোনও বিকল্প নেই। নাস্ত্যেব শব্দটির অর্থ হচ্ছে ‘অন্য কোনও’ উপায়ে নয়। এই নাস্ত্যেব শব্দটি তিনবার ব্যবহার করার উদ্দেশ্য হচ্ছে– কর্ম, জ্ঞান ও যোগ এই তিনটি পন্থার মাধ্যমেও আমরা আমাদের পরমসিদ্ধি লাভ করতে পারব না। একমাত্র হরিনাম কীর্তন বা ভক্তিযোগের মাধ্যমে আমরা কলুষিত হৃদয়কে মার্জিত করে পরম দিব্যস্তরে অধিষ্ঠিত হতে পারি।
এ প্রসঙ্গে কলিসন্তরণ উপনিষদে বলা হয়েছে–
         হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
         হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে॥
      ইতি ষোড়শকং নাম্নাং কলিকল্মষনাশনম্।
        নাতঃ পরতরোপায়ঃ সর্ববেদেষু দৃশ্যতে॥
“হরে কৃষ্ণ প্রভৃতি ষোল নাম কলির কলুষ নাশকারী। এর থেকে শ্রেষ্ঠ উপায় সমস্ত বেদের মধ্যে দৃষ্ট হয় না।”
কলিযুগের যুগধর্ম হচ্ছে হরিনাম সংকীর্তন এবং তা সমগ্র বৈদিক শাস্ত্রেই স্বীকৃত হয়েছে। সত্যযুগে ৫০/৬০ হাজার বছর ধ্যান করে যে ফল লাভ করা যায়, কলিযুগে শুধুমাত্র হরিনাম সংকীর্তনে সেই একই ফল লাভ হয়। সুতরাং সমগ্র জগতের সকল দেশের সকল শ্রেণীর লোকের একমাত্র পরম ধর্ম হচ্ছে হরিনাম সংকীর্তন যজ্ঞে অংশ গ্রহণ করা। হরিনাম কীর্তন শুধুমাত্র হিন্দুদের জন্য নয়, বিশ্বের সকলের জন্য। যে হরিনাম কীর্তন করবে, তারই আত্মা শুদ্ধ ও প্রসন্ন হবে। হরিনাম সংকীর্তন কোনও সাম্প্রদায়িক ধর্ম নয়, তা হচ্ছে যুগধর্ম, বিশ্ববাসী সকলের ধর্ম। তা যদি না হবে, বিশ্বের সমস্ত দেশের লোকেরা হরিনামে মেতে উঠবে কেন?
Xxxxxxx
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ভবিষ্যদ্বানীর কৃপায় আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ইংল্যান্ড, ইতালি, জাপান, জার্মান, দক্ষিন আমেরিকা, আফ্রিকা, সুইডেন, নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, পোল্যান্ড, চীন, নেপাল, বাংলাদেশ, ভারতের সর্বত্র, রাশিয়া থেকে শুরু করে প্রায় ১৫৬ টি দেশে হরিনামে মেতে উঠেছে। এ ভাবে মহাপ্রভুর ভবিষ্যৎ বাণী সফল হচ্ছে।


সাইটটিতে আরও জানতে পারবেন 
মহাপ্রভু - শ্রী কৃষ্ণা চৈতন্য,
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু,
চৈতন্য মহাপ্রভু,
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী,
চৈতন্য মহাপ্রভুর,
শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু,
চৈতন্য মহাপ্রভুর ভজন,
চৈতন্য মহাপ্রভুর বাণী,
চৈতন্য মহাপ্রভুর লিলা,
বহুভাষাবিদ চৈতন্য মহাপ্রভু,
চৈতন্য মহাপ্রভু মার খেলো কেন,
চৈতন্য মহাপ্রভুর কে ছিলেন,
শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভুর জীবনী,
চৈতন্য মহাপ্রভুর জন্মস্থান,
শ্রী কৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভুর,
চৈতন্য মহাপ্রভু। জগন্নাথ হল,
চৈতন্য মহাপ্রভু রহস্যজনক মৃত্যু,
চৈতন্য মহাপ্রভুর মৃত্যুর রহস্য
গৌরাঙ্গ মহাপ্রভুর বাণী

                 সৌজন্যে-সীমা সরকার।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>