কৃষ্ণ কথা কৃষ্ণ লীলা

ফল বিক্রেতা ও কৃষ্ণ বাল্যকালে একদিন শ্রীকৃষ্ণ তার সখাদের সাথে খেলছিলেন। সে সময় প্রভুর ক্ষুধা পেল।মাখন চুরি করায় যশোদা মা মাখন একটি ঘরে রেখে তালাবন্ধ করে রেখেছেন।ঠিকসময় এক দরিদ্র ফল বিক্রেতা মহিলা এলেন। শ্রী কৃষ্ণ ফল বিক্রেতার কাছে ফল চাইলেন ।ফল বিক্রতা উত্তর দিল বাবা আমি আর আমার ছেলেমেয়েরা তিন দিন থেকে অনাহারে আছি । এই ফল বেচে তাদের জন্য খাবার কিনতে হবে । যদি তুমি আমাকে কিছু অন্ন অথবা অর্থ দাও তবে এসব ফল তোমাকে দিয়ে দিব ।এই কথা শুনে লীলাধারী প্রভু ঘরে অন্ন অনতে গেল। এদিকে ঘরে গিয়ে শ্রী কৃষ্ণ দুহাতের অন্জলিতে করে চাল অর্থাত্‍ অন্ন নিয়ে আসলেন কিন্তু ছোট কৃষ্ণের হাতের অন্জলির মাঝ থেকে সব অন্ন পড়ে গেল ।এমন করে বেশ কয়েকবার গেল কিন্তু বারবারই সব অন্ন নিচে পড়ে যেতে লাগল ।অবশেষে প্রভু কান্না শুরু করল ।সেই কান্নার শব্দে সৃষ্টি বিচলিত হয়ে পড়ল ।কান্না দেখে ফলবিক্রেতা মহিলার মন গলে গেল ।বলল আমারো দুটো ছেলে আছে তাদের ক্ষিধার জন্য কান্না তিনদিন থেকে দেখছি । বাবা তোর এই কান্না দেখতে পারব না ।এই নে আমার ঝুড়ির সব ফল নে । তখন কৃষ্ণ কান্না বাদ দিয়ে একটা মধুর হাসি দিলেন ।
কৃষ্ণ লীলা

এদিকে সব ফল দান করে রিক্ত ঝুড়ি নিয়ে ঘরে ফিরে আসে ঐ ফল বিক্রেতা মহিলা । মাকে ফিরতে দেখে তার ছেলেরা দৌড়ে মায়ের কাছে যায় । তার কাছে খাদ্য চায় । কিন্তু ঐ ফল বিক্রেতা তো সব ফল কৃষ্ণকে দিয়ে দিছেন ।তার কাছে অর্থ অথবা খাদ্য কিছুই নেই । তাই সে তার পুত্রদের আজও অনাহারে থাকতে বলে ।তখন একটা ছেলে সেই ঝুড়ির দিকে এগিয়ে যায় ।ভাবে যদি ফল পায় । কিন্তু গিয়ে দেখে একি সেই ঝুড়ি তো স্বর্নালংকারে ভর্তি ।ফলবিক্রেতা এই লীলা দেখে বুঝতে পারে শ্রী কৃষ্ণ সাধারন মানব না । দেবতা ।    ভক্ত সুরদাসের কাহিনী   আমরা সকলেই জানি ভক্তদের সঙ্গে ভগবানের এক গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। এর উদাহরণ আমরা পুরাণ কাহিনী সূত্রে জেনেছি যেমন রাধা ও কৃষ্ণ লীলা। আজকে জানবো কি ভাবে ভগবানকে ভক্তি ভরে ডাকলে ভগবানের সাক্ষাত পাওয়া যায়। ভক্ত সুরদাস জন্ম থেকেই অন্ধ। তার দেখা শোনার জন্য কোনো লোক থাকত না। লাঠি হাতে কৃষ্ণ নাম জপ করতে করতে ভ্রমণ করে বেড়ায়। সংসারে একা দরিদ্র ভিক্ষুক। কোনো দিন খাবার জোটে আবার কোনো কোনো দিন জোটে না। কিন্তু তার দারিদ্রতা তার মনের আনন্দকে হরণ করতে পারে নি। কিন্তু তার মনের আত্মা পড়ে থাকে কৃষ্ণ নামে। মুখে দারিদ্র ভাব থাকলেও মনে আছে গম্ভীর আনন্দ এর সুখ। সে ঠিক করে যে করে হোক কৃষ্ণ দেখা পেতেই হবে। সে মনে করে কৃষ্ণ দেখা না পেলে তার জীবন বৃথা।   তাই সে রওনা হয় মথুরা পথে। অন্ধ হওয়া সত্বেও সে কেবল মাত্র লাঠি কে অবলম্বন করে মথুরা পথে গমন করে আর মুখে কৃষ্ণ নাম। রাস্তা তে কোনো বাঁধা বিপত্তি তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। সে কৃষ্ণ নাম জপ করতে করতে গভীর অরন্যে প্রবেশ করে। আর রাস্তায় কোনও লোকের দেখা পেলে জিজ্ঞেস করে ভাই মথুরা কতো দূর। কেউ কেউ তার প্রশ্নের উত্তর দেয় আবার কেউ কেউ দেয় না। বন্য পশুর পদধ্বনি শুনলেও জিজ্ঞাস করে মথুরা কত দূর। পথে মাঝে মাঝে কেউ জল দেয়, রুটি দেয়, পথে কেউ কেউ বলে মথুরা তো অনেক দূর তাতেও সে বলে প্রভুর দেখা পেতেই হবে। কঠিন পথ পার হতে গিয়ে অনেক বাধা বিপত্তি পার হতে গিয়ে অনেক আঘাত পেয়েছে কিন্তু তাতেও মুখে কৃষ্ণ নাম নিয়ে এগিয়ে চলে।   তার মনে আনন্দের জোয়ার মথুরাতে প্রভু কে দর্শন করবে। সব দুঃখ কষ্ট মুছে যায়। গভীর আনন্দ তাকে এত টাই দুর্বল হয়ে যায় যে চলতে চলতে মানুষহীন এক অরন্যে এসে পৌঁছায়। আর লক্ষহীন ভাবে এক কুঁয়োতে পড়ে যায়। কিন্তু সে আনন্দে গান গেয়ে যায় আর মুখে কৃষ্ণ নাম। কিন্তু কয়েক দিন পর ক্ষুধায় তার জীবন অনাড়ম্বর হয়ে গেছে। হঠাৎ একদিন সে এক বালক কে দেখতে পেলো, এক ঘটি দুধ নিয়ে বনের মধ্যে যাচ্ছিলো। গো গো শব্দ শুনে আসে। আর একটি লতা দিয়ে তাকে ওপরে তুলে আনে। আর বলে আমার জীবন দাতা তুমি কে, তারপর বালক টি বলে সুর দাস তুমি তিন দিন কিছু খাওনি এই নাও দুধ টুকু খাও।   তারপর দুধ পান করে বালকটির হাত ধরতেই তার সারা শরীর রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে এবং নয়ন ভোরে জল পড়তে শুরু করে। সুর দাস বললো বন্ধু এবার পরিচয় দাও এবার। বালকটি বললো আমি গোয়ালার ছেলে। এই পথে মথুরার উদ্দেশে যে সব যাত্রী যায় তাদের তৃষ্ণা দূর করে থাকি। সুর দাস তার গলা জড়িয়ে ধরে বললো আমি তো সেই গোয়ালার ছেলে কেই করে খুঁজছি। যদি তুমি এসে থাকো তো একবার তোমার শ্রী মুখ খানি দেখাও। বালকটি বললো তুমি তো অন্ধ কি করে দেখবে আমাকে। আচ্ছা আমি তোমাকে দৃষ্টি দান করলাম। চোখে হাত বলাতেই সুর দাসের দৃষ্টি ফিরে আসে, আর সে দেখতে পায় সামনে এক শ্যাম রুপি বালক মাথায় এক ময়ূর পালক, গলাতে বনমালা, কোমরে বাঁশি।   সুর দাস মোহিত হয়ে তার পদ চরণে লুটিয়ে পড়ল। বলল দেখা পেয়েছি প্রভু। আমার চোখ আজ ধন্য। আমার প্রথম দেওয়া দৃষ্টি দিয়ে আমি তোমাকেই দর্শন করলাম প্রভু। আজ আমি ধন্য। আর কার রূপ আমি দেখতে চাই না। এই ভাবে সুর দাস শ্রী কৃষ্ণের দর্শন পেয়ে ছিলেন। অর্থাৎ পবিত্র হৃদয়ে লক্ষ্য স্থির রেখে, যত বাধাই আসুক না কেন তা সত্ত্বেও ভগবানকে ডেকে গেলে নিশ্চয় ভগবান সদয় হবেন, তাঁর দেখা পাবেন।   

রাধা কে ?  

রাধা নামের অারেকটি অর্থ হল --- #রা --- শব্দটা রমন শব্দ থেকে এসেছে। রমন শব্দের অর্থ হচ্ছে অানন্দ বর্ধনকারী। #ধা --- শব্দটা ধারন থেকে। #রাধার অর্থ অানন্দকে ধারন করা। যিনি অানন্দকে ধারন করে থাকেন তিনিই "রাধা"।   #এখানে_অানন্দ_টা_কে??? এখানে অানন্দ টা হল শ্রীকৃষ্ণ। শ্রীকৃষ্ণের অারেক নাম #সচ্চিদানন্দ। সৎ, চিৎ, অানন্দ।অানন্দ স্বরূপ শ্রীকৃষ্ণকে যিনি মনের মধ্যে ধারন করে অাছেন তিনিই "রাধা"।   
রাধাকে বৃষভানু নন্দিনী বলা হয় কেন?

বৃষভানু_কে??? "বৃষ" অর্থ বিষাদ কে বুঝানো হয়েছে। "ভানু" অর্থ ভঙ্গ কে বুঝানো হয়েছে। সুতরাং "বৃষভানু" অর্থ যার মন থেকে বিষাদ ভঙ্গ হয়েছে। মানুষের মধ্যে মনের বিষাদ ভঙ্গ হওয়ার পরেই ত মনে অানন্দের সৃষ্টি হয়, তার সেই অানন্দটাকে মনে ধারন করাটাই হচ্ছে "রাধা"। অর্থাৎ বিষাদ ভঙ্গ হওয়ার পরে সে বিষাদের জায়গায় মনে যে অানন্দের অাগমন হয় সে অানন্দটাকে ধারন করাটাই হচ্ছে "রাধা"।  

 শ্রীকৃষ্ণকে সচ্চিদানন্দ কেন বলা হয়?
 তার মনে কোন বিষাদ নেই, সুখ দুঃখের অবকাশ নেই। তিনি এক অবস্তায় অানন্দের মধ্যে স্থির থাকেন। তিনি কেবল অানন্দেই বিহার করেন তাই তার নাম "সশ্চিদানন্দ"।সে অানন্দটাই হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় স্থান। যার মনে অানন্দকে ধারন (রাধা) করেছেন সেখানেই শ্রীকৃষ্ণ বিরাজ করেন। সে অানন্দই হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণ পরমাত্মার নিবাস স্থান। মানুষের দেহে ৫ টি স্তর অাছে"। এই ৫ টি স্তরের মধ্যে কোন স্তরে শ্রীকৃষ্ণ পরমাত্মার অংশ স্বরূপ অাত্মার নিবাস স্থান সেটা দেখে নিই।
  
 ১) অন্নময় কোষ --- যাহা অন্ন দ্বারা গঠিত হয়েছে। অর্থাৎ এই স্থুল শরীর।   
২) প্রানময় কোষ --- এই স্থুল শরীরের ভেতর সূক্ষ্মশরীর অবস্থিত।   
৩) মনময় কোষ --- এটা প্রানময় কোষের ভেতর অারো সূক্ষ্মভাবে অবস্থিত।   
৪) বিজ্ঞানময় কোষ --- এটা মনময় কোষের ভেতর অারো সূক্ষ্মভাবে অবস্থিত। 
৫) অানন্দময় কোষ --- এটা বিজ্ঞানময় কোষের ভেতর অারো সূক্ষ্মভাবে অবস্থিত।   এই অানন্দময় কোষের মধ্যে শ্রীকৃষ্ণ পরমাত্মার অংশ স্বরূপ অাত্মার অবস্থান। অর্থাৎ যেখানে অানন্দ সেখানে সশ্চিদানন্দ। যেখানে রাধা (অানন্দ ধারন) সেখানে শ্রীকৃষ্ণ। আর যেখানে রাধা নেই সেখানে শ্রীকৃষ্ণও নেই। এখানে রাধা কোন নারী নয়, অানন্দের যেহেতু কোন রূপরেখা নাই। এখানে মানুষকে সহজে বুঝানোর জন্য নারী রূপ দেওয়া হয়েছে।
Next Post Previous Post
1 Comments
  • সনাতনী আলাপন
    সনাতনী আলাপন ২৯ ফেব্রুয়ারী, ২০২০ এ ৭:২৯ PM

    hare krisna

Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>