শ্রীকৃষ্ণের শ্রীজগন্নাথ রু‌পে প্রকট

শ্রীকৃষ্ণ কেন শ্রীজগন্নাথ রু‌পে প্রকট হ‌লেন?
ভগবানের বৃন্দাবন-লীলা জানার জন্য দ্বারকার ম‌হিষীগণ বেশকৌতুহলী হ‌য়ে উঠ‌লেন । কি এমন সেখা‌নে ঘটনা ছিল যে প্রভু জগন্নাথ তা ভুল‌তে পারছেন না ?কিন্তু  মনিষীগণ জান‌তে পের‌েছিলেন‌ যে, শ্রী মাতা রে‌া‌হিণী ভগবা‌নের বৃন্দাবন লীলা প্রক্যক্ষভা‌বে দর্শন ক‌রে‌ছি‌লেন ও তাদের  মহা সৌভাগ্য যে তি‌নি এখন দ্বারকায় বাস ক‌রছেন । 
শ্রীজগন্নাথ
শ্রীজগন্নাথ/সনাতনী আলাপন 

এক‌দিন সকল ম‌হিষীগণ কৌতুহল চি‌ত্তে রো‌হিণী‌দেবীর কা‌ছে গি‌য়ে কৃপাপূর্বক ভগবা‌নের কৈ‌শোর-‌যৌবন লীলা তাঁ‌দেরকে বলার জন্য রোহিণী‌দেবী‌কে আহ্বান কর‌লেন।মাতা রো‌হিণী উপলব্ধি কর‌লেন যে রাণীগণ ভগবা‌নের ব্রজলীলা শ্রব‌ণের জন্য আগ্রহ হ‌য়ে‌ছে । তি‌নি বল‌লেন, বাস্তবিকই শ্রীকৃ‌ষ্ণের ব্রজ‌বিলাস-লীলা অনোন্য, অনুপম-এতই বি‌শিষ্ট এই লীলা যে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ ও এই লীলা ম‌হিমা শ্রবণ ক‌রে এর প্র‌তি আকৃষ্ট হ‌য়ে প‌ড়েন । আমি আপনা‌দের কা‌ছে ঐসব অপূর্ব বিষ্ময়কর ব্রজলীলা বর্ণনা কর‌তে পা‌রি । কিন্তু এক‌টি শ‌র্তেঃ আমি যখন সেইসব লীলা কা‌হিণী বর্ণনা করব, তখন কৃষ্ণ বলরাম যেন শ্রবণ কর‌তে না পা‌রে ।

য‌দি তাঁরা শ্রবণ ক‌রে, তাহ‌লে বড় আকা‌রের সমস্যার সূচনা হ‌বে।একবার কৃষ্ণ ও বলরাম দ্বারকার সুধর্ম সভাগৃ‌হে এক‌টি সভায় যোগদানের জন্য গমন কর‌লেন । তখন শ্রীকৃ‌ষ্ণের সকল ম‌হিষীগণ তাঁ‌দের অনুপ‌স্থি‌তির সু‌যোগ গ্রহণ কর‌লেন । তাঁরা সকলে এক‌টি প্রশস্ত ক‌ক্ষে সম‌বেত হ‌য়ে রো‌হিণী মাতা‌কে শ্রীকৃ‌ষ্ণের শৈশব লীলা বর্ণনা করার অনু‌রোধ কর‌লেন । ঐ দুই ভাই, কৃষ্ণ - বলরাম যা‌তে এই বর্ণনা শ্রবণ কর‌তে না পা‌রে, সেটা নি‌শ্চিৎ করার জন্য মাতা রো‌হিণী সুভদ্রা‌দেবী‌কে দ্বাররক্ষীর সেবা গ্রহণ কর‌তে বল‌লেন । ঠিক হল তি‌নি ওখা‌নে কৃষ্ণ - বলরা‌মের আগমন হ‌লে রোহিণীমাতা‌কে ইঙ্গি‌তে জা‌নি‌য়ে দি‌বেন । এখন সব‌কিছুই প্রস্তুত । 

সমস্ত ম‌হিষীগণ প্রবল আগ্র‌হে ও উত্তেজনায় সেখা‌নে রো‌হিণীমাতা‌কে ঘি‌রে সম‌বেত । সুভদ্রা সেই প্রশস্ত ক‌ক্ষের দ্বা‌রে তাঁর দুই হাত বিস্তার ক‌রে দ্বার রোধ ক‌রে দাঁ‌ড়ি‌য়ে আছেন, যা‌তে কেউ ভিত‌রে প্র‌বেশ কর‌তে না পা‌রে, বি‌শেষতঃ কৃষ্ণ-বলরাম । রো‌হিণীমাতা আন‌ন্দিত অন্ত‌রে ব্রজবৃন্দাব‌নে শ্রীকৃ‌ষ্ণের শৈশবলীলা বর্ণনা আরম্ভ কর‌লেন । সেই বর্ণনা ছিল পরম প্রী‌তিকর, শ্রবণরম্য এবং দিব্য ভা‌বোচ্ছাসপূর্ণ। ম‌হিষীগণ অচ্ছিন্নম‌নো‌যো‌গে শ্রবণ কর‌তে লাগ‌লেন । তাঁরা রো‌হিণীমাতার মুখ‌নিঃসৃত ব্রজ‌বিলাসকথা-রুপ সুধামৃতধারা তাঁ‌দের ক‌র্ণের দ্বারা পা‌নে এতই নিমগ্ন হ‌য়ে পড়লেন তাঁ‌দের বাহ্যজ্ঞান বিলুপ্ত হ‌য়ে গেল।

সুভদ্রা য‌দিও দ্বাররক্ষার দ্বা‌য়ি‌ত্বে নি‌য়ো‌জিত হ‌য়ে‌ছি‌লেন, তি‌নি শ্রীকৃ‌ষ্ণের অনুপম লীলা‌বিলাস-কথা শ্রব‌ণের সু‌যোগ‌টি অপচয় কর‌তে পার‌লেন না । আর এইভা‌বে শ্রব‌ণে নিমগ্ন হওয়ায় দ্বারকার ম‌হিষী‌দের ম‌তোই তাঁরও বাহ্যজ্ঞান লোপ পেল । কৃষ্ণ-বলরাম সভায় যোগদান ক‌রে সেখা‌নে ব্যস্ত থাক‌লেও তাঁরা বুঝ‌তে পার‌লেন যে মাতা রো‌হিনী তাঁ‌দের বৃন্দাবন লীলাকথা বর্ণনা কর‌ছেন । ঐকথা শ্রব‌ণের জন্য সুতীব্র লালসায় অভিভূত হ‌য়ে তাঁরা হঠাৎই সভাগৃহ প‌রিত্যাগ ক‌রে সেই স্থা‌নের দি‌কে ধা‌বিত হ‌লেন, যেখা‌নে রো‌হিণী‌দেবী ও রাণীগণ সমবেত হ‌য়ে‌ছি‌লেন । যখন তাঁরা দ্বা‌রে পৌছা‌লেন, তখন তাঁরা দেখ‌লেন যে সুভদ্রা কক্ষদ্বার পাহাড়ার দ্বা‌য়ি‌ত্বে সেখা‌নে দাঁ‌ড়ি‌য়ে আছেন । 

কৃষ্ণ-বলরাম সুভদ্রার উভয় পা‌শে দাঁড়া‌লেন এবং তৎক্ষণাৎ তাঁরা মাতা রো‌হিণীর বর্ণনা শ্রব‌ণে নিমগ্ন হ‌লেন সুভদ্রা ব্রজকথা শ্রব‌ণে সম্পূর্ণ তন্ময় হওয়ায় তাঁর বাহ্য চেতনা বিলুপ্ত হ‌য়ে‌ছিল, সেজন্য তি‌নি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীবলরা‌মের উপ‌স্থি‌তি লক্ষ্য কর‌লেন না । তাঁরা তিনজন এইভা‌বে লীলা শ্রব‌ণের দ্বারা ভাবা‌বিষ্ট হ‌য়ে পড়‌লেন, তখন তাঁ‌দের দিব্য দে‌হে মহা ভাব‌বিকার-লক্ষণ প্রক‌টিত হ‌তে শুরু করল । " কি পরমাদ্ভুত, দিব্যসুন্দর লীলা ! ব্রজবাসীগ‌ণের কি অবর্ণনীয়‌ স্নেহ-‌প্রেম !ব্রজগনদের অদ্ভুত প্রী‌তি-‌প্রেমভালোবাসা-‌বিরহ শ্রব‌ণে বিষ্ময়া‌ভিভুত হওয়ায় তাঁ‌দের দিব্য অঙ্গ ভাবতর‌ঙ্গে প‌রিপ্লুত হল । ভাবা‌তিশয্যাবশতঃ তাঁদের নয়ণ ক্রমশঃ বড়, বি‌স্ফো‌রিত হ‌তে শুরু করল, তাঁ‌দের হস্ত - পদ তাঁদের‌ দেহের স‌ধ্যে সংকু‌চিত হল ।

বৈষ্ণবীয় দর্শন মতে,একদা দ্বারকায় মহিষীগণ রোহিনী মাতাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে এত সেবা করার পরও তিনি যেন শ্রীদাম-সুদাম, কখনও মা যশোদা-নন্দ বা কখনও ব্রজবাসীগণ বলতে মুর্ছা যান।
তার কারণ কি ? তখন শ্রীকৃষ্ণ-বলরামের অজান্তে সুভদ্রা দেবীকে একটি কক্ষের দ্বারে রেখে নিভৃত কক্ষাভ্যন্তরে "রোহিনী মাতা"মহিষীদের কাছে ব্রজবাসিদের কৃষ্ণ বিরহের কথা বলতে শুরু করলেন ----- শ্রীকৃষ্ণের অনুপস্থিতিতে বৃন্দাবনের বৃক্ষরাজী, তরুলতা শ্রীকৃষ্ণ বিরহে ফুলে-ফলে সুশোভিত হয় না। গো, গো-বৎস এবং সখাগণ অনাহারে অনিদ্রায় কালাতিপাত করছে।মা যশোদা, পিতা নন্দ প্রতিদিন ছানা-মাখন নিয়েগোপাল গোপাল বলে কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়েগেছেন। কৃষ্ণবিহনে ব্রজগোপীগণ প্রাণান্ত প্রায়।এদিকে ভগিনী সুভদ্রা দেবীকে একটি কক্ষেরদ্বারে দেখতে পেয়ে কৃষ্ণ এবং বলরাম তাঁর নিকটে এসে দাঁড়ালেন।কক্ষাভ্যন্তর থেকে ভেসে আসা ধ্বনি,যা রোহিনী মাতা কর্তৃক বর্ণিত ব্রজবাসীদের
কৃষ্ণ-বিরহ কথা শ্রবণ করতে করতে কৃষ্ণ,বলরাম এবং সুভদ্রা বিকারগ্রস্ত হতে লাগলেন।

 তাদের হস্ত-পদ শরীরাভ্যন্তরে প্রবিষ্ট হতে লাগল। চক্ষুদ্বয় বিস্ফারিত হতে লাগল।এমতাবস্থায় সেখানে "নারদ-মুনি" উপস্থিত হয়ে সেই রূপ দর্শন করলেন ।তখন "নারদ-মুণি" ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিকট প্রার্থনা করলেন,'হে ভগবান, আমি আপনার যে রূপ দর্শন করলাম যে , ভক্ত বিরহে আপনি স্বয়ং বিকারগ্রস্ত হয়ে থাকেন, সেই করুণার মূর্তি জগতবাসীর কাছে প্রকাশ করুন।নারদ-মুণির প্রার্থনায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিলেন যে, দারুবৃক্ষ (জগন্নাথ) রূপে শ্রীক্ষেত্র বা পুরীতে আমি এই রূপে আবির্ভূত হবো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>