কৃষ্ণ ভঙ্গিমাতে বাঁশি বাজানোকে ত্রিভঙ্গ মুরারী বলে

শ্রীকৃষ্ণ যে ভঙ্গিমাতে দাঁড়িয়ে বাঁশি বাজান সেটিকে ত্রিভঙ্গ মুরারী বলে।কেন সেটিকে ত্রিভঙ্গ মুরারী বলে তার ব্যাখ্যা নিচে বর্ণনা করা হলো। কৃষ্ণ যে কদমতলায় বাঁশি বাজাচ্ছেন সেটা আমাদের শরীরের সহস্রার চক্রের প্রতীক। বাঁশির ফুটোগুলো হচ্ছে এক একটা চক্রের প্রতীক, বাঁশির যে ফুটোতে শ্রীকৃষ্ণ মুখ দিয়ে বাজাচ্ছেন সেটাই সহস্রার চক্র। বাঁশিওয়ালার যেখানে আঙুল পড়ে সেখানকার সুর যেমন বেজে ওঠে,ঠিক তেমনি আমাদের (সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষের) শরীরের ছয়টি চক্রের যেখানে যেখানে শ্রীকৃষ্ণের আঙুল পড়ছে সেই অনুযায়ী প্রকাশ দেখা দিচ্ছে।

শ্রীকৃষ্ণ যে ভঙ্গিমাতে দাঁড়িয়ে বাঁশি বাজান, সেটিকে কি বলে?
শ্রীকৃষ্ণের দাঁড়িয়ে থাকার ভঙ্গিমা 


 শ্রীকৃষ্ণ ত্রিভঙ্গ মুরারী হয়ে আছেন, পাশে রাধা। ত্রিভঙ্গ মুরারী মানে চেতনার তিন অবস্থা যথা স্বপ্ন, জাগ্রত ও সুসুপ্তিতে যিনি নিজেকে জানেন। ধরুন কেউ আপনাকে বলছে 'আমি আত্মা', কিন্তু ঘুমের মধ্যে স্বপ্ন দেখাকালীন বা সুসুপ্তিতে তার মনে থাকেনা যে সে আত্মা। স্বপ্নের মধ্যে বাঘ দেখে ফেললে আঁতকে উঠে তার ঘুম ভেঙে যাবে, তখন আর তার আত্মার বোধ থাকবে না। কিন্তু জ্ঞান মানে সর্ব অবস্থায় নিজেকে জানা, জাগ্রত অবস্থাতেও সে নিজেকে আত্মা বলে জানে, ঘুমের সময়েও সে জানে যে শরীর ঘুমিয়ে আছে, মন স্বপ্ন দেখছে কিন্তু সে আত্মা, এবং ঘুমের গভীরে স্বপ্নহীন সুসুপ্তির অবস্থাতেও সে নিজেকে আত্মা বলে জানে। সে জানে শরীর, মন, বুদ্ধি সকলে ঘুমোচ্ছে কিন্তু আত্মা চিরজাগ্রত হয়ে আছে। এভাবে যে স্থিতিতে একজন সর্বদা নিজেকে জানেন সেটাই কৃষ্ণ স্থিতি। তিনি সর্ব অবস্থায় ত্রিভঙ্গ মুরারী হয়ে বাঁশি বাজাচ্ছেন। কৃষ্ণ শব্দের অর্থ যিনি কর্ষণ করেন। 


আর গুরুমহারাজ বলতেন 'যে আরাধনা করে তিনিই রাধা'। আমাদের জীবনের ধারা হচ্ছে নিম্নমুখী, আমাদের শক্তি মস্তিষ্ক থেকে নিম্নগামী হয়ে নিম্নদ্বার দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে, আমাদের চিন্তা নিম্নমুখী তাই আমাদের দৃষ্টি সব সময় নিচের দিকে থাকে। পশুপাখি, গরু, ছাগল সব সময় নিচের দিকে তাকিয়ে থাকে, মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটে, একইভাবে বেশিরভাগ মানুষও নিচের দিকে তাকিয়ে হাঁটে। বিরল কিছু মানুষ আছে যারা আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকিয়ে হাঁটে। যাদের নিচের দিকে দৃষ্টি তাদের চেতনা নিজের দিকে। জীবনের মূলস্রোত নিম্নমুখী বলেই পাহাড় থেকে নদী নিচের থেকে নেমে এসে সাগরের সাথে মেশে।


 আমাদেরও একই অবস্থা, আমরাও উপর থেকে নেমে এসে নিচের দিকে চলে যাচ্ছি। জীবনের এই ধারা যখন উল্টে যায় তাকে বাউলরা বলেন উজান স্রোত। অর্থাৎ যে স্রোত নিচের দিকে নেমে আসছে তার উল্টো দিকে যখন কেউ সাঁতার কাটতে শুরু করে সেই বাউল। সে উজান স্রোত বেয়ে আবার উৎসের দিকে যেখান থেকে জীবন নদীর শুরু হয়েছিল সেখানে ফিরে যাচ্ছে। সুতরাং যার জীবনের ধা-রা উল্টে যায় সেই হয়ে ওঠে রা-ধা। তখনই নিম্নস্রোত দিক পরিবর্তন করে এবং কুণ্ডলিনী শক্তি জেগে গিয়ে যে স্রোত উঠতে শুরু করে তিনিই শ্রীরাধিকা।

 শ্রীকৃষ্ণের প্রত্যেকটি শরীরের কার্যকলাপের ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থগুলো। তাদের থেকে সংকলিত করে প্রশ্নটির উত্তর দেওয়া হয়েছে। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>