গোপীগণের প্রতি শ্রীরাধা রানী পরামর্শ

একদা ব্রজগোপীগণ একাদশীর মহিমা শ্রবণ ইচ্ছায় কহিলেন- হে কৃষ্ণ প্রাণাধিকা বৃষভানু রাজ নন্দিনী!

তুমি সর্ব্বশাস্ত্র-পারায়না বৃহস্পতির বাক্যও তোমার বাক্যে বিড়ম্বিত হয়।হে রাধা! তুমি সাক্ষাৎ জ্ঞাননিধি; পূর্বে কে এই একাদশীব্রত করিয়াছিল, তাহা আমাদের নিকট বিশেষরূপে বর্ণনা কর। রাধা বলিলেন,- হে গোপীগণ! এই শ্রেষ্ঠ একাদশীব্রত অসুরগণের বিনাশ ও দ্রষ্টরাজ্য লাভের জন্য দেবগণ পূর্ব্বেকরিয়াছিলেন, তারপর বৈশস্ত নামক নৃপতি যমলোকগত নিজ পিতৃগণের উদ্ধারার্থ এই ব্রত করেন। পাপী লুম্পক নরপতি অকস্মাৎ জ্ঞাতি পরিত্যক্ত হইয়া এই একাদশীব্রত করে এবং তাহার ফলে তাহার ভ্রষ্টরাজ্য লাভ হয় । ভদ্রবতী পুরীর অপুত্রক কেতুমান নৃপতি সজ্জনগণের উপদেশে একাদশীব্রত করিয়া পুত্র লাভ করেন ।

গোপীগণ প্রতি শ্রীরাধা রানী বাক্য
 গোপীগণ প্রতি শ্রীরাধা রানী বাক্য

একদা দেবপত্নীগণ কোন এক ব্রাহ্মণীকে এই একাদশীব্রতের উপদেশ করেন, ঐ ব্রাহ্মণী মানুষী হইয়াও ধনধান্য ও স্বর্গসুখ লাভ করিয়াছিলেন । পুষ্পদন্ত ও মাল্যবান্ শত্রুশাপে পিশাচত্ব প্রাপ্ত হইয়াছিল, তাহারা একাদশীব্রত করিয়া পুনরায় গন্ধর্ব্বত্ব প্রাপ্ত হয়। পূর্ব্বকালে সমুদ্রে সেতুবন্ধন ও রাবণের বধের জন্য রামচন্দ্র এই একাদশীব্রত করিয়াছিলেন। প্রলয়ান্তে সমুৎপন্ন আমলকী তরুতলে দেবতারা জগতের কল্যাণলাভার্থ একাদশীব্রত করিয়াছিলেন ।


রাজা অম্বরীষও একাদশীব্রত করিয়াছিলেন। তাহার ফলে সৰ্ব্বত্র অপ্রতিহত ব্রহ্মশাপও তাহাকে স্পর্শ করিতে পারে নাই। হেমমালী নামক যক্ষ কুবেরশাপে কুষ্ঠরোগগ্রস্ত হয়, সে একাদশীব্রত করিয়া চন্দ্রতুল্য হইয়াছিল। মহীজিৎ নৃপতি একাদশী ব্রতাচারণে উত্তম পুত্র লাভ করিয়া বৈকুণ্ঠে গমন করিয়াছিলেন, তাহার ফলে তিনি পৃথিবীরাজ্য লাভ করিয়া পৌরজনসহ বৈকুণ্ঠে গমন করেন ।


নৃপতি রুক্মঙ্গদও একাদশীব্রত করিয়াছিলেন, তাহার ফলে তিনি ভূমণ্ডল ভোগ করিয়া পৌরজনসহ বৈকুণ্ঠে গমন করেন।


মেধাবী মুনি পিতৃবাক্যে দ্বাদশীব্রত করিয়া অপ্সরাদিগের স্পর্শদোষ হইতে বিমুক্ত ও উত্তম কান্তিসম্পন্ন হন। ললিত নামক গন্ধর্ব্ব রাজ শাপে রাক্ষস হইয়া এই একাদশী ব্রতাচরণে পুনর্বার গন্ধর্ব্বত্ব লাভ করে। একাদশী ব্রতাচরণে মান্ধাতা, সগর, ককুস্থ, মহামতি মুচুকুন্দ, ধুন্ধুমার এবং অন্যান্য অনেক নৃপতি স্বর্গলাভ করিয়াছিলেন। জ্ঞাতিপরিত্যক্ত ধৃষ্টবুদ্ধি নামক মহাখল বৈশ্যতনয় একাদশীব্রত করিয়া বৈকুণ্ঠে গমন করে।


আদি সত্যযুগে শোভন নামক নরপতি মহীপাল মুচুকুন্দের জামাতা হন, তিনি একাদশী-ব্রত করিয়া ভারতের মন্দরাচলে দেবতাগণের সহিত উত্তম স্থান লাভ করিয়াছিলেন; অদ্যাপি তিনি তথায় স্বমহিষী চন্দ্রভাগার সহিত কুবেরের মত রাজত্ব করিতেছেন ।

যজ্ঞসীতা-গোপীগণ রাধার মুখে ইহা শুনিয়া কৃষ্ণপ্রাপ্তির জন্য যথাবিধি একাদশী ব্রত করেন; তাঁহাদের একাদশী ব্রত ফলে স্বয়ং হরি প্রসন্ন হইয়া শরৎকালীন পূর্ণিমায় তাঁহাদের সহিত রাস করিয়াছিলেন। হে গোপীগণ একাদশীকে সর্ব্বতিথির প্রধানা উত্তম তিথি জানিবে, তাহার সমান অন্য কোন তিথি নাই ।

#tag;গোপীগণ প্রতি শ্রীরাধা রানী বাক্য,গোপীগণের প্রতি শ্রীরাধা রানীর উপদেশ,গোপীগণের প্রতি রাধার উপদেশ,গোপীগণের সাথে শ্রীরাধা রানীর আলাপচারিতা, গোপীগন ও রাধা,গোপীগন ও রাধার কথোপকথন,

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>