একাদশীর প্রয়োজনীয়তা

একাদশী হরিবাসর তিথি, ইহা পরম পবিত্র তিথি। ইহার মূল অভিপ্রায় একাদশ ইন্দ্রিয় সংযমপূর্বক শ্রীহরির প্রিয় তিথিকে সম্মান করা। গোস্বামী ও বৈদিক শাস্ত্রমতে একাদশী, মহাদ্বাদশী ও বিষ্ণুতত্ত্বগণের আবির্ভাবে উপবাসের ব্যবস্থা আছে। মহাদ্বাদশীর উদয়ে একাদশী পরিত্যাগপূর্বক মহাদ্বাদশীতেই উপবাস কর্তব্য। একাদশীতে উপবাসপূর্বক দ্বাদশীতে বিষ্ণু বিগ্রহগণের অর্চণ ভোগরাগন্তে সঠিক সময় পারণের ব্যবস্থা শ্রীহরিভক্তি বিলাসে নির্দেশ দেওয়া আছে।

একাদশীর প্রয়োজনীয়তা
একাদশীর প্রয়োজনীয়তা

শ্রীমন্মহাপ্রভূ তাহার মাতা শ্রীশচীদেবীকে বলিয়াছেন--

একদিন মাতৃপদে করিয়া প্রণাম।
প্রভূ কহে মাতঃ মোরে দেহ একদান |
মাতা বলে তাই দিব, তুমি যা মাগিবে।
প্রভূ কহে একাদশীতে অন্ন না খাইবে ॥
শচী বলে না খাইব, ভালই কহিলা।
সেই হইতে একাদশী করিতে লাগিলা।।

কলিরজীব অল্পআয়ু, অন্নগত প্রাণ ও যোনিগত মন। তপস্যাবলে ভগবান লাভের ক্ষমতা নাই। কলির জীবের অন্ন না খাইলে জীবন ধারণ একেবারেই অসম্ভব। এই জন্য কলিযুগের মানুষের জন্য অন্ততঃপক্ষে মাসে দুই একাদশী তিথিতে অনাহারে তপস্যা করিবার ব্যবস্থা প্রদত্ত হইয়াছে। একাদশীতে তিনটি পালন বিধি দেওয়া হইয়াছে

১। সমর্থপক্ষে দশমীতে একাহার, একাদশীতে নিরাহার ও দ্বাদশীতে একাহার করিবেন।

২। অসমর্থ হইলে শুধু একাদশীতে অনাহার।

৩। উহাতেও অসমর্থ হন তবে একাদশীতে পঞ্চ রবিশস্য বর্জন করতঃ ফলমুলাদি অনুকল্প গ্রহণের বিধান রহিয়াছে। সমর্থপক্ষে রাত্রি জাগরণের বিধি আছে।

একাদশীতে ভোজন করিলে মাতৃঘাতী, পিতৃঘাতী, ভ্রাতৃঘাতী ও গুরু হস্তা বলে গণ্য হয়। আর অন্ন ভোজনকারী ব্যক্তি বিষ্ণুলোক হইতে চ্যুত হয় ।

যে কোন বর্ণাশ্রমী বা বর্ণের হউক না কেন সে যদি একাদশীতে অন্ন ভোজন করে তাহা হইলে নিষিদ্ধ দ্রব্য ভোজনের অপরাধ হয়। শ্রীভগবান বলিয়াছেন, আমি দৃঢ়ভাবে বলিতেছি, হে জনগণ শ্রবণ কর,একাদশী তিথিতে কদাচ অন্ন ভক্ষণ করিও না।

শৈব, শাক্ত, সৌর, গানপত্য প্রভৃতি কেহই একাদশীতে অন্ন ভোজন করিবে না, যে কেউ অন্ন ভোজন করিলে সে পশু হইতেও নিকৃষ্ট।

একাদশী ব্রতের সহিত কখনও অন্যান্য ব্রত বা কোন পুণ্য কর্মের তুলনা হয় না। ভক্তি সহকারে একাদশী ব্রত করিলেই সকল যজ্ঞ ও সকল প্রকার ব্রতের ফল লাভ হয়।

একাদশী তিথিতে ব্রহ্মহত্যাদি নিখিল পাপরাশি অন্ন মধ্যে প্রবিষ্ট হয়। সেই হেতু একাদশীতে অন্ন ভোজন করিলে পাপই গ্রহণ করা হয়। একাদশীতে অন্ন

ভোজনের পাপ এতই বেশি যে, সে পাপের আর প্রায়শ্চিত্ত বিধান নাই

জল, ফল, মূল, পেয়, ঘৃত, দুগ্ধ, ব্রাহ্মণবাত্ম্য গুরুবাক্য ও ঔষধ এই আটটি

ব্রতনাশক নয় একাদশীতে পঞ্চরবিশস্যে ব্রহ্মহত্যা, গো ইত্যাদি মহাপাপ সমূহ আশ্রয় করিয়া থাকে বলিয়া নিঃশ্রেয়ার্থী ভক্তগণ ঐদিন পঞ্চরবিশস্য ত্যাগ করিবেন।

দশমী বিদ্ধা একাদশী কখনও উপবাস করিতে নাই । অরুনোদয় কালের দুই মুহূর্ত অর্থাৎ ৪ দন্ড = ১ ঘণ্টা ৩৬ মিনিটের মধ্যে যদি দশমী স্পর্শ হয়, উহাকে দশমী তিথি বিদ্ধা বিচার করত: পরদিন একাদশী ব্রত পালন করিতে হইবে।

সূর্যোদয়ের পূর্বে একাদশী দুই মুহূর্ত (৯৬মি:) থাকিলে তাহাকে সম্পূর্ণা

বলা হয়, ঐ একাদশীতে গৃহীর উপবাস করা উচিত। বৈষ্ণবের পক্ষে দশমী সমন্বিত একাদশী সর্বতোভাবে পরিত্যাজ্য। মুনিবর কম্বের উক্তি-অরুণোয় বেলায় দশমীবিদ্ধা একাদশী হইলে দ্বাদশীতে উপবাস করিয়া ত্রোয়দর্শীতে পারণ করিতে হইবে।

একাদশী দিবসে শ্রীভগবানের পুজা স্মরণ, মনন ও ভাগবত শ্রবণ কীৰ্ত্তনে, হরিবাসর, সাধুসঙ্গের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করিতে হয়। একদা গোপীগণ শ্রীকৃষ্ণকে অবলোকন করিলেন, তিনি কি কাজ করিলে রাধা প্রেমে মোহিত হন এবং কি ব্রত করিলে কৃষ্ণ প্রসন্ন হন তাহা জানিবার জন্য শ্রীরাধার নিকট গমন করেন। শ্রীকৃষ্ণকে প্রসন্ন করিবার জন্য কোন শুভ ব্রতের উপদেশ প্রদান কর দেবগণেরও দুষ্প্রাপ্য নন্দনন্দন কৃষ্ণ তোমার বশিভূত হে রাধে! তুমি জগন্মোহিনী ও সকল শাস্ত্র পরায়না ।

শ্রীমতিরাধারাণী বলিলেন- তোমরা সকলে শ্রীকৃষ্ণ প্রীতার্থে শ্রীএকাদশী ব্রত পালন কর, তাহাতেই শ্রীহরি প্রসন্ন হইবেন, ইহাতে সংশয় নাই। গোপীগণ বলিলেন- হে রাধিকে! পূর্ণ এক বৎসরের একাদশীর নামসমূহ কীর্ত্তন কর, আর কিভাবে মাসে মাসে তাহা পালন করিতে হইবে। শ্রীরাধা বলিলেন- বিষ্ণু দেহ হইতে মার্গশীর্ষ অগ্রহায়ণ মাসে উৎপন্না একাদশী তিথিতে মুরাসুর বধের জন্য উৎপন্ন হয়। সেই সর্ব্বোত্তমোত্তমা একাদশী মাসে মাসে পৃথক পৃথক ভাবে পালন হইয়া থাকে । তোমাদের হিতার্থে ষড় বিংশতি একাদশীর নাম কীর্তন করিতেছি।

১। উৎপন্না, ২। মোক্ষদা, ৩। সফলা, ৪। পুত্রদা, ৫। ষটতিলা ৬। জয়া, ৭ । বিজয়া, ৮ । আমলকী, ৯। পাপমোচনী, ১০। কামদা, ১১। বরুথিনী, ১২। মোহিনী, ১৩ । অপরা, ১৪। নির্জলা, ১৫। যোগিনী, ১৬। দেবশয়নী (শয়ন) ১৭। কামিকা, ১৮। পবিত্রা, ১৯। অন্নদা, ২০। পরিবর্ত্তিনী (পার্শ্ব পরিবর্তন) ২১। ইন্দিরা, ২২। পাশাঙ্কুশা, ২৩। রমা ২৪। দেবোখানী (উত্থান) বার মাসের এই চব্বিশটি একাদশী। এ ছাড়াও যে বৎসরে মলমাস বা অধিমাসে পদ্মিনী ও পরমা নান্নী দুইটি এই মোট ২৬টি একাদশী দৃষ্ট হয়।

যাহারা একাদশী উপবাসে অপারগ, তাহারা এই একাদশীর নাম, মাহাত্ম্য কীর্তন ও শ্রবণ করিলে এই ব্রতের ফলপ্রাপ্ত হইয়া থাকেন ।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>