মন্দির ও তীর্থক্ষেত্রের মধ্যে পার্থক্য

মন্দিরঃ
মন্দির হলো দেবালয়। মন্দিরে বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি থাকে। মন্দিরে পূজা-অর্চনা হয়। সুতরাং যেখানে দেব-দেবীর মূর্তি থাকে এবং পূজা-অর্চনা হয় তাকে মন্দির বলে।

মন্দির ও তীর্থক্ষেত্র মধ্যে পার্থক্য
মন্দির ও তীর্থক্ষেত্রের মধ্যে পার্থক্য 


দেব-দেবীর নাম অনুসারে মন্দিরের নাম হয়। যেমন- শিব মন্দির, কালী মন্দির, দুর্গা মন্দির, কৃষ্ণ মন্দির, বিষ্ণু মন্দির ইত্যাদি। শিব মন্দিরে থাকে শিবের মূর্তি। কালী মন্দিরে থাকে কালীর মূর্তি। দুর্গা মন্দিরে থাকে দুর্গার মূর্তি। কৃষ্ণ মন্দিরে থাকে কৃষ্ণের মূর্তি। এভাবে বিভিন্ন মন্দিরে বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি থাকে। স্থানের নাম অনুসারেও মন্দিরের নামকরণ হয়ে থাকে, যেমন- ঢাকেশ্বরী, ইত্যাদি।

মন্দির পবিত্র ও পুণ্য স্থান। মন্দিরে গেলে দেহ-মন পবিত্র হয়। ভক্তরা মন্দিরে দেব-দেবী দর্শন করতে যান। মন্দিরে গিয়ে পূজা-অর্চনা করেন। মন্দিরে দেব-দেবীর কাছে প্রার্থনা করেন। দেবদর্শনে মনে ভক্তি আসে, মনে ধর্মীয় ভাবের উদয় হয়। তাই সকলেরই মন্দিরে গিয়ে দেবদর্শন করতে হবে। পূজা-অর্চনা করতে হবে।

নানা স্থানে বড় বড় মন্দির আছে। যেমন- ঢাকায় ঢাকেশ্বরী মন্দির। দিনাজপুরে কান্তজি মন্দির। কোলকাতার কালীঘাটে কালী মন্দির। পুরীতে জগন্নাথ মন্দির।

এখানে ঢাকেশ্বরী মন্দির ও কান্তজি মন্দিরের বর্ণনা দেওয়া হলো।

ঢাকেশ্বরী মন্দির

ঢাকেশ্বরী মন্দির বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে অবস্থিত। এটি একটি প্রাচীন ও জাতীয় মন্দির। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে আছে দুর্গামূর্তি। এখানে প্রতিদিন সকাল, দুপুর এবং সন্ধ্যায় দেবীর পূজা-অর্চনা হয়। মন্দিরের পাশে কয়েকটি শিব মন্দির আছে। ঢাকেশ্বরী মন্দির হিন্দুদের একটি তীর্থক্ষেত্র। প্রতিবছর এখানে দুর্গাপূজা, কালীপূজা, সরস্বতীপূজা হয়। দেশ-বিদেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজা দিতে আসেন।
দিনাজপুরে কান্তজি মন্দির অবস্থিত। মহারাজ প্রাণনাথ এ মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন। তাঁর পুত্র রামনাথ ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। মহারাজ রামনাথ ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে রুক্মিণীকান্ত বা কান্তজি নামে মন্দিরটি উৎসর্গ করেন। যুক্মিণীকান্ত শ্রীকৃষ্ণের অপর নাম।

এ মন্দিরে কান্তজি বা শ্রীকৃষ্ণের বিগ্রহ আছে। মন্দিরটি খুবই আকর্ষণীয়। মন্দিরের দেয়ালে অনেক পৌরাণিক কাহিনীর চিত্র রয়েছে। যেমন- রাম-রাবণের যুদ্ধ, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ইত্যাদি। দেয়ালে কৃষ্ণলীলার অনেক চিত্রও আছে। এ-সকল চিত্র পোড়ামাটির ফলকে অক্ষিত। পোড়ামাটির ফলকে অঙ্কিত এ ধরনের চিত্রকে টেরাকোটা বলে। এসব টেরাকোটা শিল্পকর্মের জন্য মন্দিরটি খুবই বিখ্যাত। এ মন্দিরে প্রতিদিন পূজা-অর্চনা হয়।

তীর্থক্ষেত্রঃ
তীর্থক্ষেত্র হলো পুণ্য স্থান। দেবতা বা মুনি-ঋষির নামে তীর্থক্ষেত্রের নামকরণ করা হয়। তীর্থক্ষেত্রে গিয়ে শ্রদ্ধা জানালে দেব-দেবী ও মুনি-ঋষিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। তীর্থক্ষেত্রে গেলে মনে ধর্মীয় ভাবের উদয় হয়। মনে পাপ থাকে না। পুণ্যলাভ হয়। মনে শান্তি আসে। সুতরাং যে পুণ্য স্থানে গেলে পাপ থাকে না ও পুণ্যলাভ হয় তাকে তীর্থক্ষেত্র বলে। ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের জন্য মানুষ তীর্থক্ষেত্রে যায়। ধর্মকর্মের জন্য তীর্ণ উত্তম স্থান। তীর্ণের ফল অনেক। তীর্থে স্নান করলে ও রাত্রি যাপন করলে মন পবিত্র হয়। আর পবিত্র মানুষ কোনো মন্দ কাজ করতে পারেন না। তীর্থের গুণে স্বৰ্গ লাভ হয়।

অনেক জায়গায় তীর্থক্ষেত্র আছে। চন্দ্রনাথ, লাঙলবদ, গয়া, কাশী, মথুরা, বৃন্দাবন, নবদ্বীপ প্রভৃতি বিখ্যাত তীর্থক্ষেত্র। এখানে লাঙলবন্দ তীর্বক্ষেত্রের বর্ণনা দেওয়া হলো।

পাওাকদ

বাংলাদেশের বিখ্যাত তীর্ণক্ষেত্র পাঙলরুদ। নারায়ণগঞ্জ জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে লাঙলকদ অবস্থিত। এটি একটি প্রাচীন তীর্থক্ষেত্র। প্রাচীনকালে পরশুরাম এ তীর্থে স্নান করে পাপমুক্ত হয়েছিলেন। চৈত্র মাসের শুক্লা অষ্টমী তিথিতে এখানে স্নান অনুষ্ঠিত হয়। লাঙলবন্দের স্নানকে বলে অষ্টমী স্নান। এখানে স্নান করলে মানুষ পাপমুক্ত হয়।


Next Post Previous Post
2 Comments
  • নামহীন
    নামহীন ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ এ ৪:১৯ AM

    সুন্দর

  • নামহীন
    নামহীন ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৩ এ ৭:০৮ PM

    সুন্দর

Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>