তারকব্রহ্ম নাম কখন, কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল

আমরা সকলেই তো সকলেই জানি যে, মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র প্রচার করেছিলেন। কিন্তু এই তারকব্রহ্ম নাম কখন, কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল,,?

 ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রার্থী ২৮ চতুর্যুগের মধ্যে শেষ কলিযুগে আবির্ভূত হন। সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলি—এই চারি যুগ ২৮ বার আবর্তিত হলে ২৮ নম্বরে যে কলিযুগ হয়, সেই যুগেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। অর্থাৎ আজ থেকে ২৮ চতুর্যুগ পূর্বেও নাম সংকীর্তন প্রবর্তক শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ধরাধামে এসেছিলেন। এইভাবে অনন্ত বার মহাপ্রভু এসে নাম প্রচার করেছিলেন। ( সম্ভাবামি যুগে যুগে ) প্রতি যুগেই ভগবানের দিব্য তারকব্রহ্ম নামও রয়েছে। ভগবান যেমন নিত্য তাঁর নাম ও নিত্য।
যুগে যুগে তারক ব্রহ্ম নামঃ
তারক ব্রহ্ম নাম

নিত্য বস্তুর কিভাবে কবে সৃষ্টি হল, এইরূপ প্রশ্নই অবান্তর। গোলোকের প্রেমধন হরিনাম সংকীর্তন। নিত্য ধামের দিব্য প্রেমধন শ্রীহরিনাম সংকীর্তন এই ধরাধামে কৃপা করে অবতীর্ণ হয়েছেন। কলিকালে নামরূপে কৃষ্ণ-অবতার। নিত্য ধামের মৃত্যু বস্তু কোনও কালের অধীন নয়। যা কালের অধীন, তা ই নশ্বর ও ক্ষণস্থায়ী। তার সৃষ্টি-ধ্বংস রয়েছে। কিন্তু নিত্য বস্তু মানে অবিনশ্বর অর্থাৎ যার সৃষ্টি-ধ্বংস নেই। হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র নিত্য।
তারকব্রহ্ম মন্ত্রঃ (সংস্কৃত: तारकब्रह्ममन्त्र, আইএএসটি: Tārakabrahmanmantra) বা তারকব্রহ্ম নাম হল হিন্দুধর্মের যুগচক্র অনুসারে প্রত্যেক যুগের মহামন্ত্র। মন্ত্রগুলি সবই বৈদিক সাহিত্য শাস্ত্রে বিহিত। এগুলি চার যুগে নির্ধারিত বিভিন্ন তারকব্রহ্ম নাম, এবং হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র কলিযুগের জন্য নির্ধারিত।হরে কৃষ্ণ মন্ত্রটি পরম সত্তার তিনটি সংস্কৃত নাম দ্বারা রচিত- হরে, কৃষ্ণ ও রাম।
যুগে যুগে তারক ব্রহ্ম নামঃ পূর্ব্ব পূর্ব্ব শাস্ত্রকারেরাও ভগদ্ভাব উদয়কাল হইতে এখন পর্য্যন্ত যে সকল উন্নতি অবলম্বন করিয়াছেন, তাহা আলোচনা পূর্ব্বক তারকব্রহ্ম নামের যুগে যুগে ভিন্নতা প্রদর্শন করিয়াছেন-  সত্যযুগের তারকব্রহ্ম নামঃ-  নারায়ণ পরাবেদা নারায়ণ পরাক্ষরাঃ ।  নারায়ণ পরামুক্তি নারায়ণ পরাগতিঃ ।।  ইহার তাৎপর্য্য এই যে, বিজ্ঞান, ভাষা, মুক্তি ও চরম গতি এই সমস্ত বিষয়ের আস্পদ নারায়ণ । ঐশ্বর্য্যগত পরব্রহ্মের নাম নারায়ণ । বৈকুন্ঠ ও পার্শ্বদ সকল যে বর্ণিত আছে, তাহাতে নারায়ণরূপে ভগবদ্ভাব সম্পূর্ণরূপে উপলব্ধ হয় । এই অবস্থায় শুদ্ধ শান্ত ও কিয়ৎপরিমাণে দাস্যের উদয় দেখা যায় ।  ত্রেতা যুগের তারকব্রহ্ম নামঃ-  রাম নারায়ণানন্ত মুকুন্দ মধুসূদন ।  কৃষ্ণ কেশব কংসারে হরে বৈকুন্ঠ বামন ।।  ইহাতে যে সকল নামের উল্লেখ আছে, তাহাতে ঐশ্বর্য্যগত নারায়ণের বিবিধ বিক্রম সকল সূচিত হইয়াছে । ইহা সম্পূর্ণ দাস্যরসপর ও কিয়ৎপরিমাণে সখ্যের আভাস দান করিতেছে ।  দ্বাপর যুগের তারকব্রহ্ম নামঃ-  ইহাতে যে সকল নামের উল্লেখ আছে তাহাতে নিরাশ্রিত জনের আশ্রয়রূপ কৃষ্ণকে লক্ষ্য হয় । ইহাতে শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য, এই চারিটি রসের প্রাবল্য দৃষ্ট হয় ।  কলি যুগের তারকব্রহ্ম নামঃ-  হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।  হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে ।।  এইটি সর্ব্বাপেক্ষা মাধুর্য্যপর নাম-মন্ত্র বলিতে হইবে । ইহাতে প্রার্থনা নাই । মমতাযুক্ত সমস্ত রসের উদ্দীপকতা ইহাতে দৃষ্ট হয় । ভগবানের কোন প্রকার বিক্রম বা মুক্তিদাতৃত্ত্বের পরিচয় নাই । কেবল আত্মা যে পরমাত্মা কর্ত্ত্বক কোন অনির্ব্বচনীয় প্রেমসুত্রে আকৃষ্ট আছেন, ইহাই মাত্র ব্যক্ত আছে । অতএব মাধুর্য্যরসপর জনগণের সম্বন্ধে এই নামটি একমাত্র মন্ত্রস্বরুপ হইয়াছে । ইহার অনুক্ষণ আলোচনাই একমাত্র উপাসনা । সারগ্রাহী জনগণের ইজ্যা(যাগযজ্ঞ), ব্রত, অধ্যয়ণ ইত্যাদি সমস্ত পারমার্থিক অনুশীলন, এই নামের অনুগত । ইহাতে দেশকালপাত্রের বিচার নাই । গুরুপদেশ পুরশ্চরণ ইত্যাদি কিছুরই ইহাতে অপেক্ষা নাই । পূর্ব্বোক্ত দ্বাদশটি মূলতত্ত্বের অবলম্বন পূর্ব্বক এই নামমন্ত্রের আশ্রয় করা সারগ্রাহী জনগণের নিতান্ত কর্ত্তব্য । বাংলার ঘরে ঘরে কিবা শাক্ত কিবা শৈব কিবা বৈষ্ণব সবাই এই নাম মন্ত্র সদা জপ করিছে ।

জয় শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য মহাপ্রভু।।।।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>