কেন ভক্ত নিন্দা করা অপরাধ !
আমাদের বিভিন্ন পাপ ও অপরাধের কারনে সাধন ভক্তি করতে রুচি ও আকর্ষন চলে যায়। আগ্রহ কমে যায়। তখন ধর্মকর্মে সুখ ও আনন্দ থাকে না।জীবনটা নিরস হয়ে যায়।
প্রত্যেকটি ভক্তের স্বরূপ বা লক্ষণ হচ্ছে পূর্ণভাবে কৃষ্ণের শরণাগতির প্রচেষ্টা করা আর এই চেষ্টা কম - বেশি মাত্রায় ভক্তের মধ্যে প্রকাশিত।যেমন,সহিষ্ণুতা ( ক্ষান্তি ) , করুণা , বিনয় , স্থৈয্য , ক্ষমাশীলতা , ইত্যাদি গুনাবলী বিভিন্ন ভক্তে বিভিন্ন পরিমাণে থাকে ।
![]() |
ভক্ত নিন্দা করা অপরাধ |
তাই কখনই এইগুলি বিচার করে কোন ভক্তকে সমালোচনা করা উচিত নয়।যেমন,
( ১ ) ভক্তের সামাজিক অবস্থা বা নিম্ন জাতি - কুল হতে পারেন।
( ২ ) ভক্তের অতীতের অর্থাৎ ভক্ত হবার পূর্বেকার পাপ থাকতেই পারে।
( ৩ ) ভক্তের অনিচ্ছাকৃত পাপ বা আকস্মিক পতনও হতে পারে।
কিন্তু বৈষ্ণব অপরাধের প্রধান কারণ হচ্ছে অসৎসঙ্গ করা , জড় বিষয়াসক্ত মানুষের সঙ্গ করা , যার প্রভাবে চিত্ত কলুষিত হয়ে যাওয়ায় ভক্তদের প্রতি বিদ্বেষ উদয় হয় ,তখন ভক্তদের জড়বুদ্ধিতে বিচার করা ও তাদের ত্রুটি - বিচ্যুতি অন্বেষণ করার প্রবণতা জন্মায়।
হরিনাম জপে ক্রটিশূন্যতা , সার্থকতা অর্জনের জন্য নিষ্ঠাবান ভক্তের উচিত সকল ধরণের অসৎসঙ্গ - বিষয়ীসঙ্গ পরিহার করে সাধুসঙ্গ করা।
▪️কর্তব্য কি হওয়া উচিত একজন বৈষ্ণবের — এই বিষয়ে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয় তখন তিনি তৎক্ষণাৎ বলেন,
“অসৎসঙ্গ ত্যাগ , এই বৈষ্ণব আচার, স্ত্রী বা সঙ্গী ’এক অসাধু ,কৃষ্ণাভক্ত আর” ।
অর্থাৎ-
১) বৈষ্ণবকে সর্বদাই অসৎ - সঙ্গ ত্যাগ করতে হবে।
২) স্ত্রীর প্রতি আসক্ত এবং শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তিহীন ব্যক্তিরাই অসাধু । এই অসৎ - সঙ্গ ত্যাগই বৈষ্ণব আচার । ”
✔️স্কন্দ পুরানে ছয় ধরনের বৈষ্ণব অপরাধ উল্লেখ আছে,
“হন্তি নিন্দতি বৈ দ্বেষ্টি বৈষ্ণবান্নাভিনন্দতি,ক্রুধ্যতে যাতি নোহর্ষং দর্শনে পতনানি যট” ।। “
( ১ ) যে হত্যা করে ভক্তকে ,
( ২ ) যে নিন্দা করে ভক্তের,
( ৩ ) যে ভক্তকে দ্বেষ অর্থাৎ হিংসা করে ,
( ৪ ) যে বৈষ্ণবকে দর্শন করে তার অভিনন্দন ( প্রণাম , পূজা ) না করে ,
( ৫ ) যে বৈষ্ণবের প্রতি ক্রোধ করে ,
( ৬ ) ভক্ত - দর্শনে যে আনন্দিত না হয়।
“অর্থ: এই ছয় ধরণের বৈষ্ণবদ্বেষী মূঢ়রা তাদের বহু বহু প্রজন্মের পিতৃপুরুষগণ সহ মহাবৌরব নামক নরকে অধঃপতিত হয় । ”
একবার শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভূ শ্রীবাস অঙ্গনে ভক্তদের বলেন, “প্রত্যেক জীবই শ্রীকৃষ্ণের শক্তি । যে জীব অপর জীবের নিন্দা করে , শ্রীকৃষ্ণ তাঁর প্রতি অত্যন্ত রুষ্ট হন’।
যদি কোন ব্যক্তি নিষ্ঠা সহকারে চতুর্বেদ অধ্যয়ন করে কিন্তু সেই সাথে অন্যের নিন্দা করে , সে নরকে অধঃপতিত হয়ে জন্ম জন্ম কষ্ট পেতে থাকে । ভক্ত নিন্দা - রূপ অপরাধ সর্ব বুদ্ধি হরণ করে এবং অন্তর দুঃখ দুর্দশায় পূর্ণ করে।
✔️শ্রীকৃষ্ণ প্রত্যেককে উদ্ধার করেন কিন্তু বৈষ্ণব - নিন্দুক পাতকীদের কখনই নয়।
শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আরো বলেছেন , ‘ অসংখ্য ব্রহ্মান্ডের সকল জীব আমার নিত্য সেবক । সেইজন্য যে জীব অপর জীবকে অসম্মান করে , তার সর্বনাশ হয় । কোন সন্ন্যাসীও যদি অপমান করে কোন নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে , তাহলে সেই সন্ন্যাসীর পতন হয় , তার সকল পূণ্য ক্ষয় হয়ে যায় । ”
▪️স্বর্ণবর্ণ বাহুদুটি উত্তোলন করে মহাতেজোময় বপু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সর্ব জগৎ বাসীর নিকট ঘোষনা করেন , অন্যের নিন্দা পরিত্যাগ করে প্রত্যেকে কীর্তন কর,
“হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে”।
যে অন্য কারো সমালেচনা করে না এবং নিস্পাপ চিত্তে একবারও বলে “কৃষ্ণ” আমি স্বয়ং তাকে উদ্ধার করব ।
▪️মহা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর এইরকম বাক্য শ্রবণ করে ভক্তবৃন্দ সহর্ষে জয়ধবনি দিলেন “ জয় ! জয় ! জয় ! ”
।।জয় নিমাই জয় নিতাই ।।জয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।।
“কৃষ্ণের চরন ছাড়ি যে যায় অন্যস্থানে,
বৃথা জনম যায় তার অসত্য বচনে”