শ্রাদ্ধান্ন কি খাওয়া উচিত?

শ্রাদ্ধান্ন কি খাওয়া উচিত?

      বিংশ শতাব্দীর মহান দার্শনিক তথা ধর্মগুরু শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী বলেছেন,- “শ্রাদ্ধান্ন যেহেতু প্রীতান্ন বা আপদান্ন কোনটাই নয়, তাই তা গ্রহণ করা অবিধেয়”। অর্থাৎ শ্রাদ্ধের অন্ন কারও গ্রহণ করা উচিৎ নয়। কেননা সে ভালবেসে, আদর করে কাউকে এখানে খেতে দিচ্ছে না, তাই এটা প্রীতান্ন নয়। আবার সমাজের কেউ এমন বিপদেও পড়েনি যে এই খাবার না খেলে সে মারা যাবে, তাই এটা আপদান্নও নয়। তাই কেন আমরা এই শ্রাদ্ধান্ন, শোকের অন্ন গ্রহণ করবো? এই সময়ে সবার উচিত শোকগ্রস্থ, বিপদগ্রস্থ  পরিবারকে সান্তনা দেওয়া, তাদের সাহায্য করা। কিন্তু যেখানে সমাজের উচিত শোক সন্তপ্ত পরিবারকে সান্তনা দেওয়া, তাদের এই মহা বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া, তা না করে তাদের এই বিপদের সুযোগ নিয়ে তাদের নির্মম ভাবে শোষণ করা হচ্ছে শত শত বৎসর ধরে।

শ্রাদ্ধান্ন কি খাওয়া উচিত?
শ্রীমদ্ভাগবদ্ গীতায় ব্যাখ্যায় করে বলা হয়েছে-- "একটি দেহ ত্যাগ করার পর অন্য একটি দেহ লাভ হয়, কিন্তু কখনও কখনও কেউ যদি অত্যন্ত পাপী হয়, তা হলে সে অন্য আর একটি দেহে দেহান্তরিত হয়না-- সে প্রেতযোনি প্রাপ্ত হয়। মৃত ব্যক্তিকে প্রেতযোনি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য শাস্ত্রের বিধান অনুসারে শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করা অবশ্য।"

* ১০০ পরলোকগত জীবাত্মার মঙ্গল সাধনের উদ্দেশ্যে পারলৌকিক ক্রিয়া অনুষ্ঠান করা হয়। কর্মদোষে যে ব্যক্তি পরজন্মে দুর্গতি দুর্দশা ভোগ করতে থাকে, সেই ব্যক্তির বংশধর তার মঙ্গল বিধানের জন্য শ্রাদ্ধ ইত্যাদি অনুষ্ঠান করেন, যাতে পরলোকগত জীবাত্মার সদগতি লাভ হয়। যে ব্যক্তির বংশধর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান করেনা, তাদের পরলোকগত ব্যক্তির শান্তি লাভ হয়না। কর্ম বিপাকে পরলোকে সেই ব্যক্তি দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করতে থাকে।

১৫ ব্রহ্মাণ্ড পুরাণে বলা হয়েছে- *যযঃ শ্রাদ্ধকালে

* হরিভুক্তশেষং *দদদাতি ভক্ত্যা পিতৃদেবতানাম্। *ততেনৈব পিণ্ডাংস্তুলসীবা মিশ্রাণা- *ককল্পকোটিং পিতর সুতৃপ্তাঃ।

* * "শ্রাদ্ধদিনে ভক্তিসহকারে শ্রীহরির মহাপ্রসাদ এবং তুলসী মিশ্রিত পিণ্ড পিতৃ বা দেবগণকে অর্পন করলে পিতৃগণ কোটিকল্প পর্যন্ত সম্পূর্ণ তৃপ্তিলাভ করেন।"

* ১০ পরলোকগত ব্যক্তির পরজীবনে যাতে সদ্ গতি হয়, মঙ্গল হয়, সেই উদ্দেশ্যে পিণ্ডদান করা হয়। আর তাঁর শ্রাদ্ধ করলে ইহলোকের বংশধর পবিত্র হয়। রামায়ণে ৭৬ সর্গে বলা হয়েছে, "ব্রাহ্মণেরা উপস্থিত হয়ে রাজা দশরথকে চিতা মধ্যে স্থাপন করে জলন্ত আগুনে আহুতি দিয়ে তাঁর পারলৌকিক শুদ্ধির উদ্দেশ্যে মন্ত্র জপ করতে লাগলেন।... দশাহ অতীত হলে ভরত শ্রাদ্ধ করে পবিত্র হলেন এবং দ্বাদশাহে দ্বিতীয় মাসিক প্রভৃতি সপ্তিন্ডীকরণ পর্যন্ত সমস্ত অনুষ্ঠান করে পিতার পারলোকিক ফল আকাঙ্ক্ষায় ব্রাহ্মণদের ধনরত্ন, ভোজ্য, গো, বসন দান করলেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>