জন্ম ও মরণ-অশৌচকালে গৃহদেবতার পূজার্চনা-আরতি, জপ বন্ধ করে দেওয়া উচিত কি?

স্মার্তমতে যে পন্থাই থাক না কেন, বৈষ্ণবীয় ধারায় গৃহদেবতার পূজা বন্ধ করে দিয়ে অশৌচ পালিত হয় না। বৈষ্ণবেরা হরিনামে দীক্ষিত। তাঁরা বিষ্ণুপূজা পরায়ণ। শ্রীবিষ্ণুর পূজার্চনা, নাম কীর্তন চললে সেই গৃহের বা সেই বংশের যারই জন্ম হোক কিংবা মৃত্যু হোক তাতে মঙ্গলই হয়।


জন্মকালে কিংবা মরণকালে অশৌচ প্রভাব দূর করবার উদ্দেশ্যেই পবিত্র শঙ্খধ্বনি কিংবা হরিধ্বনি করবার প্রথা এখনও জনসমাজে প্রবর্তিত হয়ে আসছে। মানুষ তার অশুচি মানসিকতার জন্যই অশৌচ-

এলে পূজার্চনা বন্ধ করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে শ্রীহরির পূজার্চনাতে, নাম কীর্তনে কখনই কোনও বাধা নেই। বৃহন্নারদীয় পুরাণে অদিতিমাহাত্ম্যে শ্রীল সূত গোস্বামী বলেছেন.......


যত্র পূজাপরো বিষ্ণোস্তত্র বিঘ্নো ন বাধতে। 

রাজা চ তস্করশ্চাপি ব্যাধয়শ ন সন্তি হি।॥ 

প্রেতাঃ পিশাচাঃ কুষ্মাণ্ডা গ্রহ বালগ্রহাস্তথা। 

ডাকিন্যো রাক্ষসাশ্চৈব ন বাধন্তেহচ্যুতার্চকং ।।


যেখানে বিষ্ণুপূজা পরায়ণ লোকেরা বাস করে থাকেন, সেখানে কোনও বিঘ্নবাধা থাকে না, সেখানে রাজা, চোর, ব্যাধির কোনও উপদ্রবই থাকে না। প্রেত, পিশাচ, কুষ্মাণ্ড, গ্রহ, ডাকিনী, রাক্ষস ইত্যাদি কেউই এই-অর্চনাকারীর অনিষ্ট করতে পারে না।” সম্পূজয়েন্নিত্যং-সর্বদাই পূজার্চনা  করতে হবে।


কোনও কারণে শ্রীহরির আরাধনা বন্ধ করে দেওয়া দরকার- কোনও শাস্ত্রেই এই ধরনের বাজে কথার উল্লেখ নেই। শ্রীকূর্মপুরাণে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে......... 


ন বিষ্ণারাধনাৎ পুণ্যং বিদ্যতে কর্ম বৈদিকং। তস্মাদনাদিমধ্যান্তং নিত্যমারাধয়েদ্ধরিং ।

(হঃ ভঃ বিঃ ১১/৭৪) 

ভগবান শ্রীবিষ্ণুর আরাধনা অপেক্ষা কোনও প্রকার পুণ্যজনক বৈদিক অনুষ্ঠান নেই। সেইজন্য আদি-মধ্য-অন্তবিহীন নিত্য শ্রীহরির আরাধনা করা কর্তব্য।"


শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর প্রিয়পার্ষদ শ্রীবাস ঠাকুর এবং শ্রীল গোবিন্দ ঘোষ ঠাকুরের পুত্রের মৃত্যুর পর কি হরিনাম জপকীর্তন বাদ দেওয়া হয়েছিল, নাকি বিগ্রহ পূজার্চনা বন্ধ করা হয়েছিল? বরং গোবিন্দ ঘোষ ঠাকুর পুত্রশোকে পূজার্চনাদি সব ক্রিয়াকর্ম করতে ভুলে গিয়েছিলেন বলেই তাঁর অর্চা বিগ্রহ গোপীনাথ তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন, 'একটি পুত্র মারা যেতে তুমি শোকাচ্ছন্ন হয়ে আমাকেও না খাইয়ে মেরে ফেলতে চাইছ। এ থেকে বোঝা যায়, শ্রীহরির আরাধনার প্রভাবে বৈষ্ণবের জন্ম-মরণ- অশৌচ বলে কিছু নেই।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>