জগন্নাথ দেবের মূর্তিতে কেন হাত পা নেই জেনে নিন আসল কাহিনী

জগন্নাথ (অর্থাৎ, "জগতের নাথ" বা "জগতের প্রভু") হলেন একজন হিন্দু দেবতা। ভারতের ওড়িশা, ছত্তিশগড় (বস্তার অঞ্চল), পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, আসাম, মণিপুর ও ত্রিপুরা রাজ্যেএবং বাংলাদেশে তার পূজা প্রচলিত। জগন্নাথ হলেন হিন্দু দেবতা বিষ্ণু বা তার অবতার কৃষ্ণের একটি বিশেষ রূপ।তাকে তার দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রার সঙ্গে পূজা করা হয়।

যেই গৌর, সেই কৃষ্ণ, সেই জগন্নাথ। ভগবান জগন্নাথদেব হলেন শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং যিনি জগতের নাথ বা জগদীশ্বর। সংস্কৃত ভাষায় জগত অর্থে বিশ্ব এবং নাথ অর্থে- ঈশ্বর বোঝায়। সুতরাং জগতের ঈশ্বর বা জগদীশ্বর শব্দের অর্থ হলো জগন্নাথ। রথযাত্রার মহিমা বর্ননা করে বলা হয়েছে স্কন্ধ পুরানে- 

যিনি জগন্নাথের মাসীর বাড়ী(গুন্ডিচা- মন্দিরে)ভগবানের শ্রীবিগ্রহকে দর্শন করার সৌভাগ্য অর্জন করেন, সহস্র অশ্বমেধ যজ্ঞের ফল লাভ করেন তিনি। আগামী কাল শুক্রবার শ্রীজগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রা মহোৎসব। তারই পঞ্চদশ দিবসকাল পর প্রতি বছরের ন্যায় এই বছরও শ্রীজগন্নাথ দেবের রথযাত্রা মহোৎসব পালিত হবে। জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমাতেই শ্রী জগন্নাথ দেব অবতরণ করেছিলেন।এই দিনই শ্রী জগন্নাথের পূণ্য জন্মদিবস।তারই আজ্ঞাক্রমে ঐ জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমা তিথিতে তার মঙ্গল অধিবাস।মহাভাগবতবর শ্রী ইন্দ্রদ্যুম্ন মহারাজ এই বিধানেই শ্রী জগন্নাথ জন্মতিথি প্রত্যেক জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমায় মহাস্নান যাত্রা মহোৎসব করতেন।অদ্যাবদি শ্রীনিলাচল ধামে তদ্রূপ মহাস্নান মহোৎসব উদযাপিত হয়। আবার মহাভাগবত মহারাজ শ্রী ইন্দ্রদ্যুম্নের প্রতি শ্রী জগন্নাথের এইরুপ আদেশ ছিল যে, এই মহাস্নানযাত্রার পরবর্তী পঞ্চদশ দিবসকাল শ্রীভগবানকে অঙ্গরাগবিহীন বিরুপ অবস্থায় কেউ দর্শন লাভ করবে না। যথা-ততঃপঞ্চদশাহাদি স্নাপয়িত্বা তু মাৎ নৃপ। অচিত্রং বা বিরূপং বা ন পশ্যেৎ কদাচন।।

জগন্নাথ দেবের হাত নেই কেন 
ভগবান জগন্নাথ পূজার নিয়মঃ (উৎকল খন্ড : 29/29) শ্রীজগদীশের আজ্ঞানুসারে এই পঞ্চদশ দিবসকাল শ্রীমন্দিরের দ্বার রুদ্ধ থাকে। এই সময়কে "অনবসর কাল" বলা হয়। জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রা -  শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রা মহোৎসব .. ভগবান জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য জ্যৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে জগন্নাথ দেবের এক বিশেষ স্নান যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। স্কন্ধ পুরাণ অনুসারে রাজা ইন্দ্রদুম্ন যখন জগন্নাথ দেবের কাঠের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করলেন তখন থেকে এই স্নান যাত্রার উৎসব শুরু। স্নান যাত্রার দিনটিকে জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথি বা জন্মদিন হিসেবে পালন করা হয়। স্নান যাত্রার আগের দিন জগন্নাথ, বলরাম, সুভদ্রা দেবী এবং সুদর্শন দেবকে বেদী থেকে বিশেষ ভাবে তৈরি করা স্নান বেদীতে নিয়ে আসা হয়। পুরীর মন্দির প্রাঙ্গনে বিশেষ ভাবে তৈরি করা এই মণ্ডপকে বলা হয় স্নান মণ্ডপ। এটা এত উঁচু যে মন্দির প্রাঙ্গনের বাইরে থেকেও বেদিতে উপবিষ্ট বিগ্রহ সমূহ অবলোকন করা যায়। অনুষ্ঠানের দিন স্নান মণ্ডপকে ঐতিহ্যবাহী ফুল, বাগান ও গাছের চিত্রকল্প দ্বারা সজ্জিত করা হয়। তোরণ এবং পতাকা দ্বারা সজ্জিত করা হয়। জগন্নাথ,বলরাম ও সুভদ্রা দেবীর বিগ্রহ ফুল দিয়ে সাজানো হয়। এর পর বিগ্রহের উদ্দশ্যে ধুপ, ধুনা অর্পণ করা হয়। পুরীতে স্নানের জন্য সোনার তৈরি এক ধরনের কুয়া থেকে জল আনা হয়। জল আনার সময় পুরোহিতরা তাদের মুখ কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখেন যাতে জল তাদের মুখনিঃসৃত কোন কিছু দ্বারা এমনকি তাদের নিঃশ্বাস দ্বারা দূষিত না হয়। স্নান মহোৎসবের পূর্বে জগন্নাথ,বলরাম এবং সুভদ্রা দেবীকে সিল্কের কাপড় দ্বারা আবৃত করা হয় এবং তারপর লাল এক ধরনের পাউডার দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়। ১০৮ টি স্বর্ণ পাত্র জল দ্বারা পূর্ণ থাকে। এই জল দ্বারা অভিষেক করা হয়। অভিষেকের সময় বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ,কীর্তন এবং শঙ্খ বাজানো হয়। এরপর জগন্নাথ দেব এবং বলরাম দেবকে হাতি বেশে সাজানো হয়। এই সময় সুভদ্রা দেবীকে পদ্ম সাজে সাজানো হয়। স্নান যাত্রা উৎসবের পর ১৫ দিন ভগবানকে জনসাধারণ থেকে দূরে রাখা হয়।এই মন্দিরে কোন অনুষ্ঠান করা নিষেধ হলো ১৫ দিন।এই সময়ে ভগবান জগন্নাথ দেব  এ বলরাম এবং সুভদ্রা দেবীকে রতন বেদী নামে এক বিশেষ বেদীতে রাখা হয়। এই সময়কে বলা হয় অনাবাসর কাল মানে পূজা করার জন্য অযোগ্য সময়। স্নান করানোর ফলে বিগ্রহ সমূহ বিবর্ণ হয়ে যায়। এই ১৫ দিনে জগন্নাথ দেবকে আগের সাজে ফিরিয়ে আনা হয়। ১৬ তম দিনে জগন্নাথ দেবকে আবার সবার দর্শনের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।!!!  

 জগন্নাথ দেবের মূর্তিতে কেন হাত নেই/জগন্নাথ মন্দিরের কাহিনীঃ 

জেনে নিন আসল কাহিনী।  পুরী গিয়ে জগন্নাথ দর্শন করেননি এমন বাঙালী বোধহয় সত্যিই বিরল। শুধু বাঙালীদের কাছেই নয়, সমগ্র হিন্দুধর্মের মানুষের কাছেই পুরীর জগন্নাথের মন্দির এক অত্যন্ত পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। হিন্দুধর্মে জগন্নাথ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক দেবতা, নানা কারণে বিখ্যাতও বটে! এতই বিখ্যাত যে গোটা পুরী শহরই নামাঙ্কিত তাঁর নামে জগন্নাথ ধাম। পুরীর অলিতে-গলিতে জগন্নাথদেবকে নিয়ে প্রচলিত নানা কাহিনী-উপকাহিনীর খোঁজ আপনি সহজেই পাবেন। কিন্তু আজ আমরা জেনে নি জগন্নাথ মন্দিরের মূর্তিতে কেন হাত নেই। কী সেই কারণ যার ফলে দেবমূর্তিকে অসম্পূর্ণ রেখেই তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হল, ব্যবস্থা করা হল পুজোর! আর কেনই বা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়লো বহুশ্রুত সেই প্রবাদ—‘ঠুঁটো জগন্নাথ’? হিন্দুধর্মে সাধারণত দেব-দেবীর মূর্তি বানানো হয় পাথর বা ধাতুর সাহায্যে। ব্যাতিক্রম জগন্নাথের মন্দিরে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি তিনটি। কাঠ দিয়ে তৈরি সেগুলি। সেই নির্মাণেও যেন যত্নের বড়ই অভাব। যেন বা তাড়াহুড়ো করে অগোছালো ভাবে শেষ করা হয়েছে সেগুলিকে। কাহিনীটি জেনে নেওয়া যাক। কলিঙ্গ রাজ্যের রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নর ইচ্ছা হল তাঁর রাজ্যে ভগবান বিষ্ণুর একটি মন্দির বানাবেন। রাজার আদেশ বলে কথা! সেইমতো ব্যবস্থা করা হল সব। কিন্তু মূর্তি বানাতে গিয়ে রাজা পড়লেন মহা সমস্যায়। কেমন রূপ দেবেন প্রিয় দেবতার বিগ্রহকে, তাই নিয়ে ফাঁপরে পড়লেন তিনি। সমস্যার কথা ব্রহ্মাকে জানালে তিনি রাজাকে পরামর্শ দেন ভগবান বিষ্ণুর ধ্যান করে জেনে নিতে যে কেমন হবে তাঁর বিগ্রহ।  রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন ও বিষ্ণুঃ ইন্দ্রদ্যুম্ন বিষ্ণুর ধ্যান করতে শুরু করলেন। তাঁর কঠিন ধ্যানে তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু দেখা দিলেন তাঁকে, জানালেন পুরীর কাছেই সমুদ্রে যে নিমগাছের গুঁড়ি ভেসে আসবে, সেখান থেকেই মূর্তি নির্মাণ করতে হবে তাঁর। বিষ্ণুর কথামতো রাজাতো গেলেন সমুদ্রতীরের সেই স্থানে। সমুদ্রে ভেসে আসা নিমগাছের গুঁড়িকে নিয়ে আসা হল মন্দিরে। রাজার কাছের শিল্পী নিযুক্ত হলেন সেই কাজে—কাঠকে বিগ্রহতে রূপান্তরিত করার কঠিন কাজ শুরু হল। কিন্তু দেখা গেল যতবারই গাছের গুঁড়িটি কাটতে যাওয়া হচ্ছে, ততবারই সেটি ভেঙে যাচ্ছে।রাজা তো পড়লেন মহা বিপদে।তাহলে কি তাঁর স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাবে বিগ্রহ সহ মন্দির বানানোর?  শিল্পী স্বয়ং বিশ্বকর্মাঃ এমন সময় মুশকিল আসানের মতো তাঁর সামনে আবির্ভূত হলেন এই শিল্পী। ছদ্মবেশী এই শিল্পী আসলে ছিলেন বিশ্বকর্মা। রাজাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন তিনি। কিন্তু জানালেন এক শর্ত আছে তাঁর। বন্ধ দরজার অন্তরালে তিনি মূর্তি বানাবেন। সে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ থাকলেও তিনি যতক্ষণ না বলবেন ততক্ষণ খোলা যাবে না সে দরজা। আর তাঁর অনুমতি ছাড়া যদি খোলা হয় তবে মূর্তি বানানোর কাজ অসম্পূর্ণ রেখেই বিদায় নেবেন তিনি! রাজা রাজী হলেন। বন্ধ দরজার আড়ালে ছদ্মবেশী বিশ্বকর্মা শুরু করলেন তাঁর কাজ।  মূর্তির কাজ অসমাপ্তঃ কেটে গেল বেশ কিছুদিন। রাজা কৌতূহল চেপে রাখেন প্রাণপণে। এদিকে মূর্তির কাজ কতদূর, সে খবরও আসে না। রাজা বন্ধ দরজার ওপারে কোনো শব্দও শুনতে পান না। ইতিমধ্যে রানী তাঁকে তাগাদা দেন বারবার—বলেন মূর্তির কাজ কদ্দুর তার খোঁজ নিতে। শেষে একদিন রাজা কৌতূহল সামলাতে না পেরে খুলে ফেললেন দ্বার। শর্তভঙ্গ করেছেন রাজা। ছদ্মবেশী বিশ্বকর্মা এবার তাঁর পরিচয় দিলেন রাজাকে।জানালেন স্বয়ং বিষ্ণুর আদেশেই তাঁর মূর্তি নির্মাণের কাজে মর্ত্যে আগমন। কিন্তু রাজা যেহেতু তাঁর শর্ত ভঙ্গ করেছেন, তাই বিশ্বকর্মা আর বানাতে পারেন না সে মূর্তি। রাজার শত উপরোধ-অনুরোধেও টললেন না তিনি। ফিরে গেলেন স্বর্গে। মূর্তির কাজ অসমাপ্ত রেখেই। পদযুগল, কান কিছুই তৈরি হয়নি তখন সে মূর্তির, হাতও অসমাপ্ত!  নিজের অন্যায়ের জন্য প্রবল অনুশোচনায় যখন রাজা বিলাপ করছেন, তখনই স্বয়ং ভগবান বিষ্ণু হাজির হলেন তাঁর সামনে। জানালেন এই অসমাপ্ত মূর্তিকেই মন্দিরে স্থাপন করে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করতে। সেই থেকে জগন্নাথের মন্দিরে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার মূর্তিতে হাত নেই। অসমাপ্ত মূর্তিতেই পুজো হয়ে চলেছে বছরের পর বছর ধরে।  

অন্য কাহিনীঃ বিগ্রহে হাত না থাকাকে ঘিরে দ্বিতীয় একটি কাহিনীও প্রচলিত আছে। একদিন বৃন্দাবনের গোপীরা যখন তাঁদের কৃষ্ণপ্রীতির কথা আলোচনা করছিলেন, তখন কৃষ্ণ গোপনে সেগুলি শুনে নেন। গোপীরা সুভদ্রাকে নিয়োগ করেছিলেন তাঁদের আলোচনার গোপনীয়তা রক্ষা করার জন্য। সুভদ্রা এসমস্ত কথা শুনতে শুনতে এতই মুগ্ধ হয়ে যান যে কৃষ্ণ-বলরামকে তিনি খেয়ালই করলেন না। এদিকে গোপীদের কাহিনী শুনে তাঁদের চুল খাড়া হয়ে উঠল, হাত গুটিয়ে এল ও চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো! একারণেই পুরীতে জগন্নাথ-বলরাম-সুভদ্রার ওই প্রকার রূপ। বৈষ্ণবরা এই রূপেই তাঁদের পুজো করে থাকেন। জয় জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রা

এই সাইটটিতে আরও জানতে পারবেন
জগন্নাথ দেবের কাহিনী,
জগন্নাথ দেবের হাত নেই কেন,
জগন্নাথ,
জগন্নাথের হাত নেই কেন,
জগন্নাথের হাত কাটা কেন,
জগন্নাথ দেবের মূর্তিতে হাত ও পা নেই কেন,
জগন্নাথ দেব,
জগন্নাথ মন্দির,
পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের মূর্তিতে হাত নেই কেন,
পুরীর জগন্নাথ মন্দির,
জগন্নাথ দেবের ইতিহাস,
জগন্নাথ দেবের ধ্যান মন্ত্র,
জগন্নাথ দেবের প্রণাম মন্ত্র,
জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা,
পুরীর জগন্নাথ দেবের অদ্ভুত চেহারা কেন?,
জগন্নাথ দেবের রথ,জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা 2022,
জগন্নাথ দেবের জন্ম কাহিনীজ

গন্নাথ মন্দিরের কাহিনী

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>