মা কালীর রহস্য ও কেনই বা কালীমূর্তি লগ্ন

কে জানে গো কালী কেমন/ষড়দর্শনে পায় না দর্শন’—কবিরঞ্জন রামপ্রসাদ সেনের এই পদ আরাধ্যা দেবীর যে বর্ণনা রাখে, তা তন্ত্রের অতি জটিল তত্ত্ব থেকে উঠে আসা। কিন্তু ভক্তরা দেবীকে দেখেছেন মৃন্ময়ী হিসেবেই। তাঁর যে মূর্তি আজ প্রচলিত তা কত প্রাচীন, এই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবেই উঠে আসে। নৃতাত্ত্বিকরা বলেন, তন্ত্রোপাসনার পিছনে রয়েছে বিশ্বের প্রাচীনতম উপাসনা পদ্ধতি। তা প্রকৃতি উপাসনার আদিম পর্ব থেকে উঠে আসা। কালী সেই আদি শক্তিরই মূর্ত রূপ। কিন্তু আজকের এই কালী বা শ্যামা মূর্তি কিন্তু খুব প্রাচীন নয়। 

শিবকে মা কালীর পায়ের নিচে কেন দেখা যায়
মা কালির পায়ের নিচে 


কথিত আছে, ষোড়শ শতকের তন্ত্র সাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশই প্রথম কালীর রূপ কল্পনা করেছিলেন। তার আগে দেবী পূজিতা হতেন ‘যন্ত্রে’। ‘যন্ত্র’ বিভিন্ন শক্তির প্রতীকী রূপ। তা অনেকাংশেই জ্যামিতিক। তবে এ কথাও জানা যায় যে, কৃষ্ণানন্দের আগে গুহ্য মূর্তি শবশিবা বা অন্য কল্পে দেবী পূজিতা হতেন। সেই সব রূপ গৃহী ভক্তদের উপযোগী নয় ভেবে কৃষ্ণানন্দ সেই রূপে বদল আনেন। (সঙ্গের ছবিটি কালী যন্ত্রের।)


কিন্ত কেন এই রহস্য ঘিরে আছে কালীমূর্তিকে? বাংলার প্রায় সব দেবদেবীই বসন পরিহিতা। সালঙ্কারা। মা কালীকেও বিভিন্ন অলঙ্কারে সাজানো হয়। তবে বরাবর তাঁর নগ্নিকা রূপই পূজ্য। প্রসাদী ভক্তিগীতিতে তাই মাকে বসন পরার আর্তি শোনা যায়। এছাড়া কোনও কোনও রূপে কালী ভয়ংকরী, যেমন ছিন্নমস্তা। আবার কোথাও তাঁর মাতৃভাবের প্রকাশ। দশমহাবিদ্যা বলে যে দশজন সিদ্ধা দেবী, তাঁদের প্রথমজন হলেন কালী। এই কালীর বিভিন্ন রূপের সন্ধান পাওয়া যায়। যথা, দক্ষিণাকালী, ভদ্রকালী, সিদ্ধকালী, গুহ্যকালী প্রভৃতি। এর মধ্যে দক্ষিণাকালী রূপটিই বাংলায় বেশিমাত্রায় পুজো পায়। এই মূর্তিতে মায়ের একহাতে ছিন্ন নরমুণ্ড ও খড়্গ। অন্যহাতে বরাভয়। মায়ের গাত্রবর্ণ মেঘের ন্যায় এবং তিনি দিগম্বরী। কেন এই কালি মূর্তি নগ্ন?


কালীর একটি নয় দুটি রূপ আছে। কোথাও কালীর ডান পা আবার কোথাও কালীর বাঁ পা এগিয়ে থাকতে দেখা যায়। বিগ্রহে কালীর ডান পা এগিয়ে থাকলে তিনি তখন দক্ষিণা কালী। আর যখন তাঁর বাঁ পা এগিয়ে থাকে তখন তিনি বামা কালী। আর এই দুই রূপেই পুজিত হন মা কালী।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>