শিবকে মা কালীর পায়ের নিচে কেন দেখা যায়

হিন্দু ধর্মের দেবদেবীর মূর্তি আসলে মানুষের বাস্তব জীবনের স্বরূপ তুলে ধরে। যেমন মা কালী, তিনি উলঙ্গিনী.... ক্রোধী, ভীষণা, হাতে নরমুণ্ড, গলায় ৫১টি মুণ্ডমালা, শিবের বুকের উপর দিয়ে আছেন আবার জিভ বের করে জিভ কামড়েছেন।  উলঙ্গিনী ও ক্রোধী রূপ এটাই বলে যে মানুষের ক্রোধ উলঙ্গ, ক্রোধের ভূষণ নেই, ক্রোধে মানুষ যা খুশি করতে পারে। ৫১ টি মুণ্ডমালা আমাদের ৫১ টি বর্ণমালাকে নির্দেশিত করে। হাতে নরমুণ্ড নির্দেশ করে যে তিনি মানুষের জ্ঞানকে হাতে ধারণ করেছেন। 

একবার শুম্ভ ও নিশুম্ভ নামে দুই অসুর ভ্রাতা তাদের দলবল নিয়ে স্বর্গ আক্রমণ করেন। শুরু হয় দেবাসুরে প্রচন্ড যুদ্ধ। দেবতাদের সহায় হয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হন দেবী দুর্গা। প্রবল পরাক্রমে তিনি অসুর নিধন করতে থাকেন। তখন সমস্ত অসুরেরা মিলিতভাবে দেবীকে আক্রমণ করে। প্রচন্ড আক্রোশে দূর্গার তৃতীয় নয়ন থেকে নির্গত হলেন খড়্গহস্তা, দিগম্বরী ভয়ঙ্কর এক নারী মুর্তি। ঘোর কৃষ্ণবর্ণা, চতুর্ভুজা দেবীর এই রূপটিই হলেন মা কালী। ধূমকেতুর মতো তিনি অসুরদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। তার গগনবিদারী হুঙ্কারে শত শত অসুর প্রাণ ত্যাগ করে। খাঁড়ার আঘাতে শত্রুদের মুন্ডচ্ছেদ করে তাই দিয়ে মালা গেঁথে গলায় পরিধান করেন আর কাটা হাত গুলো দিয়ে বসন বানিয়ে নেন।

শিবকে মা কালীর পায়ের নিচে কেন দেখা যায়
কালি মায়ের পদতলে শিব


মা কালীর তান্ডবে অসুরেরা যখন দিশেহারা, তখনই সম্মুখ সমরে উপস্থিত হন শুম্ভ নিশুম্ভের সেনাপতি রক্তবীজ। ব্রহ্মাকে তপস্যায় সন্তুষ্ট করে তিনি এক অদ্ভুত বর পেয়েছিলেন। বরটা ছিল এমন যে, রক্তবীজের শরীরের এক ফোঁটা রক্তও যদি মাটিতে পড়ে, তবে সঙ্গে সঙ্গেই সেখান থেকে অবিকল তার মতো আর এক রক্তবীজের জন্ম হবে। রক্তবীজকে দেখামাত্র মা কালী তাকে আক্রমণ করেন। রক্তবীজের রক্ত মাটিতে ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাটি ফুঁড়ে অসুরেরা বেরিয়ে আসতে থাকে। এভাবে যতবার তাদের হত্যা করেন ততবারই তারা জন্মলাভ করে দেবীকে আক্রমণ করতে থাকেন। এরপর নিরুপায় দেবী রক্তবীজকে আক্রমণ করে তার সমস্ত রক্ত পান করেন।


স্বামীর বুকে পা দেওয়াটা ইঙ্গিত করে যে ক্রোধের বশে সবাই ভুল কাজ করে, এমনকি স্বামীর বুকেও পা দিয়ে দেয়। আর জিহ্বা কাটা নির্দেশ করে ক্রোধের পরে যখন সে ক্ষান্ত হয় তখন সে লজ্জায়, চরম আত্মাপমানে স্বীকার হয়... সে নিজেও জানে না যে রাগের বশে সে কী ভুল কাজ করেছে। স্বামীর বুকে পা দেবার জন্য তিনি লজ্জিতা।  দেবী অসুরদমনের সময় অত্যন্ত ক্রোধের বশে সমস্ত জগত ধ্বংস করতে চলেছিলেন। তাঁর কোপ থেকে কেউ বাদ যান নি। এমনাবস্থায় শিব কালীকে থামানোর জন্য মৃত সেজে মাটিতে শুয়ে পড়েন। দ্বিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য কালী ক্রোধের বশে শিবের বুকেই পা দিয়ে দেয়। এবং পরক্ষণে বুঝতে পারেন তিনি কী চরম ভুল কাজ করেছেন। এবং লজ্জায় জিভকাটতে থাকেন। এটা আরো একটি বিষয় নির্দেশ করে, পুরুষের স্থান নারীর নীচে।


উপরোক্ত লেখা থেকে এটুকু পর্যবেক্ষণ করে বলা যায় যে, যেহেতু কালীই জগত সৃষ্টি করেছেন এবং পুরাণ মতে শিবই হলেন জগত। সে কারণেই শিবের অবস্থান দেবীর পায়ের তলায়। সেক্ষেত্রে কালো গাত্রবর্ণেরও একটা দার্শনিক ব্যাখ্যা থাকছে বৈকি। যেহেতু ধারণা করা হয়, জগতের সমস্ত আলোর জন্ম অন্ধকার থেকেই, এবং কালীই সমগ্র জগতের উৎস। সে কারণেই তিনি কালো। “কালিকা পুরাণ” মায়ের কালো হওয়ার যে কারণ দেখিয়েছে, তা ইতিপূর্বেই বিভিন্ন গ্রন্থে তা উল্লেখ পেয়েছি। আচ্ছা, এই তত্ত্ব সেটিকেও ছাপিয়ে যায় না? আপনি জানেন কি বিজ্ঞানের বিগ ব্যাং থিওরির কথা আর সেই থিউরি সাথে কি আশ্চর্য মিল এটির।আর এই থিউরি থেকে জানা যায় ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি হয়েছিল অন্ধকার মহাশূন্য থেকেই।জয় মা কালী।।। 

#tag ভগবান শিবকে মা কালির পায়ের নীচে কেন দেখা যায়,ভগবান শিবকে মা কালীর পায়ের নিচে কেন দেখা যায়,মা কালীর পায়ের তলায় শিব কেন,শিব মা কালীর পায়ের তলায় থাকে কেন,পায়ের নিচে শিব কেন,জেনে নিন ভগবান শিবের অবস্থান কেন মা কালীর পায়ের নিচে,মা কালি শিবের বুকের উপর পা দিয়েছিলেন কেন,কালীর পায়ের নিচেই মহাদেব কেন,

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>