আহার বা খাদ্যাভাস কত ধরনের

আহার বা খাদ্যাভাস

যেভাবে  শুরু হয়েছিল মানুষ খাদ্য-সংগ্রহকারী থেকে খাদ্য উৎপাদনকারীতে পরিণত হবার সঙ্গে সঙ্গে তার খাদ্যাভ্যাসের বৈচিত্র্য এসেছিল। তবে একথা ঠিক কোনও অঞ্চলের মানুষের খাদ্যাভ্যাসের পেছনে থাকে তার ভৌগলিক ও জলবায়ুগত প্রভাব, খাদ্যের সহজলভ্যতা এবং সংরক্ষণের সুযোগ।তবে খাদ্যাভ্যাসের পেছনে সংস্কার, রীতিনীতি এবং পরম্পরা অন্যতম প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। যেমন আমাদের মধ্যে আমিষ ও নিরামিষ খাদ্য বা মাংসের ক্ষেত্রে মধ্যে রুচিগত পার্থক্য বিভিন্ন ধর্ম ও সম্প্রদায়ের পৃথিবীর বিভিন্ন মানুষের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করেছে।

আহার বা খাদ্যাভাস কত ধরনের ও তাদের গুণ
ধর্মমতে আহারের ছবি

খাবার গ্রহণ বা খাদ্যাভাসের ধরণ সম্পর্কে সনাতন ধর্ম কি বলেছে? আসুন আমরা জেনে নেই সেই সম্পর্কে।
গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তিন প্রকার আহারের কথা বলেছেন-
১. সাত্ত্বিক আহার
২. রাজসিক আহার
৩. তামসিক আহার

সাত্ত্বিক আহারের বৈশিষ্ট্য :
আয়ু, উৎসাহ, বল, আরোগ্য, চিত্ত-প্রসন্নতা ও রুচি- এসকলের বর্ধনকারী এবং সরস, স্নেহযুক্ত, সারবান্ এবং প্রীতিকর- এইরূপ আহার সাত্ত্বিক আহার। গীতা, ১৭/৮

রাজসিক আহারের বৈশিষ্ট্য :
অতি কটু, অতি অম্ল, অতি লবণাক্ত, অতি উষ্ণ, তীক্ষ্ম, বিদাহী এবং দু:খ, শোক ও রোগ উৎপাদক আহার রাজসিক আহার। গীতা, ১৭/৯

তামসিক আহারের বৈশিষ্ট্য :
বহু পূর্বে পক্ব, যাহার রস শুষ্ক, দুর্গন্ধ, বাসি, উচ্ছিষ্ট ও অপবিত্র আহার তামস আহার। গীতা, ১৭/১০

আহার শুদ্ধতা সম্পর্কে উপনিষদ বলেছে-
আহার শুদ্ধ হলে চিত্ত শুদ্ধ হয়, চিত্ত শুদ্ধ হলে সেই চিত্ত সর্বদা ঈশ্বরাভিমুখী থাকে। ছান্দোগ্য উপনিষদ, ৭/২৬

রামানুজাচার্য এস্থলে খাদ্যের তিনটি দোষের কথা বলেছেন-

১. জাতিদোষ :
এটিকে প্রকৃতিগত দোষ হিসেবে তিনি মদ্য, মাংস, রসুন, পেঁয়াজ ইত্যাদি উত্তেজক খাদ্য পরিহার করতে বলেছেন। এগুলো জাতিদোষ যুক্ত খাবার।

২. আশ্রয় দোষ :
অশুচি, অতিকৃপণ, আসুর-স্বভাব, রোগাক্রান্ত এগুলো দোষে দুষ্ট -খাদ্যবিক্রেতা, পাচক বা পরিবেশনকারীর কাছ থেকে খাদ্য গ্রহণ না করা। অর্থাৎ এগুলো আশ্রয় দোষ।

৩. নিমিত্ত দোষ :
খাদ্যে ধূলি, ময়লা, কেশ, লালা ইত্যাদি অপবিত্রতা হচ্ছে নিমিত্ত দোষ।

সূত্র: জগদীশ চন্দ্র ঘোষ, শ্রীমদ্ভগবদগীতা(বৃহৎ), পৃ. ৪৮৬

সাত্ত্বিক আহারই সর্বাপেক্ষা উত্তম আহার  অন্য সকল উপর্যুক্ত গুণ বিচার করলে এটাই প্রমাণিত হয়।

পরিশেষে বলা যায় সুস্বাস্থ্যের জন্য খাদ্যের প্রয়োজন, এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যে খাদ্যেরও ভূমিকা আছে, তা আমাদের জানা প্রয়োজন। সুস্বাস্থ্য ব্যক্তির শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক—এই তিন অবস্থার একটি সমন্বয়। সুস্বাস্থ্যের জন্য রোগমুক্ত সুস্থ শরীরের সঙ্গে ভয়, হতাশা, বিষণ্নতা ও মানসিক চাপমুক্ত থাকা প্রয়োজন। ব্যক্তির চাহিদা অনুযায়ী সুষম খাদ্য গ্রহণ আমাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। 


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>