একাদশীর জন্ম রহস্য

জব্বাসুর নামে পূর্বকালে এক দানব রাজা ছিল। একদা দেবতাদের সাথে যুদ্ধে তিনি নিহিত হইলে, তাহার পুত্র মুরাসুর দানবদের রাজা হলেন। তিনি নিজ বাহু বলে ত্রিভূবন জয় করিয়া চিরকাল পৃথিবী শাসন করিবেন এই আশায় অমর বর প্রাপ্তির জন্য মান্দর পর্বতে গমন করিয়া শিবের আরাধনায় নিজেকে নিয়োগ করিলেন। আরাধনায় শিব তুষ্ট হয়ে মুরাসুরকে বর দিতে এলেন। সে যথারীতি অমর বর প্রার্থনা করিলেন। 

শিব বলিলেন, পৃথিবীতে কেউ অমর নয়। তুমি অন্য বর প্রার্থনা কর, কিন্তু মুরাসুর নিজের প্রতিজ্ঞায় অটল। শেষ অবধি শিব কৌশলে এই বর দিলেন- “সদ্য জাতানারী শক্তির হাতে হবে তোমার দেহ অবসান।" এই বর পেয়ে দানব আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠলেন। 

একাদশীর জন্ম
একাদশীর জন্ম


মনে মনে চিন্তা করতে লাগলেন সদ্য জাতানারী সে হবে তার কাছে হাতের পুতুল মাত্র। বর পেয়ে স্বরাজ্যে ফিরে এসে ঘোষণা দিল শিবের বরে অমরত্ব লাভ করেছেন। এরপর দেব-রাজ্য স্বর্গ জয়ের আশায় অগণিত অসুরসৈন্য লইয়া দেবরাজ্য স্বর্গ আক্রমণ করিলেন। শেষে দেবরাজ্য জয়করে স্বর্গের দিব্য সিংহাসনে বসিলেন। দেবতারা অসুর কর্তৃক বিতাড়িত হয়ে দেবরাজ ইন্দ্রসহ বনে জঙ্গলে পাহাড় পর্বতে অবস্থান করিতে লাগিলেন। আর কতদিন কষ্ট সহ্য করিবেন, তাই ক্ষীরোদ সাগরের তীরে গিয়ে সমবেত ভাবে নারায়ণের নিকট এর প্রতিকারের জন্য নিবেদন করিলেন।


দেবতাদের স্তবে সন্তুষ্ট হয়ে ভগবান শ্রীবিষ্ণু বলিলেন, তোমরা অপেক্ষা কর। আমি অচিরেই দুরাচার মুরাসুরকে বধ করে তোমাদের স্বর্গরাজ্য ফিরিয়ে দেব। এরপর শঙ্খচক্র, গদাপদ্ম ধারণ করে বিশ্বব্রাস মুরাসুরকে বধের জন্য উপস্থিত হইলেন। বিষ্ণু ও মুরাসুরের বহুকাল ধরে মধ্যে এই সংগ্রাম চলল।


যুদ্ধের নেশায় মত্ত হয়ে মুরাসুর দিক-বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে শ্রীবিষ্ণুর অঙ্গে পদাঘাত করলে, বিষ্ণুর অঙ্গ থেকে যোগাস্ত্রধারী এক সদ্যজাতা রমনীপ্রকাশ হল। তিনি মুরাসুরকে বললেন- যুদ্ধংদেহি। সে সদ্যজাতা নারীর সহিত যুদ্ধে নিহিত হলেন । শ্রীবিষ্ণু সেই নারীর পরিচয় জানতে চাইলে তিনি বললেন, আমি আপনার অঙ্গ থেকে প্রকাশ হয়ে মুরাসুরকে বধ করেছি। তখন শ্রীবিষ্ণু বলিলেন, তাই আজ হতে তোমার নাম হউক মুরারী। এখন আপনি আমার নামাকরণ করিয়া জগতে অবস্থান করিতে আদেশ দিন। শ্রীবিষ্ণু বললেন- তুমি আমার ও দেবতাদের মহাশত্রু মুরাসুরকে বধ করে ত্রিভূবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছ। অদ্য একাদশী তিথি। তিথির নামানুসারে তোমার নামকরণ হল- দেবী একাদশী। প্রতি মাসের প্রতিপক্ষে এই তিথিতে থাকবে তোমার একচ্ছত্র রাজত্ব। এই তিথিতে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব ও যোগমায়া ব্যতীত সকলেই থাকবে তোমার অধীন থাকবে। এখন তুমি কি বর চাও?


দেবী একাদশী বললে, এই তিথিতে যে মানব উপবাস থাকিয়া তোমার নাম গুণ, কীর্তন করিবে তাহাকে অবশ্য-অবশ্যই বিষ্ণুলোকে স্থান দিতে হবে। তখন শ্রীবিষ্ণু ‘তথাস্ত' বলিয়া অস্তনির্হিত হলেন।


একাদশী তিথিতে অন্নাদি; পঞ্চরবিশষ্য গ্রহণ করলে যত প্রকার পাপ জ্বরা ব্যাধি আছে, সেগুলো গ্রহণ করা হয়। একাদশী দিবসে উপবাস থেকে হরিবাসর, তুলসী বন্দনা, সাধুসঙ্গ ভাগবত শ্রবণ শ্রীহরিকে স্মরণ। নিশি জাগরণ করলে মোক্ষলাভ হয়। দ্বাদশীতে যথা সময়ে পারন করিতে হয়।


একাদশী দিবস শ্রীহরির প্রিয় দিবস, তাই এই দিনকে হরিবাসর বলা হয় । পঞ্চশষ্য-ধান (চাল), মাষকলাই, তিল (সাদাসরষে ) যব, যুগকলাই বৈষ্ণবগণ গ্রহণ করিবেন না।

#tag;একাদশীর জন্ম,একাদশীর জন্ম কোথায়,একাদশীর জন্ম কিভাবে,একাদশীর জন্ম কোথায় থেকে,

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>