হিন্দুদের প্রধান উপাস্য কে ?

মোক্ষ বা ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভের একটি মাধ্যম বা পথের ফল হলো হিন্দুধর্মে উপাসনা।


হিন্দুদের দেব-দেবীগণ বৈদিক যুগ (খ্রীষ্টপূর্ব দ্বিতীয় শতক) ও মধ্যযুগে (খ্রীষ্টীয় প্রথম শতক) নেপাল ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বহু বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে। হিন্দু দেবতা বলতে যোগশাস্ত্রের ইষ্টদেবতা ,তেত্রিশ বৈদিক দেবতা বা শতাধিক পৌরাণিক দেবতাদের কথা বোঝানো যায়। এদের মধ্যে মুখ্য দেবতারা হলেন বিষ্ণু, শিব, শ্রী বা লক্ষ্মী, পার্বতী বা দুর্গা, ব্রক্ষ্মা এবং সরস্বতী। প্রত্যেক দেবতার আলাদা আলাদা জটিল জটিল চরিত্রাবলী বিদ্যমান হলেও তাদেরকে অনেকসময়ই "ব্রহ্ম " নামে এক নিরাকার পরম সত্তার অংশবিশেষ বলে ধরা হয়। সেই সূত্রে ব্রহ্ম হলেন মূখ্য ।

হিন্দুদের প্রধান উপাস্য দেব দেবী গন


🌠 প্রাচীন কাল থেকেই এই একত্বের ধারনা হিন্দুধর্মের অন্যতম এক বৈশিষ্ট্য,যা ধর্মশাস্ত্র এবং হরিহর ( শিব ও বিষ্ণু), অর্ধনারীশ্বর(অর্ধেক শিব অর্ধেক পার্বতী) -এর মতো মূর্তিগুলির ক্ষেত্রে দেখা যায়।
বিভিন্ন দেবতাকে আমরা অনেক সময় সৃষ্টিকর্তা হিসাবে মনে করে থাকি । আসলে দেবতারা কখনোই সৃষ্টিকর্তা হিসাবে পূজিত হতে পারেন না ।
হিন্দু দেবতা বলতে যোগশাস্ত্রের ইষ্টদেবতা,তেত্রিশ বৈদিক দেবতা বা শতাধিক পৌরাণিক দেবতাদের কথা বোঝানো যায়। এদের মধ্যে মুখ্য দেবতারা হলেন বিষ্ণু, শিব, শ্রী বা লক্ষ্মী, পার্বতী বা দুর্গা, ব্রহ্মা, সরস্বতী প্রভৃতি।
দেবতাকে উপাসনা করাকে নিরুৎসাহিত করা এই পোস্টের মূল উদ্দেশ্য নয় । ধন-সম্পদ প্রাপ্তি কিংবা বিশেষ কোন লক্ষ্য পূরনের জন্য দেবতাদের পূজা করা যায় কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে ঐ লক্ষ্য পূরন হওয়ার সাথে সাথে আমাদের  দেব-দেবী পূজার প্রতি মনোসংযোগ কমিয়ে দিতে হবে ।

এখন প্রশ্ন হতে পারে আমরা কার উপাসনা করব (দেব-দেবী পূজার প্রতি মনোসংযোগ কমিয়ে)? সহজ উত্তর হচ্ছে আমরা প্রধান সৃষ্টিকর্তা অর্থাৎ ভগবানের উপাসনা করব যিনি মানুষ , ব্রহ্মান্ড ও দেব-দেবী সবকিছু সৃষ্টি করেছেন । এখন আবারও মনের মধ্যে একটি প্রশ্ন জাগতে পারে কে আমাদের এই আদি বা প্রধান সৃষ্টিকর্তা ?

অনেক হিন্দুদের মতে ব্রহ্মা আমাদের প্রধান সৃষ্টিকর্তা , অনেকের মতে শিব , অনেকের মতে কালী , দুর্গা আমাদের প্রধান উপাস্য কিন্তু এরা কেউই প্রধান সৃষ্টিকর্তা নয় । এদের প্রত্যেকেরই একটি নির্দিষ্ট জীবনাকাল আছে । জীবনাকাল শেষ হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে এরা মৃত্যুবরন করে । এবার জেনে নেয়া যাক কোন দেবতার আয়ু কত বছর ।

পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ - জন্ম ও মৃত্যুবিহীন ।
ব্রহ্মা ,বিষ্ণু ও শিব-  ১ ট্রিলিয়ন =১,০০০,০০০,০০০,০০০ যার সংখ্যা  (৩১১.০৪ ট্রিলিয়ন বছর)।
কালী , দূর্গা , ইন্দ্র , লক্ষ্মী  ও সরস্বতী-প্রভৃতি হলো ১৭০০০০০০ বছর ।
মানুষ- ১০০ বছর ।

ভাগবতে বলা হয়েছে ভগবান স্বয়ং দেবতাগনদের দ্বারা পূজিত হন।নিম্নে তার ব্যাখ্যা করা হলোঃ

তস্মিংস্তুষ্ট কিমপ্রাপ্যং জগতামীশ্বরেশ্বরে ।
লোকাঃ সপালা হ্যেতস্মৈ হরন্তি বলিমাদৃতাঃ ।। (ভাগবত  ৪/১৪/২০)

অনুবাদঃ ব্রহ্মান্ডের বিভিন্ন  দেবতাদের দ্বারা পরমেশ্বর ভগবান পূজিত হন । ভগবান প্রসন্ন হলে কোন কিছু লাভ করা আর অসম্ভব হয় না । সেজন্য বিভিন্ন গ্রহের দেবতা ও অধিবাসীরা মহা আনন্দ অনুভব করে ভগবানকে সমস্ত প্রকারের নৈবেদ্য নিবেদন করে।

আপনি - আমি সকলেই আজ চমকে যাবেন যদি নিচের সত্যটি জানেন। এটাই সনাতনের সারসত্য।মূলত চারটি বেদের চার উপনিষদের চারটি মহাবাক্য অন্তত সেটিই বলছে। এখন প্রশ্ন হল "মহাবাক্য" কি? বেদের যে যে বাক্য বা শ্লোকগুলি সমগ্র বেদের ভাবার্থ প্রকাশ করে, সেগুলিকে মহাবাক্য বলা হয়। এরকমই চারটি মহাবাক্যের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এই প্রশ্নের উত্তর।

১) ঋকবেদ: ঐতরেয় উপনিষদ, শ্লোক  নম্বর ৩.৩:-

"প্রজ্ঞানম্ ব্রহ্ম।।"

অর্থাৎ, (আত্ম) জ্ঞানই ব্রহ্ম।

২) যজ্জুর্বেদ: বৃহদারন্যক উপনিষদ, শ্লোক নম্বর ১.৪.১০:-

"অহম্ ব্রহ্মাস্মি।। "

অর্থাৎ, আমিই ব্রহ্ম।

৩) সামবেদ: ছান্দোগ্য উপনিষদ, শ্লোক নম্বর ৬.৮.৭:-

"তৎ ত্বম অসি।। "

অর্থ্যাৎ, তুমিও সেই পরমব্রহ্ম।

৪) অথর্ববেদ: মান্ডুক্য উপনিষদ, শ্লোক ১.২:-

"অয়ম্ আত্ম ব্রহ্মম্।। "

অর্থাৎ, এই আত্মাই ব্রহ্ম।

ওঁ শান্তি।

মন্তব্যঃ এখন আমরা বুঝতে পেরেছি আমাদের প্রধান উপাস্য কে ? কাজেই আসুন আর সময় নষ্ট না করে আমরা আজ থেকেই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের আরাধনা শুরু করে দিই এবং ভগবানের নির্দেশ মত চলতে চেষ্টা করি ।

#হিন্দুদের কয়জন দেবতা

#হিন্দুদের প্রধান উপাস্য দেব দেবী গন

#সনাতন ধর্মাবলম্বীর প্রধান উপাস্য কে?


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>