গীতা পড়লে কর্ম জীবনে কী উন্নতি হয়

রোজ গীতা পড়লে কর্ম জীবনে কী উন্নতি হয়

শ্রীমদ্ভাগবত গীতা শুধুমাত্র ধর্মীয় গ্রন্থ নয়। বিভিন্ন ধর্মালম্বী মানুষেরা গীতা পাঠ করে থাকেন। জেনে নিন গীতাপাঠ জীবনের কী কী উপকার করতে পারে।

প্রত্যহ গীতা পড়ার উপকারিতা 


অনেকে মনে করেন, ধার্মিকরাই গীতা পাঠ করেন। এটা একেবারেই ঠিক নয়। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময়ে বিপ্লবীদের অন্যতম পাঠ্য ছিল গীতা। জেনে নিন গীতপাঠ জীবনের কী কী উপকার করতে পারে। কী বলছেন পণ্ডিতরা


১. গীতায় ভক্তিযোগের কথা যেমন বলা রয়েছে, তেমনই রয়েছে জ্ঞানযোগ ও কর্মযোগের কথাও। বলা হয়, একটি পরিপূর্ণ মানব জীবন কীভাবে গড়ে তোলা যায়, তার সন্ধান রয়েছে গীতার শ্লোকে শ্লোকে।

২. গীতা নির্দেশ ও নির্দেশনা দেয় সেই সকল মানুষদেরকে যারা অসহায়, বিভ্রান্ত। এমনটাই বলেন পণ্ডিতরা ও দার্শনিকরা। জ্ঞানযোগের মাধ্যমে শুধু ধার্মিক জ্ঞান নয়, কর্মজীবনেও অনুপ্রেরণা মেলে এবং চিত্ত শুদ্ধ হয়।


৩. গীতাপাঠ মানুষকে কর্মের পথে অনুপ্রাণিত করে। কার কোন কাজটি করণীয় এবং কোনটা নয়, তা বারবার বলা হয়েছে গীতায়। স্বধর্ম অর্থাৎ নিজ-কাজ নিয়ে লিপ্ত থাকাই যে শ্রেয় তা বলার পাশাপাশি পরধর্ম গ্রহণ যে ভয়াবহ সেকথা বলে গীতা। যা কর্মজীবনে অত্যন্ত কার্যকর।


৪. বলা হয় মানব জীবনের সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়া রয়েছে গীতায়। তাই জীবনের চলার পথে যে কোনও সঙ্কটে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার শিক্ষা পাওয়া যায় গীতা অধ্যয়নে।


৫. গীতা আসলে মহাভারতের অর্জুনের হতাশা দূর করার জন্য শ্রীকৃষ্ণের বাণী। কথোপকথনের আকারে যার মধ্য দিয়ে উঠে আসে প্রশ্ন ও উত্তর। সেই উত্তরের মধ্যে রয়েছে হতাশা ও দুঃখ সরিয়ে রেখে এগিয়ে চলার পাথেয়। রোজ গীতাপাঠে তাই জীবনীশক্তি অর্জন করা যায়।

গীতা আমরা কেন পড়বো?

কেন গীতা পাঠ আপনার জন্য জরুরি?


যদিও গীতা মূলত হিন্দু ধর্মগ্রন্থ কিন্তু এটা সার্বজনীন ধর্মগ্রন্থ হিসেবে একজন অ-হিন্দু হলেও পড়তে পারেন। কোরআন শরীফ যেমন মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ, বাইবেল যেমন খ্রিষ্টানদের ও তোরাহ যেমন ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ তেমনি গীতা হচ্ছে হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ।


একজন মুসলমান হিসেবে কোরআন যতটা গুরুত্বপূর্ন একজন হিন্দু হিসেবে গীতাও হিন্দুদের কাছে গুরুত্বপূর্ন।


"হিন্দু" বলতে যদি সমগ্র ভারতবর্ষ ও অবিভক্ত ভারতবর্ষের "পাকিস্তান" ও "বাংলাদেশ"কেও বুঝি তবে এ অঞ্চলের মুসলমানরাও ভোগৌলিক অর্থে "হিন্দুয়ানী' জাত। 'হিন্দু' বলতে সিন্ধু নদীর তীরের মানুষদের বুঝায়। সেই অর্থে পাকিস্তানিরা মূল হিন্দুয়ানী জাত। এরা মূল সিন্ধু নদীর তীরে অবস্থিত জাতি তবে ঐ অঞ্চল থেকে শুরু করে গঙ্গা নদীর তীরের মানুষও (বাংলাদেশি) "হিন্দুয়ানী জাত।


তাই আমরা মুসলমানরা ধর্ম হিসেবে ইসলামকে মান্য করি কিন্তু আমরা জাতি হিসেবে হিন্দুয়ানী ধারা মানুষ। "হিন্দুয়ানী মুসলমান জাতি" হিসেবে আপনি সমগ্র ভারতবর্ষের (পাকিস্তান ও বাংলাদেশ সহ) মুসলমানদের বিবেচনায় নিতে পারেন।


গীতা আমার কাছে অসাধারন একটি গ্রন্থ মনে হয়েছে। কোরআন যেমন অনেক জ্ঞানগর্ভ একটি গ্রন্থ যেখানে জীবনে কিভাবে চলতে হবে, প্রাচীন সমাজের রীতিনীতি, যুদ্ধের সময় করনীয়, কিভাবে ঈশ্বর বা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করা যাবে,  সমাজকে কিভাবে ঠিক করতে হবে,  জীবনকে কিভাবে গঠন করতে হবে এসবের ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ননা দেয়া আছে তেমনি শ্রীমত ভগবত গীতায় একই ভাবে জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কিভাবে এগিয়ে যেতে হবে এই ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ননা দেয়া আছে। যারা জ্ঞানী তারা গ্রন্থ থেকে জ্ঞানটুকু আহরন করে আর যারা নির্বোধ তারা গ্রন্থ থেকে বিতর্কিত ব্যাপারগুলোকে বেশি হাইলাইট করে কিন্তু প্রেক্ষাপট বিবেচনায় না নিয়ে।


গীতা হচ্ছে শ্রী কৃৃষ্ণের বানী। কে এই শ্রী কৃৃষ্ণ? তিনি হচ্ছেন হিন্দু বিশ্বাসমতে ঈশ্বর বা ভগবান। তিনি যুগে যুগে বিভিন্ন রূপে দুনিয়াতে এসেছেন মানুষের হেদায়েতের জন্য। তিনি রাম হয়ে এসেছিলেন রামায়ন যুগে। মহাভারত যুগে তিনি শ্রী কৃৃৃষ্ণ রূপেই এসেছিলেন।


শ্রীমদ্ভগবত গীতায় শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন, যখনই পৃথিবীতে অধর্মের প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে ও দুরাচারীর অত্যাচার ও নিপীড়ন বেড়ে যাবে, তখন ধর্ম সংস্থাপনের জন্য ভক্তের আকুল প্রার্থনায় সাড়া দিয়ে ঈশ্বর “অবতার” রূপ নিয়ে থাকেন।


কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ হচ্ছে মহাভারতের অন্যতম ধর্মযুদ্ধ। একই পরিবার উদ্ভূত পাণ্ডব ও কৌরব শিবিরের মধ্যে সংগঠিত যুদ্ধের বর্ননা হচ্ছে মহাভারত। পাণ্ডবরা ন্যায়, কর্তব্য ও ধর্মের পক্ষ। অন্যদিকে কৌরবরা অন্যায়, জোর-জবরধস্তি ও অধর্মের পক্ষ।


সেই যুদ্ধের সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পান্ডবদের পক্ষ নিয়ে উনার শিষ্য অর্জুনকে যুদ্ধক্ষেত্রে করনীয় নিয়ে বানী প্রদান করেন। সেই সাথে কিভাবে নিজের জীবন গঠন করতে হবে সেই বানীর প্রদান করেন। কিভাবে অসুরের বিনাশ ও ন্যায়ের পক্ষে থাকতে হবে সেই বর্ননার সন্নিবেশ হচ্ছে ভগবত গীতা। 

# ট্যাগঃ গীতা পড়লে কি হয়,গীতা পাঠ করলে কি কি উপকার হয় ?,রোজ গীতা পাঠ করতে না পারলেও,গীতা পাঠের উপকারিতা,গীতা পড়ার তাৎপর্য,গীতা পড়ার উপকারিতা,গীতা পড়তে উচ্চারণে ভুল

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url
"/>
"/>
"/>
"/>